হাওর বার্তা ডেস্কঃ কলিং ভিসায় অভিবাসী কর্মী প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে মালয়েশিয়া সরকার। যে সমস্ত অনুমোদিত খাতে সরকারের দেয়া এসওপি মেনে চলছে সেই সমস্ত খাতে বিদেশি শ্রমিকদের পর্যায়েক্রমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মালয়েশিয়া প্রবেশের অনুমতি দেবে দেশটির সরকার।
কয়েকদিন আগে দেশটির পামওয়েল বাগানে ৩২ হাজার শ্রমিকের কলিং ঘোষণা করলেও বিভিন্ন সমস্যার কারণে তা সাময়িক ভাবে স্থগিত করা হয়। দীর্ঘ আলোচনার পর সেই ৩২ হাজার শ্রমিকের কলিং পুনরায় চালুর ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার। গত শুক্রবার এক বিবৃতিতে প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি ইসমাইল সাবরি ইয়াকুব বলেছেন, যে সমস্ত অনুমোদিত খাতে সরকার কর্তৃক এসওপি মেনে চলছে সেই সমস্ত খাতে বিদেশি শ্রমিকদের পর্যায়েক্রমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মালয়েশিয়া প্রবেশের অনুমতি দেয়া হবে। কোভিড-১৯ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বিশেষ কমিটি বৈঠকে বিদেশি কর্মী মালয়েশিয়া প্রবেশের যে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা ছিল সেটা প্রত্যাহার করে এসওপি অনুমোদন করেছে।
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, একই সময়ে স্বরাষ্ট্র ও মানবসম্পদ মন্ত্রীর মধ্যে যৌথ বৈঠকের ফলে সিদ্ধান্তের মাধ্যমে অন্যান্য খাতে বিদেশি কর্মী কোটা এবং তারিখ নির্ধারণ করা হবে। স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং সিস্টেম- এসওপিগুলোকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। প্রি-ফ্লাইট, আগমন, কোয়ারেন্টিন পিরিয়ড এবং কোয়ারেন্টিন পরবর্তী সময়। প্রি-ফ্লাইট প্রয়োজনীয়তার অধীনে বিদেশি কর্মীদের অবশ্যই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ থাকতে হবে।
ফ্লাইটের ৩ ঘণ্টা আগে আরটি পিসিআর টেস্ট করাতে হবে। ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট থাকতে হবে। অভিবাসন বিভাগ ও সরকারের অনন্য বিধিনিষেধ নির্ধারিত শর্ত এবং নীতিমালা মেনে চলতে হবে। বিদেশি কর্মীদের মালয়েশিয়া প্রবেশর সময় কুয়ালালামপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর (কেএলআইএ) এবং (কেএলআই-২) মাধ্যমে প্রবেশ করতে হবে। মালয়েশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত পৃথককরণে বাধ্যতামূলক সাত দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। কোয়ারেন্টিন শেষ হলে তাদের নিয়োগকর্তা বা মালিকের কাছে পাঠানো হবে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো শেষ হলে নিয়োগকর্তা বা মালিকের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে।
কুয়ালালামপুর থেকে বাংলাদেশ কমিউনিটির অন্যতম সদস্য মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির গতকাল শনিবার ইনকিলাবকে জানান, অভিবাসী কর্মী প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য আশার আলো দেখা দিয়েছে। অন্যান্য দেশ থেকে কর্মীরা মালয়েশিয়ায় বিনা অভিবাসন ব্যয়ে আসবে। কিন্ত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে দুই থেকে তিন লাখ টাকা ব্যয়ে কর্মী পাঠালে কর্মস্থলে তাদের নিরাপত্তার অভাব দেখা দিবে।
বায়রার সাবেক মহাসচিব শামীম আহমদ নোমান এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, অন্যান্য সেন্ডিং কান্ট্রিগুলো থেকে যেভাবে কর্মী যায় আমরাও বাংলাদেশ থেকে বিনা অভিবাসন ব্যয়ে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে চাই। কোনো সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় যাতে কর্মী প্রেরণের ষড়যন্ত্র না হয় সে ব্যাপারে সবাইকে সজাগ থাকার জন্য তিনি অনুরোধ জানান।
এদিকে, মালয়েশিয়ার বিভিন্ন কারাগার ও ডিটেনশন ক্যাম্পে কারাবন্দি বাংলাদেশি কর্মীরা কুয়ালালামপুস্থ বাংলাদেশি হাইকমিশনের আইনি সহায়তা না পেয়ে দীর্ঘ দিন ধরে মানবেতর জীবন-যাপন করছে। অনেক কারাবন্দি প্রবাসী বাংলাদেশির সাজার মেয়াদ শেষ হবার পরেও দেশে ফিরতে পারছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল রাতে হাইকমিশনের লেবার কাউন্সিলর জহিরুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। এছাড়া হাইকমিশন থেকে পাসপোর্ট পেতে প্রবাসী কর্মীরা চরম হয়রানির শিকার হচ্ছে। পোস্ট অফিসের মাধ্যমে অনেকে এক মাসের জায়গায় চার মাসেও পাসপোর্ট হাতে পাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। পাসপোর্ট শাখার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নিষ্ক্রিয় রেখে দূতালয় প্রধান রুহুল আমিনকে পাসপোর্টের দায়িত্ব দেয়ায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।