ঢাকা ১১:৪৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪, ৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:১৭:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২২
  • ২১৬ বার

ড. গোলসান আরা বেগমঃ বাংলা ভাষা আন্দোলনের সূতিকাগার ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীনতার স্বপ্নবীজ রোপন ক্ষেত্র ছিলো ভাষা আন্দোলন,ঐতিহাসিক ভাবে তা স্বীকৃত সত্য তত্ত্ব। ভাষা আন্দোলনে ছাত্র সমাজের ভুমিকা ও একুশের অর্জনের পেছনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। মহান একুশের বিজয় অর্জনে য়ারা জীবন দিয়ে রক্ত স্নানে উপেক্ষিত বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা চিনিয়ে এনেছে, তারা অবশ্যই সাহসী সূর্য সন্তান। তাদের অবদান বাংলাদেশের ছাব্বিশ হাজার বর্গমাইলের বুক জুড়ে স্বর্ণাক্ষরে লিখা আছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে আমতলায় দাঁড়িয়ে আছে ভাষা আন্দোলনের স্থিরচিত্র হিসেবে জাতীয় সহিদ মিনার।তার আদলেই প্রায় সকল স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়,রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্টানে দেশে বিদেশে তৈরী করা হয়েছে একুশের স্মরণে শহিদ মিনার।ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এ দেশের ছাত্র,তরুণ,ও শিল্পী- সাহিত্যিত-বুদ্ধিজীবিদের আন্দোলন দ্ধারা দুই দশকের মধ্যে জাতীয় জাগরণ ঘটিয়ে বাঙালির মুক্তির চেতনাকে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে নিয়ে যায়।যার ধারাবাহিক আন্দোলনের পর নয় মাস ব্যাপি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ পেরিয়ে জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।

যে স্লোগান নিয়ে সর্বদলীয় বাংলা ভাষা সংগ্রাম পরিষদ মাঠে নেমেছিলো– রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই,রাংলা ভাষার রাষ্ট্র চাই,তা স্বপ্নের সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে বাস্তবে পরিণত হয়। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী ভাষা বিজয়ীদের রক্তে ধুয়ে বাংলা ভাষা পায় রাস্ট্রীয় স্বীকৃতি। সে দিন পাকিস্তান সরকার ১৪৪ ধারা জারি করেছিলো ভাষা আন্দোলন প্রতিহত করতে।। ছাত্র ও ছাত্রী সমন্নয়ে ১০ জন করে দলে দলে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের বটতলা থেকে রাজ পথে নেমে অাসে মার্শাল আইন ভঙ্গ করতে। পাকিস্তান সরকার সেই মিছিলে গুলি চালায়, রক্ত বন্যায় ভেসে যায় রফিক,সালাম, শফিক, ববরকত সহ অজানা তাজা প্রাণ। উত্থাল রাজপথের আন্দোলনে সরকার তারপর বাধ্য হয় বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে।অতঃপর ১৯৯৬ সালে জাতিসংজ্ঞের অঙ্গ সংগঠন ইউনেস্কো অমর একুশকে দেয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা।

আজকের প্রজন্ম যাদের চোখে একটি সুন্দর সমাজ, সভ্যতা গড়ার স্বপ্ন দেখি, তারা ভুলতে বসেছে ভাষাবিজয়ী সৈনিক রফিক, সফিক, সালাম, বরকত ও তদসংশ্লিস্ট ইতিহাস। যারা ১৯৫২ সালের ২১ ফ্রেব্রুয়ারী ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে শুধু রক্ত নয় জীবন দিয়ে প্রতিষ্টিত করে বাঙালির মুখের ভাষা,মায়ের ভাষা, বাংলা ভাষার অধিকার। পরিশেষে স্বাধীনতার পথ পেরিয়ে আজকের সুখী সম্পৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্ম হয়।

 

১৯৪৭ এ দ্বিজাতি তত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ শাসিত ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তানের জন্ম হলেও রাষ্ট্রীয় ভাষার প্রসঙ্গটি মিমাংসিত ছিলো না। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যখন ৪৭ এর পর পূর্ব পাকিস্তানে এসে ঘোষণা দেন — উর্দূই হবে একমাত্র পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা। তাৎক্ষনিক ভাবে এদেশের ছাত্রসমাজ ভাষার প্রসঙ্গে জিন্নাহর দাবিটি নাকজ করে দেয় ও প্রতিবাদমুখর হয়ে রাষ্ট্র ভাষা বাংলা ভাষার দাবীতে উত্তাল আন্দোলন শুরু করে।এখানে উল্লেখ থাকে যে,৪৭ এর পূর্ব থেকেই এ দেশের বাঙালি বুদ্ধিজীবিরা সভা, সেমিনার, প্রবন্ধ নিবন্ধ জাতীয় দৈনিকে লিখে বাংলা ভাষার দাবিটি স্পষ্ট করে আসছিলো। পার্লামেন্ট সদস্য এডভোকেট ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দূর পাশাপাশি বাংলা ভাষা চালু করার দাবিটি সংসদে উত্থাপন করেছিলেন।কিন্তু তার পক্ষে অন্যান্য সাংসদের ইতিবাচক জুড়ালো ভুমিকা না থাকায় বিষয়টি বেশী দুর অাগাতে পারেনি।

ব্রিটিশরা বাঙালিকে আড়াই শত বছর শোষণ নির্যাতনের মাধ্যমে শিক্ষা সংস্কৃতিতে অন্ধকার জাতিগোষ্টিতে পরিনত করেছিলো।সেখান থেকে মুক্ত হলেও নতুন কায়দায় পাকিস্তানের শোষণের গ্যাড়াকলে পড়ে বাঙালি। পাকিস্তানীরা মুখের ভাষা কেড়ে নিয়ে বাঙালিকে চেয়েছিলো অজ্ঞ,বোবা, বধির,বিবশ জাতিতে পরিণত করতে। তাই তারা ৫৬% বাঙালির বাংলা ভাষার দাবিকে উপেক্ষা করে চেয়েছিলো ২৫% জনগণের উর্দুকে জাতীয় ভাষার স্বীকৃতি দিতে।না, বাঙালি তা হতে দেয়নি। ১৯৫৬ সালে সাংবিধানিক ভাবে বাংলা এবং উর্দূ ভাষা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়। তারপরও ৬২ সালে রোমান হরফে বাংলা ভাষা চালু করার চেষ্টা করা হয়েছিলো। সেই সময়ে জমির দলিল রেজিষ্ট্রি কারার স্টাম্প, মানিঅর্ডার করার ফর্ম উর্দূতে প্রিন্ট করা ছিলো, যা ব্যাবহার করা হতো জন স্বার্থে।

এতো রক্ত ঝরিয়ে বাংলা ভাষার বিজয় অর্জন সত্যি সাফল্যের, গর্বের,অহংকারের অর্জন। তারপরও স্কুলগামী ছেলেরা যখন একটি প্রশ্নের জবাবে বলে- ” রফিক,সালাম, বরকত, প্রাণ দিয়ে স্বাধীনতা এনেছিলো এবং ত্রিশ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলা ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল”(২১ ফেব্রুয়ারী ২০২১, দৈনিক সংবাদ)। তখন আমাদের বিবেক বোধ তমকে দাঁড়ায়।আমরা জানি প্রাক প্রাথমিক শ্রেণি থেকে জাতীয় অর্জনগুলোর সাথে শিক্ষার্থীদের পরিচয় ঘটানো হয়।তারপরও এই বেহাল অবস্থা কেন।

আরো অবাক হই– ৭০ বছর পর হাই কোর্ট বলছে, ভাষা সংগ্রামীদের তালিকা তৈরী করতে। এতো বছর পেরিয়ে এসে এখন নির্ভুল তালিকা করা কি সম্ভব হবে? আমাদের ভাষা আন্দোলনের ৪টি দাবি ছিলো।১।রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই২। রাজবন্দিদের মুক্তি চাই ৩। সর্বস্তরে বাংলা চালু কর এবং ৪।শহিদ স্মৃতি অমর হউক। আমাদের সেই দাবী পুর্ণাঙ্গরুপে পূর্ণ হয়নি। মাতৃভাষা অর্থাৎ বাংলা ভাষা শিক্ষার সর্বজনিন মাধ্যম হওয়া উচিত ছিলো। তা না হয়ে শিক্ষার সর্ব নিম্ন স্তর থেকেই বাংলা,ইংরেজী,কওমী,আরবী,নৃগোষ্টির ভাষাভাষিদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষা ইত্যাদি শ্রেণি বৈষম্য সৃস্টিকারী শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে। প্রশ্ন হলো এ জন্যই কি জীবন দিয়ে ভাষার দাবী প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। আমরা জানি পৃথিবীতে যে সব অগ্রসর জাতি রয়েছে তারা কেউ মাতৃভাষাকে বাদ দিয়ে অন্যের ভাষায় বিদ্যা চর্চা করে না। তবে অামরা কেন তা পারি না।

না পারার পেছনে যুক্তি সঙ্গত কারণও রয়েছে। যেমন,আমাদের দেশের শ্রমিকরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রম বিক্রি করতে যায়।সে দেশের ভাষা না জানলে কাজ করবে

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

আপডেট টাইম : ০৯:১৭:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২২

ড. গোলসান আরা বেগমঃ বাংলা ভাষা আন্দোলনের সূতিকাগার ছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। স্বাধীনতার স্বপ্নবীজ রোপন ক্ষেত্র ছিলো ভাষা আন্দোলন,ঐতিহাসিক ভাবে তা স্বীকৃত সত্য তত্ত্ব। ভাষা আন্দোলনে ছাত্র সমাজের ভুমিকা ও একুশের অর্জনের পেছনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বকে কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। মহান একুশের বিজয় অর্জনে য়ারা জীবন দিয়ে রক্ত স্নানে উপেক্ষিত বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা চিনিয়ে এনেছে, তারা অবশ্যই সাহসী সূর্য সন্তান। তাদের অবদান বাংলাদেশের ছাব্বিশ হাজার বর্গমাইলের বুক জুড়ে স্বর্ণাক্ষরে লিখা আছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে আমতলায় দাঁড়িয়ে আছে ভাষা আন্দোলনের স্থিরচিত্র হিসেবে জাতীয় সহিদ মিনার।তার আদলেই প্রায় সকল স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়,রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্টানে দেশে বিদেশে তৈরী করা হয়েছে একুশের স্মরণে শহিদ মিনার।ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এ দেশের ছাত্র,তরুণ,ও শিল্পী- সাহিত্যিত-বুদ্ধিজীবিদের আন্দোলন দ্ধারা দুই দশকের মধ্যে জাতীয় জাগরণ ঘটিয়ে বাঙালির মুক্তির চেতনাকে মুক্তিযুদ্ধের রণাঙ্গনে নিয়ে যায়।যার ধারাবাহিক আন্দোলনের পর নয় মাস ব্যাপি রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ পেরিয়ে জন্ম হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের।

যে স্লোগান নিয়ে সর্বদলীয় বাংলা ভাষা সংগ্রাম পরিষদ মাঠে নেমেছিলো– রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই,রাংলা ভাষার রাষ্ট্র চাই,তা স্বপ্নের সিঁড়ি ডিঙ্গিয়ে বাস্তবে পরিণত হয়। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারী ভাষা বিজয়ীদের রক্তে ধুয়ে বাংলা ভাষা পায় রাস্ট্রীয় স্বীকৃতি। সে দিন পাকিস্তান সরকার ১৪৪ ধারা জারি করেছিলো ভাষা আন্দোলন প্রতিহত করতে।। ছাত্র ও ছাত্রী সমন্নয়ে ১০ জন করে দলে দলে ঢাকা বিশ্বিবদ্যালয়ের বটতলা থেকে রাজ পথে নেমে অাসে মার্শাল আইন ভঙ্গ করতে। পাকিস্তান সরকার সেই মিছিলে গুলি চালায়, রক্ত বন্যায় ভেসে যায় রফিক,সালাম, শফিক, ববরকত সহ অজানা তাজা প্রাণ। উত্থাল রাজপথের আন্দোলনে সরকার তারপর বাধ্য হয় বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে।অতঃপর ১৯৯৬ সালে জাতিসংজ্ঞের অঙ্গ সংগঠন ইউনেস্কো অমর একুশকে দেয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা।

আজকের প্রজন্ম যাদের চোখে একটি সুন্দর সমাজ, সভ্যতা গড়ার স্বপ্ন দেখি, তারা ভুলতে বসেছে ভাষাবিজয়ী সৈনিক রফিক, সফিক, সালাম, বরকত ও তদসংশ্লিস্ট ইতিহাস। যারা ১৯৫২ সালের ২১ ফ্রেব্রুয়ারী ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে শুধু রক্ত নয় জীবন দিয়ে প্রতিষ্টিত করে বাঙালির মুখের ভাষা,মায়ের ভাষা, বাংলা ভাষার অধিকার। পরিশেষে স্বাধীনতার পথ পেরিয়ে আজকের সুখী সম্পৃদ্ধ বাংলাদেশের জন্ম হয়।

 

১৯৪৭ এ দ্বিজাতি তত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ শাসিত ভারত ভেঙ্গে পাকিস্তানের জন্ম হলেও রাষ্ট্রীয় ভাষার প্রসঙ্গটি মিমাংসিত ছিলো না। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ যখন ৪৭ এর পর পূর্ব পাকিস্তানে এসে ঘোষণা দেন — উর্দূই হবে একমাত্র পাকিস্তানের রাষ্ট্র ভাষা। তাৎক্ষনিক ভাবে এদেশের ছাত্রসমাজ ভাষার প্রসঙ্গে জিন্নাহর দাবিটি নাকজ করে দেয় ও প্রতিবাদমুখর হয়ে রাষ্ট্র ভাষা বাংলা ভাষার দাবীতে উত্তাল আন্দোলন শুরু করে।এখানে উল্লেখ থাকে যে,৪৭ এর পূর্ব থেকেই এ দেশের বাঙালি বুদ্ধিজীবিরা সভা, সেমিনার, প্রবন্ধ নিবন্ধ জাতীয় দৈনিকে লিখে বাংলা ভাষার দাবিটি স্পষ্ট করে আসছিলো। পার্লামেন্ট সদস্য এডভোকেট ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত উর্দূর পাশাপাশি বাংলা ভাষা চালু করার দাবিটি সংসদে উত্থাপন করেছিলেন।কিন্তু তার পক্ষে অন্যান্য সাংসদের ইতিবাচক জুড়ালো ভুমিকা না থাকায় বিষয়টি বেশী দুর অাগাতে পারেনি।

ব্রিটিশরা বাঙালিকে আড়াই শত বছর শোষণ নির্যাতনের মাধ্যমে শিক্ষা সংস্কৃতিতে অন্ধকার জাতিগোষ্টিতে পরিনত করেছিলো।সেখান থেকে মুক্ত হলেও নতুন কায়দায় পাকিস্তানের শোষণের গ্যাড়াকলে পড়ে বাঙালি। পাকিস্তানীরা মুখের ভাষা কেড়ে নিয়ে বাঙালিকে চেয়েছিলো অজ্ঞ,বোবা, বধির,বিবশ জাতিতে পরিণত করতে। তাই তারা ৫৬% বাঙালির বাংলা ভাষার দাবিকে উপেক্ষা করে চেয়েছিলো ২৫% জনগণের উর্দুকে জাতীয় ভাষার স্বীকৃতি দিতে।না, বাঙালি তা হতে দেয়নি। ১৯৫৬ সালে সাংবিধানিক ভাবে বাংলা এবং উর্দূ ভাষা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পায়। তারপরও ৬২ সালে রোমান হরফে বাংলা ভাষা চালু করার চেষ্টা করা হয়েছিলো। সেই সময়ে জমির দলিল রেজিষ্ট্রি কারার স্টাম্প, মানিঅর্ডার করার ফর্ম উর্দূতে প্রিন্ট করা ছিলো, যা ব্যাবহার করা হতো জন স্বার্থে।

এতো রক্ত ঝরিয়ে বাংলা ভাষার বিজয় অর্জন সত্যি সাফল্যের, গর্বের,অহংকারের অর্জন। তারপরও স্কুলগামী ছেলেরা যখন একটি প্রশ্নের জবাবে বলে- ” রফিক,সালাম, বরকত, প্রাণ দিয়ে স্বাধীনতা এনেছিলো এবং ত্রিশ লাখ মানুষের রক্তের বিনিময়ে রাষ্ট্রভাষা বাংলা ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল”(২১ ফেব্রুয়ারী ২০২১, দৈনিক সংবাদ)। তখন আমাদের বিবেক বোধ তমকে দাঁড়ায়।আমরা জানি প্রাক প্রাথমিক শ্রেণি থেকে জাতীয় অর্জনগুলোর সাথে শিক্ষার্থীদের পরিচয় ঘটানো হয়।তারপরও এই বেহাল অবস্থা কেন।

আরো অবাক হই– ৭০ বছর পর হাই কোর্ট বলছে, ভাষা সংগ্রামীদের তালিকা তৈরী করতে। এতো বছর পেরিয়ে এসে এখন নির্ভুল তালিকা করা কি সম্ভব হবে? আমাদের ভাষা আন্দোলনের ৪টি দাবি ছিলো।১।রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই২। রাজবন্দিদের মুক্তি চাই ৩। সর্বস্তরে বাংলা চালু কর এবং ৪।শহিদ স্মৃতি অমর হউক। আমাদের সেই দাবী পুর্ণাঙ্গরুপে পূর্ণ হয়নি। মাতৃভাষা অর্থাৎ বাংলা ভাষা শিক্ষার সর্বজনিন মাধ্যম হওয়া উচিত ছিলো। তা না হয়ে শিক্ষার সর্ব নিম্ন স্তর থেকেই বাংলা,ইংরেজী,কওমী,আরবী,নৃগোষ্টির ভাষাভাষিদের নিজস্ব ভাষায় শিক্ষা ইত্যাদি শ্রেণি বৈষম্য সৃস্টিকারী শিক্ষাব্যবস্থা চালু রয়েছে। প্রশ্ন হলো এ জন্যই কি জীবন দিয়ে ভাষার দাবী প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। আমরা জানি পৃথিবীতে যে সব অগ্রসর জাতি রয়েছে তারা কেউ মাতৃভাষাকে বাদ দিয়ে অন্যের ভাষায় বিদ্যা চর্চা করে না। তবে অামরা কেন তা পারি না।

না পারার পেছনে যুক্তি সঙ্গত কারণও রয়েছে। যেমন,আমাদের দেশের শ্রমিকরা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শ্রম বিক্রি করতে যায়।সে দেশের ভাষা না জানলে কাজ করবে