এখন চলছে জ্যৈষ্ঠ মাস। বাংলা সনে জ্যৈষ্ঠ মধু মাস হিসেবে পরিচিত। যদিও বাংলা অভিধানে মধুমাস শব্দের অর্থ হলো- চৈত্রমাস। কিন্তু দেশের পত্রপত্রিকায় জ্যৈষ্ঠ মাস নিয়ে কোনো কিছু লিখতে গিয়ে লেখা হয় মিষ্টি ফলের রসে ভরা মধুমাস। এভাবেই জ্যৈষ্ঠ মাসের সঙ্গে মধু মাস বিশেষণটি জড়িয়ে গেছে। এ মাসে থাকে বাহারি রসালো ফলের সমারোহ। ষড়ঋতুর এ দেশে গ্রীষ্মকালের তীব্র দাপদাহের সময় এসব ফল মানুষকে স্বস্তি ও শান্তি দেয়।
আল্লাহতায়ালার বিস্ময়কর এক সৃষ্টি নিদর্শনের নাম ফল। এটি আল্লাহতায়ালার এমন এক নিয়ামত যা সবাই পছন্দ করে।
বাংলাদেশের আবহাওয়ায় সারা বছর কোনো না কোনো ফলের সমারোহ থাকলেও জ্যৈষ্ঠ মাস আসে নানা প্রজাতির রসালো ফলের সুবাস নিয়ে। বাজারে ফলের দোকানে, রাস্তার ধারে থরে থরে সাজানো আম, কাঁঠাল, লিচু, তরমুজ, কালোজাম, বাঙ্গিসহ নানা রকম রসালো ফল। মিষ্টি ফলের লোভনীয় গন্ধ। ফল রসে রসনা তৃপ্তির অপূর্ব আনন্দময় মাস এ জ্যৈষ্ঠ। বাঙালির ঘরে ঘরে পুরো জ্যৈষ্ঠ মাস জুড়ে চলে আনন্দ, চলে আত্মীয়-স্বজনদের আনাগোনা ও ফল-ফলাদি আদান-প্রদান।
জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রধান ফল আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু। ফলের রাজা আম। কাঁঠাল আমাদের জাতীয় ফল। বর্তমান সরকার আমগাছকে দিয়েছে জাতীয় গাছের মর্যাদা। আমের কদর শুধু আজ নয়- পারস্যের কবি আমীর খসরু চতুর্দশ শতাব্দীতে আমকে ‘হিন্দুস্থানের সেরা ফল’ রূপে উল্লেখ করেছেন।
জ্যৈষ্ঠ মাসের আরেক ফল কাঁঠাল। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় আকারের মজার ফল এটি। কাঁঠাল শুধু জাতীয় ফল নয়, গরিবের ফল নামেও পরিচিত। কাঁঠাল কাঁচা অবস্থায় সবজিরূপেও মজা করে খায় এদেশের মানুষ। পাকা কাঁঠাল রস করে দুধ দিয়ে খেতে খুব মজা। অবশ্য কাঁঠাল দুধ ভাত ছাড়াও খাওয়া যায়। অন্যদিকে কাঁঠালের বিচি (দানা) বাদামের মতো ভেজে, সিদ্ধ করে সবজিরূপে খাওয়া হয়।
জামের কথা আসলেই মনে পড়ে পল্লী কবি জসীমউদ্দিনের কবিতা, ‘পাকা জামের মধুর রসে রঙিন করি মুখ।’ জাম খেয়ে মুখ রঙিন করা সত্যিই এক মজার বিষয়। কে না চায় এটা? আর এ সুযোগ আসে কেবল জ্যৈষ্ঠ মাসেই।
জ্যৈষ্ঠ মাসের আরেক রসানো ফল হলো লিচু। লিচুর বিভিন্ন প্রজাতি থাকলেও দিনাজপুরের মাছুমপুর লিচুর জন্য বিখ্যাত। অন্যদিকে মাদ্রাজী ও বোম্বাই লিচু প্রায় সারা দেশে পাওয়া যায়।
জ্যৈষ্ঠ মাসের রকমারি ফলের মধ্যে আরো রয়েছে তরমুজ, বাঙ্গি, জামরুল প্রভৃতি। এ সবই লোভনীয় ও স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।
বস্তুত এসব মৌসুমি ফল আল্লাহতায়ালার অপূর্ব নিয়ামত বিশেষ। মানুষ সাধারণত রান্না করে খাবার খায়। কিন্তু ফল এমন একটি নিয়ামত যা রান্না করতে হয় না। খাওয়ার পর পানি পান করার প্রয়োজন হয় না। কারণ অধিকাংশ ফলেই পরিমিত পরিমাণ পানি আছে।
ফলমূলের এ মৌসুমে প্রত্যেকেই চায় ফল খেতে। তবে সাবধান থাকতে হয় কিছু অসাধু ব্যবসায়ী দরুন। কারণ তারা আল্লাহর এসব নিয়ামত ফলে বিষাক্ত রাসায়নিক দ্রব্য মেশায় দ্রুত পাকানো ও চমক বাড়ানোর জন্য। এসব অসাধু ব্যবসায়ীদের থেকে দূরে থাকতে হবে। যারা এমন অন্যায় করছে তাদেরকে সাবধান করতে হবে। সাবধান না হলে আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সহযোগিতা করা প্রত্যেক সচেতন নাগরিকের পবিত্র দায়িত্ব।
হাদিস শরিফে আছে, ‘প্রকৃত মুসলমান তো সেই, যার জবান ও হস্তদয় থেকে অন্য মুসলমানরা নিরাপদ থাকে।’ অর্থাৎ প্রকৃত মুমিন তো সেই, যার কাছে মানুষ জানমালের নিরাপত্তা বোধ করে। অতএব, সত্যিকার অর্থে মুমিন-মুসলমান হতে হলে খাদ্যে ফরমালিন ইত্যাদি বিষাক্ত পদার্থ মিশিয়ে মানুষের জানমালের ক্ষতি সাধন থেকে বিরত হতে হবে।
মৌসুমি এসব ফলের উপকার বলে শেষ করা যাবে না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে, মানুষের শরীরে রোগের প্রতিষেধক হিসেবে মৌসুমি ফল-ফলাদির চেয়ে অধিক কার্যকরী ভিন্ন কোনো ওষুধ নেই।
মৌসুমি এসব ফলমূল খেয়ে আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য প্রকাশ করার পাশাপশি নিঃস্ব, অসহায়, দরিদ্রপীড়িত লোক যারা এগুলো কিনে খেতে সক্ষম নয় তাদের দান করাও অনেক বড় সওয়াবের কাজ। মধুমাস জ্যৈষ্ঠ আমাদের প্রত্যেকের জীবনে বয়ে আনুক অনাবিল শান্তি, সুখ আর সীমাহীন তৃপ্তি।