করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি বাংলাদেশে স্থিতিশীল

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশে করোনার সংক্রমণ নিম্নমুখী অবস্থায় স্থিতিশীল রয়েছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান অনুযায়ী বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতির ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। গত এক মাস ধরে করোনায় দৈনিক আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা এবং শনাক্তের হার হ্রাস অব্যাহত রয়েছে।

শনাক্তের হার হ্রাস পেতে পেতে ২২ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। মৃত্যুর সংখ্যার বিবেচনায় বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ২৯তম থেকে চলে গেছে ৩৮তম স্থানে। আর মোট আক্রান্তের দিক দিয়ে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান ১৫তম থেকে চলে গেছে ৩১তম স্থানে। দেশের করোনা হাসপাতালগুলোর অর্ধেক বেডই ফাঁকা রয়েছে।

দেশব্যাপী টিকা কর্মসূচি চালু এবং মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানা হলে দেশের করোনা পরিস্থিতির আরো উন্নতি ঘটবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বহির্বিশ্বেও করোনার সংক্রমণ কমে আসছে। ব্রিটেনে কমেছে ২৯ শতাংশ। আমেরিকাসহ ইউরোপের দেশগুলোতে সংক্রমণ নিম্নমুখী।

সারা দেশে করোনার ভ্যাকসিন পৌঁছে গেছে। টিকার জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ১ লাখ ৮৭ হাজার। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের মার্চে পাঁচ জন, এপ্রিলে ১৬৩ জন, মে মাসে ৪৮২ জন, জুনে ১ হাজার ১৯৭ জন, জুলাইয়ে ১ হাজার ২৬৪ জন, আগস্টে ১ হাজার ১৭০ জন, সেপ্টেম্বরে ৯৭০ জন, অক্টোবরে ৬৭২ জন, নভেম্বরে ৭২১ জন, ডিসেম্বরে ৯১৫ এবং ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ৫৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছে।

আর দেশে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ২০২০ সালের মার্চে ৫১ জন, এপ্রিলে ৭ হাজার ৬১৬ জন, মে মাসে ৩৯ হাজার ৪৮৬ জন, জুনে ৯৮ হাজার ৩৩০ জন, জুলাইয়ে ৯২ হাজার ১৭৮ জন, আগস্টে ৭৫ হাজার ৩৩৫ জন, সেপ্টেম্বরে ৫০ হাজার ৪৮৩ জন, অক্টোবরে ৪৪ হাজার ২০৫ জন, নভেম্বরে ৫৭ হাজার ২৪৮ জন, ডিসেম্বরে ৪৮ হাজার ৫৭৮ জন এবং ২০২১ সালের জানুয়ারিতে ২১ হাজার ৫২৯ জন।

২০২০ সালে করোনায় দৈনিক রোগী শনাক্তের হার প্রতি মাসের প্রথম ও শেষ সপ্তাহে যথাক্রমে এপ্রিলে ৯ ও ১৩ শতাংশ, মে মাসে ১০ ও ২২ শতাংশ, জুনে ২১ ও ২০ শতাংশ, জুলাইয়ে ২১ ও ২১ শতাংশ, আগস্টে ২৫ ও ১৮ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ১৬ ও ১১ শতাংশ, অক্টোবরে ১৩ ও ১২ শতাংশ, নভেম্বরে ১৩ ও ১৭ শতাংশ এবং ডিসেম্বরে ১৫ ও ৮ শতাংশ। এভাবে শনাক্তের হার ২০২১ সালের জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ৮ শতাংশ ও শেষ সপ্তাহে তা হ্রাস পেয়ে নেমে আসে ৩ শতাংশে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশে করোনা ভাইরাসে সংক্রমণের হার ৩-৪ শতাংশে ওঠানামা করছে। এটা স্বাস্থ্যবিধি মানারই সুফল। তিনি বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে নামলে ভাইরাস আপনা-আপনি চলে যায়। বাংলাদেশে যেহেতু ৩ শতাংশে নেমে এসেছে, তাই আর বাড়ার সম্ভাবনা নেই। তবে সংক্রমণের বর্তমান হার বজায় রাখতে সবাইকে টিকা গ্রহণের পাশাপাশি মাস্ক পরা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন মন্ত্রী।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, ‘করোনা সংক্রমণে বাংলাদেশ সহনশীল পর্যায়ে আছে। সবাই টিকা নিলে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে আমরা আরো সুফল পাব।’ আগস্ট-সেপ্টেম্বরের দিকে করোনা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আর বাড়ার আশঙ্কা নেই বলে তিনি জানান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) সাবেক উপাচার্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণ স্থিতিশীল ও সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে। আগামী দুই সপ্তাহ এভাবে চললে বাড়ার সম্ভাবনা কম। তিনি বলেন, করোনা নির্মূল করতে হলে টিকা নিতে হবে, মাস্ক পরতে হবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তাহলে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হয়ে যাবে।

মুগদা মডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর বলেন, এ হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত অনেক সিট ফাঁকা। অন্যান্য হাসপাতালেও অনুরূপ অবস্থা। দেশে সহনশীল পর্যায়ে রয়েছে করোনার সংক্রমণ। তবে সতর্ক থাকতে হবে। কারণ অনেক দেশে কমে গিয়েছিল, কিন্তু সেসব দেশে নতুন করে সংক্রমণ বেড়েছে। তাই আত্মতৃপ্তিতে থাকার সুযোগ নেই। টিকা নিলেও দুই সপ্তাহ লাগে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে। তাই সবারই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

বাংলাদেশ সোসাইটি অব অ্যানেসথেসিওলজিস্টের সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানেসথেসিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. দেবব্রত বণিক বলেন, বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণ সহনশীল পর্যায়ে আছে। তবে সবার টিকা নিতে হবে। তাহলে ভাইরাস ট্রান্সমিশন করতে পারবে না, আর তখন ভাইরাস মারা যাবে।

রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. এ এস এম আলমগীর বলেন, দেশে করোনা ভবিষ্যতে বাড়বে নাকি কমবে, সেটি এখন বলা যাচ্ছে না। তাই সবারই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে এবং টিকা নিতে হবে।

এদিকে কোভ্যাক্স থেকে সোয়া ১ কোটি ডোজ করোনা ভাইরাসের টিকা পাচ্ছে বাংলাদেশ। এই টিকা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে তৈরি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত টিকা বলেও জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নেতৃত্বাধীন এই প্ল্যাটফরম। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, গ্লোবাল অ্যালায়েন্স ফর ভ্যাকসিনস অ্যান্ড ইমিউনাইজেশনস বা গ্যাভি এবং কোয়ালিশন ফর এপিডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস ইনোভেশনসের গড়া প্ল্যাটফরম হলো কোভ্যাক্স, যা গঠিত হয়েছে বিশ্বের সব মানুষের সংক্রামক রোগের প্রতিষেধক পাওয়া নিশ্চিত করতে। বিভিন্ন দেশে টিকা বণ্টনের যে তালিকা কোভ্যাক্স বুধবার প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, জুনের শেষ নাগাদ বাংলাদেশ ১ কোটি ২৭ লাখ ৯২ হাজার ডোজ কোভিড-১৯ টিকা পেতে যাচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর