হাওর বার্তা ডেস্কঃ সবুজ মানেই প্রশান্তি। যান্ত্রিক এই শহরে সবুজের এতটুকু উপস্থিতিও যেন, অনেকখানি প্রশান্তি এনে দেয়। দুঃখজনক হলেও সত্যি, ক্রমেই নিষ্প্রাণ হয়ে উঠছে এই শহর। নাগরিক কোলাহলের এই শহর সজীবতা হারাচ্ছে প্রতিদিন।
তবে দারুণ ব্যাপার হলো, বর্তমান সময়ে অনেকেই আগ্রহী হয়ে উঠছেন নিজের বাড়ির ছাদ কিংবা বারান্দার ছোট্ট জায়গাতেই শখের বাগান তৈরি করার প্রতি। খেয়াল করে দেখবেন, অধিকাংশ বাড়ির ছাদে সবুজের ছোঁয়া রয়েছে। নিজ বাড়ির ছাদে শখের ও ভালোবাসার বাগান তৈরি করতে ইচ্ছুক হন তবে প্রয়োজনীয় তথ্য, সঠিক পরিকল্পনা ও সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে আপনিও দারুণভাবে নিজ হাতে গড়ে তুলতে পারবেন শখের বাগান।
ছাদে বাগান তৈরি করলে ছাদের কোনো সমস্যা হবে কী?
বাড়ির ছাদে শখের বাগান তৈরি করার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করলে, এই প্রশ্নটি অবশ্যই মনের মাঝে উঁকি দিবে। শখের বাগানের জন্য নিশ্চয় নিজের বাড়ির ক্ষতি করতে চাইবেন না কেউ। তাই ছাদে বাগান তৈরি করার প্রথমেই খেয়াল রাখতে হবে বাড়ির ছাদের কোন ধরণের ক্ষতি যেন একেবারেই না হয়। এক্ষেত্রে চেষ্টা করতে হবে রোপনকৃত গাছের পাত্রগুলো ছাদে বীমের কাছাকাছি রাখার জন্য। একইসাথে খেয়াল রাখতে হবে পাত্রগুলো যেন ছাদের উপর সরাসরি রাখা না হয়। নয়তো ছাদে স্যাঁতস্যাঁতে ভাব দেখা দিতে পারে। তাই টব কিংবা গাছের অন্যান্য পাত্র ইটের উপরে স্থাপন করতে হবে। এতে করে ছাদে স্যাঁতস্যাঁতে ভাব তৈরি হবে না এবং পাত্রের নিচের স্থান দিয়েও যথেষ্ট আলো-বাতাস চলাচল করতে পারবে।
গাছরোপনের জন্য বিভিন্ন ধরণের টব
টব ব্যবহারের দারুন কয়েকটি উপকারিতার মধ্যে অন্যতম হলো, টব স্বাচ্ছন্দ্যে পছন্দমতো ও সুবিধাজনক স্থানে সরিয়ে নেওয়া যায়। একইসাথে টবে লাগানো গাছে পরিমানমতো সার ও মাটি দেওয়া যায়। ছোট কিংবা বড় যেকোন মাপের ছাদেই টব সকলের প্রথম পছন্দ। সাধারণত পোড়ামাটির টব ব্যবহার করা হলেও এখনকার সময় প্লাস্টিকের বিভিন্ন ধরণের ও আকারের টব পাওয়া যায়। যা ব্যবহার করা সম্পূর্ণ নিরাপদ।
তবে টবে গাছ রোপন করার পাশাপাশি অনেকেই ড্রাম কিংবা বেডিং এর মাধ্যমে গাছ রোপন করে থাকেন।
কী ধরণের গাছ রোপন করবেন ছাদে?
ছাদে বাগান তৈরির পেছনে মূল উদ্দেশ্য থাকে ছাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, নিজের আবাসস্থলের মাঝে সবুজের ছোঁয়া নিয়ে আসা ও শখ। যেহেতু বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে ছাদে বাগান করা হয় না, সেহেতু গাছ ও গাছের চারা নির্বাচন করতে হবে সতর্কতার সাথে।
প্রথমেই ফুলের গাছের কথায় আসা যাক। বাগানের জন্য ফুলের গাছ নির্বাচন করার ক্ষেত্রে কোন সীমাবদ্ধতা নেই। কারণ ফুলের গাছের জন্য খুব বেশী স্থান প্রয়োজন হয় না। একই ব্যাপার যেকোন সবজী প্রজাতির গাছের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। পছন্দমতো সবজীর চারা রোপন করা যাবে স্বাচ্ছন্দ্যে।
বাগান তৈরির প্রথম পর্যায়ে বারমাসি সবজী কিংবা শীতকালীন সবজী রোপন করা যেতে পারে। ফলের ক্ষেত্রে লেবু, জামরুল, করমচা, পেয়ারা, আম, লিচু সহ বিভিন্ন গাছ রোপন করা যাবে। তবে সতর্ক থাকতে হবে ঝাড় বা বাঁশ প্রজাতির কোন গাছ রোপনের ক্ষেত্রে। কারণ এই প্রকৃতির গাছ ছাদের জন্য একেবারেই উপযোগী নয়। এছাড়াও শখের বশে ঝুলিয়ে দিতে পারেন মানি প্ল্যান্টের লতা ছাদের কার্নিশ ও রেলিং জুড়ে।
গাছের পরিচর্যা করুন নিয়মিত
টবে রোপন করার ফলে স্বল্প স্থানের মাঝেই বেড়ে ওঠে গাছ। যে কারণে টবের যেকোন গাছের প্রতি বাড়তি যত্ন ও সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। সঠিক গাছের জন্য সঠিক সার নির্বাচন করা, সঠিক পরিমানে সার দেওয়া, নিয়মিত ও পরিমিত পরিমানে পানি দেওয়া, কীটনাশক প্রয়োগ করা, আবহাওয়া ভেদে টবের স্থান বদল করার মতো ব্যাপারগুলোর প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।
পাশাপাশি খেয়াল রাখতে হবে, প্রতি বছরে অন্তত একবার টবের পুরনো মাটি বদলে নতুন মাটি দেওয়ার প্রতিও।
তবে বিশেষভাবে সচেতন হতে হবে রোগাক্রান্ত গাছের ব্যাপারে। যেকোন ধরণের পুরনো, বয়স্ক, পোকা আক্রান্ত কিংবা রোগাক্রান্ত গাছের পাতা ও ডাল ভালোভাবে ছেঁটে অন্য স্থানে জড়ো করতে হবে। পাশাপাশি আক্রান্ত গাছের টবটি অন্যান্য সুস্থ গাছের টব থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে।
এতে সুস্থ গাছগুলো আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা থাকবে না। ছাদ হোক কিংবা বারান্দা ছোটখাটো ভাবে শখের বাগান তৈরি করতে চাইলে কিছু সতর্কতা ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহন করতেই হবে। সাধারণত সঠিক পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষণের মাধ্যমেই মনোহর বাগান তৈরি করে ফেলা সম্ভব। নিজেকে সবুজ ও সজীবতার কাছাকাছি রাখতে চাইলে ছোট করেই তৈরি করে নিতে পারেন শখের বাগানটি।