রাজশাহীতে এবার সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজশাহী কৃষি অঞ্চলে এবার সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার আম বাণিজ্যের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। আমের উৎপাদন নিয়ে শঙ্কা থাকলেও আমের দাম গতবারের তুলনায় বেশ ভালো হওয়ায় এ সম্ভাবনা দেখছেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা।

রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও নাটোর জেলা নিয়ে রাজশাহী কৃষি অঞ্চল। এ অঞ্চলে বৈরি আবহাওয়ার কারণে আমের মুকুল ঝরে পড়ে। ফলে আমের উৎপাদনে শঙ্কা তৈরি হয়। কৃষি বিভাগের মতে, আমের ঘনত্ব কম হলে ফল আকারে বড় হয়। এক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশা করছেন। অপরদিকে, চাষিরা বলছেন-কৃষি বিভাগের পরিসংখ্যান ভুল। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না। কিন্তু দামের ক্ষেত্রে গতবারের দ্বিগুণ হওয়ায় পুুষিয়ে যাবে।

কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী কৃষি অঞ্চলে চলতি মৌসুমে আমবাগান রয়েছে ৯০ হাজার ৮৯৮ হেক্টর। এসব জমিতে আমের উৎপাদন হবে প্রায় ৯ লাখ ৫৬০ মেট্রিকটন আম। হেক্টরে প্রায় ১০ দশমিক ৫৬ টন হিসেবে ফলন ধরা হয়েছে। প্রতিকেজি আমের দাম গড়ে ৬০ টাকা হিসেবে ৫ হ্জাার ৭৬০ কোটি টাকার বাণিজ্য সম্ভবনা তৈরি হয়েছে। গতবারের তুলনায় এবার উৎপাদন হেক্টরে ২ দশমিক শূণ্য ৪ টন কম বলেও জানায় কৃষি বিভাগ।

চার জেলার আম উৎপাদনের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা যায়, চলতি মৌসুমে রাজশাহী জেলার ৯ উপজেলা ও মহানগরে এবার ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে আমবাগান আছে। হেক্টরপ্রতি গড় ফলন ধরা হয়েছে ১১ দশমিক ৬০ মেট্রিক টন। আমের মোট উৎপাদন হতে পারে ২ লাখ ১৪ হাজার ৬৭৬ মেট্রিক টন। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় মোট আমবাগান ছিল ১৭ হাজার ৬৮৬ হেক্টর। ওই মৌসুমে আম উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৭৯ হাজার ৫৪০ দশমিক ৫৩ টন। সব মিলিয়ে ৯০০ কোটি টাকার বেশি আম বাণিজ্য হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

আমের নতুন রাজধানী নওগাঁ জেলায় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টরে জমিতে ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৪৩৫ মেট্রিক টন আম উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এবার হেক্টরে উৎপাদন ধরা হয়েছে ১২ দশমিক ৫০ মেট্ট্রিকটন। প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার আম বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। আর এ আমের ৭৬ শতাংশ আম আম্রপালি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ৩৮ হাজার হেক্টর জমিতে ৩ লাখ ২৫ হাজার মেট্রিকটন আম উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে। যেখানে প্রায় বড় আকারের ৫৫ হাজার আমগাছ রয়েছে। গতবছর জেলায় ৩৪ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছিল। প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার বেশি আম ব্যবসা হবে এখানে। নাটোরের ৫ হাজার ৮৫৭ হেক্টরে জমিতে ৮২ হাজার ৩৯৩ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে আশা মনে করছেন কৃষি বিভাগ।

এদিকে কথা হয় চাষিদের সাথে। রাজশাহীর বাঘা উপজেলার পাকুড়িয়া এলাকার চাষী আরমান হোসেন জানান, ‘এ বছর আমের বাগানে একটু কম মুুকুল কম হয়েছে। আমের উৎপাদন কম। কিন্তু টাকার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে গোপালভোগ আম বিক্রি হচ্ছে ১৭শ থেকে ১৮শ টাকা মণ। গতবারের তুলনায় এবার মণপ্রতি ৬শ থেকে ৮শ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এরকম সব আমেরই দাম থাকবে।

নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার চাষি মহিদুল বলেন, নওগাঁতেও আমের ফলন দিন দিন বাড়ছে। নতুন বাগানের গাছগুলোতেও এবার মুকুল এসেছে। ল্যাংড়া, গোপালভোগ, ক্ষিরসাপাতি, বোম্বাই, হিমসাগর, ফজলি, আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের আমের চাষ হয় নওগাঁয়। সবচেয়ে বেশি আম্রপালি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের চাষিরা বলছেন, সেখানে বড় বড় আমের গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। ছোট গাছে ফলন সাধারণত বেশি হয়। এক্ষেত্রে বাগান ঢেলে সাজিয়ে তুলছেন সেখানকার চাষিরা। অন্যদিকে ফলনে ও দামে বেশি হওয়ায় খুশি তারা।

এদিকে, পবা ও চারঘাট এলাকায় আমের তেমন দেখা নেই। জেলা কৃষিবিভাগ জানিয়েছে- যেসব এলাকায় আমের উৎপাদন কম হয়েছে সেসব এলাকার সাথে গড়ে ফলন হিসেব করা হয়েছে।

রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আলীম উদ্দীন জানান, চলতি মৌসুমে আমের মুকুল বেশি হলেও গুটি কম হয়েছে। রাজশাহীর আম চাষীরা আগে থেকেই যেহেতু অভিজ্ঞ সেহেতু তারা খুব সহযেই আমের যত্ন নিতে পারেন। এবার ১৮ হাজার ৫১৫ হেক্টর জমিতে প্রায় ৯০০ কোটি টাকার আম বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।

রাজশাহী বিভাগীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহম্মদ খয়ের উদ্দিন মোল্লা বলেন, রাজশাহী কৃষি অঞ্চলে চলতি মৌসুমে আমবাগান রয়েছে ৯০ হাজার ৮৯৮ হেক্টর। এসব জমিতে আমের উৎপাদন হবে প্রায় ৯ লাখ ৫৬০ মেট্রিকটন আম। হেক্টরে প্রায় ১০ দশমিক ৫৬ টন হিসেবে ফলন ধরা হয়েছে।

প্রতিকেজি আমের দাম গড়ে ৬০ টাকা হিসেবে ৫ হ্জাার ৭৬০ কোটি টাকার বাণিজ্য সম্ভবনা রয়েছে। এবার আমের দাম বেশ ভালো। কিছু আমের দাম কম আবার কিছু আমের অনেক বেশি। ফলে গড়ে এ দাম ধরা হয়েছে। আশা করছি চাষিরাও বেশ খুশি হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর