হাওর বার্তা ডেস্কঃ হিমাগারে আলু রেখে লোকসানের মুখে পড়েছেন বৃহত্তর বগুড়া অঞ্চলের কৃষকেরা। এই অঞ্চলে প্রতিদিন পাল্লা দিয়ে কমছে আলুর দাম। উৎপাদন মৌসুমের চেয়ে দাম কমে যাওয়ায় জাতভেদে প্রতি বস্তা আলুতে কৃষকদের ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত লোকসান গুনতে হচ্ছে। এ কারণে হিমাগার থেকে আলু তুলছেন না অনেকেই।
এদিকে হিমাগারে আলু রেখে কৃষকেরা যে ঋণ নিয়েছিলেন, তা পরিশোধের জন্য হিমাগারগুলো কৃষকদের নামে নোটিশ পাঠাচ্ছে। এ জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছেন টাকা পরিশোধে ব্যর্থ কৃষকেরা।
হিমাগার মালিকেরা জানান, এই এলাকার ৩৯টি হিমাগারে ২৭৯ কোটি ৭৬ লাখ বস্তা আলু রয়েছে। অন্য বছরের এই সময়ে হিমাগার থেকে ৮০ শতাংশ আলু বেড়িয়ে যায়। এবার ৩০ শতাংশ আলুও বের হয়নি।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, এবার দেশে ১ কোটি টনেরও বেশি আলু উৎপাদন হয়। এর মধ্যে দেশের ৩৯০টি হিমাগারে ৫৩ লাখ টন আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে।
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোশারফ হোসেন বলেন, হিমাগার মালিকেরা দীর্ঘদিন ধরে আলুর বহুমুখী ব্যবহার বাড়ানোর সরকারি উদ্যোগের কথা বলে আসছেন। ভিজিডি, ভিজিএফ, কাবিখার মতো নানা কর্মসূচিতে চাল-গমের বদলে আলু বিতরণেরও প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু লাভ হয়নি কোনো।
অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হকও হাওর বার্তাকে বলেন, এবার আলুর ব্যাপক ফলন হয়েছে। হিমাগারেতো আছেই, কৃষকের ঘরেও মজুত রয়েছে বিপুল পরিমাণ আলু।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বগুড়া আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্র জানায়, বগুড়ায় জেলায় গত উৎপাদন মৌসুমে ৬৬ হাজার হেক্টর জমিতে ১৪ লাখ টন আলু উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে ৩৩টি হিমাগারে সংরক্ষিত আছে দুই লাখ টন আলু। জয়পুরহাট জেলায় ৪২ হাজার হেক্টর জমিতে আলু উৎপাদন হয়েছে ৯ লাখ ৫০ হাজার টন। সেখানকার ১৬টি হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করা আছে দেড় লাখ টন।
হিমাগারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বগুড়া ও জয়পুরহাট অঞ্চলের হিমাগারগুলোতে দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি বস্তা আলুতে গড়ে ১০০ টাকা দাম কমেছে। বর্তমানে প্রতি বস্তা (৮৪ কেজি) গ্র্যানুলা আলু ৭০০, অ্যাসটেরিক আলু প্রতি বস্তা ১ হাজার, ডায়মন্ড আলু ১ হাজার ১০০, দেশি পাকড়ী আলু ১ হাজার ৬০০ টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে। গত ঈদের আগে প্রতি বস্তা আলুর দাম ছিল গ্র্যানুলা আলু ৮০০, অ্যাসটেরিক ১ হাজার ১০০, ডায়মন্ড ১ হাজার ২০০ এবং দেশি পাকড়ী ১ হাজার ৭০০ টাকা।
বগুড়ার শাহ সুলতান-১ হিমাগারের ব্যবস্থাপক আবদুল আলিম হাওর বার্তাকে জানান, এ হিমাগারে এবার ১ লাখ ৮৪ হাজার বস্তা আলু সংরক্ষণ করা হয়েছে। অন্য বছর মধ্য সেপ্টেম্বরের মধ্যে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ আলু হিমাগার থেকে বের হতো। এবার এখন পর্যন্ত ৩০ শতাংশ আলুও বের হয়নি।
বগুড়ার বিসিএল কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আলাউদ্দিন আল আজাদও বলেন, এ হিমাগারে সংরক্ষণ করা ১ লাখ ৪৫ হাজার বস্তা আলুর মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র ৪০ হাজার বস্তা আলু বের হয়েছে। ঋণ পরিশোধের ভয়ে কেউ আলু তুলতে হিমাগারে আসছেন না। একই অবস্থা জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার কৃষকদেরও।
সাধারণত বন্যা হলে আলুর দাম চড়া হয়। এবার দেশে দফায় দফায় বন্যা হলেও আলুর দাম কম-এ কথা উল্লেখ করে হতাশ পুনট কোল্ড স্টোরেজের ব্যবস্থাপক বিপ্লব কুমার পাল।
পুনট বাজারের ব্যবসায়ী মিঠু ফকির জানান, ১০ হাজার বস্তা আলুতে তিনি ৩০ লাখ টাকা পুঁজি হারাতে যাচ্ছেন। একই গ্রামের কৃষক মুকুল হোসেন বলেন, দেড় হাজার বস্তা অ্যাসটেরিক আলু হিমাগারে রেখে প্রতি বস্তায় ৭০০ টাকা ঋণ নিয়েছেন তিনি। এখন হিমাগারের নোটিশ পেয়ে ঋণ পরিশোধের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
জয়পুরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সুধেন্দ্রনাথ রায় অবশ্য হাওর বার্তাকে বলেন, ‘হিমাগারে আলুর দাম কম হলেও খুচরা বাজারে এখনো প্রতিকেজি আলুর দাম ২৫ টাকা এবং পাইকারি বাজারের সঙ্গে খুচরা বাজারের পার্থক্য অস্বাভাবিক।