ঢাকা ০৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪, ১১ শ্রাবণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে এক হতে বেসিকের আপত্তি

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১২:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪
  • ৩৭ বার

বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চাচ্ছেন না সরকারি বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাই সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার দাবিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একই দাবিতে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়েও স্মারকলিপি দিয়েছেন। তবে বেসিক ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারি বলে স্বীকারই করছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ নিয়ে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে।

গভর্নরকে দেওয়া স্মারকলিপিতে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, দেশের ক্ষুদ্র শিল্পে অর্থায়নের লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালে বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের কার্যক্রম শুরু হয়, যা ১৯৯২ সালে শতভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে এটি রাষ্ট্র মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক হিসাবে সরকারি আর্থিক সেবা দিয়ে আসছে, যা ২০১৫ সালে পুরোপুরি রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসাবে রূপান্তরিত হয়। বেসিক ব্যাংক প্রথম দিকে সরকারি খাতের ব্যাংক হিসাবে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনা করেছে এবং সরকারকে বিপুল অঙ্কের মুনাফা দিয়েছে, যা অন্যান্য ব্যাংকের কাছে ছিল উদাহরণ। শেষের দিকে এসে ব্যাংকটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। বেসিক ব্যাংকে অন্য রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের অনুরূপ চাকরি বিধিমালা অনুসরণ করা হয়, যা বেসরকারি মালিকানার ব্যাংকের সঙ্গে পুরোপুরিভাবেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী, বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের গ্রেড নির্ধারণ এবং বেতন ও অন্যান্য ভাতাদি প্রদান করা হয়।

পাশাপাশি, কর্মকর্তা/কর্মচারীগণের পেনশন সুবিধা বলবৎ রয়েছে। এছাড়া, বেসিক ব্যাংকে নিয়োগ ও পদন্নোতিতে সম্পূর্ণরূপে সরকারি ব্যাংকের অনুরূপ বিধিবিধান অনুসরণ করা হয়। এছাড়া বেসিক ব্যাংকে ১২তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীগণের স্থায়ী চাকরি বিদ্যমান রয়েছে। শ্রম আইন অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে বেসিক ব্যাংকে সরকারি শ্রম অধিদপ্তর অনুমোদিত ও রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত একীভূতকরণের পদক্ষেপকে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাই। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি টেলিভিশন, অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদের বরাতে জানতে পারি যে, রাষ্ট্র মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাষ্ট্র মালিকানাধীন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক মার্জারের পরিকল্পনা করা গ্রহণ করা হয়েছে, যা সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে, বেসরকারি মালিকানাধীন সিটি ব্যাংকের সঙ্গে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক মার্জারের বিষয়ে যে আলোচনা হয়েছে তা একেবারেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং অযৌক্তিক।

যেখানে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক অন্য দুটি রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ হতে চলেছে সেখানে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংককে কেন বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে মার্জারের আলোচনা চলছে? মার্জার প্রক্রিয়ায় কোনোভাবেই বৈষম্য কাম্য নয়। এ ধরনের বৈষম্যনীতি পরিহার করে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মার্জার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংককে অন্য একটি রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে মার্জারের জন্য আবেদন জানানো হয়।

দেশের অন্যান্য সরকারি ব্যাংকের ন্যয় শতভাগ রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। উল্লিখিত বিষয়গুলোর সঙ্গে বেসরকারি কোনো ব্যাংকের সামঞ্জস্যতা নেই। ইতোমধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অনেকেই সরকারি ব্যাংকের পদোন্নতির অধীনে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজনকে সোনালী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদায়নের পর কয়েক মাস আগে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের এমডি হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, রূপালী ব্যাংক ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে দুজনকে ডিএমডি হিসাবে, একজনকে জনতা ব্যাংকে এবং দুজনকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে জিএম হিসাবে পদায়ন করা হয়।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বেসিক ব্যাংকেরা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারি নন। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, বেসিক সরকারের কোনো ব্যাংক অর্ডারের দ্বারা স্থাপিত ব্যাংক নয়। সোনালী ব্যাংকের যেমন ব্যাংক অর্ডার আছে, বেসিকের তেমন নেই। একটা আইন দ্বারা কিন্তু সোনালী, রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত। বেসিক ব্যাংক কোনো আইন দিয়ে প্রতিষ্ঠিত নয়। সরকার যেমন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হোল্ড করে, তেমনি বেসিকেরও শেয়ার হোল্ড করে।

তিনি আরও বলেন, সরকারি আর বেসিকের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সরকার যেটা রেভিনিউ থেকে দেয় সেটাই কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে সরকারের কমার্শিয়াল কাজের জন্য স্টাবলিস্ট করা। বেসিকও তেমন একটা প্রতিষ্ঠান। বেসিক স্পেশালাইজ একটা ব্যাংক ছিল যেটা একটা বিশেষ উদ্দেশ্য গঠন করা হয়েছিল। এটা কিন্তু ব্যাংক হিসাবে সরকারের আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নয়।

একীভূতকরণের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত উচ্চ আদালতে : ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত উচ্চ আদালতে হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক। তিনি বলেন, এটা একটা লং টার্ম প্রসেস। এটা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হতে বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়া অতিক্রম হতে হবে। বেশকিছু পদক্ষেপের পর চূড়ান্তের বিষয় আছে। এখানে আইনগত বিষয় আছে, অডিটের বিষয় আছে। মার্জারের বিষয়ে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হবে আদালতে।

তিনি আরও বলেন, এসব প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকগুলো স্বাভাবিক নিয়মেই চলবে। মার্জারের আলোচনা বা প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় কোনো দুর্বল ব্যাংক যদি সবল হয়, সে যদি চায় তারা মার্জারে যাবে না তবে চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত মার্জারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারবে। কোনো কারণে ব্যাংক যদি একীভূত না হয়, তবে সেই ব্যাংকগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে।

পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংকের একীভূতকরণের অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা অডিটর নিয়োগ করেছি। এ প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক দুটির সম্পদ মূল্যায়ন করবে। এক্সিম ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এজন্য ব্যাংক দুটির সম্পদ মূল্যায়ন করতে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান রহমান রহমান হক’কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি চূড়ান্ত রিপোর্ট দেবে।

 

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে এক হতে বেসিকের আপত্তি

আপডেট টাইম : ১০:১২:১৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪

বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হতে চাচ্ছেন না সরকারি বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তাই সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার দাবিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একই দাবিতে তারা অর্থ মন্ত্রণালয়েও স্মারকলিপি দিয়েছেন। তবে বেসিক ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সরকারি বলে স্বীকারই করছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ নিয়ে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে।

গভর্নরকে দেওয়া স্মারকলিপিতে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, দেশের ক্ষুদ্র শিল্পে অর্থায়নের লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালে বেসিক ব্যাংক লিমিটেডের কার্যক্রম শুরু হয়, যা ১৯৯২ সালে শতভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে এটি রাষ্ট্র মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক হিসাবে সরকারি আর্থিক সেবা দিয়ে আসছে, যা ২০১৫ সালে পুরোপুরি রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসাবে রূপান্তরিত হয়। বেসিক ব্যাংক প্রথম দিকে সরকারি খাতের ব্যাংক হিসাবে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনা করেছে এবং সরকারকে বিপুল অঙ্কের মুনাফা দিয়েছে, যা অন্যান্য ব্যাংকের কাছে ছিল উদাহরণ। শেষের দিকে এসে ব্যাংকটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। বেসিক ব্যাংকে অন্য রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের অনুরূপ চাকরি বিধিমালা অনুসরণ করা হয়, যা বেসরকারি মালিকানার ব্যাংকের সঙ্গে পুরোপুরিভাবেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী, বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের গ্রেড নির্ধারণ এবং বেতন ও অন্যান্য ভাতাদি প্রদান করা হয়।

পাশাপাশি, কর্মকর্তা/কর্মচারীগণের পেনশন সুবিধা বলবৎ রয়েছে। এছাড়া, বেসিক ব্যাংকে নিয়োগ ও পদন্নোতিতে সম্পূর্ণরূপে সরকারি ব্যাংকের অনুরূপ বিধিবিধান অনুসরণ করা হয়। এছাড়া বেসিক ব্যাংকে ১২তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীগণের স্থায়ী চাকরি বিদ্যমান রয়েছে। শ্রম আইন অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে বেসিক ব্যাংকে সরকারি শ্রম অধিদপ্তর অনুমোদিত ও রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে সংস্কারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহীত একীভূতকরণের পদক্ষেপকে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দের পক্ষ থেকে স্বাগত জানাই। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি টেলিভিশন, অনলাইন ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদের বরাতে জানতে পারি যে, রাষ্ট্র মালিকানাধীন সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাষ্ট্র মালিকানাধীন রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক মার্জারের পরিকল্পনা করা গ্রহণ করা হয়েছে, যা সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে, বেসরকারি মালিকানাধীন সিটি ব্যাংকের সঙ্গে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক মার্জারের বিষয়ে যে আলোচনা হয়েছে তা একেবারেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং অযৌক্তিক।

যেখানে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক অন্য দুটি রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ হতে চলেছে সেখানে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংককে কেন বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে মার্জারের আলোচনা চলছে? মার্জার প্রক্রিয়ায় কোনোভাবেই বৈষম্য কাম্য নয়। এ ধরনের বৈষম্যনীতি পরিহার করে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের মার্জার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংককে অন্য একটি রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে মার্জারের জন্য আবেদন জানানো হয়।

দেশের অন্যান্য সরকারি ব্যাংকের ন্যয় শতভাগ রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। উল্লিখিত বিষয়গুলোর সঙ্গে বেসরকারি কোনো ব্যাংকের সামঞ্জস্যতা নেই। ইতোমধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অনেকেই সরকারি ব্যাংকের পদোন্নতির অধীনে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজনকে সোনালী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদায়নের পর কয়েক মাস আগে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের এমডি হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, রূপালী ব্যাংক ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে দুজনকে ডিএমডি হিসাবে, একজনকে জনতা ব্যাংকে এবং দুজনকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে জিএম হিসাবে পদায়ন করা হয়।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, বেসিক ব্যাংকেরা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সরকারি নন। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক বলেন, বেসিক সরকারের কোনো ব্যাংক অর্ডারের দ্বারা স্থাপিত ব্যাংক নয়। সোনালী ব্যাংকের যেমন ব্যাংক অর্ডার আছে, বেসিকের তেমন নেই। একটা আইন দ্বারা কিন্তু সোনালী, রূপালী ও অগ্রণী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত। বেসিক ব্যাংক কোনো আইন দিয়ে প্রতিষ্ঠিত নয়। সরকার যেমন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের শেয়ার হোল্ড করে, তেমনি বেসিকেরও শেয়ার হোল্ড করে।

তিনি আরও বলেন, সরকারি আর বেসিকের মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে সরকার যেটা রেভিনিউ থেকে দেয় সেটাই কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আছে সরকারের কমার্শিয়াল কাজের জন্য স্টাবলিস্ট করা। বেসিকও তেমন একটা প্রতিষ্ঠান। বেসিক স্পেশালাইজ একটা ব্যাংক ছিল যেটা একটা বিশেষ উদ্দেশ্য গঠন করা হয়েছিল। এটা কিন্তু ব্যাংক হিসাবে সরকারের আইন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নয়।

একীভূতকরণের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত উচ্চ আদালতে : ব্যাংকগুলোর একীভূতকরণের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত উচ্চ আদালতে হবে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র মেজবাউল হক। তিনি বলেন, এটা একটা লং টার্ম প্রসেস। এটা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হতে বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়া অতিক্রম হতে হবে। বেশকিছু পদক্ষেপের পর চূড়ান্তের বিষয় আছে। এখানে আইনগত বিষয় আছে, অডিটের বিষয় আছে। মার্জারের বিষয়ে সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হবে আদালতে।

তিনি আরও বলেন, এসব প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত ব্যাংকগুলো স্বাভাবিক নিয়মেই চলবে। মার্জারের আলোচনা বা প্রক্রিয়া চলমান থাকা অবস্থায় কোনো দুর্বল ব্যাংক যদি সবল হয়, সে যদি চায় তারা মার্জারে যাবে না তবে চূড়ান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত মার্জারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে পারবে। কোনো কারণে ব্যাংক যদি একীভূত না হয়, তবে সেই ব্যাংকগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে।

পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংকের একীভূতকরণের অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা অডিটর নিয়োগ করেছি। এ প্রতিষ্ঠানটি ব্যাংক দুটির সম্পদ মূল্যায়ন করবে। এক্সিম ব্যাংক ও পদ্মা ব্যাংক একীভূত করার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এজন্য ব্যাংক দুটির সম্পদ মূল্যায়ন করতে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান রহমান রহমান হক’কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আগামী দুই থেকে তিন মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটি চূড়ান্ত রিপোর্ট দেবে।