ঢাকা ১১:৩৪ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৫০ হাজারেও চলে না সংসার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৫:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪
  • ১ বার

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মনির আহমেদ। মাসে সর্বমোট তার বেতন ৫০ হাজার টাকা। স্ত্রী ও দুই সন্তানের সংসার। দুই বেডের ভাড়া বাসা নিয়ে থাকেন বনশ্রী এলাকায়। বাসা ভাড়া ১৬ হাজার টাকা; সংসারের খাবার খরচে ব্যয় হয় ১৮ হাজার টাকা; পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, ডিশ বিল, ইন্টারনেট বিল, গৃহকর্মী বেতনসহ খরচ হয় প্রায় ৬ হাজার টাকা; অফিস যাতায়াতে ব্যয় হয় প্রায় ৫ হাজার টাকা; সন্তানের স্কুল বেতন ৬ হাজার টাকা এবং আসা-যাওয়ায় খরচ হয় আরও ৩ হাজার টাকা; গৃহশিক্ষক আর কোচিংয়ে ব্যয় আরও ৮ হাজার টাকা। এসব মিলিয়ে ব্যয় দাঁড়ায় ৬২ হাজার টাকা। সন্তানের স্কুলড্রেস, বই-খাতা ক্রয়, বিনোদন ব্যয়, বিভিন্ন সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে যোগদান, চিকিৎসা-ব্যয় ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয় তো রয়েই গেছে। ফলে প্রতি মাসেই তাকে সংসার চালাতে ধারদেনা করতে হচ্ছে। মাসশেষে যখন বেতন পান, তখন সেই ধারদেনা শোধেই চলে যায় বড় একটা অঙ্ক। এভাবে যত দিন যাচ্ছে, ততই বাড়ছে তার ধারদেনা। সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন মনির। ফলে যারপরনাই টেনশনে কাটছে তার দিন। যত দিন যাচ্ছে বাড়ছে ধারদেনা, বাড়ছে তার টেনশনও। অনেক ভেবেও কোনো কূলকিনারা পাচ্ছেন না তিনি।

শুধু মনির আহমেদই নন, মূল্যস্ফীতির চাপে চিড়েচ্যাপ্টা দশা সমাজের অধিকাংশ মানুষের। নিম্নবিত্তদের অবস্থা আরও সঙ্গীন। বৈশি^ক মহামারী করোনা ভাইরাসের ধাক্কার পর আসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই দুটির বড় ধাক্কা লাগে পুরো বিশে^র অর্থনীতিতেই। বিশে^র অনেক দেশই ইতোমধ্যে এটি কাটিয়ে উঠলেও বাংলাদেশ এখনও পড়ে আছে এর আবর্তে। বিগত সরকার নানা ধরনের আশ^াস দিলেও বাস্তবে এর ফল মেলেনি। মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট দেশের সাধারণ মানুষের যাপিত জীবন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই মাসে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগস্টে এ হার কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমালেও এখনো তা ৯ শতাংশের উপরেই রয়ে গেছে। আগস্টের তুলনায় কিছুটা কমে সেপ্টেম্বরে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে। যদিও বিবিএসের এ তথ্য নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন রয়েছে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের। তারা বলছেন, বাজারে জিনিসপত্রের প্রকৃত মূল্যবৃদ্ধির হারের সঙ্গে বিবিএসের দেওয়া তথ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থায় রয়েছে।

রাজধানীর বাজারগুলোতে এখনও নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী। চালের কেজি ৬০ টাকা থেকে ৭৫ টাকা। অধিকাংশ সবজির কেজি শতক ছাড়িয়ে গেছে। ডাল, তেল, আটা-ময়দা থেকে শুরু করে সব নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে

বেড়েছে, বাড়ছে। এর সঙ্গে দৌড়ে বাড়ছে বাসা ভাড়া, ওষুধ, শিক্ষাব্যয়সহ আবশ্যকীয় সবকিছুর দামও।

এদিকে বাজার তদারকিতে সারা দেশে টাস্কফোর্স গঠন করেও কমানো যাচ্ছে না নিত্যপণ্যের দাম। গত সোমবার দেশের প্রতিটি জেলা পর্যায়ে টাস্কফোর্স গঠনের পর ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম বরং আরও বেড়েছে। দামবৃদ্ধির তালিকায় যুক্ত হয়েছে ময়দা, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল, গরুর মাংসসহ সব ভোগ্যপণ্যের দাম।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পণ্যমূল্য কমাতে ইতিমধ্যে বেশকিছু পণ্যের শুল্ককর কমিয়েছে সরকার। আবার কোনোটির শুল্ককর কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু এর সুফল মিলছে না ভোক্তাপর্যায়ে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাজার এখনো সিন্ডিকেটের কব্জায়। এ কারণে পণ্যমূল্যে স্বস্তি মিলছে না।

গতকাল শনিবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি প্যাকেট ময়দায় ৫ টাকা বেড়ে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজে ৫-১০ টাকা বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকা এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজে ১০ টাকা বেড়ে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলে ২০ টাকা বেড়ে ৮০০ থেকে ৮১০ টাকা ও খোলা পামঅয়েলে ৩-৭ টাকা বেড়ে ১৪৪ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংসের কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, খাসির মাংস সাড়ে ৯শ থেকে ১ হাজার টাকা। বাড়তে থাকা ডিম ও মুরগির দাম চলতি সপ্তাহে আরও বেড়েছে; ডিম হালিতে বেড়েছে ২-৪ টাকা আর মুরগি কেজিতে ১০ টাকা।

খুচরা বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে বেগুন ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, বরবটি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, করল্লা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ঝিঙা, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ থেকে ৯০ টাকা, পটোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সবজির মধ্যে পেঁপের দাম তুলনামূলক কম, ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। তবে কাঁচামরিচের দর সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, প্রতিটি সবজির দাম হু হু করে বাড়ছে। দাম বাড়তির কারণে এখন এক কেজি সবজি কেনাও কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই সবজি আধা কেজি করে কিনছি।

বিক্রেতারা বলছেন- বন্যা, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে পণ্যের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া বাজারে পণ্যের সরবরাহও কম।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আমাদের সময়কে বলেন, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারও আগের সরকারের মতো একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রায় একই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, হঠাৎ কোনো পদক্ষেপে আর হঠাৎ নেওয়া কোনো উদ্যোগে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে এবং সেভাবেই উদ্যোগ নিয়ে বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এতে সুফল পেতে দেরি হলেও তা হবে টেকসই। তিনি যোগ করেন, এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি বাজার ব্যবস্থা, আইনগত ব্যবস্থা দরকার। পাশাপাশি ব্যবসার আইনি বিধিবিধানেরও সংস্কার দরকার।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অব্যাহত বন্যা ও বর্ষার কারণে ধান ও কৃষিপণ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে খাদ্যসংকটের আশঙ্কা আছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আগেভাগেই সরকারের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। প্রয়োজনে আমদানির বিষয়টি আগে থেকে মাথায় রাখতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া আমাদের সময়কে বলেন, পুরনো সিন্ডিকেটই এখনও বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। বাজার নিয়ন্ত্রণে আওয়ামী লীগ সরকার স্বীকার করে বলেছিল, বাজারে সিন্ডিকেট আছে এবং তা ভাঙা অসম্ভব। আমাদের ধারণা ছিল, অন্তর্বর্তী সরকার এ সিন্ডিকেট ভাঙতে পারবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সিন্ডিকেট ভাঙা যাচ্ছে না। পুরনো সিন্ডিকেটই নতুন করে বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। তারা একের সময় একেক অজুহাত দাঁড় করিয়ে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি মানুষের বিশ^াস জন্মেছে যে, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। তাই এ সরকারই পারে সিন্ডিকেট ভেঙে পণ্যের দাম কমাতে। বাজারকে অর্থলোভী সিন্ডিকেটমুক্ত করতে বর্তমান সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানান ক্যাবের এই সাধারণ সম্পাদক।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

৫০ হাজারেও চলে না সংসার

আপডেট টাইম : ১০:৪৫:৫২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৩ অক্টোবর ২০২৪

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন মনির আহমেদ। মাসে সর্বমোট তার বেতন ৫০ হাজার টাকা। স্ত্রী ও দুই সন্তানের সংসার। দুই বেডের ভাড়া বাসা নিয়ে থাকেন বনশ্রী এলাকায়। বাসা ভাড়া ১৬ হাজার টাকা; সংসারের খাবার খরচে ব্যয় হয় ১৮ হাজার টাকা; পানি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, ডিশ বিল, ইন্টারনেট বিল, গৃহকর্মী বেতনসহ খরচ হয় প্রায় ৬ হাজার টাকা; অফিস যাতায়াতে ব্যয় হয় প্রায় ৫ হাজার টাকা; সন্তানের স্কুল বেতন ৬ হাজার টাকা এবং আসা-যাওয়ায় খরচ হয় আরও ৩ হাজার টাকা; গৃহশিক্ষক আর কোচিংয়ে ব্যয় আরও ৮ হাজার টাকা। এসব মিলিয়ে ব্যয় দাঁড়ায় ৬২ হাজার টাকা। সন্তানের স্কুলড্রেস, বই-খাতা ক্রয়, বিনোদন ব্যয়, বিভিন্ন সামাজিক আচার অনুষ্ঠানে যোগদান, চিকিৎসা-ব্যয় ইত্যাদি ইত্যাদি বিষয় তো রয়েই গেছে। ফলে প্রতি মাসেই তাকে সংসার চালাতে ধারদেনা করতে হচ্ছে। মাসশেষে যখন বেতন পান, তখন সেই ধারদেনা শোধেই চলে যায় বড় একটা অঙ্ক। এভাবে যত দিন যাচ্ছে, ততই বাড়ছে তার ধারদেনা। সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন মনির। ফলে যারপরনাই টেনশনে কাটছে তার দিন। যত দিন যাচ্ছে বাড়ছে ধারদেনা, বাড়ছে তার টেনশনও। অনেক ভেবেও কোনো কূলকিনারা পাচ্ছেন না তিনি।

শুধু মনির আহমেদই নন, মূল্যস্ফীতির চাপে চিড়েচ্যাপ্টা দশা সমাজের অধিকাংশ মানুষের। নিম্নবিত্তদের অবস্থা আরও সঙ্গীন। বৈশি^ক মহামারী করোনা ভাইরাসের ধাক্কার পর আসে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই দুটির বড় ধাক্কা লাগে পুরো বিশে^র অর্থনীতিতেই। বিশে^র অনেক দেশই ইতোমধ্যে এটি কাটিয়ে উঠলেও বাংলাদেশ এখনও পড়ে আছে এর আবর্তে। বিগত সরকার নানা ধরনের আশ^াস দিলেও বাস্তবে এর ফল মেলেনি। মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট দেশের সাধারণ মানুষের যাপিত জীবন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জুলাই মাসে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগস্টে এ হার কিছুটা কমে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমালেও এখনো তা ৯ শতাংশের উপরেই রয়ে গেছে। আগস্টের তুলনায় কিছুটা কমে সেপ্টেম্বরে দাঁড়ায় ৯ দশমিক ৯২ শতাংশে। যদিও বিবিএসের এ তথ্য নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন রয়েছে অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকদের। তারা বলছেন, বাজারে জিনিসপত্রের প্রকৃত মূল্যবৃদ্ধির হারের সঙ্গে বিবিএসের দেওয়া তথ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। বাংলাদেশে বর্তমানে মূল্যস্ফীতির হার দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থায় রয়েছে।

রাজধানীর বাজারগুলোতে এখনও নিত্যপণ্যের দাম আকাশচুম্বী। চালের কেজি ৬০ টাকা থেকে ৭৫ টাকা। অধিকাংশ সবজির কেজি শতক ছাড়িয়ে গেছে। ডাল, তেল, আটা-ময়দা থেকে শুরু করে সব নিত্যপণ্যের দাম হু হু করে

বেড়েছে, বাড়ছে। এর সঙ্গে দৌড়ে বাড়ছে বাসা ভাড়া, ওষুধ, শিক্ষাব্যয়সহ আবশ্যকীয় সবকিছুর দামও।

এদিকে বাজার তদারকিতে সারা দেশে টাস্কফোর্স গঠন করেও কমানো যাচ্ছে না নিত্যপণ্যের দাম। গত সোমবার দেশের প্রতিটি জেলা পর্যায়ে টাস্কফোর্স গঠনের পর ডিম ও ব্রয়লার মুরগির দাম বরং আরও বেড়েছে। দামবৃদ্ধির তালিকায় যুক্ত হয়েছে ময়দা, পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল, গরুর মাংসসহ সব ভোগ্যপণ্যের দাম।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেছেন, পণ্যমূল্য কমাতে ইতিমধ্যে বেশকিছু পণ্যের শুল্ককর কমিয়েছে সরকার। আবার কোনোটির শুল্ককর কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রায় প্রতিদিনই বাজারে অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু এর সুফল মিলছে না ভোক্তাপর্যায়ে। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, বাজার এখনো সিন্ডিকেটের কব্জায়। এ কারণে পণ্যমূল্যে স্বস্তি মিলছে না।

গতকাল শনিবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি প্যাকেট ময়দায় ৫ টাকা বেড়ে ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা, দেশি পেঁয়াজে ৫-১০ টাকা বেড়ে ১১০ থেকে ১২০ টাকা এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজে ১০ টাকা বেড়ে ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া পাঁচ লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেলে ২০ টাকা বেড়ে ৮০০ থেকে ৮১০ টাকা ও খোলা পামঅয়েলে ৩-৭ টাকা বেড়ে ১৪৪ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংসের কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, খাসির মাংস সাড়ে ৯শ থেকে ১ হাজার টাকা। বাড়তে থাকা ডিম ও মুরগির দাম চলতি সপ্তাহে আরও বেড়েছে; ডিম হালিতে বেড়েছে ২-৪ টাকা আর মুরগি কেজিতে ১০ টাকা।

খুচরা বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির মধ্যে বেগুন ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, বরবটি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, করল্লা ১০০ থেকে ১২০ টাকা, ঝিঙা, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা ৮০ থেকে ১০০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ থেকে ৯০ টাকা, পটোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, কাঁকরোল ১০০ থেকে ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সবজির মধ্যে পেঁপের দাম তুলনামূলক কম, ৪০ থেকে ৫০ টাকা কেজি। তবে কাঁচামরিচের দর সবকিছুকে ছাড়িয়ে গেছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা।

সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে সবজি কিনতে আসা এক ক্রেতা বলেন, প্রতিটি সবজির দাম হু হু করে বাড়ছে। দাম বাড়তির কারণে এখন এক কেজি সবজি কেনাও কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই সবজি আধা কেজি করে কিনছি।

বিক্রেতারা বলছেন- বন্যা, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে পণ্যের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া বাজারে পণ্যের সরবরাহও কম।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আমাদের সময়কে বলেন, নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকারও আগের সরকারের মতো একই বৃত্তে ঘুরপাক খাচ্ছে। প্রায় একই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, হঠাৎ কোনো পদক্ষেপে আর হঠাৎ নেওয়া কোনো উদ্যোগে মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে এবং সেভাবেই উদ্যোগ নিয়ে বাস্তবায়নের দিকে এগিয়ে যেতে হবে। এতে সুফল পেতে দেরি হলেও তা হবে টেকসই। তিনি যোগ করেন, এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি বাজার ব্যবস্থা, আইনগত ব্যবস্থা দরকার। পাশাপাশি ব্যবসার আইনি বিধিবিধানেরও সংস্কার দরকার।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, অব্যাহত বন্যা ও বর্ষার কারণে ধান ও কৃষিপণ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে খাদ্যসংকটের আশঙ্কা আছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে আগেভাগেই সরকারের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। প্রয়োজনে আমদানির বিষয়টি আগে থেকে মাথায় রাখতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভূঁইয়া আমাদের সময়কে বলেন, পুরনো সিন্ডিকেটই এখনও বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। বাজার নিয়ন্ত্রণে আওয়ামী লীগ সরকার স্বীকার করে বলেছিল, বাজারে সিন্ডিকেট আছে এবং তা ভাঙা অসম্ভব। আমাদের ধারণা ছিল, অন্তর্বর্তী সরকার এ সিন্ডিকেট ভাঙতে পারবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সিন্ডিকেট ভাঙা যাচ্ছে না। পুরনো সিন্ডিকেটই নতুন করে বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। তারা একের সময় একেক অজুহাত দাঁড় করিয়ে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি মানুষের বিশ^াস জন্মেছে যে, তারা কোনো রাজনৈতিক দলের নয়। তাই এ সরকারই পারে সিন্ডিকেট ভেঙে পণ্যের দাম কমাতে। বাজারকে অর্থলোভী সিন্ডিকেটমুক্ত করতে বর্তমান সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানান ক্যাবের এই সাধারণ সম্পাদক।