বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও পাকা সেতুর স্বপ্নের সমাধি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ খালটির নাম ‘জান মোহাম্মদ খাল’। খালের উপর রয়েছে ১১০ ফুট দীর্ঘ ‘বাঁশের সাঁকো’। ‘পাকা সেতু’ নির্মাণের স্বপ্ন যে উকি দেয়নি এমন নয়, সেতু নির্মাণের জন্য খালের দুই দিকে দুটি পিলারও তৈরি করা হয়েছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর দেশের অগ্রযাত্রাকে যখন পুরো থামিয়ে দেয়া হয়, ঠিক তখন ‘পাকা সেতু’ নির্মাণের স্বপ্নেরও সমাধি হয়ে যায় সিলেটের বালাগঞ্জ উপজেলার দেওয়ান বাজার ইউনিয়নের অন্তত ১৫ গ্রামের লোকজনের। সেই থেকে বছরের পর বছর ধরে ‘বাঁশের সাঁকোই, চলাচলের একমাত্র ভরসা তাদের।

উপজেলার বশিরপুর জামালপুর দেওয়ান বাজার সড়কের বনগাঁও এবং জামালপুর এ দুই গ্রামের মাঝখান দিয়ে বয়ে গেছে জান মোহাম্মদ খালটি। প্রায় ৪৬ বছর ধরে এই খালের উপর বাঁশের সাঁকোটি বিদ্যমান। ১১০ ফুট দীর্ঘ এ সাঁকো দিয়ে জামালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আজিজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আজিজপুর উচ্চ বিদ্যালয়, দেওয়ান আব্দুর রহিম হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজ, বনগাঁও মহিলা মাদরাসার অসংখ্য শিক্ষার্থী ছাড়াও বনগাঁও, জটারগাঁও, দৌলতপুর, জগন্নাথপুর, বশিরপুর, তালতলা গ্রামবাসীকে যাতায়াত করতে হয়।

দেওয়ান বাজার ইউনিয়ন পরিষদসহ পার্শ্ববর্তী খালেরমুখ বাজার ও আজিজপুর বাজারসহ উপজেলা সদরে আসতে হলে ওই সাঁকো ব্যবহার করতে হয় এসব গ্রামবাসীর। আজিজপুর, মুমিনপুর, রঘুপুর, শিওরখাল, নিয়ামতপুর, হায়দরপুর, আনোয়ারপুর প্রভৃতি গ্রামের লোকজন এ সাঁকো দিয়ে পারাপার হয়ে থাকেন। ৪৬ বছরেও ওই সাঁকোর উপর নজর পড়েনি কোনো জনপ্রতিনিধির।

জামালপুর গ্রামের বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান জানান, বর্তমান সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান ১৯৭০ সালে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী হন। এলাকার সন্তান হিসেবে তিনি স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বশিরপুর-জামালপুর-দেওয়ান বাজার সড়কের জান মোহাম্মদ খালের উপর পাকা সেতু নির্মাণের বরাদ্দ প্রদান করেন। সেতু নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়, এরপর কাজ বন্ধ হয়ে যায। তখন থেকে গ্রামবাসীরা পরস্পর মিলেমিশে চাঁদা তুলে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে যাতায়াতের ব্যবস্থা করে আসছেন।

দৌলতপুর গ্রামের মো. খসরুজ্জামান বলেন, ‘জান মোহাম্মদ খালের উপর পাকা সেতু নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। যে সরকারই ক্ষমতায় আসে, আমরা দাবি উত্থাপন করি। সরকার বদল হয়, তবুও সাঁকোর বদলে পাকা সেতু নির্মাণের স্বপ্ন পূরণে কেউ এগিয়ে আসেননি।

খসরুজ্জামান আরও জানান, একটা সময় সাঁকোর দুই দিকে ইটের গাঁথুনি দেয়া দুটি পিলার ছিল। এখন তা বিলীন হয়ে গেছে। সেতু নির্মাণে সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।

সিলেট জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অ্যাডভোকেট লুৎফুর রহমান বলেন, ‘জান মোহাম্মদ খালের উপর পাকা সেতু নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দিয়েছিলাম। ওই সময় দেশের পরিস্থিতির জন্য পরে আর সেতুটি নির্মাণ করা হয়নি। পুনরায় খালের উপর পাকা সেতু নির্মাণের বিষয়টি সরকারের উচ্চমহলের নজরে দেয়া হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর