বিদায় নিচ্ছে ইসি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ হাতের গোনায় মাত্র আর ৫ সপ্তাহ। আগামী মাসেই শেষ হচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট সার্চ কমিটি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করছেন। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি তাদের শেষ কার্যদিবস। বিদায়ের দিন যতই ঘনাচ্ছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)সহ ইসি সদস্যদের ওপর বাড়ছে চাপ। মানুষ খুলে বসেছে হিসেবের খেরোখাতা। দায়িত্বে পাঠ চুকিয়ে ঘরে ফিরছেন সিইসি ও তার পারিষদ। কিন্তু কি নিয়ে যাচ্ছেন তারা? কি তাদের অর্জন? মোটা দাগের উত্তর হচ্ছেÑ নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস আর দুর্নীতি।

ইসির অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জনগণ ভোট দেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলায় দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল সিইসির বিচারের দাবি জানাচ্ছেন। সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার জন্য কে এম নুরুল হুদা কমিশনের সদস্যদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন।

মেয়াদের শেষ মুহূর্তে সিইসি যাদের ক্ষমতায় যেতে সহায়তা করতে রাতের নির্বাচন করেছেন; সে আওয়ামী লীগের নেতারাও তাকেই দোষারোপ করছেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও যুগ্ম সম্পাদক বাহাউদ্দিন নাসিম বলেছেন, নির্বাচনের সময় প্রশাসন নির্বাচন কমিশনের অধীনে চলে যায়। নির্বাচনে যে অনিয়ম, ব্যর্থতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে তার দায় কে এম নুরুল হুদাসহ কমিশনের সদস্যরা এড়াতে পারেন না। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন কমিশনের ইমেজ ধ্বংস করে যাদের জন্য অপকর্ম করেছেন তাদের কাছেই ‘অপরাধী’ দায় মাথায় নিয়েই বিদায় নিতে হচ্ছে কেএম নূরুর হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনকে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিদায়ের দিন-ক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততোই বিদায়ী ইসির দিকে ধেয়ে আসছে নানামুখি খড়্গ। প্রতিষ্ঠানকে ছাপিয়ে নির্বাচন কমিশনাররা পরিণত হচ্ছেন ব্যক্তিগত লক্ষ্য বস্তুতে। পাঁচ বছর কমিশন সদস্যদের কৃতকর্মই এর কারণ। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ একের পর এক প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন, ইভিএম’র মতো বিতর্কিত ভোটগ্রহণ পদ্ধতি, নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস, একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ‘খেলো করে দেয়া’ ইত্যাদি দায় নিয়ে বিদায় নিচ্ছেন এবারের ইসি সদস্যরা। তাই বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ইসির বিদায়টা অমসৃণ হওয়াটাই স্বাভাবিক। প্রশ্ন হচ্ছে, কি নিয়ে বিদায় বেলায় কি কি খড়্গ নেমে আসছে ইসির বিদায়ীদের ওপর?

সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট ও সংসদে নির্বাচন পরিচালনা, নির্বাচনের জন্য ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণ, নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ, আইন কর্তৃক নির্ধারিত অন্যান্য নির্বাচন পরিচালনা (এর মধ্যে সকল স্থানীয় সরকার পরিষদ যেমন : ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ, জেলা পরিষদ, পার্বত্য জেলা পরিষদ অন্তর্ভুক্ত) এবং আনুষঙ্গিক কার্যাদির সুষ্ঠু সম্পাদন হচ্ছে ইসি’র দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনে নির্বাচন কমিশন থাকবে স্বাধীন। কেবল সংবিধান ও আইনের অধীন হবেন। নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালনে নির্বাহী বিভাগের সকল কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করবে।

সরকার গঠিত একটি বাছাই কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি গঠিত হয় এই নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হয় অবসরপ্রাপ্ত সচিব কে.এম. নূরুল হুদাকে। নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম কবিতা খানম, সাবেক সচিব মো: রফিকুল ইসলাম এবং ব্রিগেডিয়ার (অব:) শাহাদাত হোসেন চৌধুরীকে। ওই বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব গ্রহণ করে নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ায় আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি বিদায় নিচ্ছে এ কমিশন।

কমিশনের কার্যকালজুড়ে এ কমিশন বদনামই কুড়িয়েছে বেশি। জাতীয় সংসদ, সিটি কর্পোরেশন, উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদসহ সাড়ে ৩ হাজারের বেশি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ৫ বছরে। আরও অন্তত: দেড় হাজার নির্বাচন চলমান। এসব নির্বাচনে ইসি’র কি পারফরম্যান্সে জুটেছে শুধু অসন্তোষ আর ধিক্কার। প্রতিটি ভোটে ইসি সরকারের আজ্ঞাবহ হয়ে নির্বাচন করেছেন। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের মতো ‘ক্ষমতাসীনরা ভোটের পর যে রেজাল্ট ইসির হাতে তুলে দেয়া সিইসি সেটাই পাঠ করেন মাত্র’।

এ নির্বাচন কমিশনের অধীনে বেশিরভাগ নির্বাচনে ভোট নিয়েই দেশি ও আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন ছিল খোদ কমিশনের ভেতরেই। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বিভিন্ন সময় নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন; নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনের জন্য ইসির উপর চাপ দিয়েছেন।

কিন্তু সিইসি নুরুল হুদা অন্য তিনজন কমিশনারের পাপেটের মতো সমর্থন নিয়ে পক্ষপাতিত্ব করে গেছেন। নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার, আইন ও বিধিমালা সংশোধন এবং ভোটে স্বচ্ছতা নিশ্চিতের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন ব্যর্থ হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে নির্বাচনব্যবস্থাকেই ধ্বংস করে দেয়ার অভিযোগ। ইসির একজন কমিশনারকেও দেখা গেছে সাংবিধানিক এই সংস্থার কার্যক্রম নিয়ে আত্মসমালোচনায় মুখর থাকতে।

একটি সংলাপের আয়োজন করেছিল ইসি। উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করা। তাদের এ উদ্যোগে সাড়া দিয়েছিল রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ, সংবাদমাধ্যম ও সাবেক কমিশনারগণ। ওই সংলাপে অংশগ্রহণকারীদের এই মর্মে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে, সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমনকি নির্বাচনী ব্যবস্থা, আইন ও বিধিমালা সংস্কারের মাধ্যমে যুগোপযোগী করতে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেছিল ইসি।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কোন সময়ে কী ধরনের সংস্কার করা হবে- সেই রোডম্যাপ প্রকাশ করা হয়। সেটি আর বাস্তবায়ন করেনি। এমনকি বিভিন্ন নির্বাচন নিয়ে যেসব অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছিল- সেগুলোও নিষ্পত্তি করেনি। অভিযোগগুলো উপেক্ষা করায় নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে ওঠে। বিদায়ী ইসির বিরুদ্ধে আরেকটি বড় অভিযোগ ওঠে। সেটি হচ্ছে, আইন বা বিধিমালার মৌলিক কোনো পরিবর্তন আনতে না পারা। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-১৯৭২ (আরপিও) থেকে প্রার্থিতা বাতিলে ইসির ক্ষমতাসংক্রান্ত ধারাসহ কয়েকটি মৌলিক ধারা বাতিলের উদ্যোগও ব্যর্থ হয়।

মূলত কে এম নুরুল হুদা কমিশন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পেলেও কাজেকর্মে তিনি একজন মাঝারি মানের সরকারি কর্মচারীর ভূমিকা পালন করেন। ডিসি, এসপিরা যেমন সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে থাকেন; নুরুল হুদার নেতৃত্বের নির্বাচন কমিশন সেটাই করেছেন। ফলে বিদায়ী কমিশনের প্রতি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ছিল আস্থাহীন। প্রশ্নবিদ্ধ, বিতর্কিত নির্বাচনগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলো যখনই অসন্তোষ প্রকাশ করেছে- ইসি তখনোই সন্তোষ প্রকাশ করেছে। রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ তথা নির্বাচকমণ্ডলীর আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছে।
বিশ্লেষকদের চোখে, সবচেয়ে বড় কলঙ্কটিতে হচ্ছে, ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন। ‘দিনের ভোট রাতে সেরে ফেলা’র কলঙ্ক নিয়ে বিদায় নিচ্ছে এ কমিশন।

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে ব্যর্থতা, ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণ, নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুনঃনির্ধারণ, স্থানীয় সরকার নির্বাচন পরিচালনা এবং আনুষঙ্গিক কার্যসম্পাদনের ক্ষেত্রেও নিয়মনীতি লঙ্ঘনের অজস্র অভিযোগ। আইনত: স্বাধীন হলেও কার্যক্রমে কার্যত পুরো সময়জুড়ে ছিল সরকারের প্রশ্রয়ে। তাই উত্থাপিত সব অভিযোগের থোড়াই তোয়াক্কা করেছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু বিদায় বেলার প্রেক্ষাপটটি ভিন্ন। এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে কমিশন সদস্যদের ব্যক্তিগতভাবে জবাবদিহিতার আওতায় আনার। বিদায়ী ইসির বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতি তথা আর্থিক কেলেঙ্কারির সুনির্দিষ্ট অভিযোগ।

এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে গতবছর ১৪ ডিসেম্বর সিইসি কেএম নূরুল হুদা ও নির্বাচন কমিশনারদের বিরুদ্ধে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠনে প্রেসিডেন্টের প্রতি আবেদন জানান ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক। এতে তারা আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগ আনেন। নির্বাচন কমিশনারদেও ‘বিশেষ বক্তা’ হিসেবে ২ কোটি টাকার বেশি গ্রহণ, কর্মচারী নিয়োগের নামে ৪ কোটি ৮ লাখ টাকার দুর্নীতি, নিয়মবহির্ভূতভাবে ৩টি করে গাড়ি ব্যবহার এবং ইভিএম ক্রয়সহ অন্তত: ৯টি গুরুতর অভিযোগ আনেন তারা।

একাদশ জাতীয় সংসদ, ঢাকা উত্তর, ঢাকা দক্ষিণ, গাজীপুর, খুলনা, সিলেট, রাজশাহী ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অনিয়মকে ইসি’র ‘অসদাচরণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয় বিশিষ্ট নাগরিকদের আবেদনে। এ কারণে তারা সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের মাধ্যমে কেএম নূরুল হুদার ইসি’র বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেন। তাতে কোনো সাড়া দেননি প্রেসিডেন্ট।

এর ধারাবাহিকতায় গতবছর ৭ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের দশ আইনজীবী ইসি’র দুর্নীতির বিষয়ে তদন্ত চেয়ে অভিযোগ দাখিল করে। অভিযোগে বলা হয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ও নির্বাচন কমিশনের নীতিমালার ব্যত্যয় ঘটিয়ে প্রশিক্ষণ ভাতার নামে ৭ কোটি ৪৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা খরচ করে ইসি। এতে সরকারি অর্থের অপচয় ও ক্ষতিসাধন হয়।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, এসব দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা এরকম কর্মকাণ্ড দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৫১১/১০৯ ধারা এবং দুর্নীতি দমন আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন অভিযোগ আমলে নিয়ে সিইসিসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ১৭(ক), ১৭(খ), এবং ১৭(গ) ধারা অনুযায়ী অনুসন্ধান, তদন্ত পরিচালনা এবং মামলা দায়েরের অনুরোধ জানানো হয়। দুদকের এই অনুসন্ধান-তদন্ত হবে ব্যক্তিগতভাবে সিইসি, কমিশনার ও ইসি সচিবের বিরুদ্ধে।

আইনজীবীদের দেয়া এ অভিযোগের বিষয়ে গতবছর ২২ ফেব্রুয়ারি দুদক সচিব জানান, অভিযোগটি যাচাই-বাছাই হচ্ছে। তবে গত একবছরে ইসির বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগের বিষয়ে আর কিছু জানায়নি সংস্থাটি। সর্বশেষ অবস্থা জানতে গতকাল শনিবার এ প্রতিবেদক টেলিফোনে কথা বলার চেষ্টা করেন দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খানের সঙ্গে। জবাবে তিনি বলেন, রোববার ফোন করুন। সর্বশেষ অবস্থা খোঁজ নিয়ে জানাতে হবে।

এদিকে সিইসি নূরুল হুদাসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে একবছরেও কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় মামলার প্রস্তুতি নিয়েছেন অভিযোগকারী ১০ আইনজীবী। তাদের পক্ষে অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, দুদকে যে অভিযোগ দায়ের করেছিলাম সেটির কোনো অ্যাকশন আমরা একবছরেও দেখিনি। তাই আমরা আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছি। শিঘ্রই একটি লিগ্যাল নোটিশ দেয়া হবে। তাতে প্রতিকার না মিললে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে মামলা দায়ের করবো।

সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বলেন, ইসি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সিইসি এবং ইসি মেম্বারগণ সাংবিধানিক পদ-পদবী বহন করছেন। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের এখতিয়ার প্রেসিডেন্টের। তবে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিগণ অবসরে চলে গেলে তারা আর সাংবিধানেক পদ হোল্ড করবেন না। তখন দুদকসহ আইন-প্রয়োগকারী সংস্থা সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনগত কোনো বাঁধা থাকবে না।

আদালত সূত্র জানায়, গত পাঁচ বছরে নির্বাচন সংক্রান্ত বিধিলঙ্ঘন ও আইন অমান্যের ঘটনায় বহু মামলা বিচারাধীন রয়েছে। এ অবস্থায় সর্বশেষ গত ২ জানুয়ারি সিইসি কেএম নূরুল হুদাসহ ইসি’র ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননা রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।

উচ্চ আদালতের আদেশ অগ্রাহ্য করে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার একটি পরিষদ নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করায় এ রুল জারি করা হয়। রুলে প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিবসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না-জানতে চাওয়া হয়েছে। বিধান অনুযায়ী, আদালত অবমাননার দায় বিবাদীদের ব্যক্তিগত। তাই এ আইনি লড়াই হুদা কমিশন কর্মকর্তাদের মোকাবেলা করতে হবে ব্যক্তিগতভাবেই।

এদিকে গত ৭ জানুয়ারি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমদ দাবি করেছেন সিইসি কেএম নূরুল হুদার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তবে এ দাবির সপক্ষে তিনি কোনো তথ্য-উপাত্ত দেন নি। দাবিটি প্রমাণসাপেক্ষ। কিন্তু উদ্ভুত পরিস্থিতি বিচারে এইটুকু তথ্যই হুদা কমিশন সদস্যের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ সৃষ্টি করেছে বলে জানা গেছে।

তথ্যানুসন্ধানে দেখা যায়, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের সংবিধানের ১১৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অনধিক চারজন নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে গঠিত এই ইসি। ইসিতে সিইসি’র দায় হচ্ছে, তিনি নির্বাচন কমিশনের সভাপতি হিসেবে কাজ করবেন। সংবিধানের বিধানবলী সাপেক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও কোনো নির্বাচন কমিশনারের মেয়াদ তার কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পরবর্তী ৫ বছর।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর