ভৈরবের বিদ্যুৎ অফিসের দূর্নীতির তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভৈরবের শিমুলকান্দি বিদ্যুৎ অফিসের সহকারি আবাসিক প্রকৌশলীর অবৈধ অর্থ বাণিজ্য, নানা অনিয়ম, দূর্নীতি নিয়ে বিদ্যুৎ বিভাগের গঠিত তদন্ত কমিটির বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলেছে ভুক্তভোগী গ্রাহক ও এলাকাবাসী।

অফিসের প্রধান কর্মকর্তা সহকারি প্রকৌশলী মফিজ উদ্দিন খানের দূনীতির বিরুদ্ধে কয়েক দফায় ঝাড়–মিছিল মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচীসহ দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করেছে ওই বিদ্যুৎ অফিসের আওতাভুক্ত গ্রাহক ও স্থানীয় এলাকাবসীরা। তারপরেও মিলছে না কোনো প্রতিকার।

অফিসের প্রধান কর্মকর্তার নেতৃত্বে অন্যান্য কর্মচারিরাও এখন জড়িয়ে গেছে বিভিন্ন অনিয়ম আর দূর্নীতির জালে। আর তাদের এসব কর্মকােে- বিপাকে পড়েছেন ওই বিদ্যুৎ অফিসের আওতাভুক্ত উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় ৮ হাজার আবাসিক বিদ্যুৎ গ্রাহকসহ আরো দুইশতাধিক সেচ পাম্প ব্যবহাকারি গ্রাহক।

বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগে একাধিকবার বদলি হয়েও কোনো এক অদৃশ্য কারণে বার বার একই অফিসে ফিরে এসে বিগত এক যুগ ধরে এসব অনিয়মের ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে অফিসটির কর্মকর্তা মফিজ উদ্দিন খান। সমস্যার মাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে গণহারে স্বাক্ষরিত একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েও মেলেনি কোনো প্রতিকার।

প্রতিকার না পেয়ে মফিজ উদ্দিন খানের অপসারণের দাবিতে সম্প্রতি শ্রী-নগর ইউনিয়নের বধূনগর গ্রামের শতাধিক দুই শতাধিক ভুক্তভোগী নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে বধূনগর-জাফর নগর সড়কে ঘন্টাব্যাপী ঝাড়–মিছিল, মানব বন্ধন ও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করা হয়। এর আগে ও ওই ইউনিয়নের তেয়ারীরচর বাজারে মফিজ উদ্দিন খানের অপসারনের দাবিতে কয়েকশত গ্রাহক বিক্ষোভ মিছিল ও মানব বন্ধন কর্মসূচী পালন করেন।

মফিজ উদ্দিন খানের দূনীর্তি ও অনিয়মের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে একাধিকবার সংবাদ প্রচার হলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ভৈরব বিদ্যুৎ অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলামকে আহবায়ক করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যরা হলেন, ময়মনসিংহের সিনিয়র সহকারি পরিচালক মোঃ শাকিব হোসেন ও কিশোরগঞ্জের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেদী হাসান সুমন। তদন্ত কমিটি সরেজমিনে এসে তদন্ত করার পর ২ সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় স্থানীয় গ্রাহকরা ফুঁসে উঠেছেন।

সরেজমিনে গেলে গ্রাহকদের এত এত অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ে যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে ওই কমিটির তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ এনে শ্রী-নগর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ড মেম্বার জাহের মিয়া, শ্রী-নগর ইউপি চেয়ারম্যান সার্জেন্ট (অবঃ) আবু তাহের, ভবানিপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল হান্নানসহ স্থানীয় গ্রাহকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, শিমুলকান্দি বিদ্যুৎ অফিসের সহকারি আবাসিক প্রকৌশলী মফিজ উদ্দীন খানের অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে প্রমাণ দিয়েও কোনো প্রতীকার মিলছে না। দূর্নীতিবাজ এই কর্মকর্তার খুটির জোড় কোথায় এ প্রশ্ন রেখেছেন বিক্ষোব্ধ এলাকাবাসী।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, অভিযুক্ত মফিজ উদ্দিন খানের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গফুরগাওয়ে। তবে বর্তমানে ৩৫থেকে ৪০হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় রাজধানীর উত্তরায় বসবাস করে তার পরিবার। আবার ব্যয় বহুল এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দুই সন্তানকে পড়ালেখাও করাচ্ছেন তিনি। এদিকে কিশোরগঞ্জ শহরের নগুয়ায় হাসমত স্কুলের পাশে একটি চারতলা বিশিষ্ট আলিশান ভবন নির্মাণ করছেন মফিজ উদ্দিন খান। এখন এতসব বিলাশিতার অর্থের যোগান কি সরকারি এই চাকুরীর বেতনেই সম্ভব কিনা এই প্রশ্ন তো থেকেই যায়!

এ বিষয়ে তদন্ত কমিটির সদস্য ময়মনসিংহের সিনিয়র সহকারি পরিচালক মোঃ সাকিব হোসেনের সাথে মোঠো ফোনে কথা হলে তিনি ভৈরব নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলামের সাথে কথা বলার জন্য বলেন।

পরে তদন্ত কমিটির আহবায়ক ভৈরব বিদ্যুৎ অফিসের প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, এলাকাবাসিদের অভিযোগের কিছুটা সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে আগামী ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত রিপোর্ট দেয়া হবে বলে তিনি জানান।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর