ঢাকা ১১:৪৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুক্তিযুদ্ধ এবং জীবন যুদ্ধে সফল আক্কাস আলী মৃধা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:১৯:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর ২০১৫
  • ৩৩২ বার

১৯৭১ সালে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আক্কাস আলী মৃধা। তখন টগবগে যুবক, সবে মাত্র বিবাহ করেছেন। বাড়ি তার রাজাপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের বারবাকপুর গ্রামে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তখন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা আর কেউ ছিলনা। তিনি ও তার ছোট ভাই আনসার আলী মৃধা এলাকা থেকে মাত্র দু’জনেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। পাকহানাদার বাহিনী পাড়গোপালপুর এলাকার জগন্নাথ বিশ্বাস (জগুন বিশ্বাস) এর বাড়িতে স্থানীয় রাজাকার আঃ ছামাদ মোল্লা ও আঃ খালেক মাস্টারের কাছে তারা মুক্তিযোদ্ধা এ খবর শুনে তাঁদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপরে চলে যায় একই উপজেলার দক্ষিন নারিকেল বাড়িয়া ও কাঠিপাড়া হিন্দু এলাকায়। এখানে গণহত্যা চালিয়ে ২৫ জনের বেশি নিরীহ বাঙালীকে হত্যা করে পাকহানাদার বাহিনী। তাঁদেরকে ওখানেই গণকবর দিয়ে রাখে তাঁরা। এরপরে জানলাম ওমর সিং নামে এক মুক্তিযোদ্ধা এসেছে, যিনি বরিশাল বিভাগের সাব সেক্টর কমান্ডার। তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টার একপর্যায়ে সাক্ষাত হলে দেখি আমাদের ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমর। তার দিক নির্দেশনায় আমরা যুদ্ধ পরিচালনা করতে থাকি। প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা রাজাপুরে ক্যাম্প গড়ি সিইও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার) অফিসে। পরে সময় অনুযায়ী শাবাঙ্গল, বাটার জোর, বামরাইলসহ কয়েকটি স্থানে হানাদারবাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে তাঁদেরকে পরাজিত করে পিছু হটতে বাধ্য করি। প্রাথমিক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা হাতে গোনা কয়েকজন থাকলেও ওই সময়ে যারা সুযোগ বুঝে চুরি ডাকাতি করেছেন তারাও শেষ পর্যায়ে যখন দেখেছেন আমাদের দেশ স্বাধীন হয়ে যাচ্ছে তখন তারাও আমাদের সাথে শামিল হয়েছিলেন।

২৩ নভেম্বর রাজাপুর উপজেলাকে হানাদার মুক্ত করে ১৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ঝালকাঠির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করি। তখন আমাদের ১৩৫ জনের তালিকা এসডিও অফিসে ছিল। পরে ৮ ডিসেম্বর ঝালকাঠিকেও হানাদার মুক্ত করি। একথা গুলো বললেন একজন সফল মুক্তিযোদ্ধা রাজাপুর উপজেলার বারবাকপুর গ্রামের আক্কাস আলী মৃধা। দেশকে স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ এবং জীবন যুদ্ধে তিনি সফল হওয়ায় বর্তমানে খুব শান্তিতে রয়েছেন বলে শুকরিয়া আদায় করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ৩ কন্যা সন্তানের জনক। ২ জনেই মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় সরকারী চাকুরী করে ভালো অবস্থানে রয়েছেন। অপর জন বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। ১৯৯৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি পঙ্গু হয়ে যান। বর্তমানে স্ক্র্যাচকার্ডে ভর করে চলতে হয় তাকে। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পেরে দেশের একজন গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা হতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করতে পেরে আজ আমরা স্বাধীন দেশের জনগন। সরকার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দিন মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বাড়ছে। সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন করে তাঁদেরকে সুবিধা প্রদান করলে নব্য মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকার থেকে মুক্তিযোদ্ধা তৈরী হওয়া লোকেরা আমাদের কাতারে শামিল হতে পারে না। কিন্তু কষ্ট লাগে তখনই যখন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা সেজে আমাদের চেয়ারে বসে এবং সমাজের উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হয়। এ কারণে বর্তমান অবস্থায় আমাদের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মুক্তিযুদ্ধ এবং জীবন যুদ্ধে সফল আক্কাস আলী মৃধা

আপডেট টাইম : ১২:১৯:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর ২০১৫

১৯৭১ সালে স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আক্কাস আলী মৃধা। তখন টগবগে যুবক, সবে মাত্র বিবাহ করেছেন। বাড়ি তার রাজাপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের বারবাকপুর গ্রামে। বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তখন এলাকায় মুক্তিযোদ্ধা আর কেউ ছিলনা। তিনি ও তার ছোট ভাই আনসার আলী মৃধা এলাকা থেকে মাত্র দু’জনেই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। পাকহানাদার বাহিনী পাড়গোপালপুর এলাকার জগন্নাথ বিশ্বাস (জগুন বিশ্বাস) এর বাড়িতে স্থানীয় রাজাকার আঃ ছামাদ মোল্লা ও আঃ খালেক মাস্টারের কাছে তারা মুক্তিযোদ্ধা এ খবর শুনে তাঁদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এরপরে চলে যায় একই উপজেলার দক্ষিন নারিকেল বাড়িয়া ও কাঠিপাড়া হিন্দু এলাকায়। এখানে গণহত্যা চালিয়ে ২৫ জনের বেশি নিরীহ বাঙালীকে হত্যা করে পাকহানাদার বাহিনী। তাঁদেরকে ওখানেই গণকবর দিয়ে রাখে তাঁরা। এরপরে জানলাম ওমর সিং নামে এক মুক্তিযোদ্ধা এসেছে, যিনি বরিশাল বিভাগের সাব সেক্টর কমান্ডার। তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টার একপর্যায়ে সাক্ষাত হলে দেখি আমাদের ক্যাপ্টেন শাহজাহান ওমর। তার দিক নির্দেশনায় আমরা যুদ্ধ পরিচালনা করতে থাকি। প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা রাজাপুরে ক্যাম্প গড়ি সিইও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার) অফিসে। পরে সময় অনুযায়ী শাবাঙ্গল, বাটার জোর, বামরাইলসহ কয়েকটি স্থানে হানাদারবাহিনীর সাথে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিয়ে তাঁদেরকে পরাজিত করে পিছু হটতে বাধ্য করি। প্রাথমিক পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা হাতে গোনা কয়েকজন থাকলেও ওই সময়ে যারা সুযোগ বুঝে চুরি ডাকাতি করেছেন তারাও শেষ পর্যায়ে যখন দেখেছেন আমাদের দেশ স্বাধীন হয়ে যাচ্ছে তখন তারাও আমাদের সাথে শামিল হয়েছিলেন।

২৩ নভেম্বর রাজাপুর উপজেলাকে হানাদার মুক্ত করে ১৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে ঝালকাঠির উদ্দেশ্যে রওয়ানা করি। তখন আমাদের ১৩৫ জনের তালিকা এসডিও অফিসে ছিল। পরে ৮ ডিসেম্বর ঝালকাঠিকেও হানাদার মুক্ত করি। একথা গুলো বললেন একজন সফল মুক্তিযোদ্ধা রাজাপুর উপজেলার বারবাকপুর গ্রামের আক্কাস আলী মৃধা। দেশকে স্বাধীন করার জন্য মুক্তিযুদ্ধ এবং জীবন যুদ্ধে তিনি সফল হওয়ায় বর্তমানে খুব শান্তিতে রয়েছেন বলে শুকরিয়া আদায় করেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ৩ কন্যা সন্তানের জনক। ২ জনেই মুক্তিযোদ্ধা কোঠায় সরকারী চাকুরী করে ভালো অবস্থানে রয়েছেন। অপর জন বেসরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছেন। ১৯৯৪ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় তিনি পঙ্গু হয়ে যান। বর্তমানে স্ক্র্যাচকার্ডে ভর করে চলতে হয় তাকে। তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিতে পেরে দেশের একজন গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা হতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, মুক্তিযুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করতে পেরে আজ আমরা স্বাধীন দেশের জনগন। সরকার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দিন মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা বাড়ছে। সঠিক তদন্ত করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন করে তাঁদেরকে সুবিধা প্রদান করলে নব্য মুক্তিযোদ্ধা ও রাজাকার থেকে মুক্তিযোদ্ধা তৈরী হওয়া লোকেরা আমাদের কাতারে শামিল হতে পারে না। কিন্তু কষ্ট লাগে তখনই যখন জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠানে রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধা সেজে আমাদের চেয়ারে বসে এবং সমাজের উচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হয়। এ কারণে বর্তমান অবস্থায় আমাদের প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় দিতে লজ্জা লাগে।