ঢাকা ০৮:৪৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঘুমন্ত বিএনপি ফের শিরোনামে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৩:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ অক্টোবর ২০১৫
  • ৩৪১ বার

বাংলাদেশের রাজনীতি অতীতে কখনও এমন দৃশ্য দেখেনি। সামরিক-বেসামরিক কোন জমানাতেই নয়। এমনকি স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে, যখন আওয়ামী লীগের সমর্থন ছিল একচেটিয়া, তখনও প্রকাশ্যে এবং আন্ডারগ্রাউন্ডে জাসদ ছিল সক্রিয়। সক্রিয় ছিল আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল।
কিন্তু গত কয়েক মাসের দৃশ্য একেবারেই আলাদা। কাগজে-কলমে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সরকারেরও অংশীদার। যাদের বিরোধী দল মনে করা হয়, সে বিএনপি ঘুমিয়ে আছে বেশ কয়েক মাস হলো। বছরের শুরুতে পেট্রল সন্ত্রাসের অভিযোগের কালিমা পড়ে দলটির ওপর। এরপর নেতাদের একটি বড় অংশ বন্দি হয় কারাগারে। অন্য একটি অংশ চলে যায় আত্মগোপনে। বড় নেতারা হয়ে পড়েন নিষ্ক্রিয়। সর্বশেষ কয়েক মাসে বিএনপির কার্যক্রম বলতে ড. আসাদুজ্জামান খান রিপনের ব্রিফিং। পল্টন কার্যালয়ে মাঝে মাঝেই সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
এ রিপোর্ট যখন লেখা হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তখন যুক্তরাজ্যে। দীর্ঘ আট বছর ধরে সেখানে বসবাস করছেন তার বড় ছেলে এবং বিএনপির দ্বিতীয় প্রধান নেতা তারেক রহমান। এমনকি আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের মিডিয়ায় তারেক রহমানের কোন বক্তব্য প্রচারিত ও প্রকাশিত হচ্ছে না। তার বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচারের কারণে ভাগ্য-বিপর্যয় নেমে এসেছে এক মিডিয়া মালিকের জীবনে। কারাভোগ করছেন তিনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও দৃশ্যত রাজনীতির বাইরে রয়েছেন। কারাগার আর দেশী-বিদেশী হাসপাতালে সময় কাটাচ্ছেন তিনি।
বিএনপি পুনর্গঠনের জন্য সম্প্রতি কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও তার কোনটিই সফল হয়নি। তৃণমূল কমিটি পুনর্গঠনের জন্য কেন্দ্র থেকে চিঠি পাঠানো হলেও এতে সাড়া মেলেনি। স্থায়ী কমিটি, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি পুনর্গঠনের কোন উদ্যোগ সফল হয়নি। যুক্তরাজ্য সফর শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর ফের দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিতে পারেন বলে নানা কথা শোনা যাচ্ছে। তবে পর্যবেক্ষকরা সে উদ্যোগের সফলতা নিয়েও সন্দিহান। তারা বলছেন, বিএনপিতে এখন নানান রকমের শেয়ার হোল্ডার রয়েছেন। বারবার তারা খালেদা জিয়ার নানা উদ্যোগ ব্যর্থ করে দিচ্ছেন। বাস্তবিক অর্থে গত সাত বছরের শাসনামলে আওয়ামী লীগ বিএনপির কাছ থেকে তেমন কোন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়নি। এমনকি বিএনপি সর্বশেষ কবে ঢাকার রাজপথে বড় কোন মিছিল করেছে তাও অনেকে স্মরণ করতে পারেন না।
এ ঘুমন্ত বিএনপিই হঠাৎ করে আবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। গত ২৮শে সেপ্টেম্বর ঢাকার কূটনৈতিকপাড়ায় ইতালিয়ান নাগরিক সিজার তাভেলার হত্যাকাণ্ড বিস্মিত ও মর্মাহত করেছে সব মহলকে। এ ঘটনার পর পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা জারি করে। ঘটনার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দেশে ছিলেন না। নিউ ইয়র্কে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে পশ্চিমা দেশগুলোর রেড অ্যালার্টে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তাভেলা হত্যায় বিএনপি-জামায়াতের মদত রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। এরই মধ্যে গত শনিবার রংপুরে হত্যার শিকার হন জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও। দেশে ফেরার পর রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও ইঙ্গিত দেন, বিএনপি-জামায়াতের মদতেই দুই বিদেশী নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। দুই সংবাদ সম্মেলনেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্যকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।
ইতিমধ্যে সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে নতুন উদ্যোমে অভিযান শুরু হয়েছে। জাপানি নাগরিক হত্যা মামলায় রংপুর মহানগর বিএনপি নেতা রাশেদুন নবী খান বিপ্লবকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তিনি ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবীব-উন নবী খান সোহেলের ভাই।
যদিও সরকারের পক্ষ থেকে দুটি খুনের রহস্য এবং কারা জড়িত এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু এখনও বলা হয়নি। যশোরে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে নতুন করে মামলা হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ওয়ান-ইলেভেনের ধাক্কা বিএনপি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। দলের ভেতরে রয়েছে অবিশ্বাস। প্রতিপক্ষের চালের কাছে বারবার ধরা খেয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার যুক্তরাজ্য সফর কারও কারও মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করেছে। তিনি এবং তারেক রহমান ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গে এক ধরনের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন- এমন খবরও মিডিয়ায় চাউর হয়। অন্যদিকে, সরকারি দলের নেতাদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, বিএনপি নেত্রী ষড়যন্ত্র করতে যুক্তরাজ্যে গেছেন। তিনি আর দেশে নাও ফিরতে পারেন।
দুই বিদেশী নাগরিক হত্যা এবং এর সঙ্গে আইএসের জড়িত থাকার দাবি নতুন এক সংকটের মুখোমুখি করেছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের রাজনীতির বহুল চর্বিত ষড়যন্ত্র তত্ত্বও নতুন করে ফিরে এসেছে। দোষারোপের রাজনীতিও চলছে। তবে এ দুঃখজনক ঘটনার শেষ গন্তব্য কোথায় তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ঘুমন্ত বিএনপি ফের শিরোনামে

আপডেট টাইম : ১১:৩৩:১৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ অক্টোবর ২০১৫

বাংলাদেশের রাজনীতি অতীতে কখনও এমন দৃশ্য দেখেনি। সামরিক-বেসামরিক কোন জমানাতেই নয়। এমনকি স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে, যখন আওয়ামী লীগের সমর্থন ছিল একচেটিয়া, তখনও প্রকাশ্যে এবং আন্ডারগ্রাউন্ডে জাসদ ছিল সক্রিয়। সক্রিয় ছিল আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দল।
কিন্তু গত কয়েক মাসের দৃশ্য একেবারেই আলাদা। কাগজে-কলমে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি সরকারেরও অংশীদার। যাদের বিরোধী দল মনে করা হয়, সে বিএনপি ঘুমিয়ে আছে বেশ কয়েক মাস হলো। বছরের শুরুতে পেট্রল সন্ত্রাসের অভিযোগের কালিমা পড়ে দলটির ওপর। এরপর নেতাদের একটি বড় অংশ বন্দি হয় কারাগারে। অন্য একটি অংশ চলে যায় আত্মগোপনে। বড় নেতারা হয়ে পড়েন নিষ্ক্রিয়। সর্বশেষ কয়েক মাসে বিএনপির কার্যক্রম বলতে ড. আসাদুজ্জামান খান রিপনের ব্রিফিং। পল্টন কার্যালয়ে মাঝে মাঝেই সংবাদ সম্মেলন করেন তিনি।
এ রিপোর্ট যখন লেখা হচ্ছে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া তখন যুক্তরাজ্যে। দীর্ঘ আট বছর ধরে সেখানে বসবাস করছেন তার বড় ছেলে এবং বিএনপির দ্বিতীয় প্রধান নেতা তারেক রহমান। এমনকি আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারণে গত কয়েক মাসে বাংলাদেশের মিডিয়ায় তারেক রহমানের কোন বক্তব্য প্রচারিত ও প্রকাশিত হচ্ছে না। তার বক্তব্য সরাসরি সম্প্রচারের কারণে ভাগ্য-বিপর্যয় নেমে এসেছে এক মিডিয়া মালিকের জীবনে। কারাভোগ করছেন তিনি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও দৃশ্যত রাজনীতির বাইরে রয়েছেন। কারাগার আর দেশী-বিদেশী হাসপাতালে সময় কাটাচ্ছেন তিনি।
বিএনপি পুনর্গঠনের জন্য সম্প্রতি কিছু উদ্যোগ নেয়া হলেও তার কোনটিই সফল হয়নি। তৃণমূল কমিটি পুনর্গঠনের জন্য কেন্দ্র থেকে চিঠি পাঠানো হলেও এতে সাড়া মেলেনি। স্থায়ী কমিটি, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, সহযোগী সংগঠনগুলোর কমিটি পুনর্গঠনের কোন উদ্যোগ সফল হয়নি। যুক্তরাজ্য সফর শেষে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দেশে ফেরার পর ফের দল পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিতে পারেন বলে নানা কথা শোনা যাচ্ছে। তবে পর্যবেক্ষকরা সে উদ্যোগের সফলতা নিয়েও সন্দিহান। তারা বলছেন, বিএনপিতে এখন নানান রকমের শেয়ার হোল্ডার রয়েছেন। বারবার তারা খালেদা জিয়ার নানা উদ্যোগ ব্যর্থ করে দিচ্ছেন। বাস্তবিক অর্থে গত সাত বছরের শাসনামলে আওয়ামী লীগ বিএনপির কাছ থেকে তেমন কোন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়নি। এমনকি বিএনপি সর্বশেষ কবে ঢাকার রাজপথে বড় কোন মিছিল করেছে তাও অনেকে স্মরণ করতে পারেন না।
এ ঘুমন্ত বিএনপিই হঠাৎ করে আবার সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। গত ২৮শে সেপ্টেম্বর ঢাকার কূটনৈতিকপাড়ায় ইতালিয়ান নাগরিক সিজার তাভেলার হত্যাকাণ্ড বিস্মিত ও মর্মাহত করেছে সব মহলকে। এ ঘটনার পর পশ্চিমা দেশগুলো বাংলাদেশে তাদের নাগরিকদের চলাচলে সতর্কতা জারি করে। ঘটনার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও দেশে ছিলেন না। নিউ ইয়র্কে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী সেখানে এক সংবাদ সম্মেলনে পশ্চিমা দেশগুলোর রেড অ্যালার্টে বিস্ময় প্রকাশ করেন। তাভেলা হত্যায় বিএনপি-জামায়াতের মদত রয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। এরই মধ্যে গত শনিবার রংপুরে হত্যার শিকার হন জাপানি নাগরিক হোশি কুনিও। দেশে ফেরার পর রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও ইঙ্গিত দেন, বিএনপি-জামায়াতের মদতেই দুই বিদেশী নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। দুই সংবাদ সম্মেলনেই বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্যকে ইঙ্গিত করে বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রী।
ইতিমধ্যে সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারে নতুন উদ্যোমে অভিযান শুরু হয়েছে। জাপানি নাগরিক হত্যা মামলায় রংপুর মহানগর বিএনপি নেতা রাশেদুন নবী খান বিপ্লবকে ১০ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তিনি ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব হাবীব-উন নবী খান সোহেলের ভাই।
যদিও সরকারের পক্ষ থেকে দুটি খুনের রহস্য এবং কারা জড়িত এ ব্যাপারে স্পষ্ট করে কিছু এখনও বলা হয়নি। যশোরে নাশকতার পরিকল্পনার অভিযোগে নতুন করে মামলা হয়েছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, ওয়ান-ইলেভেনের ধাক্কা বিএনপি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। দলের ভেতরে রয়েছে অবিশ্বাস। প্রতিপক্ষের চালের কাছে বারবার ধরা খেয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। তবে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার যুক্তরাজ্য সফর কারও কারও মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করেছে। তিনি এবং তারেক রহমান ভারতে ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গে এক ধরনের যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন- এমন খবরও মিডিয়ায় চাউর হয়। অন্যদিকে, সরকারি দলের নেতাদের কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, বিএনপি নেত্রী ষড়যন্ত্র করতে যুক্তরাজ্যে গেছেন। তিনি আর দেশে নাও ফিরতে পারেন।
দুই বিদেশী নাগরিক হত্যা এবং এর সঙ্গে আইএসের জড়িত থাকার দাবি নতুন এক সংকটের মুখোমুখি করেছে বাংলাদেশকে। বাংলাদেশের রাজনীতির বহুল চর্বিত ষড়যন্ত্র তত্ত্বও নতুন করে ফিরে এসেছে। দোষারোপের রাজনীতিও চলছে। তবে এ দুঃখজনক ঘটনার শেষ গন্তব্য কোথায় তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে।