ঢাকা ০৮:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দেশে চালু হচ্ছে গুগল পে: কীভাবে কাজ করে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০০:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫
  • ১৫ বার

সময় যত পাল্টাচ্ছে, বাজারে দাঁড়িয়ে আরেকজনের কাছ থেকে খুচরা নেওয়ার দিন যেন ততই পেছনে পড়ে যাচ্ছে। কাগজের নোটের বদলে এখন মোবাইল স্ক্রিনেই সবকিছু মিটে যায়।

এমন প্রযুক্তিনির্ভর লেনদেনে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যমগুলোর একটি হচ্ছে গুগল পে। আর এই আধুনিক ও সহজ পেমেন্ট সেবা বাংলাদেশেও শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হতে যাচ্ছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক গুগল পে কী? এটি কীভাবে কাজ করে? এতে কী কী সুবিধা পাওয়া যায় এবং এর সুরক্ষা ব্যবস্থা কেমন?

গুগল পে আসলে কী?

গুগল পে হলো গুগলের তৈরি একটি ডিজিটাল ওয়ালেট ও অনলাইন পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম, যার মাধ্যমে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে খুব সহজে এবং দ্রুত টাকা লেনদেন করা যায়। এটি মূলত এনএফসি (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) বা ব্যাংক লিংকড পেমেন্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করে। গুগল পে-এর মাধ্যমে আপনি যে কোনো ধরনের অনলাইন পেমেন্ট করতে পারবেন।যেমন- দোকানে পণ্য কিনতে পারেন, অনলাইন শপিং করতে পারেন, বন্ধুদের টাকা পাঠাতে পারেন কিংবা ইউটিলিটি বিলও দিতে পারেন।

কীভাবে কাজ করে গুগল পে?

গুগল পে ব্যবহার করতে হলে, আপনার স্মার্টফোনে গুগল পে অ্যাপ ইনস্টল থাকতে হবে। এরপর আপনাকে সহজ কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে-

১. অ্যাপটি ওপেন করে আপনার গুগল অ্যাকাউন্টে লগ ইন করতে হবে।

২. এরপর আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট/ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের তথ্য সংযুক্ত করতে হবে।

৩. এরপর পিন বা বায়োমেট্রিক সুরক্ষা সেট করুন

৪. সব ধাপ সম্পুর্ণ হলে-এরপর আপনি টাকা পাঠাতে বা নিতে পারবেন কিউআর কোড স্ক্যান করে। এছাড়াও ফোন নম্বর দিয়েও লেনদেন করতে পারবেন।

বিশেষ করে বাংলাদেশে এটি নগদ, বিকাশ, রকেট ইত্যাদি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস)-এর সঙ্গে সংযুক্ত থাকলে, এর ব্যবহার আরও সহজ হবে।

গুগল পে-এর সুবিধাগুলো কী কী?

১. ঝামেলাহীন লেনদেন: টাকা পাঠাতে বা পেতে অর্থাৎ লেনদেন করতে ব্যাংকে যাওয়ার দরকার হয় না। এছাড়াও খুচরা টাকা গুনেও সময় নষ্ট হয় না।

২. দ্রুত ট্রান্সফার: রিয়েল-টাইমে অর্থাৎ সাথে সাথেই মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই টাকা লেনদেন হয়।

৩. ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট: খুব দ্রুত ও স্মার্টভাবে বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, ইন্টারনেট, মোবাইল রিচার্জ করা যায় গুগল পে-এর মাধ্যমে।

৪. ব্যবসার জন্য সুবিধা: ছোট বা বড় দোকানদাররা খুব সহজেই কিউআর কোড সেটআপ করে ডিজিটাল পেমেন্ট নিতে পারবেন। এতে সময়ও বাঁচবে। হিসাবে ভুল হওয়ার সম্ভবনাও কম থাকবে।

৫. টাকা হারানোর ভয় নেই: অনেকেই পকেটে করে টাকা বহন করতে গিয়ে ছিনতাইয়ের স্বীকার হন বা হারিয়ে ফেলে। গুগল পে থাকলে এই টাকা হারানোর ভয় বা ছিনতাইয়ের ভয় আর থাকবে না।

৬. ইনসেন্টিভ ও রিওয়ার্ড: অনেক সময় গুগল পে ব্যবহার করলে ক্যাশব্যাক পাওয়া যায়। সেইসঙ্গে পাওয়া যায় রিওয়ার্ড পয়েন্টও, যা দিয়ে পরবর্তীতে বিশেষ সুবিধা নিতে পারবেন।

গুগল পে-এর সুরক্ষা ব্যবস্থা কেমন?

গুগল পে-এর অন্যতম বড় শক্তি এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ব্যবহারকারীর তথ্য, কার্ডের ডেটা কিংবা ব্যালেন্স সবই থাকে এনক্রিপ্টেড ও ক্লাউড সুরক্ষিত। ফোন হারিয়ে গেলেও তথ্য অন্য কেউ পাবে না, কারণ এতে আছে বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশন (ফিঙ্গারপ্রিন্ট/ফেস আইডি) সিস্টেম, পিন কোডের মাধ্যমে সুরক্ষা, রিয়েল-টাইম নোটিফিকেশন ও ট্রান্স্যাকশন হিস্টোরির ব্যবস্থা।

সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা সুবিধা হলো, গুগল পে-তে গুগলের ফ্রড মনিটরিং সিস্টেম সবসময় সক্রিয় থাকে। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ডিজিটাল পেমেন্ট নিয়মাবলি মেনে গুগল পে চালু করা হবে, ফলে এটি হবে সরকার অনুমোদিত এবং নিয়মতান্ত্রিক।

বাংলাদেশে কাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী হবে এটি?

১. যারা প্রতিনিয়ত অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত

২. ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী, যারা ক্যাশহীন পেমেন্টে আগ্রহী

৩। প্রবাসী রেমিটেন্স গ্রহীতা, কারণ বিদেশ থেকেও টাকা পাঠানো সহজ হবে

৪। ফ্রিল্যান্সার ও গিগ-ওয়ার্কারদের জন্যও এটি একটি কার্যকর মাধ্যম হয়ে উঠবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

দেশে চালু হচ্ছে গুগল পে: কীভাবে কাজ করে

আপডেট টাইম : ১১:০০:২৬ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৮ জুন ২০২৫

সময় যত পাল্টাচ্ছে, বাজারে দাঁড়িয়ে আরেকজনের কাছ থেকে খুচরা নেওয়ার দিন যেন ততই পেছনে পড়ে যাচ্ছে। কাগজের নোটের বদলে এখন মোবাইল স্ক্রিনেই সবকিছু মিটে যায়।

এমন প্রযুক্তিনির্ভর লেনদেনে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যমগুলোর একটি হচ্ছে গুগল পে। আর এই আধুনিক ও সহজ পেমেন্ট সেবা বাংলাদেশেও শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হতে যাচ্ছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক গুগল পে কী? এটি কীভাবে কাজ করে? এতে কী কী সুবিধা পাওয়া যায় এবং এর সুরক্ষা ব্যবস্থা কেমন?

গুগল পে আসলে কী?

গুগল পে হলো গুগলের তৈরি একটি ডিজিটাল ওয়ালেট ও অনলাইন পেমেন্ট প্ল্যাটফর্ম, যার মাধ্যমে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে খুব সহজে এবং দ্রুত টাকা লেনদেন করা যায়। এটি মূলত এনএফসি (নিয়ার ফিল্ড কমিউনিকেশন) বা ব্যাংক লিংকড পেমেন্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে কাজ করে। গুগল পে-এর মাধ্যমে আপনি যে কোনো ধরনের অনলাইন পেমেন্ট করতে পারবেন।যেমন- দোকানে পণ্য কিনতে পারেন, অনলাইন শপিং করতে পারেন, বন্ধুদের টাকা পাঠাতে পারেন কিংবা ইউটিলিটি বিলও দিতে পারেন।

কীভাবে কাজ করে গুগল পে?

গুগল পে ব্যবহার করতে হলে, আপনার স্মার্টফোনে গুগল পে অ্যাপ ইনস্টল থাকতে হবে। এরপর আপনাকে সহজ কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে-

১. অ্যাপটি ওপেন করে আপনার গুগল অ্যাকাউন্টে লগ ইন করতে হবে।

২. এরপর আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট/ডেবিট/ক্রেডিট কার্ডের তথ্য সংযুক্ত করতে হবে।

৩. এরপর পিন বা বায়োমেট্রিক সুরক্ষা সেট করুন

৪. সব ধাপ সম্পুর্ণ হলে-এরপর আপনি টাকা পাঠাতে বা নিতে পারবেন কিউআর কোড স্ক্যান করে। এছাড়াও ফোন নম্বর দিয়েও লেনদেন করতে পারবেন।

বিশেষ করে বাংলাদেশে এটি নগদ, বিকাশ, রকেট ইত্যাদি মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস)-এর সঙ্গে সংযুক্ত থাকলে, এর ব্যবহার আরও সহজ হবে।

গুগল পে-এর সুবিধাগুলো কী কী?

১. ঝামেলাহীন লেনদেন: টাকা পাঠাতে বা পেতে অর্থাৎ লেনদেন করতে ব্যাংকে যাওয়ার দরকার হয় না। এছাড়াও খুচরা টাকা গুনেও সময় নষ্ট হয় না।

২. দ্রুত ট্রান্সফার: রিয়েল-টাইমে অর্থাৎ সাথে সাথেই মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই টাকা লেনদেন হয়।

৩. ইউটিলিটি বিল পেমেন্ট: খুব দ্রুত ও স্মার্টভাবে বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, ইন্টারনেট, মোবাইল রিচার্জ করা যায় গুগল পে-এর মাধ্যমে।

৪. ব্যবসার জন্য সুবিধা: ছোট বা বড় দোকানদাররা খুব সহজেই কিউআর কোড সেটআপ করে ডিজিটাল পেমেন্ট নিতে পারবেন। এতে সময়ও বাঁচবে। হিসাবে ভুল হওয়ার সম্ভবনাও কম থাকবে।

৫. টাকা হারানোর ভয় নেই: অনেকেই পকেটে করে টাকা বহন করতে গিয়ে ছিনতাইয়ের স্বীকার হন বা হারিয়ে ফেলে। গুগল পে থাকলে এই টাকা হারানোর ভয় বা ছিনতাইয়ের ভয় আর থাকবে না।

৬. ইনসেন্টিভ ও রিওয়ার্ড: অনেক সময় গুগল পে ব্যবহার করলে ক্যাশব্যাক পাওয়া যায়। সেইসঙ্গে পাওয়া যায় রিওয়ার্ড পয়েন্টও, যা দিয়ে পরবর্তীতে বিশেষ সুবিধা নিতে পারবেন।

গুগল পে-এর সুরক্ষা ব্যবস্থা কেমন?

গুগল পে-এর অন্যতম বড় শক্তি এর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ব্যবহারকারীর তথ্য, কার্ডের ডেটা কিংবা ব্যালেন্স সবই থাকে এনক্রিপ্টেড ও ক্লাউড সুরক্ষিত। ফোন হারিয়ে গেলেও তথ্য অন্য কেউ পাবে না, কারণ এতে আছে বায়োমেট্রিক অথেনটিকেশন (ফিঙ্গারপ্রিন্ট/ফেস আইডি) সিস্টেম, পিন কোডের মাধ্যমে সুরক্ষা, রিয়েল-টাইম নোটিফিকেশন ও ট্রান্স্যাকশন হিস্টোরির ব্যবস্থা।

সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা সুবিধা হলো, গুগল পে-তে গুগলের ফ্রড মনিটরিং সিস্টেম সবসময় সক্রিয় থাকে। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত ডিজিটাল পেমেন্ট নিয়মাবলি মেনে গুগল পে চালু করা হবে, ফলে এটি হবে সরকার অনুমোদিত এবং নিয়মতান্ত্রিক।

বাংলাদেশে কাদের জন্য সবচেয়ে উপযোগী হবে এটি?

১. যারা প্রতিনিয়ত অনলাইন কেনাকাটায় অভ্যস্ত

২. ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ী, যারা ক্যাশহীন পেমেন্টে আগ্রহী

৩। প্রবাসী রেমিটেন্স গ্রহীতা, কারণ বিদেশ থেকেও টাকা পাঠানো সহজ হবে

৪। ফ্রিল্যান্সার ও গিগ-ওয়ার্কারদের জন্যও এটি একটি কার্যকর মাধ্যম হয়ে উঠবে।