জন্ম নিবন্ধনে জটিলতা, শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত পথশিশুরা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নানা নিয়ম নিগড়, বিশেষ করে জন্মনিবন্ধনের জটিলতায় পড়ে শিক্ষার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে পথশিশুরা। শুধু শিক্ষা নয়, তাদের সরকারি-বেসরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রাপ্তিতেও বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জন্মনিবন্ধন। পাশাপাশি পথশিশুদের সংখ্যা নিয়ে সঠিক ও নির্দিষ্ট তথ্য না থাকায় তাদের বিষয়ে কর্মপরিকল্পনাও গ্রহণ করা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় পথশিশুদের সঠিক সংখ্যা জানতে জরিপ পরিচালনা ও জন্মনিবন্ধন সহজ করার সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে পথশিশুদের সঠিক সংজ্ঞাই নির্ধারণ করা হয়নি। আবার পথশিশুর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে সরকারি পর্যায়ে সঠিক পরিসংখ্যান নেই। সর্বশেষ ২০০৪ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপ অনুযায়ী দেশে পথশিশুর সংখ্যা ছয় লাখ ৭৯ হাজারের কিছু বেশি। এরপর আনুষ্ঠানিক কোনো জরিপ হয়নি। ওই জরিপে বিবিএসের সম্ভাব্য হিসাব (প্রজেকশন) ছিল ২০১৪ সালে এ সংখ্যা হবে ১১ লাখ ৪৪ হাজার। ২০২৪ সালে হবে ১৬ লাখ। একাধিক বেসরকারি সংগঠনের তথ্যানুযায়ী, দেশে বর্তমানে পথশিশুর সংখ্যা ১৫ থেকে ১৬ লাখ। আর রাজধানীতে ছয় থেকে সাত লাখ পথশিশু রয়েছে।

সঠিক তথ্য না থাকায় পথশিশুদের নিয়ে সরকারি-বেসরকারি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের ক্ষেত্রেও সংকট দেখা দিচ্ছে। সর্বশেষ পথশিশুদের প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করানোর উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে এই কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে পথশিশুদের সংখ্যার পাশাপাশি জন্মনিবন্ধন বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

স্কুলে ভর্তির ক্ষেত্রে শিশুর টিকার কার্ড, মা-বাবার অনলাইন জন্মনিবন্ধনসহ জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক। অথচ এগুলোর কোনোটাই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না পথশিশুদের। আবার পিতৃ-মাতৃ পরিচয়, ঠিকানা, ধর্ম নির্ধারণ ও ফি দিতে না পারায় অনেকের জন্মনিবন্ধন হচ্ছে না। পথশিশুর খাদ্য ও বাসস্থানের কোনো নিশ্চয়তা না থাকায় তার কাছে জন্মনিবন্ধন একটি অকল্পনীয় বিষয়।

জানা গেছে, বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সহায়তায় জন্মনিবন্ধন ছাড়া ছিন্নমূল শিশুদের ঢাকা শহর ও এর আশপাশের বিভিন্ন স্কুলে ভর্তি করা হয়। এখন সেই সুযোগ না থাকায় সংকটে পড়েছে শেল্টার হোম সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। আবার জন্মসনদ না থাকায় করোনা মহামারি টিকা থেকেও বঞ্চিত পথশিশুরা। অনেক পথশিশু স্কুলে অধ্যয়নরত থাকা সত্ত্বেও সরকারের ঘোষিত শিক্ষার্থীদের কোটায় টিকা নিতেও পারছে না।

জন্মসনদের অভাবে পথশিশুদের জাতীয় পরিচয়পত্র, সরকারি-বেসরকারি সংস্থায় নিয়োগ, ব্যাংক হিসাব খোলা, গ্যাস-পানি-টেলিফোন-বিদ্যুতের সংযোগ, ড্রাইভিং লাইসেন্স, যানবাহন নিবন্ধন—এসবও করা যাচ্ছে না। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে কখনো ওদের বিদেশ যাওয়ার সুযোগ হলে পাসপোর্টও করা সম্ভব হয় না।

পথশিশুদের নিয়ে কর্মরত সংগঠনসমূহের জোট ‘স্ট্রিট চিলড্রেন অ্যাকটিভিস্টস নেটওয়ার্ক’ (স্ক্যান)-এর সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল কালের কণ্ঠকে বলেন, জন্মনিবন্ধন পদ্ধতি ডিজিটাল হওয়ায় পথশিশুদের নিবন্ধনে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। বছর দুয়েক আগে সংগঠন বা শেল্টার হোমে ব্যক্তিগত ঠিকানা দিয়ে জন্মনিবন্ধন করা যেত। ইউনিয়ন পরিষদ বা ওয়ার্ড কাউন্সিলররা সহযোগিতা করতে পারতেন। কিন্তু বর্তমানে অনলাইন রেজিস্ট্রেশনে স্থায়ী ঠিকানা, মা-বাবার নাম ও তাঁদের জাতীয় পরিচয়পত্র আবশ্যক হওয়ায় নিবন্ধন অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই পিছিয়ে পড়ছে পথশিশুরা। ভর্তি হতে পারছে না রেজিস্ট্রার্ড কোনো বিদ্যালয়ে। সরকারি-বেসরকারি সুবিধা থেকেও তারা বঞ্চিত হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর