যখন সাতক্ষীরা থেকে ঢাকার উদ্দেশে বের হয়েছিলেন তখন খুব কম লোকই তাকে চিনতেন। দেশের লোক দূরে থাক, গাঁয়েও তার পরিচিতি ছিল সীমিত। ঘনিষ্টরা ছাড়া অনূর্ধ্ব ১৯-এর এই তারকাকে নিয়ে তেমন আকর্ষণ ছিল না কারও। কিন্তু কে জানত এত অল্প সময়ে বিশ্ব জুড়ে নাম ছড়িয়ে পড়বে তার। ক্রিকেট আকাশে মুস্তাফিজুর রহমান এক নতুন তারার নাম। পাকিস্তান দিয়ে শুরু। এরপর ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাও কাবু। স্লোয়ার আর কাটারে ক্ষতবিক্ষত বিশ্বসেরা তারকারা। মাত্র চার মাসে সব বদলে গেছে। নিজের নৈপুণ্যে সাতক্ষীরাকেও উজ্জ্বল করেছেন মুস্তাফিজ। ২০ বছর বয়সী এ বাঁ-হাতি বোলার এখন সীমান্ত জেলার নতুন নায়ক। গতকাল নিজ জন্মস্থানে ফিরেছেন তিনি। জাতীয় তারকায় পরিণত হলেও এলাকার কথা ভোলেননি তিনি। বিস্ময় বালকের কণ্ঠে বিনয়ী কৃতজ্ঞতা প্রকাশ পায়। বলেন, সাতক্ষীরাবাসীর দোয়া ও আশীর্বাদে আজ আমি এ পর্যন্ত আসতে পেরেছি। সুযোগ পেলে সামনে আরও ভাল কিছু করতে চাই। এ পর্যন্ত জাতীয় দলে সাতক্ষীরা থেকে তিনজন ক্রিকেটার সুযোগ পেয়েছে। আমি আশা করি সামনে আরও অনেক খোলোয়াড় সাতক্ষীরা থেকে সুযোগ পাবে। গতকাল বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটে যশোর বিমানবন্দর থেকে সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজে এসে পৌঁছান ‘ভারত বধ’-এর নায়ক মুস্তাফিজুর রহমান।
সার্কিট হাউজে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে মিষ্টিমুখ ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সার্বিক এ এফ এম এহতেশামূল হক, সাতক্ষীরা সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শেখ নিজামউদ্দীন, মুস্তাফিজের ক্রিকেট গুরু মোফাসিনুল হক তপু, তার সেজো ভাই মোখলেসুর রহমান পল্টুসহ জেলা প্রশাসন, ক্রীড়া সংস্থার কর্মকর্তাবৃন্দ এবং তার গ্রামের বাড়ি থেকে আসা স্বজনরা। পরে মুস্তাফিজ সাংবাদিকদের কাছে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, জাতীয় দলে যাদের সহযোগিতায় সুযোগ পেয়েছেন তাদের কাছে তিনি কৃতজ্ঞ। ক্রিকেট নিয়ে তার ভবিষ্যৎ কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার কথা না থাকলেও দেশের জন্য ভাল কিছু করার প্রত্যয় আছে তার। পরে সার্কিট হাউজ থেকে গ্রাম থেকে আসা গাড়ি বহরের সঙ্গে নেভি ব্লু প্রাইভেট কারে চলে যান মুস্তাফিজের জন্মভূমি কালীগঞ্জ উপজেলার বরেয়া গ্রামে।
এদিকে যশোর থেকে স্টাফ রিপোর্টার জানান, প্রাণঢালা ভালোবাসা আর ভক্ত অনুরাগীদের ফুলের শুভেচ্ছায় সিক্ত হলেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের বরপুত্র ‘সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস’ খ্যাত মুস্তাফিজুর রহমান। গতকাল সকালে বাংলাদেশ বিমানের নিয়মিত ফ্লাইটে মুস্তাফিজ ঢাকা থেকে যশোর যান। যশোর বিমানবন্দরে তাকে দেয়া হয় রাজকীয় সংবর্ধনা। হাজার হাজার ভক্ত অনুরাগীর উপস্থিতিতে বিশ্ব কাঁপানো এই পেস বোলার ফুলে ফুলে সিক্ত হন। মা বাবা ভাই বোনসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বিমানবন্দরে জড়ো হয় হাজারো মুস্তাফিজভক্ত। বিমান থেকে নেমেই স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে তিনি সকলকে অভিবাদন জানান। তার পর দৌড়ে মায়ের আঁচলে মুখটি লুকান কিছু সময়ের জন্য। তার পর মায়ের পা ছুঁয়ে দোয়া নিয়ে বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে বেরিয়ে আসেন সদা হাস্যোজ্বল মুস্তাফিজ। সহজ সরল ভঙ্গিতে তিনি উপস্থিত সকলকে হাত নেড়ে নেড়ে শুভেচ্ছা জানান। খোঁজ খবর নেন তার প্রিয় জন্মভূমি সাতক্ষীরার শ্যামনগরের মানুষের। তার পর বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে মোটর শোভাযাত্রা সহকারে রওনা হন জন্মভূমির উদ্দেশে। সে সময় যশোর বিমানবন্দর সড়কের দুই পাশে শত শত নারী পুরুষ হাত নেড়ে মুস্তাফিজকে অভিনন্দন জানান। মুস্তাফিজ ছাদখোলা জিপের ওপর দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে সকলকে শুভেচ্ছা জানান এবং ভক্তদের অভিবাদনের জবাব দেন। সে সময় পাশে বসে থাকা মা , চাচী আর খালার মুখ জুড়ে ছিল এক অনাবিল হাসি। দীর্ঘ চার মাস পর মায়ের কোলে ফিরেছেন ‘সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস’ খ্যাত বিশ্ব কাঁপানো ক্রিকেটার মুস্তাফিজুর রহমান। তার আগমন উপলক্ষে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার তেঁতুলিয়া গ্রামে বইছে আনন্দের বন্যা। রোজার ঈদে প্রিয় এই ক্রিকেটারকে কাছে না পেয়ে তার পরিবারসহ বন্ধুদের ঈদআনন্দ ফিকে হয়ে গিয়েছিল। তার আগমন উপলক্ষে যেন ঈদের আনন্দে ভাসছে গোটা সাতক্ষীরা।
ক্রিকেটার মুস্তাফিজ জানান, গতকাল সকাল ৯টার ফ্লাইটে তিনি ঢাকা থেকে যশোরের উদ্দেশে রওনা হন। নিজ এলাকায় থাকবেন বেশ কয়েক দিন। বিমানবন্দরে উপস্থিত তার বড় ভাই পল্টু জানান, মুস্তাফিজকে বরণ করতে যশোর বিমানবন্দরে যান এলাকার কয়েকশ’ মানুষ। সেখান থেকে তারা আনন্দ মিছিল সহকারে সাতক্ষীরার শ্যামনগরে যাবেন। মুস্তাফিজকে বরণ করতে আসা তার তিন বন্ধু মিয়ারাজ হোসেন, মেহেদী হাসান ও মিজানুর রহমান জানালেন, তাদের প্রিয় বন্ধুকে অনেক দিন পরে ফিরে পাচ্ছেন তারা। বন্ধুকে নিয়ে নানা জায়গায় ঘুরবেন। এ নিয়ে নানান স্বপ্ন বুনছেন তারা। মুস্তাফিজের বাবা আলহাজ আবুল কাশেম বলেন, ‘মুস্তাফিজ যখন বাসা থেকে গিয়েছিল তখন সে ছিল আমাদের পরিবারের। এখন দেশ জয় করে ফিরছে। সে এখন আর আমাদের মুস্তাফিজ নয়, সে সবার মুস্তাফিজ। সে গোটা সাতক্ষীরার মানুষের সম্পদ।’ মা মাহমুদা খাতুন জানান, বাড়ির ছোট ছেলের প্রতি সবার টান থাকে, ছোট ছেলের জন্য মন খারাপ হয়। তবুও করার কিছু নেই। সে অনেক দিন পর বাড়িতে ফিরছে। শুনে আনন্দ লাগছে। সে আজ দেশ জয় করে ঘরে ফিরছে, এর চেয়ে বড় পাওয়ার কিছু নেই। এদিকে, সৌম্যের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে রোববার সাতক্ষীরায় ফিরবেন তিনি। এই দুই তারকা ক্রিকেটারকে নিয়ে সাতক্ষীরাবাসীর অনেক স্বপ্ন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই দুই তারকা ক্রিকেটারকে সংবর্ধনা দেয়া হবে বলে জানা গেছে। তবে বিশ্বমানের এই ক্রিকেট তারকাকে বরণ করতে বিমানবন্দরে যশোর ক্রীড়া সংস্থার কোন প্রতিনিধিকে দেখা যায়নি।
সংবাদ শিরোনাম
চার মাস পর জন্মস্থানে সাতক্ষীরা এক্সপ্রেস গিয়েছিলেন নীরবে ফিরলেন বিশ্ব কাঁপিয়ে
- Reporter Name
- আপডেট টাইম : ০১:০৮:০৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ অগাস্ট ২০১৫
- ২৫৬ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ