ঢাকা ১২:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

টাটকা রস খেতে বাগানে ভিড়, কেনা যায় বিশুদ্ধ খেজুরের গুড়ও

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:১৫:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪
  • ২ বার

ভোরের কুয়াশা ভেদ করে পূর্ব দিগন্তে আভা ছড়াতে শুরু করেছে সূর্য। এরই মাঝে টাটকা রসের স্বাদ পেতে শীত আর কুয়াশা উপেক্ষা করে বাগানে ভিড় করছেন রসপ্রেমীরা। এদিকে শিশিরসিক্ত নরম ঘাস মাড়িয়ে হাঁড়িভরা খেজুরের রস গাছ থেকে নামিয়ে আনছেন গা‌ছিরা। সেই রস জ্বাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু খেজুরের গুড়।

এমন দৃশ্য চোখে পড়ে ঠাকুরগাঁও সদরের নারগুন ইউনিয়নের বোচাপুকুর গ্রামের খেজুরবাগানে।

জানা যায়, ঠাকুরগাঁও সুগার মিলের ১৬ বিঘা জ‌মিতে রোপণকৃত সাত শতাধিক ছোট-বড় খেজুরের গাছ নিয়ে গড়ে উঠেছে এই বাগান। এবার বাগান‌টি সাড়ে ৮ লাখ টাকা দিয়ে দুই বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন মো. সে‌লিম নামের স্থানীয় এক বা‌সিন্দা।

টিনের বড় তাওয়ায় জ্বাল দেওয়া হয় রস। ছবি: আজকের পত্রিকাটিনের বড় তাওয়ায় জ্বাল দেওয়া হয় রস। ছবি: আজকের পত্রিকা

গা‌ছিরা জানান, ভোর থেকে সকাল ৮টা-৯টায় পর্যন্ত গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন তাঁরা। পরে টিনের বড় তাওয়ায় জ্বাল দেওয়া হয় রস। আস্তে আস্তে রস শুকিয়ে রূপ নেয় সুস্বাদু গুড়ে। বিশেষ কিছু প্রক্রিয়া সেরে একপর্যায়ে তরল গুড় ঢালা হয় নির্দিষ্ট পাত্রে। পরে জমাট বেঁধে তৈরি হয় ঐতিহ্যবাহী হাজারী, পাটালি, নার্কেলী, দানা, ঝোলাসহ হরেক রকমের গুড়। প্রতি কেজি গুড় বাগা‌নে বিক্রি হয় ৩০০-৪০০ টাকা কেজি দরে।

আজ শ‌নিবার ভোরে বোচাপুকুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শীতের সকালে কাঁচা রসের স্বাদ নিতে ভোররাত থেকে বি‌ভিন্ন যানবাহনে করে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন রস‌প্রেমীরা। ভোরের আলো ফোটার আগে শত শত মানুষের আগমনে এলাকা‌টি যেন উৎসবে পরিণত হয়। এদিকে খেজুরের রসকে নিরাপদ করার জন্য গাছের রস পড়ার জায়গাটি জাল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছেন একদল শিক্ষার্থী। রা‌কিব, সায়েম সোয়াইবরা জানান, অনেক দূর থেকে কুয়াশার মধ্যে তাজা রসের স্বাদ নিতে ছুটে এসেছেন তাঁরা। দল বেঁধে রস পান করা বেশ উপভোগ্য।

তাদের মুখর কথা কেড়ে নিয়ে স্কুলশিক্ষক সালেহ আহমেদ বলে, খাঁটি খেজুরের রস শহরে পাওয়া যায় না, এমনকি গ্রামেও এখন সচরাচর দেখা যায় না। এ জন্য ঠান্ডায় বের হতে কষ্ট হলেও রস খাওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে চলে এলাম।

আস্তে আস্তে রস শুকিয়ে রূপ নেয় সুস্বাদু গুড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকাআস্তে আস্তে রস শুকিয়ে রূপ নেয় সুস্বাদু গুড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

প‌রিবারসহ সেতাবগঞ্জ থেকে এসেছেন ব্যবসায়ী জা‌মিরুল খন্দকার। তি‌নি বলেন, ভোর ৪টার দিকে রওয়া দিয়ে ৬টার দিকে পৌঁছালাম। রসের বে‌শি চা‌হিদা থাকায় কাঁচা রস পান করতে পারেননি তি‌নি। তবে প‌রিবারের জন্য পিঠা তৈরির বড় অনুষঙ্গ গুড় নিয়ে যাবেন এখান থেকে।

নাটোর থেকে এসেছেন গাছি শ‌রিফুল ইসলাম ও তার সাত সদস্যের দল। গা‌ছি শ‌রিফু‌ল ইসলাম বলেন, শীত মৌসমে টানা তিন থেকে চার মাস ধরে রস ও গুড় তৈ‌রির এ প্রক্রিয়া চলবে। তাঁরা দৈনিক মজুরি পান ১ হাজার ২০০ টাকা। গুড় তৈ‌রির মৌসুম শেষে ফিরে যাবেন স্বজনদের কাছে।

গা‌ছি জা‌কির হোসেন বলেন, প্রতি‌টি খেজুরগাছ থেকে ১০-১২‌ লিটা‌র রস হাঁড়িতে পড়ে। প্রায় ৫-৬ হাজার লিটার রস থেকে গুড় তৈ‌রি হয় ১০০ কে‌জির মতো।

এ বিষয়ে বাগান লিজ নেওয়া মো. সে‌লিম বলেন, এই বাগা‌নের খেজুেরর গুড়ের স্বাদ ও মিষ্টতা খেজুরের গুড় উৎপাদনকারী প্রসিদ্ধ জেলাগুলোর মতোই। কাঁচা রস বিক্রির পাশাপাশি নির্ভেজাল খেজুরের গুড়ও ‌তৈ‌রি হচ্ছে। প্রতি‌দিন বাগানে বি‌ক্রি হচ্ছে ১০ থে‌কে ১২ হাজার টাকার গুড় ও রস।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাসায়নিকমুক্ত নিরাপদ গুড় তৈরিতে উদ্যোক্তাদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। খেজুরের গুড়ের সুনাম ধরে রাখতে জেলা কৃ‌ষি ‌বিভা‌গের পক্ষ থেকে গাছ লাগানো হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

টাটকা রস খেতে বাগানে ভিড়, কেনা যায় বিশুদ্ধ খেজুরের গুড়ও

আপডেট টাইম : ১১:১৫:১১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪

ভোরের কুয়াশা ভেদ করে পূর্ব দিগন্তে আভা ছড়াতে শুরু করেছে সূর্য। এরই মাঝে টাটকা রসের স্বাদ পেতে শীত আর কুয়াশা উপেক্ষা করে বাগানে ভিড় করছেন রসপ্রেমীরা। এদিকে শিশিরসিক্ত নরম ঘাস মাড়িয়ে হাঁড়িভরা খেজুরের রস গাছ থেকে নামিয়ে আনছেন গা‌ছিরা। সেই রস জ্বাল দিয়ে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু খেজুরের গুড়।

এমন দৃশ্য চোখে পড়ে ঠাকুরগাঁও সদরের নারগুন ইউনিয়নের বোচাপুকুর গ্রামের খেজুরবাগানে।

জানা যায়, ঠাকুরগাঁও সুগার মিলের ১৬ বিঘা জ‌মিতে রোপণকৃত সাত শতাধিক ছোট-বড় খেজুরের গাছ নিয়ে গড়ে উঠেছে এই বাগান। এবার বাগান‌টি সাড়ে ৮ লাখ টাকা দিয়ে দুই বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন মো. সে‌লিম নামের স্থানীয় এক বা‌সিন্দা।

টিনের বড় তাওয়ায় জ্বাল দেওয়া হয় রস। ছবি: আজকের পত্রিকাটিনের বড় তাওয়ায় জ্বাল দেওয়া হয় রস। ছবি: আজকের পত্রিকা

গা‌ছিরা জানান, ভোর থেকে সকাল ৮টা-৯টায় পর্যন্ত গাছ থেকে রস সংগ্রহ করেন তাঁরা। পরে টিনের বড় তাওয়ায় জ্বাল দেওয়া হয় রস। আস্তে আস্তে রস শুকিয়ে রূপ নেয় সুস্বাদু গুড়ে। বিশেষ কিছু প্রক্রিয়া সেরে একপর্যায়ে তরল গুড় ঢালা হয় নির্দিষ্ট পাত্রে। পরে জমাট বেঁধে তৈরি হয় ঐতিহ্যবাহী হাজারী, পাটালি, নার্কেলী, দানা, ঝোলাসহ হরেক রকমের গুড়। প্রতি কেজি গুড় বাগা‌নে বিক্রি হয় ৩০০-৪০০ টাকা কেজি দরে।

আজ শ‌নিবার ভোরে বোচাপুকুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, শীতের সকালে কাঁচা রসের স্বাদ নিতে ভোররাত থেকে বি‌ভিন্ন যানবাহনে করে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন রস‌প্রেমীরা। ভোরের আলো ফোটার আগে শত শত মানুষের আগমনে এলাকা‌টি যেন উৎসবে পরিণত হয়। এদিকে খেজুরের রসকে নিরাপদ করার জন্য গাছের রস পড়ার জায়গাটি জাল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছেন একদল শিক্ষার্থী। রা‌কিব, সায়েম সোয়াইবরা জানান, অনেক দূর থেকে কুয়াশার মধ্যে তাজা রসের স্বাদ নিতে ছুটে এসেছেন তাঁরা। দল বেঁধে রস পান করা বেশ উপভোগ্য।

তাদের মুখর কথা কেড়ে নিয়ে স্কুলশিক্ষক সালেহ আহমেদ বলে, খাঁটি খেজুরের রস শহরে পাওয়া যায় না, এমনকি গ্রামেও এখন সচরাচর দেখা যায় না। এ জন্য ঠান্ডায় বের হতে কষ্ট হলেও রস খাওয়ার লোভ সামলাতে না পেরে চলে এলাম।

আস্তে আস্তে রস শুকিয়ে রূপ নেয় সুস্বাদু গুড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকাআস্তে আস্তে রস শুকিয়ে রূপ নেয় সুস্বাদু গুড়ে। ছবি: আজকের পত্রিকা

প‌রিবারসহ সেতাবগঞ্জ থেকে এসেছেন ব্যবসায়ী জা‌মিরুল খন্দকার। তি‌নি বলেন, ভোর ৪টার দিকে রওয়া দিয়ে ৬টার দিকে পৌঁছালাম। রসের বে‌শি চা‌হিদা থাকায় কাঁচা রস পান করতে পারেননি তি‌নি। তবে প‌রিবারের জন্য পিঠা তৈরির বড় অনুষঙ্গ গুড় নিয়ে যাবেন এখান থেকে।

নাটোর থেকে এসেছেন গাছি শ‌রিফুল ইসলাম ও তার সাত সদস্যের দল। গা‌ছি শ‌রিফু‌ল ইসলাম বলেন, শীত মৌসমে টানা তিন থেকে চার মাস ধরে রস ও গুড় তৈ‌রির এ প্রক্রিয়া চলবে। তাঁরা দৈনিক মজুরি পান ১ হাজার ২০০ টাকা। গুড় তৈ‌রির মৌসুম শেষে ফিরে যাবেন স্বজনদের কাছে।

গা‌ছি জা‌কির হোসেন বলেন, প্রতি‌টি খেজুরগাছ থেকে ১০-১২‌ লিটা‌র রস হাঁড়িতে পড়ে। প্রায় ৫-৬ হাজার লিটার রস থেকে গুড় তৈ‌রি হয় ১০০ কে‌জির মতো।

এ বিষয়ে বাগান লিজ নেওয়া মো. সে‌লিম বলেন, এই বাগা‌নের খেজুেরর গুড়ের স্বাদ ও মিষ্টতা খেজুরের গুড় উৎপাদনকারী প্রসিদ্ধ জেলাগুলোর মতোই। কাঁচা রস বিক্রির পাশাপাশি নির্ভেজাল খেজুরের গুড়ও ‌তৈ‌রি হচ্ছে। প্রতি‌দিন বাগানে বি‌ক্রি হচ্ছে ১০ থে‌কে ১২ হাজার টাকার গুড় ও রস।

ঠাকুরগাঁও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাসায়নিকমুক্ত নিরাপদ গুড় তৈরিতে উদ্যোক্তাদের সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। খেজুরের গুড়ের সুনাম ধরে রাখতে জেলা কৃ‌ষি ‌বিভা‌গের পক্ষ থেকে গাছ লাগানো হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।