হাওর বার্তা ডেস্কঃ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. ফজলুর রহমান বলেছেন, এখন আওয়ামী লীগের এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে, এক সময় লেখা থাকবে এখানে কোনো আওয়ামী লীগ নেই। আওয়ামী লীগের ‘আ’ লিখতেও আগামী ১০ বছর লাগে যাবে।
মঙ্গলবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তার নির্বাচনী এলাকা কিশোরগঞ্জ-৪ ( ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম) আসনের হাওর জনপদ ইটনায় বিজয় উৎসব উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত এক জনসভায় এ মন্তব্য করেন তিনি।
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ফজলুর রহমান বলেছেন, কই আছেন হামিদ সাব। তার ছেলেরা কই? আমি রাজনীতি শিখেছি বলেই আবদুল হামিদের কিছুটা অস্তিত্ব টিকে আছে। না হলে তাঁর সমস্ত বাড়িঘর পুইড়া ছারখার হইয়া যাইত।
ফজলুর রহমান বলেন, গত ১৫ বছর জেলায় জেলায় বিজয় উৎসব হতো। অনেকে বলেন বিজয়ের মা নাকি আইসিইউতে গেছে। এটাতো আমি সহ্য করি না, মুক্তিযোদ্ধারা সহ্য করে না। মুক্তিযোদ্ধার সন্তানেরা সহ্য করে না। জিয়াউর রহমানের যারা সৈনিক তাঁরা সহ্য করে না। কারণ জিয়াউর রহমান এই দেশের স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন।
আজ মঙ্গলবার রাতে কিশোরগঞ্জের ইটনা সরকারি কলেজ মাঠে উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত ৫৪ তম বিজয় উৎসব উপলক্ষে জনসমাবেশ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান এসব কথা বলে।
বিএনপির চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বলেন, শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে দেশের সর্বনাশ করেছে। নিজের সর্বনাশ করেছে। তাঁর বাপকে ডুবিয়েছে। তাঁর দলকে ডুবিয়েছে। দেশকে ডুবিয়েছে। শেষ পর্যন্ত দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। ১৫ বছর এ দেশে কোনো মানুষের শাসন ছিল না। ফ্যাসিস্ট শাসন ছিল। ইতিহাস আমাকে বলত তুমি হাসিনাকে জানাইয়া দাও দিন আসছে যেদিন কিশোরগঞ্জের বাসাবাড়ির সব গেইটে লিখা থাকবে এই বাড়িতে কোনো আওয়ামী লীগ বসবাস করে না।
সাবেক চার মন্ত্রীকে সরকারের কাঠামো থেকে সরাতে পরামর্শ দিয়েছিলেন বলে দাবি করে ফজলুর রহমান বলেন, হাসিনাকে বলেছিলাম ওবায়দুল কাদের, আসাদুজ্জামান খান কামাল, আনিসুল হক আর শিক্ষামন্ত্রী নওফেলকে লাথি দেন। লাথি দিয়া মন্ত্রিসভা থেকে বের কইরা মানুষের কাছে হাত জোর কইরা দাঁড়ান। মাফ চান। বাঙালির মন অত্যন্ত নরম। ইচ্ছা করলে আপনাকে মাফ করতে পারে। হাসিনা যদি মাথা নিচু করে মাফ না চায় জীবনে কোনো দিন মাফ পাবে না।
ফজলুর রহমান বলেন, ‘বাঙালি জাতি হাজার বছর ধরে পরাধীন ছিল। ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। এজন্য অনেক মানুষকে রক্ত দিতে হয়েছে। তাই ১৯৭১ আমাদের মূল ভিত্তি। যারা মুক্তিযুদ্ধ মানে না ,বাংলাদেশ মানে না তারা অমানুষ।’
অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের (বিএনপি) মহাসচিব প্রতিদিন বলেন ‘দ্রুত নির্বাচন দেন’। যত দেরি করবেন নির্বাচন দিতে দেশ ততই জটিলতার দিকে যাবে। আমাদের প্রধান নেতা তারেক রহমান প্রতি দিন বলেন ‘নির্বাচন দেন’। নির্বাচনের মধ্যেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সমস্যার সমাধান। আপনারা কর্ণপাত করেন না। আমি বিজয় সমাবেশ থেকে বলছি আমার নেতা তারেক রহমান ও মহাসচিবের দাবির মতো আমিও চাই দ্রুত নির্বাচন দিন।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা বলেন, আজকে দেশে নতুন সরকার এসেছে। নতুন সরকার কারা। ওই আবু সাইদ। রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। যে হাত উঁচু করে বলছিল ‘কর গুলি’। বুক দিয়া গুলি লেগেছে পিঠ দিয়া বের হইছে দৌড় দেয় নাই। আমি বলেছিলাম প্রথম এই আবু সাঈদ হলো একবিংশ শতাব্দীর প্রথম বীরশ্রেষ্ঠ।
ইটনা উপজেলা বিএপির সভাপতি এস এম কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে ইটনা সরকারি মহাবিদ্যালয় মাঠে এ বিজয় সমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম রেখা, পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিন আহমেদ, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক খালেদ সাইফুল্লাহ সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক হাজী ইসরাইল মিয়া, আশফাকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-সভাপতি হাফিজুল্লাহ হীরা, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মাসুদ সুমন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মারুফুল মিয়া, সাধারণ সম্পাদক ফেরদৌস আলম নেভিন, ইটনা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুজ্জামান ঠাকুর স্বপন, সাংগঠনিক সম্পাদক তারিকুল ইসলাম জুয়েল, খালিয়াজুড়ি উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মাসুদ রানা, অষ্টগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ সাঈদ আহমেদ, মিঠামইন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।
জনসমাবেশে যোগ দিতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতা–কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে এসে জড়ো হন। এর আগে ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম উপজেলার ৭২ জন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সমাবেশ শেষে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। উৎসবের সাংস্কৃতিক পর্বে সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী সালমা, আশিক ও শাহনাজ বাবুসহ স্থানীয় শিল্পীরা।
এদিকে বিজয় উৎসবকে ঘিরে হাওরের তিন উপজেলা ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রাম ছাড়াও পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোর জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। হাওর এলাকার অন্তত ৫০ হাজার মানুষের পদচারণায় উৎসব প্রাঙ্গণ মুখরিত হয়ে ওঠে।