নামিদামি ব্র্যান্ডের নামে নকল প্রসাধনী, ঠকছেন ক্রেতা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ রাজধানীর অভিজাত একটি মার্কেটের শোরুম থেকে হুমায়ারা হৈমন্তী নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী বিখ্যাত একটি ব্র্যান্ডের শ্যাম্পুর বোতল কিনেন। ব্যবহারের কিছুদিন পর তিনি লক্ষ্য করেন ধীরে ধীরে তার চুল উঠে যাচ্ছে। যা পূর্বে কখনো হয়নি। ভাবনায় পড়ে যান হৈমন্তী।

বন্ধুদের বিষয়টি জানালে তারা শ্যাম্পুর বোতলটি পরখ করে জানান, হৈমন্তী প্রতারিত হয়েছেন। কারণ শ্যাম্পুটি আসল নয়। একশ্রেণির ব্যবসায়ীরা এমন কাজ করে বিশাল অংকের মুনাফা অর্জন করছেন। তাদের কাজই বিখ্যাত ও জনপ্রিয় সব ব্র্যান্ডের পণ্যকে নকল করা।

সরেজমিনে রাজধানীর চকবাজার, মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা গেছে, প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে নকল প্রসাধনী। পৃথিবীর নামকরা ব্র্যান্ডের প্রসাধনী সামগ্রী দোকানে সাজানো রয়েছে। তাদের কাছে যেকোনো ব্রান্ডের কসমেটিকস পাওয়া যায়। আসল আমদানিকারকের স্টিকারের মতো হুবহু স্টিকারও লাগানো রয়েছে সব পণ্যের প্যাকেটের গায়ে। রয়েছে উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্নের তারিখ এবং সর্বোচ্চ খুচরা মূল্যের ছাপ।

কোহিনূর কেমিক্যালের তিব্বত স্নোর অনুকরণ করে তিবেল, তিব্বেল স্নো তৈরি করে বিক্রি করা হচ্ছে। কিছুটা উন্নত মানের বোতলে রাখা প্যান্টিন ও হেড অ্যান্ড শোল্ডার শ্যাম্পুর নকল পণ্য ৪০০ মিলির বোতলের দাম ১০০ টাকা এবং একটু উন্নতটির দাম ১৪০ টাকা। বাজারে এ দুটি ব্র্যান্ডের একই পরিমাপের আসল পণ্যের দাম ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা। ইউনিলিভারের এক্স বডি স্প্রে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, এটির আসল পণ্যের দাম তিনগুণ। ডুইট, হ্যাভক, ফগসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বডি স্প্রের দাম ৭০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে। বাজারে আসলগুলোর দাম ৫০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে। ৩৮৫ মিলির নকল জিলেট ফোম ১০০ টাকা, আসলটির দাম ৩৯০ টাকা। নকল পন্ডস ফেসওয়াস ৫০ টাকা, এর আসলটির দাম ১৮০ টাকা। সব পণ্যের দামই আসলের চেয়ে অর্ধেকেরও কম।

চকবাজার মার্কেটের এক বিক্রেতা নাম প্রকাশ করার না করার শর্তে ইত্তেফাক অনলাইনকে জানান, ‘ঢাকার কেরানীগঞ্জের জিনজিরায় গড়ে উঠেছে নকল পণ্যের অত্যাধুনিক সব কারখানা। এসব কারখানায় এমন কোনো পণ্য নেই যা নকল হয় না। চীন, ভারত, জার্মানি, থাইল্যান্ড, আমেরিকা ও জাপানের পণ্য ছাড়াও দেশি পণ্য অবিকল নকল করে তৈরি করা হচ্ছে। দামে সস্তা পেয়ে দোকানিরা এসব কিনছেন এবং ক্রেতাদের আসল বলেই বিক্রি করছেন। এতে দোকান মালিক অতিরিক্ত লাভ করলেও প্রতারিত হচ্ছেন ক্রেতারা।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকার বড় বড় মার্কেটের নামিদামি শোরুম এবং দোকানেও এসব নকল পণ্য বিক্রি হচ্ছে। ক্রেতারা আসল মনে করেই কিনছেন। অনেক পণ্য বাইরে থেকে দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই, এটি নকল। আমরা পাইকারদের কাছে চীনের তৈরি পণ্য বলে বিক্রি করি। আসলে চীনের কেমিক্যাল দিয়ে এদেশেই তৈরি হচ্ছে এসব প্রসাধনী সামগ্রী।’

নকল ও ভেজাল প্রসাধনী ব্যবহারের কুফল বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম এন হুদা বলেন, ‘ত্বক ফর্সা করার ক্রিমসহ যেকোনো প্রসাধনী ব্যবহারে চামড়ার রং নষ্ট হয়ে সাদা হয়। সাময়িক এই পরিবর্তনে ব্যবহারকারী মনে করেন তিনি ফর্সা হচ্ছেন। প্রসাধনীতে দেওয়া বিষাক্ত দ্রব্য রক্তের সঙ্গে মিশে নানা ব্যাধির সৃষ্টি করে। চামড়ায় ক্যান্সার ছাড়াও নানা ধরনের জটিল রোগ তৈরি করে।’

বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) রাতে র‌্যাব-২ এর উদ্যোগে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু এবং বিএসটিআইএর নেতৃত্বে ঢাকার কেরানীগঞ্জ থানা এলাকার মার্ক-৩ টয়লেট্রিজ লিমিটেড নামে প্রসাধনী তৈরির কারখানায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। কারখানায় মেয়াদোত্তীর্ন কাঁচামাল দিয়ে প্রসাধনী সামগ্রী উৎপাদন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত ব্র্যান্ডের নাম ব্যবহার করে ভেজাল প্রসাধনী তৈরি ও মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্যের মেয়াদের তারিখ পরিবর্তন করে বাজারজাতের প্রমাণ পাওয়া যায়। এ অপরাধে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার মো. আসলাম, ডেলিভারি ম্যান তপু দের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করে দেওয়া হয়। এ সময় আনুমানিক ২ কোটি টাকার নকল, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ণ প্রসাধনী সামগ্রী জব্দ করা হয়।

এ বিষয়ে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট পলাশ কুমার বসু বলেন, সম্প্রতি ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে কিছু অসাধু ব্যক্তি অতি মুনাফার লোভে বিএসটিআই অনুমোদন ছাড়াই মেয়াদোত্তীর্ণ কেমিক্যাল এবং অননুমোদিত রং ব্যবহার করে বিভিন্ন ভেজাল প্রসাধনী তৈরি করছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর