সেই মিনুর দুই ছেলেকে ৫ লাখ টাকা সহায়তা দিলো কেএসআরএম

হাওর বার্তা ডেস্কঃ অন্যের হয়ে জেল খাটা মিনু আক্তারের দুই সন্তান ইয়াসিন (১২) ও গোলাপের (৯) পড়ালেখাসহ ভরণপোষণের জন্য পাঁচ লাখ টাকা সহায়তা দিয়েছে ইস্পাত নির্মাণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান কেএসআরএম।

বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের কাছে একটি চেক হস্তান্তর করেন কেএসআরএমের গণমাধ্যম উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম।

অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সুমনী আক্তার বলেন, দুই শিশুকে এসওএস শিশু পল্লীতে ভর্তি করানোর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। সেখানে অনাথ শিশুদের পড়ালেখা ও ভরণপোষণে টাকার প্রয়োজন হয় না। তাই কেএসআরএম থেকে দেওয়া অর্থ ওই শিশুদের নামে ব্যাংকে রাখা হবে। তা ভবিষ্যতে তাদের কাজে আসবে।

কেএসআরএমের গণমাধ্যম উপদেষ্টা মিজানুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমে হতভাগ্য মিনু ও তার সন্তানদের দুর্দশার কথা জেনে প্রতিষ্ঠানের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার। সেই হিসেবে জেলা প্রশাসকের কাছে দুই সন্তানের জন্য অনুদানের চেক হস্তান্তর করা হয়েছে।

জানা গেছে, স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর হতভাগা মিনু তার তিন সন্তানের ভরণপোষণের আশ্বাসে কুলসুমী নামে এক নারীর হয়ে কারাগারে যান । কথা ছিল কয়েকদিনের মধ্যে মুক্তি পাবেন। কিন্তু প্রায় তিন বছর অতিবাহিত হওয়ার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর কয়েকজন আইনজীবীর মানবিক প্রচেষ্টায় আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত বছরের ১৬ জুন মিনু কারাগার থেকে মুক্তি পান। এরই মধ্যে আবার অনটনে মারা যায় মিনুর কন্যাসন্তান জান্নাত।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিনুর মৃত্যুর পর রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয় বড় ছেলে ইয়াসিন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে টনক নড়ে প্রশাসনের। পুলিশের তৎপরতায় খোঁজ মেলে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে। ছোট ছেলে গোলাপ আছে দিনমজুর মামার আশ্রয়ে। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর এগিয়ে আসে শিল্পপ্রতিষ্ঠান কেএসআরএম।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, নগরের কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জে একটি বাসায় ২০০৬ সালের মে মাসে মোবাইলে কথা বলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গৃহকর্মী কোহিনুর আক্তারকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। এরপর মরদেহ একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। কোহিনুর আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেন পোশাককর্মী কুলসুম আক্তার কুলসুমী। এরপর থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়।

কিন্তু মামলার তদন্তে এটি হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হলে একই বছরের জুলাই মাসে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। সেই মামলায় দুই বছর তদন্ত শেষে কোহিনুরকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এর মধ্যে এক বছর চার মাস জেল খেটে জামিনে মুক্তি পান কুলসুমী।

মামলার বিচার শেষে ২০১৭ সালের নভেম্বরে তৎকালীন অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম ওই হত্যা মামলায় আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। ওই সাজার পরোয়ানামূলে ২০১৮ সালের ১২ জুন কুলসুম আক্তার কুলসুমীর বদলি হয়ে কারাগারে যান মিনু।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর