ঢাকা ১০:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

খুলে দেয়া হলো দ্বিতীয় ধরলা সেতু

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:৫৮:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ এপ্রিল ২০১৮
  • ৩৩৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কুলাঘাটে ধরলা নদীর ওপর নির্মিত বহুল প্রতীক্ষিত ধরলা সেতুটি গতকাল শনিবার বিকালে খুলে দেওয়ায় ১২৫ টি নৌ-শ্রমিক (মাঝি) রা কাল থেকে বেকার হওয়ায় দুচিন্তায় পড়েছেন।

অনেকেই কাল থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে আছেন। আবার অনেকেই মোটা অংকের ঋণ নিয়ে নৌকা তৈরী করে জীবন-জীবিকা করতো। এখন সেই ঋণ পরিশোধ না হতেই ধরলা নদীর ওপর সেতুটি খুলে দেওয়া ও ঋণের বোঁজা মাথায় নিয়ে অনেকটা দুচিন্তায় দিন কাঁটাছেন মাঝি পরিবারগুলো।

আর কি ভাবেই বা এই ঋণ পরিশোধ করবে তারা জানেন না। এই ১২৫ টি পরিবার র্দীঘদিন ধরে বাপ-দাদার পেশা ধরে যুগের পর যুগ কুলাঘাটে ধরলা নদীর ওপর নৌকা দিয়ে মানুষ পাড়াপাড় করে জীবন-জীবিকা নিরবাহ করতো। তারা এ পেশা থেকে যুগের পর যুগ নৌকা চালিয়ে মানুষ পাড়াপাড় করে ১২৫টি পরিবারের লোকজন বেঁচে থাকত। মোট নৌকার সংখ্যা ৬৫টি।

মাঝিরা দিনরাত ধরলা নদীতে নৌকা চালিয়ে ১২৫টি পরিবারের মোট ৭৫০ সদস্যদের দু-বেলা ডাল-ভাত খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখতেন। বর্তমানে এই ১২৫ টি পরিবারের সদস্যরা নৌকা চালা কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজ করতে পারে না। তাই তারা এখন বেশি বেশি করে দুচিন্তায় পড়েছেন। অনেকেই জন্মের পর থেকে তাদের বাপ-দাদার সাথে এ পেশায় জড়িত হয়ে নৌকা চালা শিখতো। প্রতিটি মাঝি পরিবারের সদস্যরা অতি মনোযোগে নৌকা চালা কাজটি শিখে ফেলতো। নৌ-শ্রমিক (মাঝি) পরিবারের সদস্যরা শিশুকাল থেকে এ পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাদের প্রত্যেকটি পরিবারের দেখাশুনা ও ছেলে-মেয়েদের স্কুল-কলেজে পড়াশুনা করাতেন। তবে অতি আরাম-আয়েশ ভাবে জীবন-যাপন করতে না পাড়লেও তারাও দুই বেলা ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতো।

এই ১২৫টি পরিবার দ্বিতীয় ধরলার সেতুর কাছ শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের প্রতিটি পরিবারে মধ্যে অনেকটা ভয় কাছ করতো। তারা শুধুই ভাবত ধরলা সেতু হলে আর পেশা ধরে রাখতে পারবে না। সবার বেকার হয়ে যাবে। কিভাবে চলবে ১২৫টি পরিবার । আর কিভাবেই বা ছেলে-মেয়েদের মানুষ করবেন। কাল থেকে এই পেশা চিরদিনের মত বিদায় নিল। তাই ধরলা সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি পরিবারের মাঝে কালোছাঁয়া নেমে এসেছে।

তাই দুচিন্তায় শুধুই নৌ-শ্রমিক (মাঝি) পরিবারের সদস্য স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে ও বৃদ্ধ বাবা-মাসহ সবাই অনেকটা চিন্তিত । গতকাল ধরলা সেতুটি চালু হওয়ার পরেও ১২৫ পরিবারের ঘরে খাবার না থাকলে অনেকটা আনন্দের ঝিলিক দেখা দিয়েছে। এ ১২৫ টি মাঝি পরিবার গুলো সরকারের কাছে আর্থিক অহায়তা ও বিভিন্ন ব্যাংক এবং বে-সরকারী এনজিওদের কাছে মোটা অংকের ঋণ চেয়েছেন এবং সরকার ও চেয়াম্যান-মেম্বারদের কাছে সরকারী সহায়তাসহ পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য কিছু কাজের ব্যবস্থা করা আকুতি জানান।

ধরলা পাড়ের নৌ-শ্রমিক আমিনুল ইসলাম (৫২)জানান,র্দীঘ ৩৫ বছর ধরে নৌকায় মানুষ পাড়াপাড় করি। যখন নৌকায় করে মানুষ পাড়াপাড় করি তখন খুবেই আনন্দ লাগে। সময় মত মানুষ পাড়াপাড় করলে অনেকেই বেশি করে টাকা দিত। কাল সেতুটি খুলে দেওয়া আনন্দ লাগছে। কিন্ত ঘরে খাবার না থাকায় অসেক কষ্ট লাগছে। কি ভাবে যে পরিবারের ৬ সদস্যদের নিয়ে বেঁছে থাকবে জানি না।

নুরুল ইসলাম(৫৫), ৪৫ হাজার,হাফেজ উদ্দিন (৬০),৫০ হাজার,সফি উদ্দিন (৪৮) ২ লাখ টাকা বিভিন্ন এনজিও কাছে থেকে ঋণ নিয়ে ডিঙ্গি নৌকা ক্রয় করে। তারা প্রত্যেকেই ঋণ নিয়ে নৌকা ক্রয় করে সেই ধরলা নদীতে মানুষ পাড়পপাড় করে তাদের পরিবার পরিজনদেরকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে থাকতে। ধরলা সেতুটি খুলে দেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তারা এক বাক্যে বলে সেতুটি খুলে দেওয়ায় আমাদের প্রতিটি পরিবারের মাঝে আনন্দ উল্লাস ছিল ।

কিন্ত শনিবার বিকাল থেকে থেকেই আমরা সবাই বেকার হয়ে গেলাম। ঘরে খাবার নেই কি ভাবে জীবন চলবে আর কি ভাবেই বা ছেলে-মেয়েদের পড়পশুনা করাব। টাকা-পয়সা না থাকলে খাবো কি আর সন্তানদের মানুষ করবো বা কি করে। এ অবস্থায় সরকার ও চেয়ারম্যান-মেম্বাররা আমাদের কোন সুব্যস্থ না করলে আমরা ছেলে-মেয়েসহ না খেয়ে থাকতে হবে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবেন্দ্র নাথ ঊরাঁও জানান,যেখানে বাংলদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে সারা বিশ্বে কাছে পরিচিতি। তাই কোন দরিদ্র পরিবার এদেশে না খেয়ে থাকবে না। সরকার সেগুলোকে রাষ্ট্রীয় ভাবে সহায়তা প্রদান করবে। আমরা জানি ওই মাঝি পরিবারগুলো যুগের পর যুগ ধরে নৌকা চালিয়ে জীবন-জীবিকা নিরবাহ করতো।

যেহেতু তারা অন্য পেশায় কাজ করতে পারবে না । তাই তাদেরকে সরকারী ভাবে বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে এবং সামনে সরকারী কোন বরাদ্দ আসলে ১২৫টি মাঝি পরিবারগুলো সতায়তা দেওয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

জনপ্রিয় সংবাদ

খুলে দেয়া হলো দ্বিতীয় ধরলা সেতু

আপডেট টাইম : ০৫:৫৮:০০ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ এপ্রিল ২০১৮

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কুলাঘাটে ধরলা নদীর ওপর নির্মিত বহুল প্রতীক্ষিত ধরলা সেতুটি গতকাল শনিবার বিকালে খুলে দেওয়ায় ১২৫ টি নৌ-শ্রমিক (মাঝি) রা কাল থেকে বেকার হওয়ায় দুচিন্তায় পড়েছেন।

অনেকেই কাল থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে না খেয়ে আছেন। আবার অনেকেই মোটা অংকের ঋণ নিয়ে নৌকা তৈরী করে জীবন-জীবিকা করতো। এখন সেই ঋণ পরিশোধ না হতেই ধরলা নদীর ওপর সেতুটি খুলে দেওয়া ও ঋণের বোঁজা মাথায় নিয়ে অনেকটা দুচিন্তায় দিন কাঁটাছেন মাঝি পরিবারগুলো।

আর কি ভাবেই বা এই ঋণ পরিশোধ করবে তারা জানেন না। এই ১২৫ টি পরিবার র্দীঘদিন ধরে বাপ-দাদার পেশা ধরে যুগের পর যুগ কুলাঘাটে ধরলা নদীর ওপর নৌকা দিয়ে মানুষ পাড়াপাড় করে জীবন-জীবিকা নিরবাহ করতো। তারা এ পেশা থেকে যুগের পর যুগ নৌকা চালিয়ে মানুষ পাড়াপাড় করে ১২৫টি পরিবারের লোকজন বেঁচে থাকত। মোট নৌকার সংখ্যা ৬৫টি।

মাঝিরা দিনরাত ধরলা নদীতে নৌকা চালিয়ে ১২৫টি পরিবারের মোট ৭৫০ সদস্যদের দু-বেলা ডাল-ভাত খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখতেন। বর্তমানে এই ১২৫ টি পরিবারের সদস্যরা নৌকা চালা কাজ ছাড়া অন্য কোন কাজ করতে পারে না। তাই তারা এখন বেশি বেশি করে দুচিন্তায় পড়েছেন। অনেকেই জন্মের পর থেকে তাদের বাপ-দাদার সাথে এ পেশায় জড়িত হয়ে নৌকা চালা শিখতো। প্রতিটি মাঝি পরিবারের সদস্যরা অতি মনোযোগে নৌকা চালা কাজটি শিখে ফেলতো। নৌ-শ্রমিক (মাঝি) পরিবারের সদস্যরা শিশুকাল থেকে এ পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে তাদের প্রত্যেকটি পরিবারের দেখাশুনা ও ছেলে-মেয়েদের স্কুল-কলেজে পড়াশুনা করাতেন। তবে অতি আরাম-আয়েশ ভাবে জীবন-যাপন করতে না পাড়লেও তারাও দুই বেলা ডাল-ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতো।

এই ১২৫টি পরিবার দ্বিতীয় ধরলার সেতুর কাছ শুরু হওয়ার পর থেকে তাদের প্রতিটি পরিবারে মধ্যে অনেকটা ভয় কাছ করতো। তারা শুধুই ভাবত ধরলা সেতু হলে আর পেশা ধরে রাখতে পারবে না। সবার বেকার হয়ে যাবে। কিভাবে চলবে ১২৫টি পরিবার । আর কিভাবেই বা ছেলে-মেয়েদের মানুষ করবেন। কাল থেকে এই পেশা চিরদিনের মত বিদায় নিল। তাই ধরলা সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি পরিবারের মাঝে কালোছাঁয়া নেমে এসেছে।

তাই দুচিন্তায় শুধুই নৌ-শ্রমিক (মাঝি) পরিবারের সদস্য স্ত্রী-ছেলে-মেয়ে ও বৃদ্ধ বাবা-মাসহ সবাই অনেকটা চিন্তিত । গতকাল ধরলা সেতুটি চালু হওয়ার পরেও ১২৫ পরিবারের ঘরে খাবার না থাকলে অনেকটা আনন্দের ঝিলিক দেখা দিয়েছে। এ ১২৫ টি মাঝি পরিবার গুলো সরকারের কাছে আর্থিক অহায়তা ও বিভিন্ন ব্যাংক এবং বে-সরকারী এনজিওদের কাছে মোটা অংকের ঋণ চেয়েছেন এবং সরকার ও চেয়াম্যান-মেম্বারদের কাছে সরকারী সহায়তাসহ পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য কিছু কাজের ব্যবস্থা করা আকুতি জানান।

ধরলা পাড়ের নৌ-শ্রমিক আমিনুল ইসলাম (৫২)জানান,র্দীঘ ৩৫ বছর ধরে নৌকায় মানুষ পাড়াপাড় করি। যখন নৌকায় করে মানুষ পাড়াপাড় করি তখন খুবেই আনন্দ লাগে। সময় মত মানুষ পাড়াপাড় করলে অনেকেই বেশি করে টাকা দিত। কাল সেতুটি খুলে দেওয়া আনন্দ লাগছে। কিন্ত ঘরে খাবার না থাকায় অসেক কষ্ট লাগছে। কি ভাবে যে পরিবারের ৬ সদস্যদের নিয়ে বেঁছে থাকবে জানি না।

নুরুল ইসলাম(৫৫), ৪৫ হাজার,হাফেজ উদ্দিন (৬০),৫০ হাজার,সফি উদ্দিন (৪৮) ২ লাখ টাকা বিভিন্ন এনজিও কাছে থেকে ঋণ নিয়ে ডিঙ্গি নৌকা ক্রয় করে। তারা প্রত্যেকেই ঋণ নিয়ে নৌকা ক্রয় করে সেই ধরলা নদীতে মানুষ পাড়পপাড় করে তাদের পরিবার পরিজনদেরকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে বেঁচে থাকতে। ধরলা সেতুটি খুলে দেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে তারা এক বাক্যে বলে সেতুটি খুলে দেওয়ায় আমাদের প্রতিটি পরিবারের মাঝে আনন্দ উল্লাস ছিল ।

কিন্ত শনিবার বিকাল থেকে থেকেই আমরা সবাই বেকার হয়ে গেলাম। ঘরে খাবার নেই কি ভাবে জীবন চলবে আর কি ভাবেই বা ছেলে-মেয়েদের পড়পশুনা করাব। টাকা-পয়সা না থাকলে খাবো কি আর সন্তানদের মানুষ করবো বা কি করে। এ অবস্থায় সরকার ও চেয়ারম্যান-মেম্বাররা আমাদের কোন সুব্যস্থ না করলে আমরা ছেলে-মেয়েসহ না খেয়ে থাকতে হবে।

এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবেন্দ্র নাথ ঊরাঁও জানান,যেখানে বাংলদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে সারা বিশ্বে কাছে পরিচিতি। তাই কোন দরিদ্র পরিবার এদেশে না খেয়ে থাকবে না। সরকার সেগুলোকে রাষ্ট্রীয় ভাবে সহায়তা প্রদান করবে। আমরা জানি ওই মাঝি পরিবারগুলো যুগের পর যুগ ধরে নৌকা চালিয়ে জীবন-জীবিকা নিরবাহ করতো।

যেহেতু তারা অন্য পেশায় কাজ করতে পারবে না । তাই তাদেরকে সরকারী ভাবে বিভিন্ন কাজের প্রশিক্ষন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে এবং সামনে সরকারী কোন বরাদ্দ আসলে ১২৫টি মাঝি পরিবারগুলো সতায়তা দেওয়া হবে।