দেশসেরা আউশের আবাদে বদলে গেছে কৃষকদের মুখে হাসি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সোনালী আউশ ধান সোনা হয়ে হাসি ফুটিয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলার কৃষকদের মুখে। এ জেলায় এবার সর্বোচ্চ পরিমাণ আউশের আবাদ হয়েছে এবং ফলনও হয়েছে প্রচুর। দেশের অন্য অঞ্চলগুলোর তুলনায় এই জেলায় আউশের ফলন প্রায় ২৫ শতাংশ বেশি। তাছাড়া ধানের বাজারদর ভালো পাওয়ায় কৃষকরা খুশি। গত ছয় বছরে আউশ আবাদ বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে এ জেলায় আউশ ধানের আবাদ হয়েছিল ২১ হাজার ৩২৫ হেক্টর। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে আউশ ধানের আবাদ হয়েছে ৪৩ হাজার ১৭৩ হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ, গত ছয় বছরে আবাদ বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি।

এদিকে, দেশের ৬৩টি জেলার মোট আউশের আবাদ যেখানে ১৩ লাখ ৩৪ হাজার হেক্টর, সেখানে মাত্র চার উপজেলা নিয়ে গঠিত চুয়াডাঙ্গা জেলাতেই আউশ আবাদ হয়েছে ৪৩ হাজার ১৭৩ হেক্টর।

কেবল আবাদ নয়, আউশের গড় ফলনেও  জেলা সারাদেশে সেরাদের তালিকায় রয়েছে। দেশে আউশ ধানের গড় ফলন (চাল) প্রতি হেক্টরে ২ দশমিক ৮ মেট্রিক টন। সেখানে চুয়াডাঙ্গা জেলায় আউশ ধানের গড় ফলন (চাল) প্রতি হেক্টরে ৩ দশমিক ৪৭ মেট্রিক টন। অর্থাৎ এই জেলার ফলন সারাদেশের গড় ফলনের ২৩ শতাংশ বেশি।

গেল সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে দেখা যায়, জেলার কৃষকেরা আউশ ধান কেটে ঘরে তোলায় ব্যস্ত। এবার ফলন হওয়ায় এবং ধানের দাম বেশি থাকায় কৃষকেরা খুশি মনেই মাঠের কাজ করছিলেন।

জানতে চাইলে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তালহা জুবাইর মাসরুর বলেন, বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার বেশ আগে থেকেই আউশ ধান আবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নেয়। সে কারণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা কৃষকদের আউশ ধান আবাদ বাড়ানোর জন্য তাদের প্রণোদনা দিয়ে নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করে আসছে। বিশেষ করে করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনায় সরকার আউশ-আমন আবাদে বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিনামূল্যে আউশ ধান বীজ বিতরণ, প্রশিক্ষণ, উদ্বুদ্ধকরণ সভা, মাঠ দিবস ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে কৃষকদের সহায়তা ও উৎসাহ দেওয়া হয়, যা পরিপূর্ণভাবে চুয়াডাঙ্গায় কাজে লেগেছে।

তালহা জুবাইর আরও বলেন, দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে ভিন্ন ধরনের শস্য বিন্যাস চালু রয়েছে, যেখানে আউশ ধান অন্যতম জনপ্রিয় চাষ হিসেবে কৃষকের কাছে বিবেচিত হচ্ছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এখানে অধিকাংশ কৃষক মাঠ ফসল হিসেবে ভুট্টা-আউশ-সবজি অথবা সবজি-আউশ-সবজি অথবা ভুট্টা-সবজি-আউশ কিম্বা বোরো-আউশ-আগাম সবজি বিন্যাসে ফসল আবাদ করে থাকেন। ভুট্টা আবাদে দেশের শীর্ষস্থানীয় এলাকা হিসেবেও চুয়াডাঙ্গায় ভুট্টা সংশ্লিষ্ট শস্য বিন্যাসে আউশ ধান সবচেয়ে উপযুক্ত ও লাভজনক ফসল। শস্য বিন্যাস ও বৃষ্টি নির্ভরতার জন্য এ জেলায় আউশ ধান রোপণ দেরিতে হয়। কিন্তু উৎপাদন খরচ কম, স্বল্পজীবন কালের উন্নত জাত ব্যবহারে কৃষকের জন্য আউশ ধান আবাদ লাভজনক হচ্ছে।

এসব কারণেই গত কয়েক বছরে আউশ ধানের আবাদ এই জেলায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে বলে জানান এই কৃষি কর্মকর্তা। তার হিসাব, এ মৌসুমে জেলায় সর্বোচ্চ পরিমাণ জমিতে আউশের আবাদ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও যথাযথ পরিচর্যার জন্য ফলনও হয়েছে আশানুরূপ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আলী হাসান সারাবাংলাকে বলেন, চুয়াডাঙ্গা জেলায় আউশ ধানের আবাদ সবচেয়ে বেশি হয়। এর মধ্যে জেলার ১৬ হাজার ৭২৯ হেক্টর জমিতে উচ্চফলনশীল ব্রিধান-৪৮ জাতের ধান এবং এরপর ১২ হাজার ৭২৪ হেক্টর জমিতে স্থানীয় ভাষায় খাটোবাবু ধান আবাদ হয়েছে। ধানের শেষোক্ত জাতটি উচ্চফলনশীল ও রোগ-বালাই প্রতিরোধী। তাছাড়া ৭ হাজার ৪৭৩ হেক্টর জমিতে ব্রিধান-৮২, ব্রিধান-৮৫ ইত্যাদির মতো উচ্চফলনশীল আধুনিক জাতের ধানেরও আবাদ হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা জেলার ভূমি প্রকৃতি, মাঝারি উঁচু এবং আবহাওয়া বৃষ্টিনির্ভর হওয়ায় আউশ ধান চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী বলে মন্তব্য করেন তিনি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর