ঢাকা ০৫:৫২ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাত্র ৫ মিনিটে ৫০০ টাকা দিয়ে রক্ত পরীক্ষায় শনাক্ত হবে ক্যান্সার

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫২:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮
  • ৩৬৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শুধু রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই আগে থেকে শনাক্ত করা যাবে ক্যান্সার। এই পরীক্ষায় খরচ হবে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা আর সময় লাগবে মাত্র পাঁচ মিনিট। ক্যান্সার শনাক্তকরণে অন্য যেকোনো পরীক্ষার চেয়ে এই পদ্ধতি সহজ ও অনন্য। এমনকি কারো রক্তের অন্য কোনো পরীক্ষা করার সময়ও সহজেই জানা যাবে তার ক্যান্সার আছে কি না। আগামী এক বছরের মধ্যে এই প্রযুক্তির ডিভাইস তৈরি করা সম্ভব হবে। আর বিজ্ঞানের এই যুগান্তকারী সাফল্যের সূচনা ঘটিয়েছেন বাংলাদেশের এক দল বিজ্ঞানী। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই কৃতিত্বপূর্ণ গবেষণা চালিয়ে অসাধারণ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন।

গতকাল বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শাবিপ্রবিতে উদ্ভাবিত ক্যান্সার শনাক্তকরণ প্রযুক্তি সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ২৫ সদস্যের গবেষণা টিম কাজ করে। এর নেতৃত্বে ছিলেন শাবিপ্রবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক।

জানা যায়, ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ‘নন-লিনিয়ার অপটিকস ব্যবহার করে বায়োমার্কার নির্ণয়’ শীর্ষক প্রকল্পটি উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের প্রকল্প হেকেপের আওতায় গৃহীত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সহায়তায় এই হেকেপ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রকল্পের অংশ হিসেবে প্রথমেই শাবিপ্রবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে নন-লিনিয়ার বায়ো-অপটিকস রিসার্চ ল্যাবরেটরি গড়ে তোলা হয়। এই ল্যাবরেটরিতে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের রক্তের সিরামে শক্তিশালী লেজার রশ্মি পাঠিয়ে নন-লিনিয়ার সূচক পরিমাপ করার কাজ শুরু হয়। বায়োকেমিক্যাল প্রক্রিয়ায় যে বাড়তি রি-এজেন্ট ব্যবহার করতে হয়, উদ্ভাবিত নতুন পদ্ধতিতে তা প্রয়োজন হয় না। প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে নতুন একটি পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষা করে সম্ভাব্য ক্যন্সারের ভবিষ্যদ্বাণী করার একটি সম্ভাবনা উন্মোচিত হয়েছে। এটি অল্প খরচে এবং কম সময়ে করা সম্ভব হবে। এই উদ্ভাবনী প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে শুধু ক্যান্সার রোগাক্রান্ত রোগীদের রক্ত নয়, অন্য যেকোনো স্যাম্পলের নন-লিনিয়ার ধর্ম খুবই সহজে সূক্ষ্মভাবে পরিমাপ করা সম্ভব হবে।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টির লক্ষ্যে গবেষণায় ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বাংলাদেশ সক্ষমতা অর্জন করছে। হেকেপের আওতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য দুই হাজার ৫৪ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে টিচিং-লার্নিং ও গবেষণার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা কাজ পড়ালেখা, তবে মূল কাজ গবেষণা করা। আমরা গবেষণাকেই গুরুত্ব দিতে চাই।’

উদ্ভাবন সম্পর্কে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা পেশ করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণা দলের প্রধান ড. ইয়াসমিন হক। এরপর তাঁর টিমের অন্যতম সদস্য প্রফেসর ড. শরীফ মো. শরাফুদ্দিন, ড. মানস কান্তি বিশ্বাস ও ড. এনামুল হককে নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। ড. ইয়াসমিন হক বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা আমাদের এই উদ্ভাবনের পেটেন্টের জন্য আবেদন করেছি। এখনো আমাদের অনেক কাজ বাকি আছে। আমরা এই গবেষণার বিষয়ে এখন জার্নাল প্রকাশ করতে শুরু করব। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্যান্সার ছাড়াও অনেক অসুখবিসুখ চিহ্নিত করা যাবে। তবে উচ্চতর গবেষণার জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। গবেষণায় তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. মানস কান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘ক্যান্সার আক্তান্ত রোগীর রক্তের সিরামে একটা চেঞ্জ আসে, সেটা নন-লিনিয়ার অপটিকস ব্যবহার করে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে আগেভাগেই পূর্বাভাস পাওয়া যাবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ, ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. ইউসুফ আলী মোল্লা, হেকেপ প্রকল্প পরিচালক ড. গৌরাঙ্গ চন্দ্র মোহান্ত, বিশ্বব্যাংকের চিফ অপারেশনস অফিসার ড. মোখলেছুর রহমান প্রমুখ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

মাত্র ৫ মিনিটে ৫০০ টাকা দিয়ে রক্ত পরীক্ষায় শনাক্ত হবে ক্যান্সার

আপডেট টাইম : ১২:৫২:২৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ শুধু রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই আগে থেকে শনাক্ত করা যাবে ক্যান্সার। এই পরীক্ষায় খরচ হবে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা আর সময় লাগবে মাত্র পাঁচ মিনিট। ক্যান্সার শনাক্তকরণে অন্য যেকোনো পরীক্ষার চেয়ে এই পদ্ধতি সহজ ও অনন্য। এমনকি কারো রক্তের অন্য কোনো পরীক্ষা করার সময়ও সহজেই জানা যাবে তার ক্যান্সার আছে কি না। আগামী এক বছরের মধ্যে এই প্রযুক্তির ডিভাইস তৈরি করা সম্ভব হবে। আর বিজ্ঞানের এই যুগান্তকারী সাফল্যের সূচনা ঘটিয়েছেন বাংলাদেশের এক দল বিজ্ঞানী। সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই কৃতিত্বপূর্ণ গবেষণা চালিয়ে অসাধারণ প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন।

গতকাল বুধবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শাবিপ্রবিতে উদ্ভাবিত ক্যান্সার শনাক্তকরণ প্রযুক্তি সম্পর্কে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এই প্রযুক্তি উদ্ভাবনে ২৫ সদস্যের গবেষণা টিম কাজ করে। এর নেতৃত্বে ছিলেন শাবিপ্রবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ইয়াসমিন হক।

জানা যায়, ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ‘নন-লিনিয়ার অপটিকস ব্যবহার করে বায়োমার্কার নির্ণয়’ শীর্ষক প্রকল্পটি উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নের প্রকল্প হেকেপের আওতায় গৃহীত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সহায়তায় এই হেকেপ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, প্রকল্পের অংশ হিসেবে প্রথমেই শাবিপ্রবির পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে নন-লিনিয়ার বায়ো-অপটিকস রিসার্চ ল্যাবরেটরি গড়ে তোলা হয়। এই ল্যাবরেটরিতে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের রক্তের সিরামে শক্তিশালী লেজার রশ্মি পাঠিয়ে নন-লিনিয়ার সূচক পরিমাপ করার কাজ শুরু হয়। বায়োকেমিক্যাল প্রক্রিয়ায় যে বাড়তি রি-এজেন্ট ব্যবহার করতে হয়, উদ্ভাবিত নতুন পদ্ধতিতে তা প্রয়োজন হয় না। প্রচলিত পদ্ধতির বাইরে নতুন একটি পদ্ধতিতে রক্ত পরীক্ষা করে সম্ভাব্য ক্যন্সারের ভবিষ্যদ্বাণী করার একটি সম্ভাবনা উন্মোচিত হয়েছে। এটি অল্প খরচে এবং কম সময়ে করা সম্ভব হবে। এই উদ্ভাবনী প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে শুধু ক্যান্সার রোগাক্রান্ত রোগীদের রক্ত নয়, অন্য যেকোনো স্যাম্পলের নন-লিনিয়ার ধর্ম খুবই সহজে সূক্ষ্মভাবে পরিমাপ করা সম্ভব হবে।

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে ও নতুন জ্ঞান সৃষ্টির লক্ষ্যে গবেষণায় ব্যয় বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবনে বাংলাদেশ সক্ষমতা অর্জন করছে। হেকেপের আওতায় শিক্ষা মন্ত্রণালয় উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য দুই হাজার ৫৪ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে টিচিং-লার্নিং ও গবেষণার সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা কাজ পড়ালেখা, তবে মূল কাজ গবেষণা করা। আমরা গবেষণাকেই গুরুত্ব দিতে চাই।’

উদ্ভাবন সম্পর্কে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা পেশ করেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণা দলের প্রধান ড. ইয়াসমিন হক। এরপর তাঁর টিমের অন্যতম সদস্য প্রফেসর ড. শরীফ মো. শরাফুদ্দিন, ড. মানস কান্তি বিশ্বাস ও ড. এনামুল হককে নিয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। ড. ইয়াসমিন হক বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা আমাদের এই উদ্ভাবনের পেটেন্টের জন্য আবেদন করেছি। এখনো আমাদের অনেক কাজ বাকি আছে। আমরা এই গবেষণার বিষয়ে এখন জার্নাল প্রকাশ করতে শুরু করব। এই প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্যান্সার ছাড়াও অনেক অসুখবিসুখ চিহ্নিত করা যাবে। তবে উচ্চতর গবেষণার জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসতে হবে। গবেষণায় তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করতে হবে।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ড. মানস কান্তি বিশ্বাস বলেন, ‘ক্যান্সার আক্তান্ত রোগীর রক্তের সিরামে একটা চেঞ্জ আসে, সেটা নন-লিনিয়ার অপটিকস ব্যবহার করে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে আগেভাগেই পূর্বাভাস পাওয়া যাবে।’

সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদ, ইউজিসির সদস্য প্রফেসর ড. ইউসুফ আলী মোল্লা, হেকেপ প্রকল্প পরিচালক ড. গৌরাঙ্গ চন্দ্র মোহান্ত, বিশ্বব্যাংকের চিফ অপারেশনস অফিসার ড. মোখলেছুর রহমান প্রমুখ।