পাহাড়ে নানা জাতের আমের ফলন হয়। কিন্তু এবার দৃশ্য ভিন্ন। বৃষ্টির দেখা নেই এখনো। খরায় ঝরে যাচ্ছে মুকুল। এ নিয়ে আমচাষিরা পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। তাঁরা বলছেন, মুকুল আসার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বৃষ্টি হয়নি। এভাবে চলতে থাকলে এবার আমের ফলনে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
আমচাষিরা বলছেন, তীব্র খরায় উঁচু টিলার মাটিতে পা রাখাও দায়! খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি উপজেলার আমবাগানগুলোর কয়েকটিতে নামকাওয়াস্তে গভীর নলকূপ থেকে গাছে পানি ছিটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে মাটি ভিজিয়ে গাছের গোড়া শীতল করা যাচ্ছে না। ফলে গত বছরের চেয়ে এবার আম উৎপাদন কম হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র বলেছে, মানিকছড়িতে ৪৫০ হেক্টর টিলা এলাকাজুড়ে আমবাগান রয়েছে। এসব বাগানে এবার যথাসময়ে মুকুল এসেছে। তবে এখন পর্যন্ত বৃষ্টি না হওয়ায় মুকুল ঝরে যাচ্ছে। ঝরে যাচ্ছে আমের গুটিও। কয়েকটি বাগানে গভীর নলকূপ বা আশপাশের লেক থেকে পানি দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে কাজ হচ্ছে না।
গত মঙ্গলবার উপজেলার কুমারী, চাইল্ল্যার চর এলাকায় কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, বাগানে নানা প্রজাতির আমগাছে প্রচুর মুকুল এসেছে। কিন্তু সেগুলো থেকে আমের গুটি হয়েছে মাত্র এক-চতুর্থাংশ। গাছের গোড়ায় অনেক আমের গুটি পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
এ সময় এফ কে অ্যাগ্রো ফার্মের ব্যবস্থাপক আবদুল মজিদ বলেন, ‘আমাদের ৩৩ একর টিলার এক-চতুর্থাংশে আম্রপালি, বারি-৪, ব্যানানা ম্যাঙ্গো, সূর্যডিম, ব্রুনাইকিং, আমেরিকান, রেড ফালমার, কিংচাকাপাত, কাটিমন, হিমসাগর, হাঁড়িভাঙ্গা, ব্ল্যাকস্টোন, ফজলি, মালিসহ নানা প্রজাতির ১ হাজার ৬০০ আমগাছে যথাসময়ে মুকুল এসেছিল। কিন্তু তীব্র খরায় বেশির ভাগ গুটি ঝরে পড়েছে। কৃষিবিদদের পরামর্শে নিয়মিত গাছের গোড়ায় পানি দিলেও কিছুতেই শীতল রাখা যাচ্ছে না। মুহুর্তেই শুকিয়ে যায়। তারপরও গাছে যে পরিমাণ ফল এখনো আছে, তা অক্ষত রাখার চেষ্টা করছি। তবে এবার সার্বিকভাবে পাহাড়ে ফলন বিপর্যয় হবে।’
এদিকে উপজেলার সবচেয়ে বড় আমবাগান শেম্প্রুপাড়ার তাহের গার্ডেনের মালিক মো. আবু তাহের আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ২৯ একর বাগানে কিউজাই, মাহালিশা (ব্যানানা), রাংগুইন, ওয়েসটিং, চেয়াংমাইন, চাকাপাত, সাথোইরাজ গাছে আসা মুকুলে ওষুধ ছিটানোতে কিছুটা গরমিল হওয়ায় এবার ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছি। পানি সেচের পর্যাপ্ত সুবিধা আমার আছে। গত বছর কালবৈশাখীতে মুকুলের কিছুটা ক্ষতি হলেও শেষমেশ বাজারদর ভালো থাকায় মোটামুটি লাভ হয়েছিল।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জহির রায়হান আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত মৌসুমে উপজেলায় ৪৫০ হেক্টর বাগানে আম উৎপাদিত হয়েছিল প্রায় ২৯ হাজার টন। এবার তীব্র খরায় কিছুটা ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। তবে যেসব বাগানমালিক পানি সেচ ও নিয়মিত ওষুধ স্প্রে করছেন, তাঁদের বাগানে ফলন ভালো হবে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা বাগানমালিকদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন।