ঢাকা ০২:২৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পোপের চোখের আড়ালে রাখতে চায় মিয়ানমার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:৩১:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৭
  • ৩৭১ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মিয়ানমার সফরে রয়েছেন পোপ ফ্রাঁসিস। সেখানে তিনি সাক্ষাৎ করছেন দেশটির সেনাপ্রধান সহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে। গতকাল সাক্ষাৎ হয়েছে স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি, প্রেসিডেন্ট হতিন কাইওয়ার সঙ্গেও।

যে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে তিনি মিয়ানমারে রয়েছেন, সেই রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পেই যাওয়া হচ্ছে না তার। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোকে পোপের চোখের আড়ালে রাখতে চায় মিয়ানমার। কারণ, সেখানকার পরিস্থিতি এক বাক্যে অমানবিক। স্কাই নিউজের বিশেষ সাংবাদিক আলেক্স ক্রাওফর্ড কৌশলে প্রবেশ করেন মিয়ানমারের একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের কার্যত আটকে রাখা ওইসব ক্যাম্পে প্রবেশ করতে পারাটা একটি দুরূহ ব্যাপার। সেখানে সহজে বহিরাগত কাউকে ঢুকতে দেয়া হয় না। এসব ক্যাম্পে শত শত রোহিঙ্গা জীবনের হুমকি নিয়ে বসবাস করেন। আলেক্স ক্রাওফর্ড প্রথমে তার দল নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতি চান। তাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়নি।

অবশ্য অনুমতি না দেয়ার ব্যাপারটিও তেমন অস্বাভাবিক কিছু না। মিয়ানমারের এইসব রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহজে কোনো স্থানীয় কিংবা আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। এমনকি আন্তর্জাতিক দাতা এবং সাহায্য সংস্থাও খুব সহজে সেখানে ঢুকতে পারে না। ওই ক্যাম্পগুলো কার্যত রোহিঙ্গাদের আটকে রাখার বস্তি।

সেখানে মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর কাজে নিয়োজিত একজন কর্মী জানান, ওই ক্যাম্পে ঢোকার জন্য অন্তত এক ডজন কাগজপত্র ও ফরম পূরণ করে তারপর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর নিয়ে তবেই সেখানে প্রবেশ করতে পেরেছেন তারা। এই কঠোর নজরদারির কারণ জানিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলেছে, নিরাপত্তার কারণেই এতো কঠিন নিয়মকানুন আরোপ করা হয়েছে।

ক্যাম্পে বসবাস করা রোহিঙ্গা আততায়ীরা অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত। তবে আলেক্স ক্রাওফর্ড ওই ক্যাম্পে প্রবেশ করে যা দেখেছেন, তা কর্তৃপক্ষের মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বিকল্পপথে ওই ক্যামেপ ঢোকেন আলেক্স ও তার দল। এতে তাকে সাহায্য করে মিয়ানমারের কিছু স্থানীয় নাগরিক। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদেরকে সাহায্য করেন। এ ক্ষেত্রে ধরা পড়লে তাদেরকে অত্যাচারের শিকার হতে হতো। ক্যামেপ ঢুকে সাংবাদিকরা একটি মানবেতর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। তারা দেখেন, শত শত রোহিঙ্গা নিজের দেশেই নির্বাসিত অবস্থায় আছেন। তারা নিজেদের জীবনের নানা দুর্ভোগের কথা ওই সাংবাদিকদের খুলে বলেন। খুলে বলেন কিভাবে নিজের দেশে অধিকারবঞ্চিত অবস্থায় চূড়ান্ত নিগ্রহের শিকার হয়ে যাচ্ছে একটি জাতি। তারা জানান, তাদের বাচ্চাদেরকে স্কুলে যেতে দেয়া হয় না।

তাদেরকে দেয়া হয় না কোনো চাকরি-বাকরি। জীবনের প্রতি পদে পদে তাদেরকে শিকার হতে হয় নানান বাধার। আর এইসব দুর্ভোগের একটিই কারণ। তারা মুসলিম- এটাই তাদের দোষ। তারা সে দেশের একটি সংখ্যালঘু সমপ্রদায়, যাদেরকে অস্বীকার করে তাদের আপন মাতৃভূমি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে বসবাস করতে থাকা এসব রোহিঙ্গাদের বাঙালি বলে আখ্যায়িত করে মিয়ানমার।

তাদেরকে মিয়ানমারের নাগরিক বলে গণ্য করা হয় না। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের চোখে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। সে দেশে অবস্থানরত সাংবাদিক এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে বার বার বলা হয় রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করতে। বলা হয়, রোহিঙ্গা মুসলিম নামে মিয়ানমারে কিছুই নেই। তারা সীমান্তবর্তী বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া অবৈধ বাংলাদেশি।

ওই ক্যাম্পে অবস্থানরত একজন রোহিঙ্গা জানান, আমাদের রাখাইনের রাজধানী সিতওয়েতে যাওয়া নিষেধ। সরকার আমাদেরকে সেখানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। সেখানে গেলে আমাদের মেরে ফেলা হবে। আরেকজন রোহিঙ্গা বলেন, আমি চুলা জ্বালানোর লাকড়ি কুড়াচ্ছিলাম। এমন সময় পুলিশ বিনা অপরাধে আমাকে আটক করে। তারা আমাকে প্রচণ্ড মারধর করে। বলে আমি নাকি সন্ত্রাসী।

এরপর আমাকে আদালতে চালান করা হয়। আদালত আমাকে সন্ত্রাসী সাব্যস্ত করে ২৫ মাসের কারাদণ্ড দেয়! আলেক্স ক্রাওফর্ড যে ক্যামেপ প্রবেশ করেন, সেখানে শত শত রোহিঙ্গা বসবাস করেন। এদের বেশির ভাগই ২০১২ সালে রাখাইনের অন্য অংশে সংঘটিত সহিংসতায় বাস্তুচ্যুত হন। ওই সহিংসতার সময় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে একজন বৌদ্ধ যুবতীকে সম্ভ্রম নষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়েছিলো। এর প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক নৃশংসতার মতো অভিযান চালায় সেনাবাহিনী।

ওই সময়ও জ্বালিয়ে দেয়া হয় রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি। এরপর ওইসব গৃহহারা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের এনে এই ক্যামেপ রাখা হয়। তারা সেখানে বেঁচে আছে কোনো রকমের মানবিক অধিকার এবং স্বাধীনতা ছাড়া। দুই বছর ধরে এই সহিংসতার তদন্ত করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের প্রতি চালানো অত্যাচারকে সংস্থাটি তুলনা করেছে ১৯৯৪ সালের পূর্ব পর্যন্ত আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণের সঙ্গে।

তবে, এতকিছুর পরেও মিয়ানমারের সরকার কিংবা সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের সমপর্কে কোনো ধরনের সহানুভূতি নেই। তারা রোহিঙ্গাদের উল্টো আততায়ী কর্মকাণ্ডে জড়িত সন্ত্রাসী জনগোষ্ঠী হিসেবে আখ্যায়িত করে। সমপ্রতি রোহিঙ্গাদের উপরে চালানো নিপীড়নকে জাতি নির্র্মূলের পরিষ্কার উদাহরণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ। তবে এ অভিযোগ বরাবর অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার।

ক’দিন আগে মিয়ানমারের বৌদ্ধবাদীদের সংগঠন বা মা বা থা-এর নেতা ইউ ইয়ান্দ্রা সিক্কা ভিয়ন্থা দাবি করেন যে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জাতি নিধনের খবরগুলো মিথ্যা। লাখ লাখ রোহিঙ্গার মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়াকে তিনি স্বেচ্ছানির্বাসন হিসেবে দাবি করেন। তিনি বলেন, ওইসব রোহিঙ্গা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে। কোনো রকম বলপ্রয়োগ কিংবা অত্যাচার করে তাদেরকে মিয়ানমার ছাড়তে বাধ্য করা হয় নি।

রোহিঙ্গারা নারীরা সম্ভ্রমহানীর শিকার হয়েছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে মা বা থা-এর অন্য একজন নেতা বলেন, এটা কোনোভাবেই সম্ভব না যে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ওইসব কুৎসিত রোহিঙ্গা নারীকে সম্ভ্রমহানী করবে!

সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, রোহিঙ্গারা ইচ্ছে করে নিজেরা নিজেদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে। এটা করে তারা আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সহানুভূতি অর্জনের চেষ্টা করছে। ওইসব সন্ত্রাসী এখন বাংলাদেশে চলে গেছে এবং যাওয়ার সময় তাদের পরিবার পরিজনকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছে।

পোপ ফ্রাঁসিসের মিয়ানমার সফর মূলত দেশটির উত্তপ্ত রোহিঙ্গা পরিস্থিতি শান্ত করার উদ্দেশ্যে। তবে, সত্যিকারে পরিস্থিতি আসলে কতটা উত্তপ্ত সেটা রোহিঙ্গা ক্যামপগুলো পরিদর্শন না করলে হয়তো বা পুরোপুরি বোঝা সম্ভব নয়। -স্কাই নিউজ অবলম্বনে এমজমিন

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পোপের চোখের আড়ালে রাখতে চায় মিয়ানমার

আপডেট টাইম : ০৫:৩১:৩৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মিয়ানমার সফরে রয়েছেন পোপ ফ্রাঁসিস। সেখানে তিনি সাক্ষাৎ করছেন দেশটির সেনাপ্রধান সহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সঙ্গে। গতকাল সাক্ষাৎ হয়েছে স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচি, প্রেসিডেন্ট হতিন কাইওয়ার সঙ্গেও।

যে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে তিনি মিয়ানমারে রয়েছেন, সেই রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পেই যাওয়া হচ্ছে না তার। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোকে পোপের চোখের আড়ালে রাখতে চায় মিয়ানমার। কারণ, সেখানকার পরিস্থিতি এক বাক্যে অমানবিক। স্কাই নিউজের বিশেষ সাংবাদিক আলেক্স ক্রাওফর্ড কৌশলে প্রবেশ করেন মিয়ানমারের একটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে।

মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের কার্যত আটকে রাখা ওইসব ক্যাম্পে প্রবেশ করতে পারাটা একটি দুরূহ ব্যাপার। সেখানে সহজে বহিরাগত কাউকে ঢুকতে দেয়া হয় না। এসব ক্যাম্পে শত শত রোহিঙ্গা জীবনের হুমকি নিয়ে বসবাস করেন। আলেক্স ক্রাওফর্ড প্রথমে তার দল নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে প্রবেশ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুমতি চান। তাদেরকে অনুমতি দেয়া হয়নি।

অবশ্য অনুমতি না দেয়ার ব্যাপারটিও তেমন অস্বাভাবিক কিছু না। মিয়ানমারের এইসব রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সহজে কোনো স্থানীয় কিংবা আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেয়া হয় না। এমনকি আন্তর্জাতিক দাতা এবং সাহায্য সংস্থাও খুব সহজে সেখানে ঢুকতে পারে না। ওই ক্যাম্পগুলো কার্যত রোহিঙ্গাদের আটকে রাখার বস্তি।

সেখানে মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর কাজে নিয়োজিত একজন কর্মী জানান, ওই ক্যাম্পে ঢোকার জন্য অন্তত এক ডজন কাগজপত্র ও ফরম পূরণ করে তারপর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের স্বাক্ষর নিয়ে তবেই সেখানে প্রবেশ করতে পেরেছেন তারা। এই কঠোর নজরদারির কারণ জানিয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ বলেছে, নিরাপত্তার কারণেই এতো কঠিন নিয়মকানুন আরোপ করা হয়েছে।

ক্যাম্পে বসবাস করা রোহিঙ্গা আততায়ীরা অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত। তবে আলেক্স ক্রাওফর্ড ওই ক্যাম্পে প্রবেশ করে যা দেখেছেন, তা কর্তৃপক্ষের মন্তব্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বিকল্পপথে ওই ক্যামেপ ঢোকেন আলেক্স ও তার দল। এতে তাকে সাহায্য করে মিয়ানমারের কিছু স্থানীয় নাগরিক। তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদেরকে সাহায্য করেন। এ ক্ষেত্রে ধরা পড়লে তাদেরকে অত্যাচারের শিকার হতে হতো। ক্যামেপ ঢুকে সাংবাদিকরা একটি মানবেতর পরিস্থিতির মুখোমুখি হন। তারা দেখেন, শত শত রোহিঙ্গা নিজের দেশেই নির্বাসিত অবস্থায় আছেন। তারা নিজেদের জীবনের নানা দুর্ভোগের কথা ওই সাংবাদিকদের খুলে বলেন। খুলে বলেন কিভাবে নিজের দেশে অধিকারবঞ্চিত অবস্থায় চূড়ান্ত নিগ্রহের শিকার হয়ে যাচ্ছে একটি জাতি। তারা জানান, তাদের বাচ্চাদেরকে স্কুলে যেতে দেয়া হয় না।

তাদেরকে দেয়া হয় না কোনো চাকরি-বাকরি। জীবনের প্রতি পদে পদে তাদেরকে শিকার হতে হয় নানান বাধার। আর এইসব দুর্ভোগের একটিই কারণ। তারা মুসলিম- এটাই তাদের দোষ। তারা সে দেশের একটি সংখ্যালঘু সমপ্রদায়, যাদেরকে অস্বীকার করে তাদের আপন মাতৃভূমি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে বসবাস করতে থাকা এসব রোহিঙ্গাদের বাঙালি বলে আখ্যায়িত করে মিয়ানমার।

তাদেরকে মিয়ানমারের নাগরিক বলে গণ্য করা হয় না। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের চোখে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের কোনো অস্তিত্ব নেই। সে দেশে অবস্থানরত সাংবাদিক এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে বার বার বলা হয় রোহিঙ্গা শব্দটি উচ্চারণ না করতে। বলা হয়, রোহিঙ্গা মুসলিম নামে মিয়ানমারে কিছুই নেই। তারা সীমান্তবর্তী বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া অবৈধ বাংলাদেশি।

ওই ক্যাম্পে অবস্থানরত একজন রোহিঙ্গা জানান, আমাদের রাখাইনের রাজধানী সিতওয়েতে যাওয়া নিষেধ। সরকার আমাদেরকে সেখানে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে। সেখানে গেলে আমাদের মেরে ফেলা হবে। আরেকজন রোহিঙ্গা বলেন, আমি চুলা জ্বালানোর লাকড়ি কুড়াচ্ছিলাম। এমন সময় পুলিশ বিনা অপরাধে আমাকে আটক করে। তারা আমাকে প্রচণ্ড মারধর করে। বলে আমি নাকি সন্ত্রাসী।

এরপর আমাকে আদালতে চালান করা হয়। আদালত আমাকে সন্ত্রাসী সাব্যস্ত করে ২৫ মাসের কারাদণ্ড দেয়! আলেক্স ক্রাওফর্ড যে ক্যামেপ প্রবেশ করেন, সেখানে শত শত রোহিঙ্গা বসবাস করেন। এদের বেশির ভাগই ২০১২ সালে রাখাইনের অন্য অংশে সংঘটিত সহিংসতায় বাস্তুচ্যুত হন। ওই সহিংসতার সময় রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে একজন বৌদ্ধ যুবতীকে সম্ভ্রম নষ্ট করার অভিযোগ আনা হয়েছিলো। এর প্রেক্ষিতে সাম্প্রতিক নৃশংসতার মতো অভিযান চালায় সেনাবাহিনী।

ওই সময়ও জ্বালিয়ে দেয়া হয় রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি। এরপর ওইসব গৃহহারা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের এনে এই ক্যামেপ রাখা হয়। তারা সেখানে বেঁচে আছে কোনো রকমের মানবিক অধিকার এবং স্বাধীনতা ছাড়া। দুই বছর ধরে এই সহিংসতার তদন্ত করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের প্রতি চালানো অত্যাচারকে সংস্থাটি তুলনা করেছে ১৯৯৪ সালের পূর্ব পর্যন্ত আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের বিরুদ্ধে বর্ণবাদী আচরণের সঙ্গে।

তবে, এতকিছুর পরেও মিয়ানমারের সরকার কিংবা সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধদের মধ্যে রোহিঙ্গাদের সমপর্কে কোনো ধরনের সহানুভূতি নেই। তারা রোহিঙ্গাদের উল্টো আততায়ী কর্মকাণ্ডে জড়িত সন্ত্রাসী জনগোষ্ঠী হিসেবে আখ্যায়িত করে। সমপ্রতি রোহিঙ্গাদের উপরে চালানো নিপীড়নকে জাতি নির্র্মূলের পরিষ্কার উদাহরণ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ। তবে এ অভিযোগ বরাবর অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার।

ক’দিন আগে মিয়ানমারের বৌদ্ধবাদীদের সংগঠন বা মা বা থা-এর নেতা ইউ ইয়ান্দ্রা সিক্কা ভিয়ন্থা দাবি করেন যে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জাতি নিধনের খবরগুলো মিথ্যা। লাখ লাখ রোহিঙ্গার মিয়ানমার ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়াকে তিনি স্বেচ্ছানির্বাসন হিসেবে দাবি করেন। তিনি বলেন, ওইসব রোহিঙ্গা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে। কোনো রকম বলপ্রয়োগ কিংবা অত্যাচার করে তাদেরকে মিয়ানমার ছাড়তে বাধ্য করা হয় নি।

রোহিঙ্গারা নারীরা সম্ভ্রমহানীর শিকার হয়েছে এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে মা বা থা-এর অন্য একজন নেতা বলেন, এটা কোনোভাবেই সম্ভব না যে, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ওইসব কুৎসিত রোহিঙ্গা নারীকে সম্ভ্রমহানী করবে!

সংগঠনটির পক্ষ থেকে বলা হয়, রোহিঙ্গারা ইচ্ছে করে নিজেরা নিজেদের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে বাংলাদেশে চলে গেছে। এটা করে তারা আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়ের সহানুভূতি অর্জনের চেষ্টা করছে। ওইসব সন্ত্রাসী এখন বাংলাদেশে চলে গেছে এবং যাওয়ার সময় তাদের পরিবার পরিজনকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছে।

পোপ ফ্রাঁসিসের মিয়ানমার সফর মূলত দেশটির উত্তপ্ত রোহিঙ্গা পরিস্থিতি শান্ত করার উদ্দেশ্যে। তবে, সত্যিকারে পরিস্থিতি আসলে কতটা উত্তপ্ত সেটা রোহিঙ্গা ক্যামপগুলো পরিদর্শন না করলে হয়তো বা পুরোপুরি বোঝা সম্ভব নয়। -স্কাই নিউজ অবলম্বনে এমজমিন