ঢাকা ০৯:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আমার কাছে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হয় না

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:২২:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ অগাস্ট ২০১৫
  • ৬১০ বার

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাজানো আসামি জজ মিয়া পৈতৃক ভিটেমাটি বিক্রি করে এখন ঢাকার শনির আখড়ায় এক বস্তিতে বসবাস করছেন। নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কেশারপাড় ইউনিয়নের বীরকোট গ্রামে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৫ শতাংশ ভিটা বিক্রি করে দিয়েছেন আগেই। তাঁর মা থাকতেন সেই ভিটায়। এখন ওই ভিটায় তাঁদের ঘরটিরও কোনো চিহ্ন নেই। খোঁয়ে জানা যায়, একই বাড়ির রফিক মিয়ার কাছে জায়গাটি করে চলে গেছেন জজ মিয়া ও তাঁর মা জোবেদা খাতুন।

বাবা আবদুর রশিদ ছোটকালেই মারা যান। চার ভাই এক বোনের মধ্যে জজ মিয়া দ্বিতীয়। বড় ভাই আলমগীর চট্টগ্রামে থাকেন। মায়ের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই। জজ মিয়া ঢাকায় বাবার পুরনো ভাঙারি ব্যবসার পাশাপাশি গুলিস্তানে একটি সিডির দোকানে কাজ করতেন। মাঝেমধ্যে তিনি বাড়িতে এসে দু’এক দিন মায়ের সঙ্গে থেকে চলে যেতেন।

২০০৫ সালের ৯ জুন বাড়িতে গিয়ে বিকেলে বাড়ির সামনে রাজা মিয়ার চা দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন জজ মিয়া। তখন গ্রামের চৌকিদার মুখলেছুর রহমান তাঁকে বলেন, ‘আপনার সঙ্গে কথা আছে।’ জজ মিয়া তাঁর সঙ্গে কিছু দূর গিয়ে দেখেন, সেনবাগ থানার এসআই কবির দাঁড়িয়ে। কবির তাঁকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে একটু থানায় যেতে হবে।’ জজ মিয়া থানায় গেলেন। তারপর কুটিল রাজনীতি আর সিআইডির ‘কল্যাণে’ সাধারণ জজ মিয়ার জীবনে ঘটেছে ভয়ংকর সব ঘটনা। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার আসামি করে নির্যাতন চালিয়ে, লোভ দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে আদায় করা হয় স্বীকারোক্তি। জীবনে গ্রেনেড না দেখলেও তাঁর মুখ দিয়ে বলানো হয়, পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে বড় ভাইদের নির্দেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তিনি অংশ নেন। বড় ভাই বলতে তিনি বলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদের নাম। পরে এই গল্প ফাঁস হয়ে গেলে জজ মিয়াকে অন্য মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে মুক্তি পেয়ে এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি হতভাগ্য এ যুবক।

জানা যায়, গ্রাম থেকে ওই দিনই (২০০৫ সালের ৯ জুন) সিআইডির একটি দল জজ মিয়াকে ঢাকায় নিয়ে যায়। সিআইডির তৎকালীন বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৭ দিনের রিমান্ডে নেন। ২০০৫ সালের ২৬ জুন জজ মিয়াকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এই জবানবন্দির বিনিময়ে জজ মিয়ার মা জোবেদা খাতুনকে প্রতি মাসে আড়াই হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হতো। জোবেদা খাতুনই পরে জানিয়ে দেন তাঁর ছেলেকে নিয়ে এ খেলার কথা। জজ মিয়া কারাগার থেকে বের হওয়ার পর মাত্র দুবার নিজ গ্রামে আসেন। সর্বশেষ ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে তিনি বাড়িতে আসেন। তাঁর মাসহ পরিজনকে নিয়ে যাওয়ার পর আর তিনি জন্মভিটায় ফেরেননি।

জজ মিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে কেশারপাড় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু বক্কর ছিদ্দিক জানান, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলাকে অন্য খাতে নিতে সিআইডি জজ মিয়ার মতো সাধারণ লোককে আটক করে সাজানো স্বীকারোক্তি নিয়েছে; যার খবর পরে ফাঁস হয়ে যায়। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি এলাকায় তেমন একটা আসতেন না। দুই বছর ধরে তাঁদের কেউ এখানে নেই। তাঁরা কোথায় আছেন তিনি জানেন না।

বুধবার (১৯ আগস্ট) সকালে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় কথা হয় জজ মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, ‘আপনারা আমারে এই পর্যন্ত বাঁচাইয়া আনছেন। কিন্তু বেঁচে কি হবে এখন আমি ধুঁকে ধুঁকে মরছি। এই মামলায় আমার ফাঁসি হয়ে গেলেই ভালো হতো। দেশে এমন কোনো মানুষ নাই যে, আমাকে চিনে না। আমি যেখানেই চাকরির জন্য যাই, সবাই আমাকে চিনে ফেলে। তাই চাকরি হয় না। লোকজন ভয়ে চাকরি দিতে চায় না। এখন বাধ্য হয়ে ভাড়া গাড়ি চালাই। ঢাকা শহরে খাই আর না খাই ঘরভাড়া আগে দেয়া লাগে। এই মামলায় আমার ভিটামাটি সবশেষ। আমার এখন ভিক্ষুকের চাইতেও খারাপ অবস্থা। জেলে থাকতে আমার মা আমার সঙ্গে ঢাকায় এসে দেখা করতেন। আদালতে যেতেন অনুমতির জন্য। সেখান থেকে অনুমতি পেলে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করতেন। এভাবে টাকার জন্য জমিজমা সব বিক্রি করে দেন মা।

জজ মিয়া বলেন, ‘এখন আমার কোনো ঠিকান নেই। বোনটার বয়স ২১ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু বিয়ে দিতে পারি না। বিয়ের জন্য সবাই ঠিকানা চায়। আগে সে একটি হাসপাতালে নার্সের চাকরি করত। আমার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে তার চাকরিটাও চলে গেছে। তাকে নিয়েও চরম কষ্টে আছি এখন। টাকার অভাবে বোনের বিয়ে দিতে পারছি না।’

বিয়ে করেননি কেন জানতে চাইলে জজ মিয়া বলেন, ‘আমার পরিচয় পেলে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হয় না। সবাই বলে আবার পরের সরকার ক্ষমতায় আসলে তোমারে ওই মামলায় ধরব। তুমি জেলে যাবা, তোমার ফাঁসি হয়ে যাবে। এই অবস্থায় আমি আধামরা হয়ে বাঁইচা আছি। আপনারা আমাকে বাঁচার মতো বাঁচার সুযোগ দেন।’

জজ মিয়া আরও জানান, তার মায়ের শরীরের অবস্থাও ভালো নয়। বয়সের কারণে নানা রোগে ধরছে। ভাইয়েরা মাঝেমধ্যে মাকে কিছু টাকা-পয়সা দেয়। তাদের ছেলে-মেয়ে বড় হয়েছে। ভাইয়েরা বলে, জায়গা-সম্পদ সব তোমার জন্য নষ্ট করছে। এখন আমরা ছেলেমেয়ে নিয়া কোনো রকম বাঁইচা আছি।

রেন্ট-এ কারের গাড়ি চালানোর আগে জজ মিয়া দেশ টিভির গাড়ি চালাতেন। চাকরি কেন ছাড়লেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেশ টিভি আমাকে মাসে সাত হাজার টাকা বেতন দিত। এই টাকায় নিজে চলব না বাড়িভাড়া দিব। রেন্ট-এ কারের বাজার আগের মতো নাই। একটা ননএসি নোহা গাড়ি চালাই। এটায় তেমন ভাড়াও পাওয়া যায় না। এই গাড়ির মালিকও আমার মতো ড্রাইভার। সে সব জানে। সে আমারে বলেছে, এটা দিয়া আমিও চলব, তুমিও চল।’

হামলার দিন কোথায় ছিলেন, কি করতেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই সময় আমি গাড়ি চালাতাম না। আমি শাপলা চত্বর এলাকায় ফলের ব্যবসা করতাম। মাঝে মাঝে স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় পোস্টার বিক্রি করতাম। ২-৩ মাস পর পর বাড়িতে যেতাম। ঘটনার ৭-৮ মাস পর আমারে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আমারে গ্রামের চৌকিদার অ্যারেস্ট করছে। চৌকিদার আমাদের বাড়িতে এসে বলেন, তোমার নামে থানায় মামলা আছে। থানা থেকে কবির দারোগা আসতেছে। তুমি এখানে বস। এরপর সেনবাগ থানার কবির দারোগা এসে আমাকে হ্যান্ডকাপ লাগায়। আমার এলাকার জামাল মেম্বার তাকে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে? কিন্তু দারোগা কোনো জবাব দেয়নি। থানায় নেয়ার পর কবির দারোগা বলে, তোমার নামে এখানে কোনো মামলা নাই। ঢাকা থেকে এসপি রশিদ (সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আবদুর রশিদ) আসতেছেন। ঢাকায় তোমার নামে বড় মামলা আছে।

জজ মিয়া জানান, আমাকে নিয়ে সিআইডি’র নাটকের কথা দেশের মানুষ জানেন। মিথ্যা মামলায় পড়ে আমার জীবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো চলে গেছে। আমি কখনও কোন রাজনীতি বা দলাদলিতে ছিলাম না। টুকিটাকি ব্যবসা করে পরিবার পরিজন নিয়ে চলতাম। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় তাদের লেলিয়ে দেয়া সিআইডি কর্মকর্তাদের সাজানো মামলায় আমাকে বলি করা হয়েছে। তাদের নাটকের বলি হয়ে দীর্ঘ সময় কারাভোগের পর আমি নিঃস্ব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

আমার কাছে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হয় না

আপডেট টাইম : ০৩:২২:৩৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ অগাস্ট ২০১৫

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলায় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সাজানো আসামি জজ মিয়া পৈতৃক ভিটেমাটি বিক্রি করে এখন ঢাকার শনির আখড়ায় এক বস্তিতে বসবাস করছেন। নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কেশারপাড় ইউনিয়নের বীরকোট গ্রামে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৫ শতাংশ ভিটা বিক্রি করে দিয়েছেন আগেই। তাঁর মা থাকতেন সেই ভিটায়। এখন ওই ভিটায় তাঁদের ঘরটিরও কোনো চিহ্ন নেই। খোঁয়ে জানা যায়, একই বাড়ির রফিক মিয়ার কাছে জায়গাটি করে চলে গেছেন জজ মিয়া ও তাঁর মা জোবেদা খাতুন।

বাবা আবদুর রশিদ ছোটকালেই মারা যান। চার ভাই এক বোনের মধ্যে জজ মিয়া দ্বিতীয়। বড় ভাই আলমগীর চট্টগ্রামে থাকেন। মায়ের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ নেই। জজ মিয়া ঢাকায় বাবার পুরনো ভাঙারি ব্যবসার পাশাপাশি গুলিস্তানে একটি সিডির দোকানে কাজ করতেন। মাঝেমধ্যে তিনি বাড়িতে এসে দু’এক দিন মায়ের সঙ্গে থেকে চলে যেতেন।

২০০৫ সালের ৯ জুন বাড়িতে গিয়ে বিকেলে বাড়ির সামনে রাজা মিয়ার চা দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন জজ মিয়া। তখন গ্রামের চৌকিদার মুখলেছুর রহমান তাঁকে বলেন, ‘আপনার সঙ্গে কথা আছে।’ জজ মিয়া তাঁর সঙ্গে কিছু দূর গিয়ে দেখেন, সেনবাগ থানার এসআই কবির দাঁড়িয়ে। কবির তাঁকে বলেন, ‘আমার সঙ্গে একটু থানায় যেতে হবে।’ জজ মিয়া থানায় গেলেন। তারপর কুটিল রাজনীতি আর সিআইডির ‘কল্যাণে’ সাধারণ জজ মিয়ার জীবনে ঘটেছে ভয়ংকর সব ঘটনা। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার আসামি করে নির্যাতন চালিয়ে, লোভ দেখিয়ে তাঁর কাছ থেকে আদায় করা হয় স্বীকারোক্তি। জীবনে গ্রেনেড না দেখলেও তাঁর মুখ দিয়ে বলানো হয়, পাঁচ হাজার টাকার বিনিময়ে বড় ভাইদের নির্দেশে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় তিনি অংশ নেন। বড় ভাই বলতে তিনি বলেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদের নাম। পরে এই গল্প ফাঁস হয়ে গেলে জজ মিয়াকে অন্য মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়। ২০০৯ সালে মুক্তি পেয়ে এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি হতভাগ্য এ যুবক।

জানা যায়, গ্রাম থেকে ওই দিনই (২০০৫ সালের ৯ জুন) সিআইডির একটি দল জজ মিয়াকে ঢাকায় নিয়ে যায়। সিআইডির তৎকালীন বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন গ্রেনেড হামলা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১৭ দিনের রিমান্ডে নেন। ২০০৫ সালের ২৬ জুন জজ মিয়াকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। এই জবানবন্দির বিনিময়ে জজ মিয়ার মা জোবেদা খাতুনকে প্রতি মাসে আড়াই হাজার টাকা ভাতা দেওয়া হতো। জোবেদা খাতুনই পরে জানিয়ে দেন তাঁর ছেলেকে নিয়ে এ খেলার কথা। জজ মিয়া কারাগার থেকে বের হওয়ার পর মাত্র দুবার নিজ গ্রামে আসেন। সর্বশেষ ২০০৯ সালের নভেম্বর মাসে তিনি বাড়িতে আসেন। তাঁর মাসহ পরিজনকে নিয়ে যাওয়ার পর আর তিনি জন্মভিটায় ফেরেননি।

জজ মিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে কেশারপাড় ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু বক্কর ছিদ্দিক জানান, ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার মামলাকে অন্য খাতে নিতে সিআইডি জজ মিয়ার মতো সাধারণ লোককে আটক করে সাজানো স্বীকারোক্তি নিয়েছে; যার খবর পরে ফাঁস হয়ে যায়। কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর তিনি এলাকায় তেমন একটা আসতেন না। দুই বছর ধরে তাঁদের কেউ এখানে নেই। তাঁরা কোথায় আছেন তিনি জানেন না।

বুধবার (১৯ আগস্ট) সকালে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় কথা হয় জজ মিয়ার সাথে। তিনি বলেন, ‘আপনারা আমারে এই পর্যন্ত বাঁচাইয়া আনছেন। কিন্তু বেঁচে কি হবে এখন আমি ধুঁকে ধুঁকে মরছি। এই মামলায় আমার ফাঁসি হয়ে গেলেই ভালো হতো। দেশে এমন কোনো মানুষ নাই যে, আমাকে চিনে না। আমি যেখানেই চাকরির জন্য যাই, সবাই আমাকে চিনে ফেলে। তাই চাকরি হয় না। লোকজন ভয়ে চাকরি দিতে চায় না। এখন বাধ্য হয়ে ভাড়া গাড়ি চালাই। ঢাকা শহরে খাই আর না খাই ঘরভাড়া আগে দেয়া লাগে। এই মামলায় আমার ভিটামাটি সবশেষ। আমার এখন ভিক্ষুকের চাইতেও খারাপ অবস্থা। জেলে থাকতে আমার মা আমার সঙ্গে ঢাকায় এসে দেখা করতেন। আদালতে যেতেন অনুমতির জন্য। সেখান থেকে অনুমতি পেলে কাশিমপুর কারাগারে গিয়ে দেখা করতেন। এভাবে টাকার জন্য জমিজমা সব বিক্রি করে দেন মা।

জজ মিয়া বলেন, ‘এখন আমার কোনো ঠিকান নেই। বোনটার বয়স ২১ বছর হয়ে গেছে। কিন্তু বিয়ে দিতে পারি না। বিয়ের জন্য সবাই ঠিকানা চায়। আগে সে একটি হাসপাতালে নার্সের চাকরি করত। আমার জন্য দৌড়াদৌড়ি করতে গিয়ে তার চাকরিটাও চলে গেছে। তাকে নিয়েও চরম কষ্টে আছি এখন। টাকার অভাবে বোনের বিয়ে দিতে পারছি না।’

বিয়ে করেননি কেন জানতে চাইলে জজ মিয়া বলেন, ‘আমার পরিচয় পেলে কেউ মেয়ে বিয়ে দিতে রাজি হয় না। সবাই বলে আবার পরের সরকার ক্ষমতায় আসলে তোমারে ওই মামলায় ধরব। তুমি জেলে যাবা, তোমার ফাঁসি হয়ে যাবে। এই অবস্থায় আমি আধামরা হয়ে বাঁইচা আছি। আপনারা আমাকে বাঁচার মতো বাঁচার সুযোগ দেন।’

জজ মিয়া আরও জানান, তার মায়ের শরীরের অবস্থাও ভালো নয়। বয়সের কারণে নানা রোগে ধরছে। ভাইয়েরা মাঝেমধ্যে মাকে কিছু টাকা-পয়সা দেয়। তাদের ছেলে-মেয়ে বড় হয়েছে। ভাইয়েরা বলে, জায়গা-সম্পদ সব তোমার জন্য নষ্ট করছে। এখন আমরা ছেলেমেয়ে নিয়া কোনো রকম বাঁইচা আছি।

রেন্ট-এ কারের গাড়ি চালানোর আগে জজ মিয়া দেশ টিভির গাড়ি চালাতেন। চাকরি কেন ছাড়লেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেশ টিভি আমাকে মাসে সাত হাজার টাকা বেতন দিত। এই টাকায় নিজে চলব না বাড়িভাড়া দিব। রেন্ট-এ কারের বাজার আগের মতো নাই। একটা ননএসি নোহা গাড়ি চালাই। এটায় তেমন ভাড়াও পাওয়া যায় না। এই গাড়ির মালিকও আমার মতো ড্রাইভার। সে সব জানে। সে আমারে বলেছে, এটা দিয়া আমিও চলব, তুমিও চল।’

হামলার দিন কোথায় ছিলেন, কি করতেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওই সময় আমি গাড়ি চালাতাম না। আমি শাপলা চত্বর এলাকায় ফলের ব্যবসা করতাম। মাঝে মাঝে স্টেডিয়াম মার্কেট এলাকায় পোস্টার বিক্রি করতাম। ২-৩ মাস পর পর বাড়িতে যেতাম। ঘটনার ৭-৮ মাস পর আমারে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আমারে গ্রামের চৌকিদার অ্যারেস্ট করছে। চৌকিদার আমাদের বাড়িতে এসে বলেন, তোমার নামে থানায় মামলা আছে। থানা থেকে কবির দারোগা আসতেছে। তুমি এখানে বস। এরপর সেনবাগ থানার কবির দারোগা এসে আমাকে হ্যান্ডকাপ লাগায়। আমার এলাকার জামাল মেম্বার তাকে জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে? কিন্তু দারোগা কোনো জবাব দেয়নি। থানায় নেয়ার পর কবির দারোগা বলে, তোমার নামে এখানে কোনো মামলা নাই। ঢাকা থেকে এসপি রশিদ (সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার আবদুর রশিদ) আসতেছেন। ঢাকায় তোমার নামে বড় মামলা আছে।

জজ মিয়া জানান, আমাকে নিয়ে সিআইডি’র নাটকের কথা দেশের মানুষ জানেন। মিথ্যা মামলায় পড়ে আমার জীবন থেকে গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো চলে গেছে। আমি কখনও কোন রাজনীতি বা দলাদলিতে ছিলাম না। টুকিটাকি ব্যবসা করে পরিবার পরিজন নিয়ে চলতাম। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় তাদের লেলিয়ে দেয়া সিআইডি কর্মকর্তাদের সাজানো মামলায় আমাকে বলি করা হয়েছে। তাদের নাটকের বলি হয়ে দীর্ঘ সময় কারাভোগের পর আমি নিঃস্ব।