পলকে আস্থা আ’লীগের,বিএনপিতে একাধিক

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নাটোর-৩ সিংড়া সংসদীয় আসন। চলনবিল অধ্যুষিত নাটোরের বৃহৎ উপজেলা এটি। ১২টি উইনিয়ন ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত সিংড়া উপজেলা। জনসংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৬২ হাজার। এ আসনে নির্বাচনী আমেজ বইতে শুরু করেছে। বিভিন্ন দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থীরা যোগ দিচ্ছেন সভা-সমাবেশ ও সামাজিক কর্মকান্ডে।

এ আসনটি দীর্ঘ ৩৭ বছর আওয়ামীলীগের বেদখলে ছিলো। ১৯৭৩ সালের পর প্রথম বারের মতো নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান এমপি জুনাইদ আহমেদ পলক বিপুল ভোটে বিজয়ের মাধ্যমে আসনটি বিএনপি জোটের হাত ছাড়া হয়।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমান আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এম. পির বিপক্ষে ভোটযুদ্ধে অংশ নিয়ে বিএনপির প্রার্থী কতখানি সফল হয় সেটি দেখার বিষয়। পলকেই ভরসা আওয়ামীলীগের তবে বিএনপির আসনটি পুনরুদ্ধারে দলীয় মনোনীত প্রার্থী ও ধানের র্শীষ প্রতীকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবে বিএনপি।

গত ২০০৮ সালের নির্বাচনে এলাকার সন্তান হিসেবে সবার মনিকোঠায় জায়গা করে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হোন সাবেক ভিপি, চৌকস বক্তা এবং তৎকালিন সময়ের উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জুনাইদ আহমেদ পলক। তিনি নবম সংসদের সর্বকনিষ্ঠ সাংসদ নির্বাচিত হোন । তিনি সংসদ সদস্য হয়ে এলাকার ব্যাপক উন্নয়নমুলক কাজ করে যাচ্ছেন। আওয়ামীগের সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান মোতাবেক ৩৭ বছরের তুলনায় বিগত সাড়ে ৮ বছরে সিংড়ায় সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে। বিশেষ করে রাস্তাঘাট, ব্রীজ,কালভার্ট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজের  ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমুলক কাজ হয়েছে। তাছাড়া এ আসনে স্বাধীনতার পর প্রথম মন্ত্রী পেয়েছে চলনবিলের মানুষ। মন্ত্রী হওয়ার পরেও প্রতিনিয়ত এলাকায় এসে দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন জুনাইদ আহমেদ পলক।

জুনাইদ আহমেদ পলক ছাড়াও এখানে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন চাইতে পারেন সিংড়া পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিক। শফিক ১৯৯৬ সালে গোল-ই আফরোজ সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৯৮ সালে একই কলেজের ভিপি নির্বাচিত হন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে ২০০৯ সালে তিনি সিংড়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানও নির্বাচিত হয়েছিলেন। পর পর তিনবার ক্ষমতাসীন দলের  প্রতিনিধিত্ব করার পরেও তার মাঝে কোনো দম্ভ লক্ষ্য করেনি কেউ। এলাকায় ন¤্র ও ভদ্র নেতা হিসেবে পরিচিত শফিক। সাধারণ ভাবে জীবন-যাপন করতেই নিজেকে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন তিনি।

এ আসনে বিএনপির তালিকায় রয়েছে প্রায় এক ডজন সম্ভাব্য প্রার্থী। সবাই ছুটছেন হাইকমান্ড এর কাছে। নির্বাচনে সবাই দলীয় মনোনয়নে আশাবাদী।

অপর দিকে এখানে এবারো বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাদে তিনবার এই আসন থেকে বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়া জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি, জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সাবেক সভাপতি অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ। খুবই বিনয়ী, ভদ্র মানুষ হিসেবে পরিচিত কাজী গোলাম মোর্শেদ ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। তার বাবা মরহুম কাজী আবুল মসউদ অবিভক্ত বাংলা এবং পাকিস্তান আমলে এমএলএ এবং পার্লামেন্ট সেক্রেটারি থাকাকালীন রাজশাহী-নাটোর-পাবনা-ঢাকা মহাসড়কসহ এলাকার উন্নয়ন এবং মানুষের কল্যাণে কাজ করার প্রচেষ্ঠা এখনো এলাকার প্রবীনদের মুখে মুখে শোনা যায়। বাবার আদর্শে অনুপ্রাণীত কাজী গোলাম মোর্শেদ ১১ বছর সংসদ সদস্য থাকাকালে প্রায় ৪০টি বেসরকারি শিক্ষপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি, রাস্তাঘাট নির্মাণ, বিদ্যুতায়নসহ অবহেলিত চলনবিল এলাকার উন্নয়ন করায় এবারো তিনিই মনোনয়ন পাবেন বলে তার কর্মী-সমর্থকেরা মনে করেন।

মোর্শেদ ছাড়াও বিএনপি থেকে এ আসনে মনোনয়ন চাইবে রাজশাহী কলেজ ছাত্রদলের সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক বহি ক্রিয়া সম্পাদক ও ছাত্রদল শাখার সাবেক সভাপতি, দুইবার ভোটে নির্বাচিত বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যাসোসিয়েসন(বি.এম.এ)এর সাবেক সেন্ট্রাল কাউন্সিলর,ডক্টরস এ্যাসোসিয়েসন অফ বাংলাদেশ(ড্যাব)-এর সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক,ধানের শীষ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ এর সিনিয়র সহ-সভাপতি, সিংড়া কৃষি ডিপল্পোমা এন্ড পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট এর প্রতিষ্ঠাতা এবং সিংড়া উপজেলা ছাত্রদল ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ডাঃ নজরল ইসলাম। । তিনি ছাত্র জীবন থেকেই খুবই ন¤্র ও ভদ্র মানুষ হিসাবে যেমন সু-পরিচিত তেমনি সৎ ব্যাক্তি হিসাবে এলাকার রয়েছে তার যতেষ্ট গ্রহনযোগ্যতা।

তিনি বিগত সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগে সিংড়া বাসীর পাশে ছিলেন। নজরুল ২০০১ সাল এবং তৎপরবর্তী সকল নির্বাচনে বিএনপির থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। শুধু তাই নয় তিনি ডাক্তারী পাশ করার পর থেকে সিংড়া উপজেলার সকল মানুষদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা ও তৃনমূলে বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কর্মকান্ড চালিয়ে আসছে। নজরুল ইসলাম বলেন, সততা এবং নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। নানা চাপের মুখেও মাঠে আছি। ছাত্রদল থেকে রাজনীতি শুর।৩৫ বছর ধরে সাধারণ মানুষের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছি। দলীয় হাইকমান্ডও আমাকে পরীক্ষিত নেতা হিসেবে মনে করেন। মনোনয়ন পেলে এবং সাধারণ ভোটারা তাদের ভোটাধিকার সঠিক ভাবে প্রয়োগ করতে পারলে বিপুল ভোটে বিজয়ী হব ইনশাআল্লাহ।

বিএনপি থেকে আরো মনোনয়ন চাইবেন চলনবিলের কাঁদা-মাটির পরিবেশে বেড়ে ওঠা সিংড়ার কৃতি সন্তান মোঃ ইউসুফ আলী।

জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম দলের কেন্দ্রীয় সংসদের সাধারণ সম্পাদক ও বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সালিশ বিশেষজ্ঞ অ্যাডভোকেট এম ইউসুফ আলী। তিনি চলনবিলের অবহেলিত ও নির্যাতিত জাতীয়তাবাদী জনগোষ্ঠীর নেতৃত্ব দিতে চান।

ইউসুফ বলেন,দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের সঙ্গে আছি, কাজ করছি। তৃণমূলের সঙ্গে রয়েছে আমার নিবিড় সম্পর্ক। সাধারণ মানুষের উন্নয়নই আমার প্রধান লক্ষ্যে। দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হওয়ার আশা রাখি।

বিএনপির এ আসন থেকে তরুন প্রার্থী হিসাবে তালিকায় রয়েছে সিংড়া উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, জি. এ কলেজ ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি,উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান পৌর বিএনপির সভাপতি দাউদার মাহমুদ। তিনি উপজেলা ২০দলীয় জোটের সদস্য সচিব হিসেবেও দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। দাউদার মাহমুদ অধিকাংশ সময় সংগঠন নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। তরুণ প্রার্থী হিসেবে এলাকায় তার সমাদরও ব্যাপক। এলাকায় শুভেচ্ছা পোষ্টার  ব্যনার এবং গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠক এর মাধ্যমে নিজেকে যোগ্য প্রার্থী হিসাবে জনগণের কাছে তুলে ধরার চেষ্ঠা করছেন।

বিএনপির দুঃসময়ের কান্ডার হিসেবে পরিচিত দাউদার মাহমুদ বলেন,দীর্ঘ ২১ বছর যাবৎ আমি রাজনীতির সাথে জড়িত। ছাত্র রাজনীতি ও বিএনপির দুঃসময়ে দলের নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। অবহেলিত চলনবিলবাসীর চাহিদা পূরণে তরণ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চাইবো। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সিংড়া আসনটি পুনরুদ্ধার করব ইনশাআল্লাহ।

এছাড়া বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশির তালিকায় রয়েছে সিংড়া উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক, উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান শামীম হোসেন। তিনি ২০০৩ সালে কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি ও কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়। ৫ই জানুয়ারী নির্বাচনের আগে যৌথবাহিনীর হাতে আটক ও ২০১৫ সালের ২৩শে আগষ্ট নাশকতার ২ মামলায় কারা বরণ করেন।

শামীম হোসেন বলেন, দুঃসময়ে দলের নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি। উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ায় জনগনের সুখে দুখে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। দল যদি মনোনয়ন দেয় তাহলে হারানো গৌরব ফিরিয়ে নিয়ে আসবো ইনশাআল্লাহ।

এআসন থেকে বিএনপি থেকে আরও প্রার্থীর তালিকায় আছে সিংড়া পৌর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সিংড়া দমদমা পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারুল ইসলাম আনু।

বিএনপি থেকে প্রার্থীর তালিকায় রয়েছে সিংড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি এ্যাডঃ মজিবর রহমান মন্টু।

বিএনপি থেকে আরোও মনোনয়ন চাইবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের সাবেক অর্থ সম্পাদক ও হবিবুর রহমান হল ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক,সিংড়া শহর বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক, উপজেলা সেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক,সিংড়া উপজেলা বিএপির যুগ্ম সম্পাদক আবদুল্লাহ আল কাফী।

এছাড়া এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জেলা বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ফরহাদ আলী দেওয়ান শাহীন।

সিংড়ায় বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশিদের ব্যাপারে জানতে চাইলে,সিংড়া উপজেলা বিএনপির শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক শরীফুল হাসান মৃধা সরেজমিনকে বলেন,“সিংড়ায় অনেকেই বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশি হলেও ধানের র্শীষ প্রর্তীক প্রার্থীর পক্ষে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামবে।

এ আসনে জামায়াতের বর্তমান প্রার্থী জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমীর অধ্যাপক বেলাল-উজ-জামান।

এদিকে মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি থেকে মহাজোটের মনোনয়ন চাইবেন উপজেলা জাতীয় পার্টি সাবেক সভাপতি মাও.আনিসুর রহমান ও বর্তমান সভাপতি প্রকৌশলী আনিসুর রহমান।

ওয়ার্কাস পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজান। বিকল্পধারা বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নাটোর এন এস কলেজের সাবেক ভিপি মোঃ রকিব উদ্দিন।

ইসলামী আন্দোলনের চুড়ান্ত  প্রার্থী দলের উপজেলা শাখার সেক্রেটারী শা মোস্তফা ওয়ালিউল্লাহ সেলিম।

নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই টেনশন বাড়ছে প্রার্থীদের। নিজেদের অবস্থান সুসংহত করার জন্য নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে চলছেন প্রার্থীরা। আগামী নির্বাচন ঘিরে আলোচনাও শুর হয়েছে বিভিন্ন মহলে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর