হাওর বার্তা ডেস্কঃ এখন স্বপ্ন শুধুই নিজের পায়ে হাঁটার। এছাড়া আর কিছুই চান না ৩৩ বছরের জুয়ান পেদ্রো ফ্রাঙ্কো সালাস। বিশ্বের সবচেয়ে মোটা ব্যক্তি হিসেবে ২০১৬ সালে গিনেস রেকর্ড বুকে নাম তুলেছিলেন উত্তর মেক্সিকোর বাসিন্দা হুয়ান। তখন তার ওজন ছিল ৫৯৫ কেজি।
সম্পূর্ণ শয্যাশায়ী ছিলেন জুয়ান পেদ্রো ফ্রাঙ্কো সালাস। উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস ছাড়াও ফুসফুসের সমস্যায় ভুগছিলেন। চিকিৎসকরা জানান, ওজন না কমালে বাঁচানো মুশকিল হবে তাকে। তখনই গ্যাসট্রিক অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই সময় শুরু হয় তার লড়াই।
মায়ের সঙ্গে হুয়ান চলে আসেন গোয়াদালাহারার আগুয়াকালিয়ানতেস শহরে। গুয়াদালাজারার একটি হাসপাতােলে বিশেষজ্ঞ সার্জন জোসে অ্যান্টোনিও ক্যাস্টানেদার কাছে ওজন কমানোর চিকিৎসা নিচ্ছেন তিনি। ফ্রাঙ্কো সালাস বলেন, ১৭ বছর বয়সে তার ওজন ছিল ২০০ কেজি। পরে এক দুর্ঘটনার শিকান হন তিনি।
এরপর থেকে তার ওজন বাড়তে থাকে। এ কারণে তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারতেন না। পরে মেডিক্যাল টিম তার উঠে দাঁড়ানোর জন্য লোহা দিয়ে একটি কাঠামো তৈরি করেন। এটি ব্যবহার করেই তিনি প্রথমবারের মতো বিছানা ছাড়তে সক্ষম হন।
ফ্রাঙ্কো সালাস বলেন, আমি একটি নতুন স্বপ্ন দেখছি; একটি দরজা আমার জন্য খুলছে। ফ্রাঙ্কো সালাসের জন্মের সময় ওজন ছিল ৩ দশমিক ৪ কেজি; প্রত্যেক বছর তা বেড়েছে গড়ে ১০ কেজি করে। ৬ বছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৬০ কেজিতে।
তার শরীরের ওজন যখন ২০০ কেজি সেই সময় তিনি এক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে তার ওজন। ২০১৪ সালে ৪৮ বছর বয়সে দেশটির আরেক নাগরিক ৫৬০ কেজি ওজনের ম্যানুয়েল ইউরাইব মারা যান। সে সময় তাকেই বিশ্বের সবচেয়ে মোটা মানুষ হিসেবে মনে করা হতো। ২০০৬ সালে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডেও জায়গা হয় তার।
২০১৭ সালের মে মাসে তার প্রথম অস্ত্রোপচার হয়। আর তাতে প্রায় ৮০ শতাংশ ওজন কমে তার। ছয় মাস পরে ফের আরো একটি অস্ত্রোপচার করা হয়। এই অপারেশনে পাকস্থলির আকার ছোট করে দেন চিকিৎসকেরা। ভাগ করে দেয়া হয় অন্ত্র। এখন ৩৩ বছরের হুয়ানের ওজন ৩৪৫ কিলোগ্রাম।
তবে এখনও হুয়ানের দিন-রাত কাটে বিছানায়, নাকে অক্সিজেনের টিউব গুঁজে। সূর্যের আলোর অভাবে তার ত্বকের রং ফ্যাকাশে হয়েছে। তবে বিছানায় শুয়েও কিছু না কিছু করার চেষ্টা করেন হুয়ান। কখনও রুমাল বুনে অাবার কখনও মিষ্টি বানিয়ে, সংসারে সাহায্য করার চেষ্টা করেন। তবে এখন বেশির ভাগ সময়টাই শরীরচর্চা করেন তিনি।
বিছানা থেকে প্রথমবারের মতো মাটিতে পা ফেলতে সক্ষম হয়েছেন হুয়ান। তবে এখনও তার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন, ফের নিজের পায়ে হেঁটে বেড়াবেন। আর এজন্য সব কষ্ট সহ্য করতে রাজি তিনি।
আগামী এক-দেড় বছরের মধ্যে হুয়ানের ওজন আরো কমবে বলে আশাবাদী তার চিকিৎসক কাসতেনেডার। তিনি বলেন, ‘আমি খুশি যে সমস্তটাই পরিকল্পনামাফিক এগোচ্ছে। প্রতিদিন আরো বেশি করে চেষ্টা করছেন হুয়ান, নিজের জীবনটাকে সঠিক জায়গায় ফেরাতে।