মে-জুনের মধ্যে টিকা পাবে সাড়ে ৪ কোটি মানুষ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামী মে-জুন মাসের মধ্যে দেশে সাড়ে চার কোটি মানুষ টিকা পাবে। জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির প্রথমে দেড় কোটি মানুষের জন্য তিন কোটি ডোজ এবং মে-জুন মাসের মধ্যে আসবে তিন কোটি মানুষের জন্য আরো ছয় কোটি ডোজ টিকা আসছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

সরকারের নেয়া সিদ্ধান্ত নো মাস্ক নো সার্ভিস’ বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা। অর্থাৎ মুখে মাস্ক পরা না থাকলে সরকারি- বেসরকারি কোনো অফিসে গিয়ে কেউ যাতে কোনো সেবা না পায় তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।

গতকাল সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভা বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।

মন্ত্রিসভার বৈঠকের শেষে অনির্ধারিত আলোচনায় টিকার বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ সচিবভ তিনি বলেন, টিকা দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে গ্রাম পর্যায়ে প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু হয়েছে। মূলত ইপিআই এবং সরকারি হাসপাতালের মাধ্যমে টিকা দেয়া হবে। বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে এ কার্যক্রমে সস্পৃক্ত করতে আলোচনা চলছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনি আশা করছেন জানুয়ারির শেষ বা ফেব্রুয়ারির প্রথম দিকে ভ্যাকসিন পেয়ে যাব। ভ্যাকসিন দেয়ার জন্য যেসব জিনিস ব্যবহার করা হবে সেগুলো কীভাবে ডিসপোজাল করা হবে সেই ট্রেনিং দেয়া হচ্ছে। বেসরকারি খাতকে অন্তর্ভুক্ত করে টিকা দেয়া যায় কি না, তা নিয়েও আলোচনা করছেন। তিনি বলেন, ইপিআইয়ের (টিকা কার্যক্রম) যে ব্যাপক কার্যক্রম আছে, (করোনার টিকা দেয়ার ক্ষেত্রে) সেটিকে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন, বিভিন্ন হাসপাতালে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন, প্রাইভেট সেক্টরকে ব্যবহার করতে চাচ্ছেন। যেহেতু সময় পাচ্ছি আমরা, আপাতত অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নিয়ে চিন্তা করছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। যদি অন্য কেউ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদনের প্রস্তাব নিয়ে আসে, সরকার কাউকেই মানা করবে না। আমাদের যে কমিটি আছে তারাই করবে। তিনি বলেন, উনি (স্বাস্থ্যমন্ত্রী) বললেন, আরও ৬ কোটি ভ্যাকসিন কোভেক্সের মাধ্যমে মে-জুন মাসের মধ্যে আসবে। এক মাস আগে-পরে হতে পারে। প্রথম দফায় যে তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন আসার কথা, তার মধ্যে দেড় কোটি ডোজ আসছে। দুটি ডোজ ভ্যাকসিন মিলে একটি টিকা হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, দ্বিতীয় দফায় আরও তিন কোটি মানুষের জন্য টিকা আসবে। ২০ শতাংশ মানুষকে এই টিকা দেয়া যাবে। সাড়ে চার কোটি মানুষকে টিকা দেয়া যাবে। মাইনাস ১৭ ডিগ্রি তাপমাত্রায় করোনাভাইরাসের টিকা সংরক্ষণ হবে। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত গিয়ে টিকা দেয়ার স্ট্র্যাকচারই আমাদের নেই। একমাত্র কোল্ডস্টোরেজে রাখতে পারবেন, তারপর যখন বের করবে মাইনাস ১৭ ডিগ্রি তাপমাত্রা.. টেকনিক্যাল কমিটি উনারা এটা দেখবে। উনারা যদি মনে করেন আমাদের যে স্ট্র্যাকচার আছে সেটাকে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন না করে টিকা দেয়া যায় এবং হ্যাজার্ড হবে না, এটা টেকনিক্যাল বিষয়।

খন্দকার আনোয়ারুল বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা যা জানি, মর্ডানা এবং ফাইজার দু-টার টিকাই মাইনাস ২৫ ডিগ্রি এবং আরেকটা মাইনাস ১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে সংরক্ষণ করতে হবে। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাস্ক পরার ওপর আবারো গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি নো মাস্ক নো সার্ভিস’ নীতি বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়েও আরো কঠোর ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। ধনী দেশগুলো যেখানে তাদের সব নাগরিককে সম্ভব দ্রæততম সময়ে টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, সেখানে গরিব দেশগুলোর জন্য টিকা পাওয়া হয়ে উঠেছে একটি বড় চ্যালেঞ্জ। ভ্যাকসিন কেনার জন্য ১৬ নভেম্বর অর্থ বিভাগ স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকাও বরাদ্দ দিয়েছে।

প্রেসিডেন্টের ভাষণের খসড়া অনুমোদন
একাদশ জাতীয় সংসদের ২০২১ সালের প্রথম অধিবেশনে প্রেসিডেন্টের ভাষণের খসড়া অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। কুড়িগ্রামে হচ্ছে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এ জন্য কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০২০ এর খসড়ার নীতিগত এবং নিরাপদ কৃষিপণ্য উৎপাদনে উত্তম কৃষি চর্চা (এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসেস-গ্যাপ) নীতিমালা অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভার বেঠকে এই অনুমোদন দেয়া হয় গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে মন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, বৈঠকে প্রেসিডেন্টের ভাষণ ইলাবোরেট ও সংক্ষিপ্ত দুটোই আনা হয়েছে। প্রেসিডেন্টের ভাষণে ১০টি বিষয় গুরুত্ব পাচ্ছে। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক চিত্র, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গৃহীত পদক্ষেপ ও সাফল্য, রূপকল্প-২০২১ বাস্তবায়নে গৃহীত কর্মসূচি এবং রূপকল্প-২০৪১ প্রণয়ন, দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর প্রসার, যুদ্ধাপরাধীদের বিচারপ্রক্রিয়ার অগ্রগতি, বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্য, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন ও এ জন্য গৃহীত কর্মসূচি এবং প্রশাসনিক নীতি, কৌশল, উন্নয়ন দর্শন এবং অগ্রযাত্রার দিকনির্দেশনা গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে ভাষণে। নতুন বছরের শুরুতেই বসছে একাদশ জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশন। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৭৩ (২) অনুযায়ী এবারও বছরের শুরুর অধিবেশনের ভাষণ দেবেন প্রেসিডেন্টের মো, আবদুল হামিদ।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, অন্যান্য কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুসরণ করে নতুই এই আইন করা হচ্ছে। কৃড়িগ্রাম একসময় মঙ্গাপীড়িত ছিল, সেখানে যদি এ ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় হয় তবে গবেষণা হবে, ফার্মিং হবে। এরমধ্যে দিয়ে তাদের অবস্থার আরও উত্তরণ হবে। ওই এলাকার লোকজনের কৃষি ও সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়ন করার লক্ষ্য নিয়ে সেখানে এই বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে। খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশে মোট ১৫৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম চলছে। এরমধ্যে ৪৬টি সরকারি এবং ১০৭টি বেসরকারি। আর দেশে সাতটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চালু আছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা ও ফার্মিংয়ের মাধ্যমে যে টেকনোলজি ডেভেলপ হবে তা কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাটে বিস্তৃত হলে ওই লোকজন ফার্মিংয়ের মাধ্যমে ভুট্টা, শাক-সবজি, মিষ্টি আলু ও মিষ্টি কুমড়া, মাছ উৎপাদনের মাধ্যমে তাদের অবস্থার আরও উন্নত করতে পারবে। তিনি বলেন, ১০-১২ বছর ধরে ওখানে মঙ্গা নেই। এরমূল উদ্দেশ্য হলো ওই এলাকার লোকজনের কৃষি ও সার্বিক অর্থনীতির উন্নয়ন করার লক্ষ্য নিয়ে সেখানে এই বিশ্ববিদ্যালয় করা হচ্ছে।

খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, প্রেসিডেন্ট হবেন বিশ্ববিদ্যালয়টির আচার্য। উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারার থাকবেন। আইনে সিন্ডিকেট, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল, অর্থ কমিটি থাকবে এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন নিয়ন্ত্রণ করবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, নিরাপদ কৃষিপণ্য উৎপাদনে উত্তম কৃষি চর্চা (এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসেস-গ্যাপ) নীতিমালা অনুমোদন দিয়েছে। আমাদের দেশে এটা গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। নিরাপদ খাদ্যপণ্যের বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনায় নিয়ে উৎপাদনের শুরু থেকে সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর প্রক্রিয়াকরণ, যেমন- মাঠ থেকে সংগ্রহ, প্যাকেজিং, পরিবহন ইত্যাদি পর্যায়ে উত্তম কৃষি চর্চা অনুসরণ করা প্রয়োজন। এটা আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন দেশ ও যারা আমাদের এখান থেকে (কৃষিপণ্য) ক্রয় করে তারা বারবার তাগিদ দিচ্ছে যে, আপনাদের গুড এগ্রিকালচারাল প্র্যাকটিসেস (গ্যাপ) নীতিমালা করতে হবে, না হলে আপনাদের এখান থেকে (পণ্য) নেব না। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ধরনের আইটেম আমরা যখন বিভিন্ন দেশে রফতানি করি, এগুলো (উত্তম কৃষি চর্চা) নিয়ে কথাবার্তা হয়। চিংড়ির কথা বলি, চিংড়ি পরীক্ষার একটা ইনস্টিটিউট সাভারে আছে, যারা চিড়িং উৎপাদন করে তাদের ঘের থেকে স্যাম্পল পাঠায়, টেস্ট করে ওকে করলে সেটাই শুধুমাত্র বাইরে এক্সপোর্ট করা যায়।’ ‘শুধু বাইরে নয়, দেশের ভেতরেও যেগুলো সাপ্লাই দেয়া হবে সেগুলো এই নীতিমালার অধীনে মান ঠিক করে নিতে হবে, ভেরিফাই করে নিতে হবে। এটার জন্যই গ্যাপ নীতিমালা হয়েছে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এটা (গ্যাপ নীতিমালা) যদি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করা যায়, তবে আমাদের বেড প্রিপারেশন (বীজ তলা তৈরি) থেকে শুরু করে মার্কেটিং ও ভোগ পর্যন্ত মিনিমাম স্ট্যান্ডার্ড মেইনটেইন করা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর