সত্তরোর্ধ্ব আওলাদ হোসেন। সেই কবে স্নাতক পাস করেছেন মানিকগঞ্জ সরকারি দেবেন্দ্র কলেজ থেকে। পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে চাকরির পেছনে না ছুটে ২৫ বছর ধরে কীটনাশক ছাড়া শিম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। একমাত্র ছেলে মাসুদকেও এইচএসসি পর্যন্ত পড়িয়ে চাকরি না করিয়ে ফসলের মাঠে নিয়ে সোনা ফলাচ্ছেন। আওলাদ হোসেন এখন শুধু নিজের পরিবারের আইডল না সে এখন সাটুরিয়া-মানিকগঞ্জের সকল শিম চাষির মধ্যমণি। সরেজমিনে ফসলের মাঠে গিয়ে কথা হয় বিষমুক্ত শিম চাষি আওলাদ হোসেনের সঙ্গে, তিনি যা বললেন নিজ কানে না শুনলে বিশ্বাস হবে না।
তার ভাষ্যমতে যুবকরা কেন দেশের বাইরে পড়ে থাকে। নিজ দেশেই আয় করা সম্ভব উন্নত দেশের চেয়ে বেশি। এ জন্য লাগবে সঠিক পরিকল্পনা ও আধুনিক পদ্ধতি আর কঠোর পরিশ্রম সবশেষে তা বাস্তবায়ন। এ চাষি যে গল্প শোনালেন যা শুনলে বিশ্বাস হতে মন চায় না। গেল বছর ১৪০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করছেন ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মোট ৩ মাস শিম বিক্রি করেছেন ৪ লাখ টাকার। খরচ হয়েছিল মাত্র ৫০ হাজার টাকা। তিন মাসে খরচ বাদ দিয়ে সাড়ে ৩ লাখ টাকা লাভ। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার জান্না গ্রামের সন্তান আওলাদ হোসেন। তিনি ২৫ বছর ধরে বিষমুক্ত শিম চাষ করছেন। তাকে সামনে রেখে এ উপজেলার প্রায় শতাধিক চাষি এখন শিম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। জান্না গ্রামের একটি মাঠে গিয়ে দেখা যায়, শিম চাষের যেন সমারোহ যে দিকে চোখ যায়, শিম ও এর ফুলের হাসি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানান শুধু সাটুরিয়া নয় জেলার ৭টি উপজেলার সব ইউনিয়নেই শিম চাষ দিন দিন বাড়ছে। মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. আলিমুজ্জামান মিঞা জানান, জেলার ৬৫টি ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে। গত বছর ৪৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে। এ বছর ৫০ হেক্টর বেশি জমিতে শিম চাষ করা হয়ছে। তবে সাটুরিয়া প্রতি বছর আগাম সিম চাষ করে থাকে, এখানকার চাষিরা প্রথমে পাইকারিই ৯০- ১০০ টাকা কেজি ধরে শিম বিক্রি করেছেন।
সাটুরিয়ার শিম চাষি আওলাদ হোসেন জানান, চলতি মৌসুমে তিনি ১৭০ শতাংশ জমিতে বিষমুক্ত শিম চাষ করেছেন, এ জমির জন্য তিনি ৩ লাখ চারা উৎপাদন করেন, এজন্য তিনি বিশেষ পদ্ধতিতে আগেই চারা তৈরি করে মাঠে লাগিয়েছেন, ফসল উঠানো থেকে শুরু করে টানা ৯০ দিন তা বিক্রি করতে পারেন। বর্তমানে তিনি প্রতিদিন ৫-৬ মুন শিম বিক্রি করছেন। গত বছর তিনি সাড়ে ৩ লাখ টাকা বিক্রি করতে পারলেও চলতি বছর খরচ বাদে ৪ লাখ টাকার বেশি লাভ হবে বলে আশা করছেন।
আরেক চাষি মান্নান জানান, তিনি এ বছর ৪০ শতাংশ জমিতে সিম চাষ করছেন, শীতের শুরুতে ৯০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি করতে পারলেও বতর্মানে ৩০-৩৫ টাকা কেজি পাইকারি বিক্রি করছেন। এ বছর তিনি খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৯০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে আশা করছেন। সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. এমরাত হোসেন জানান, সাটুরিয়া উপজেলার ফুকুরহাটি ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি সবজি আবাদ হয়ে থাকে। এ ইউনিয়নের কামতা, গোলড়া ও জান্না গ্রামের মানুষ শীতকালীন সবজির মধ্যে শিম চাষ অন্যতম প্রধান ফসল মনে করে আবাদ করে থাকেন। হাতের নাগালে জেলার সবচেয়ে বড় সবজির আড়ৎ এ গোলড়া কাছে থাকাতে পরিবহন খরচ কম ও ব্যাপকভাবে সবজির পাইকারদের আগমন ঘটাতে এ অঞ্চলের মানুষ দিন দিন সবজির আবদে ঝুঁকছে। আর অল্প সময়, পুঁজি ও ঝুঁকি কম থাকাতে এবং বেশি দাম পাওয়ায় শিম চাষ করছে বেশি। এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার এমদাদুল হক জানান, আওলাদ হোসেন দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে বিষমুক্ত শিম চাষ করছেন, তাকে দেখে উৎসাহী হয়ে এ উপজেলার অন্তত আরও শতাধিক চাষি সিম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।