কোনো বিমা কোম্পানির সম্পদ বা বিনিয়োগ জামানত হিসেবে রেখে কোম্পানির পরিচালকরা ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আগামীতে কোনো ঋণ নিতে পারবেন না। পাশাপাশি বিমা কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার অথবা তাদের পরিবার বা তাদের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অন্য কারো কাছ থেকে ঋণ প্রাপ্তিতে সহায়তা করতে পারবে না। একই সঙ্গে বিমা কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) এবং সচিব নিয়োগের ক্ষেত্রে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) অনুমোদন নিতে হবে। এমনকি আইডিআরএর অনুমোদন ছাড়া সিএফও-সচিবকে চাকরিচ্যুত বা বরখাস্ত করা যাবে না
নতুন এই ধারা সংযোজন করে বিমা আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে আইডিআরএ। এ বিষয়ে তৈরি করা সংশোধনীর খসড়ার ওপর সংশ্লিষ্ট অংশীজন, বিশেষজ্ঞ এবং জনসাধারণের মতামত চেয়েছে বিমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। আগামী ২৪ এপ্রিলের মধ্যে ই-মেইলের মাধ্যমে এই মতামত দিতে বলা হয়েছে।
আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বলবৎ বিমা আইন ২০১০-এর ৪৪ (১) ধারায় বলা আছে-‘কোনো বিমাকারী উহার নিজের শেয়ারের জামানতে কোনো প্রকার অগ্রিম, ঋণ বা আর্থিক সুবিধা প্রদান করিবে না।’ এই ধারা কিছুটা সংশোধন করে খসড়াতে বলা হয়েছে-‘কোনো বিমাকারী উহার নিজের শেয়ারের জামানতে কোনো প্রকার অগ্রিম ঋণ ও আর্থিক সুবিধা প্রদান করিবে না। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগও আর্থিক সুবিধার আওতাভুক্ত হইবে।’
সংশোধনীর একটি ধারায় বলা হয়েছে,‘বিমাকারী তাহার সম্পদ বা বিনিয়োগ জামানত হিসেবে রাখিয়া উহার পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার বা তাহাদের পরিবার বা তাহাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা অন্য কারও হইতে ঋণ প্রাপ্তিতে সহায়তা প্রদান করিতে পারিবে না।’ অন্য ধারায় বলা হয়েছে, ‘কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া বিমাকারী তাহার নিয়ন্ত্রণাধীন কোম্পানি বা সাবসিডিয়ারি কোম্পানি হইতে উহার পরিচালক বা শেয়ারহোল্ডার বা তাহাদের পরিবার বা তাহাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কোনো ঋণ প্রদান বা অন্য কোনোভাবে আর্থিক সুবিধা প্রদান করিতে পারিবে না।’
বিমা কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ গঠন সংক্রান্ত ধারাতেও সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বর্তমান কার্যকর থাকা বিমা আইন অনুযায়ী, বিমা কোম্পানির পরিচালক সংখ্যা ২০ জনের বেশি হতে পারবে না। ২০ জন পরিচালক থাকলে তার মধ্যে ১২ জন উদ্যোক্তা পরিচালক, ৬ জন জনগণের অংশের শেয়ারগ্রহীতা পরিচালক এবং ২ জন নিরপেক্ষ পরিচালক থাকার বিধান রয়েছে।
এখন এই ধারা সংশোধন করে ২০ জন পরিচালক থাকলে তার মধ্যে ৪ জন নিরপেক্ষ পরিচালক রাখার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে পরিচালকের সংখ্যা ১০ জনের কম হলে নিরপেক্ষ পরিচালকের সংখ্যা ২ জন হবে এবং ১০ জনের বেশি হলে নিরপেক্ষ পরিচালকের সংখ্যা হবে ৪ জন। সংশোধনীর খসড়ায় নতুন ধারা সংযোজন করে কোম্পানির সিএফও এবং সচিব নিয়োগ ও অপসারণের ক্ষেত্রে আইডিআরএর অনুমোদন নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এ বিষয়ে সংশোধনীর খসড়ায় ৪টি উপধারা যুক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত যোগ্যতাসম্পন্ন কোনো ব্যক্তিকে কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে বিমা কোম্পানির সিএফও বা কোম্পানি সচিব হিসেবে নিয়োগ করতে হবে।
বিমাকারী কর্তৃক উপ-ধারা (১) এর অধীনে অনুমোদিত কোনো প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও কোম্পানির সচিবকে কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি ছাড়া চাকরিচ্যুত বা বরখাস্ত করা যাবে না। কর্তৃপক্ষ এ ধরনের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও কোম্পানি সচিব এবং বিমাকারী বা এই বিষয়ে কোম্পানির স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো কাজ করেছেন কি না এবং এ ক্ষেত্রে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিয়ে লিখিত আদেশের মাধ্যমে চাকরিচ্যুত করতে হবে। এভাবে চাকরিচ্যুত হওয়ার পরবর্তী ৫ বছর তিনি কোনো বিমা কোম্পানিতে নিয়োগ লাভের যোগ্য হবেন না। বিমাকারী কোনো ব্যক্তি প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও কোম্পানি সচিব হওয়ার বা ওই পদে না থাকার বিষয়ে জানার ১৫ দিনের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানাবে।
বিমা কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও কোম্পানির সচিব পদ একাধারে ৩ মাসের অধিক সময়ের জন্য শূন্য রাখা যাবে না। তবে শর্ত থাকে যে, কর্তৃপক্ষ অপরিহার্য পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রতিবার ওই সময়সীমা আরও এক মাস বাড়াতে পারবে। এসব সংশোধনী আনার উদ্যোক্তা নেওয়ার পাশাপাশি আইনে আরও কিছু সংশোধনী আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সংশোধনীর খসড়ায় কিছু নতুন ধারা যুক্ত করা হয়েছে, আবার কিছু বিষয় বাদ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কিছু ধারায় নতুন বিষয় সংযুক্ত করা হয়েছে
এখন অংশীজনের মতামতের ভিত্তিতে এই সংশোধনী চূড়ান্ত করা হবে। আগামী জুনের মধ্যে সংশোধিত বিমা আইন বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।