কিশোরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের ঐতিহাসিক বড়ইতলা দিবস পালন

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কিশোরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের ঐতিহাসিক বড়ইতলা দিবস পালন করেছে। কিশোরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের আহবায়ক লুৎফুর রশিদ রানার নেতৃত্বে উপস্থিত ছিলেন কিশোরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব মনোয়ার হোসাইন রনী, নজরুল ইসলাম নূরু, সাংবাদিক মোস্তফা শাওন সহ সাংবাদিক নেতৃবৃ্ন্দ।
৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও এদেশীয়দের সহযোগিতায় পরিকল্পিত গণহত্যা ও নির্যাতন শুরু করে প্রথম থেকেই। যার মাধ্যমে তারা বাঙালি জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে দমন করতে চেয়েছিল। তাদের আসল উদ্দেশ্য ছিলো ২৬ মার্চের মধ্যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের সব বড় শহর দখল করে নেওয়া এবং রাজনৈতিক ও সামরিক বিরোধীদের এক মাসের ভেতর নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া।
বাঙালির সবচেয়ে গৌরবময় ইতিহাস ১৯৭১। আর এই ৭১-এর সবচেয়ে বেদনাদায়ক স্মৃতি হলো পাকিস্তানি সেনাদের বর্বরোচিত, পৈশাচিক গণহত্যা। পাকিস্তানি সেনা ও তাদের এদেশীয় দোসরদের অনেক নির্মমতা-নৃশংসতাই আমাদের এখনো অজানা।

একটি বধ্যভূমি কিশোরগঞ্জের সদর উপজেলার ‘বরইতলা বধ্যভূমি’। ১৯৭১ সালের ১৩ই অক্টোবর আশপাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে মোট ৩৬৫ জন নিরীহ গ্রামবাসীকে ধরে এখানে এনে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বরইতলা কিশোরগঞ্জ জেলা সদরের যশোদল ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। কিশোরগঞ্জ সদর থানার সবচেয়ে বড়ো বধ্যভূমি হিসেবে বরইতলা স্থানীয় ইতিহাসে উল্লেখিত।একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ হয়নি। বরইতলা হত্যাকাণ্ডে স্বজনহারা শত শত পরিবার এখনও মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। তাদের খবর রাখে না কেউ। এখনও মিলেনি শহীদ পরিবারের মর্যাদা।
কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকে প্রায় চার কিলোমিটার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে চলে গেছে কিশোরগঞ্জ-নিকলী সড়ক। এ সড়কের পাশেই বড়ইতলা ময়দান। বড়ইতলার পাশেই মুক্তিযুদ্ধকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের বাড়ি। ফলে হানাদার ও রাজাকারদের শ্যেন দৃষ্টি পড়ে এলাকাটির উপর।
১৩ অক্টোবর স্থানীয় রাজাকাররা এখানে চালায় নির্মম গণহত্যা। প্রায় চারশ গ্রামবাসীকে তারা প্রথমে বরইতলা মাঠে জমায়েত করে। পরে প্রত্যেককে হাত-পা বেঁধে নির্মমভাবে হত্যা করে। তাদের কয়েকজন নামাজ পড়ার ওসিলায় স্থানীয় মসজিদে গিয়ে রক্ষা পান। এই মসজিদটি কালের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে রয়েছে।
সে সময় আব্দুল আজিজ কিশোরগঞ্জ শহরের আজিম উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক ছিলেন। বর্তমানে তিনি বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন। কিন্তু, সেদিনের বর্বরোচিত ঘটনার প্রসঙ্গ উঠতেই লাল হয়ে উঠে তার চোখ। যেনো আগুন ঝরে তাঁর দুচোখ দিয়ে। শহরে থাকায় তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও হারাতে হয়েছে তার ভাই, চাচাসহ পরিবারের চারজনকে।
আবদুল আজিজ জানান, সেদিন সারা এলাকায় যেনো কিয়ামত নেমে আসে। লাশ দাফন করার মতো কেউ ছিলো না। মিলিশিয়া আর রাজাকারের ভয়ে অনেকে নদীতে স্বজনের মরদেহ ভাসিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। নিজের চোখে ২৫/৩০টি লাশ নরসুন্দা নদীতে ভাসতে দেখেছি- বলেন এ সাবেক শিক্ষক।
এ রকম অসংখ্য শহীদ পরিবারের ভয়াল স্মৃতি বেদনাগাঁথা মিশে আছে কর্ষাকড়িয়াইল ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের ঘরে ঘরে। বিনা অপরাধে শত শত গ্রামবাসীকে নৃশংসভাবে হত্যার ক্ষত ভুলতে পারছেন না তাদের স্বজনেরা।
জানা যায় যে, বরইতলার এই গণহত্যায় মোট ৩৬৫ জন গ্রামবাসী শহিদ হন। সেদিন যারা শহিদ হয়েছিলেন তাদের সকলের নাম-ঠিকানা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। অনেকের লাশ তাদের আত্মীয়স্বজনরা ধর্মীয় বিধি মোতাবেক দাফনও করতে পারেননি। কেননা, এতোগুলো পুরুষ শহিদ হওয়ার পর গ্রামটি প্রায় পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে। তাই দাফন করার মতো মানুষ ছিলো না বললেই চলে। পাকিস্তান সেনাবাহিনী ও রাজাকারদের হুমকির ভয়ে শহিদদের আত্মীয়স্বজনরা এলাকা ত্যাগ করেন। অসংখ্য লাশ সেখানে পড়ে ছিলো। নরসুন্দা নদীতে অনেক লাশ ভেসে যায়। তাছাড়াও নদীর তীরের আখ ক্ষেতে পড়ে থাকা আরও অনেক লাশ শেয়াল-কুকুর ভক্ষণ করে। ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে নরসুন্দা নদীর পানি এখনো বয়ে চলেছে।
স্বাধীনতার পর এলাকাবাসী শহিদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বরইতলা গ্রামের নাম পরিবর্তন করে শহিদনগর এবং বধ্যভূমির পাশে একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করেন। পরবর্তীকালে সেখানে শহিদদের নাম-ঠিকানাসংবলিত দৃষ্টিনন্দন একটি স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়।

কিশোরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব মনোয়ার হোসাইন রনী জানান, মুুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সব সময় কাজ করছে কিশোরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের আহবায়ক কমিটি ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর