কেঁচো সার উৎপাদনে করে প্রায় শতাধিক পরিবার স্বাবলম্বী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট) উৎপাদন করে প্রায় শতাধিক পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছে। এই সার বিক্রি করে প্রতি মাসে ৭-৮ হাজার টাকা আয় করছে কৃষকরা। এই উৎপাদিত কেঁচো সার স্থানীয় কৃষকদের কাছে ক্রমেই জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সমপ্রতি মুকসুদপুর উপজেলার পশ্চিম ভাকুরী গ্রামে সালেহা বেগমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে পাটখড়ির ঘর তোলে। ঘরের নিচে সিমেন্টের তৈরি ৩টি রিং স্ল্যাব বসিয়ে সার তৈরির প্রস্তুতি চলছে। এ বিষয়ে সালেহা বেগমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, এসব রিং স্ল্যাবে এক বছর ধরে কেঁচো সার উৎপাদন করছেন।

প্রতিটি রিং স্ল্যাবে প্রায় দুই হাজার কেজি গোবর, শাকসবজির উচ্ছিষ্টাংশ, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা ও কলাগাছ টুকরা টুকরা করে কেটে মিশ্রণ করা হয়। সব রিং স্ল্যাবে ছেড়ে দেয়া হয় ৪/৫ হাজার কেঁচো। তারপর বস্তা দিয়ে রিং স্ল্যাব ঢেকে রাখা হয়। মোট খরচ হয় প্রায় এক হাজার টাকা। কেঁচো সার উৎপাদন হতে এক মাসের বেশি সময় লাগে। এক মাসে উৎপাদন হয় ২০ মণ কেঁচো সার। প্রতি কেজি সার ১০ টাকা করে বিক্রি করা হয়। এতে খরচ বাদে আয় হয় মোট সাত হাজার টাকা। পাশাপাশি কেঁচোর বংশবিস্তার হচ্ছে। প্রতিটি কেঁচো ৫০ পয়সা হিসেবে বিক্রি করেও তার আয় হচ্ছে। এই সার ক্রয় করে বিভিন্ন জমিতে কপি, শাক, লাউ, ধনে, কচু, পুঁইশাক চাষ করেছেন উপজেলার কৃষকরা।

একই গ্রামের সাজেদা বেগম কেঁচো সার উৎপাদন করে নিজের জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ করছে। এতে উৎপাদন কয়েক গুণ বেশি হয়েছে।’ সাজেদা বেগম আরো জানান, পারিবারিক কাজের সঙ্গে কেঁচো সার তৈরি করে স্বামীকে আর্থিক সহায়তা করি। আগে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার ও পরিবারে খরচ চালাতে অনেক কষ্ট হতো। এখন ভালোভাবেই সংসার চলছে ও বাড়তি আয় হচ্ছে। অপরদিকে রমজান আলী বলেন কেঁচো সার ব্যবহার করে কপি ,বেগুন ও কুমড়ার চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছি।’ তিনি আরো বলেন ‘যে হারে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ছে, তাতে সবজি চাষ করে লাভ হয় না।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি অফিসার রিজভী শাহরিয়ার সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানায় ন্যাশনাল এগ্রিকালচার টেকনোলজি প্রোগ্রাম এনএটিপি-২ এর আওতায় মুকসুদপুর কৃষি বিভাগ কেঁচো দিয়ে সার উৎপাদনে কৃষকদের সহায়তা দেয়া হচ্ছে। উপজেলা প্রায় শতাধিক কৃষক এই সার উৎপাদন করছেন। বর্তমানে রাসায়নিক সারের অতি ব্যবহারে জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে। পরিবেশবান্ধব এই সার মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। পাশাপাশি রাসায়নিক সারের ব্যবহার এ উপজেলায় কমেছে। মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধির সঙ্গে কৃষকরা কম খরচে সার পাচ্ছেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর