কাজী নজরুল ইসলাম ( মে ২৫, ১৮৯৯–আগস্ট ২৯, ১৯৭৬) (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬–ভাদ্র ১২, ১৩৮৩ বঙ্গাব্দ) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি, উপন্যাসিক, নাট্যকার, সঙ্গীতজ্ঞ ও দার্শনিক ।
নজরুল বাংলার কবি। গনমানুষের কবি। লোকজীবন, আনন্দ বেদনা, সাম্যবাদ বাংলার প্রকৃতি, ফুল, পাখি শস্যা -শ্যামলা ভুমি আর ঋতু পরিক্রমার সব দৃশ্য সাবলীল ভাবে তাঁর লেখায় এসেছে। এই পরিক্রমায় তিনি ছিলেন একাধারে কবি, দেশপ্রেমিক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ এবং সৈনিক।
তাঁর হাত ধরে সমৃদ্ধ হয়েছে বাংলা কবিতার জগত, শিশু সাহিত্য, গীতিকবিতা, গান, ইসলামী গজল, শ্যামা সংগীত পর্যন্ত সব কিছু। বাংলা সাহিত্যের প্রতিটি শাখা তাঁর সাবলীল হাতের ছোঁয়ায় সমৃদ্ধ হয়েছে ।
মাত্র তেইশ বছর বয়সে তিনি লিখেছিলেন বিদ্রোহী কবিতা। চমকে দিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্য এবং সাহিত্য সংশ্লিষ্ট যারাই ছিলেন তাঁরা সকলে নড়েচড়ে বসলেন। তাঁর অসামান্য নিপুন হাতের ছোঁয়ায় বাংলা সাহিত্য এক নতুন রূপ পেলো।
কাজী নজরুল মানেই বিদ্রোহী কবি। বাংলা কবিতায় আবির্ভাব তাঁর ধুমকেতুর মত , সেই তিনিই লিখেছেন ইসলামী সংগীত , গজল, হামদ, নাত, শ্যামা সঙ্গীত।
লালনের “মানুষ দর্শন” নজরুলের সাহিত্যকে আলাদা মর্যাদা দান করেছে। রবীন্দ্র বলয় ভেঙে উদিত হয়েছিলেন সূর্য-তেজ প্রখরতায় আলাদা নিজস্বতায়।
সাম্যবাদের কবি, প্রেমের কবি নজরুল জাতি, ধর্ম, গোষ্ঠির সব কিছুর উর্ধ্বে তাঁর সাহিত্যকে স্থান দিয়েছিলেন মানব প্রেম আর জাতীয়তাবাদী চিন্তা চেতনায়। গোটা বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদীরা যখন বন্দুকের নল উঁচিয়ে ব্যস্ত চর দখলের লড়াইয়ে তখন নজরুলের আবির্ভাব ভিত কাঁপিয়ে দেয় তাদের।
গোটা ভারতবর্ষ তখন গান্ধিজীর নেতৃত্বে অসহযোগ আন্দোলন নিয়ে ব্যস্ত, সাইমন কমিশন, ব্যঙ্গল প্যাক্ট, নেহেরু রিপোর্ট আবার পাশাপাশি রুশ বিপ্লব, প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর ইউরোপীয় বিপর্য্য় সব মিলিয়ে গোটা পৃথিবীতে চলছিলো এক অস্থিরতার লড়াই। মানবতার পতনের অস্থির সেই দিনগুলোতে বিদ্রোহের মন্ত্র নিয়ে ঝড়ো হাওয়ার মত এলেন কাজী নজরুল ১৯২১ সালে।
পরাধীনতা, ভারতবর্ষে উপর জেকে বসে থাকা বৃটিশ ভুত আর সাম্যবাদী চিন্তার শক্ত আঘাত আসে সৈনিক নজরুলের মনন আর চেতনার চৌকাঠে। একদিন সৈনিক জীবনের পাতা মুড়িয়ে বিদ্রোহী নজরুল চলে এলেন কলকাতায়। মোসলেম ভারত এবং বিজলীতে একযোগে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম অগ্নিঝরা কবিতা ’বিদ্রোহী’।
’মহা-বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেইদিন হবো শান্ত
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দনরোল
আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না,
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ
ভীম রণভুমে রণিবে না-
বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হবো শান্ত।’
” আপনারে ছাড়া কাহারে করি না কুর্নিস”। নজরুলের এই বিদ্রোহী মন্ত্রে জেগে উঠলো গোটা বাংলা। বৃটিশ রাজের লাল ইটের শক্ত দালানেও এই বিষাক্ত মন্ত্র বার বার ধাক্কা খেল । কবি গ্রেপ্তার হলেন , জেলে থাকা অবস্থায় গাইলেন -মোদের এই শিকল পরার ছল, মোদের এই শিকল পরার ছল ।এই শিকল পরেই শিকল তোদের করবো রে বিকল’ ১৯৩১ সালে নিষিদ্ধ হয় কবি নজরুল ইসলামের ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপে আর শ্ল্যাষেপূর্ণ কাব্যগ্রন্থ ’চন্দ্রবিন্দু’।
’ মসজিদ পানে ছুটিলেন মিঞা মন্দির পানে হিন্দু,
আকাশে উঠিল চির জিজ্ঞাসা করুন চন্দ্রবিন্দু”।
`চন্দ্রবিন্দু’ কাব্যগ্রন্থটি ছিল দেশাত্ববোধক তীব্র ব্যাঙ্গ বিদ্রুপে ভরা একটি কাব্যগ্রন্থ। বিশেষ করে বৃটিশদের পা চাটা দেশি সাহেবদের নিয়ে কৌতুক বিদ্রুপে মেশানো এই কাব্যগ্রন্থটি সেই সময়ে বেশ জনপ্রিয়তা পায়। ’চন্দ্রবিন্দুর’ প্রতিটি কবিতায় ব্যাঙ্গ আর বিদ্রুপের বিষয় ছিল লীগ অব নেশন, রাউন্ড টেবিল কনফারেন্স, সাইমন কমিশন রিপোর্ট, প্রাথমিক শিক্ষার বিল ইত্যাদি।
প্রকৃতপক্ষে ইংরেজ শাসকেরা আসলে কেমন এ ব্যাপারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর চিরদিন সংশয়ের দোলায় থাকলেও নজরুলের মধ্যে কোনোরূপ সংশয় কখনো কাজ করেনি: ‘স্বরাজ-টরাজ বুঝি না, …ভারতবর্ষের এক পরমাণু অংশও বিদেশীর অধীন থাকবে না।’ (নজরুল, ‘ধূমকেতুর পথ’, পৃ. ৪৬৪)
কাজী নজরুল ইসলামের লেখায় সাম্যবাদ –
কাজী নজরুল ইসলাম মূলত সাম্যবাদের কবি । সাম্যবাদের কবি বার বার মানুষের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন । যে দেশে হিন্দু মুসলিম দু যৌথ সংস্কৃতির লোকের বাস সেখানে তিনি বার বার ধর্মকে গৌণ করে মানুষকেই প্রধান করে তুলেছেন । নজরুল চেয়েছিলেন ধর্মের রেষারেষি থেকে মুক্ত হয়ে মানুষ সকল মানবতায় ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করুক ।
`স্রষ্টারে খোঁজো-আপনারে তুমি
আপনি ফিরিছ খুঁজে।
ইচ্ছা-অন্ধ! আঁখি খোলো, দেখ দর্পনে নিজ কায়া
দেখিবে, তোমারি সব অবয়বে পড়েছে তাঁহার ছায়া।’
মানুষের মধ্যেই সৃষ্টিকর্তার অধীষ্ঠান, এই নিয়ে তাঁর কোন সংশয় ছিল না , তিনি লিখতে পেরেছেন তাই –
গাহি সাম্যের গান , মানুষের চেয়ে নহে কিছু বড় , নহে কিছু মহীয়ান। আবার তাঁর কাছে পাপী তাপীর সংজ্ঞাও আলাদা । তিনি ঘোষনা দেন-
`যত পাপী-তাপী সব মোর বোন,সব মোর ভাই।’
কারণ, ‘আদম হইতে শুরু করে নজরুল তক সবে
কম-বেশি করে পাপের ছুরিতে জবেহ।’
তাই কবির দ্ব্যর্থহীন কন্ঠে সতর্কতা, ‘ধর্মান্ধরা শোন
অন্যের পাপ গনিবার আগে নিজের পাপ গোনো।’
তিনি বার বার গণমানুষের কাছে ফিরে এসেছেন –
‘তোমাতে রয়েছে সকল কেতাব,
সকল কালের জ্ঞান,
সকল শাস্ত্র খুঁজে পাবে সখা,
খুলে দেখ নিজ প্রাণ।
এই কন্দরে আরব-দুলাল শুনিছে আহ্বান,
এইখানে বসি, আবার লিখলেন সেই অসাধারণ বানী -মিথ্যা শুনিনি ভাই, এই হৃদয়ের চেয়ে বড়ো কোন মন্দির-কাবা নাই। ওরা মুসলিম ও জিজ্ঞাসে কোন জন/ কান্ডারী! বল ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মার..।’
আবার নজরুলের সমাজ-স্বপ্ন শ্রেণিনির্বিশেষ্য, ধনী-গরিব ভেদাভেদবিহীন, এবং সে অসম সমাজের প্রতি তাঁর গর্জন : “তুমি শুয়ে র’বে তেতালার ’পরে, আমরা রহিব নিচে, অথচ তোমারে দেবতা বলিব, সে-ভরসা আজ মিছে!” (‘কুলি-মজুর’, পৃ. ৬২)
এই পর্যন্ত নজরুল রাজনৈতিক, এই পর্যন্ত তিনি ‘ধূমকেতু’, ‘লাঙ্গল’ বা ‘নবযুগ’ পত্রিকার সম্পাদক, কিন্তু রাজনৈতিক-সচেতনতা উদ্ভূত মানসিক উজ্জীবনের বাইরেও নজরুলের অন্তরস্থ যে সত্তার খবর আমরা পাই সেটি একান্তভাবে মানিকিয়ান এই অর্থে যে বৈপরীত্য বা দ্বান্দ্বিকতার একটি দিক হলো ফেয়ার বা শুভ, এবং সেখানে নজরুল মানিকিয়ান তত্ত্বের একটি প্রত্যয়ে প্রোজ্বল, আর সেটি হলো তাঁর সত্যবোধ বা শুভবোধ বা ন্যায়বোধ বা সততা, বা কিছুটা রাজনৈতিক পরিভাষায় যা কি না তাঁর স্বাবলম্বিতা।
রবীন্দ্রনাথ যেমন মৃত্যুর মাস দুই আগে, ১৩ মে ১৯৪১-এ ‘রূপ-নারানের কূলে’ শীর্ষক কবিতায় লিখলেন ‘সত্য যে কঠিন, / কঠিনেরে ভালোবাসিলাম— / সে কখনো করে না বঞ্চনা’, নজরুল ‘আমার পথ’ শীর্ষক নিবন্ধে বলছেন, ‘আমার কর্ণধার আমি । আমায় পথ দেখাবে আমার সত্য ।’ (নজরুল, পৃ. ৪৫৯)
আধুনিক বাংলা গানের পঞ্চপান্ডব হিসাবে যাঁদের পরিগনিত করা হয়, তারা হলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮৬১-১৯৪১), দ্বিজেন্দ্রলাল রায় (১৮৬৩-১৯১৩), রজনীকান্ত (১৮৬৫-১৯১০), অতুল প্রসাদ ((১৮৭১-১৯৩৪), এবং কাজি নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬)।
এই পাঁচজন কবি বাংলা গানকে একটা শক্ত মজবুত ভিত্তি দিয়েছিলেন । চরম উতকর্ষতায় নিয়ে যান বাংলা গানকে ।বাংলা ভাষার রচিত গানকে যেভাবে বাণী আর সুরে প্রতিষ্ঠিত করে যান এরপর বাংলা রাগাশ্রিত গানের তেমন প্রচার আর প্রসার হয় নি । এদের মধ্যে বহুমুখী প্রতিভা নজরুলের ধূমকেতুর মত আবির্ভাব বাংলার শাস্ত্রীয় সংগীত জগতকে একটা শক্ত ভিতের উপর দাঁড় করায় ।তাঁর রচিত খেয়াল, ঠুংরি, টপ্পা, গজল, ভাটিয়াী ও মুরশিদীসহ প্রকার, ঢং ও আঙ্গিকে প্রায় তিন হাজার গান বাংলা ভাষার গানে অক্ষয় ও অমর হয়ে আছে।
‘বাগিচায় বুলবুলি তুই, ফুল শাখাতে দিসনি আজি দোল।’ সম্ভবত কাজী নজরুল ইসলামের প্রথম বাংলা গজল; যা রচিত হয়েছিল ১৩৩৩বঙ্গাব্দের ৮ অগ্রহায়ন।
১৯২৬ সালের শেষের দিকে এসে গজল রচনায় অধিক মনোনিবেশ করেন, যখন তিনি গ্রামোফোন কোম্পানীতে যোগদান করেন।
দেওয়ান হাফিজের একজন ভাবশিষ্য হিসাবে তাঁর গানের বাণী, ছন্দ ও সুর নজরুলের মনে বিপুল রেখাপাত করে। কাজী নজরুল ইসলাম হাফিজ দ্বারা কতটা প্রভাবিত হয়েছিলেন, তা তিনি তাঁর নিজের লেখনীতেই বর্ণনা করেছেন এভাবে ‘তাঁহার অর্থাৎ পারস্য কবি হাফিজের কবিতার অধিকাংশ গজল গান বলিয়া লেখা হইবা মাত্র মুখে মুখে গীত হইত। ধর্মমন্দির হইতে আরম্ভ করিয়া পানশালা পর্যন্ত সকল স্থানেই তাঁহার গান আদরের সহিত গীত হইত। হাফিজের গান অতল গভীর সমুদ্রের মতো কুলের পথিক যেমন তাহার বিশালতা, তরঙ্গলীলা দেখিয়া অবাক বিষ্ময়ে চাহিয়া থাকে, অতল তলের সন্ধানী ডুবুরি তাহার তলদেশে অজস্র মনিমুক্তার সন্ধান পায়। তাহার উপরে যেমন ছন্দ-নর্তন, বিপুল বিশালতা, তেমনি নিন্মে অতল গভীর প্রশান্তি মহিমা।’
বিশ্লেষণ ও উপলব্দি থেকেই হয়তো তার গজলে শেয়রের ব্যবহার হতো । তাঁর গজলের এই তালবিহীন শেয়র আমাদের হৃদয়কে গভীরভাবে স্পর্শ করে।
শিশুতোষ ছড়ায় কবিতায় নজরুল
কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের শিশুকিশোর সাহিত্যের অন্যতম মহীরুহ। জীবনের নানা দ্বন্দ্ব, সংঘাত ও পোড়নে তাঁর শৈশব কেটেছে। তথাপী শিশুতোষ ছড়া- কবিতা রচনায় নজরুল ছিলেন বৈচিত্র্য প্রয়াসী। ছন্দের পরীক্ষা- নিরীক্ষা, নতুন বিষয় নির্বাচন, এমনকি শৈলী নির্মাণেও নজরুল নিজস্বতার পরিচয় দিয়েছেন। নজরুলের শিশুকিশোর মাটিগন্ধি, সেই ক্ষেত থেকে উঠে আসা, সেই জলা থেকে উঠে আসা। তাঁর শিশুতোষ ছড়া কবিতায় শুধু শিশুদের কৌতূহল নয়, বরং তাদের বঞ্চনা, লাঞ্চনা ও উৎপীড়নের কথাও উঠে এসেছে। তাঁর বিখ্যাত শিশুতোষ ছড়ার বই ‘ঝিঙেফুল’।
আমি হব সকাল বেলার পাখি
সবার আগে কুসুম বাগে উঠব আমি ডাকি
সূর্য্যমিামা জাগার আগে উঠব আমি জেগে
‘হয়নি সকাল ঘুমো এখন’ মা-বলবেন রেগে
(খোকার সাধ, কাজী নজরুল ইসলাম)
কিংবা-
মাগো! আমায় বলতে পারিস
কোথায় ছিলাম আমি
কোন-না জানা দেশ থেকে তোর কোলে এলাম নামি?
আমি যখন আসিনি, মা তুই কি আঁখি মেলে
চাঁদকে বুঝি বলতিস
-ঐ ঘরছাড়া মোর ছেলে?
শুকতারাকে বলতিস কি আয়রে নেমে আয়
তোর রূপ যে মায়ের কোলে বেশী শোভা পায়
(কোথায় ছিলাম আমি/কাজী নজরুল ইসলাম)
নজরুলের বেশির ভাগ ছড়া কবিতাই সংলাপ প্রধান। সংলাপ প্রধান ছড়াকবিতার মাধ্যমে শিশুরা নিজেরাই এতে একা হতে পারে, খুকী ও কাঠবেড়ালী কবিতায় খুকী কাঠবেড়ালীর সাথে যেভাবে কথা বলে শিশুদের এই মানসিক প্রবণতা ধরতে হলে নিজেকে শিশু হিসেবে আবিষ্কার করার একটা ব্যপার থেকেই যায়।
কাঠবেড়ালি! কাঠবেড়ালি পেয়ারা তুমি খাও?
গুড় মুড়ি খাও? দুধভাত খাও?
বাতাবি লেবু? লাউ? বেড়াল-বাচ্চা? কুকুর ছানা? তাও?
ডাইনি তুমি হোৎকা পেটুক?
খাও একা পাও যেথায় যেটুক!
(খুকি ও কাঠবিরালি, কাজী নজরুল ইসলাম)
কিংবা-
ও ভাই কোলাব্যাঙ
ও ভাই কোলাব্যাঙ
সর্দি তোমার হয় না বুঝি
ও ভাই কোলা ব্যাঙ
সারাটি দিন জল ঘেঁটে যাও
ছড়িয়ে দুটি ঠ্যাঙ।
(ও ভাই কোলাব্যাঙ, কাজী নজরুল ইসলাম)
নজরুলের ছড়ায় রয়েছে বহুমাত্রিক বৈচিত্র্য । বৈচিত্র্য বিশেষ করে ছন্দ ও শৈলীতে।
ঠ্যাং চ্যাগাইয়া প্যাঁচা যায়
যাইতে যাইতে খ্যাঁচখ্যাচায়
প্যাঁচায় গিয়া উঠল গাছ
কাওয়ারা সব লইল পাছ
প্যাঁচার ভাইস্ত কোলাব্যাঙ
কইল চাচা দাও মোর ঠ্যাং
প্যাঁচায় কয় বাপ, বাড়িতে যাও
পাছ লইছে সব হাপের ছাও
ইঁদুর জবাই কইর্যাপ খায়
বোঁচা নাকে ফ্যাচফ্যাচায়।
(প্যাঁচা,কাজী নজরুল ইসলাম)
পরিশেষ
কবি কাজী নজরুল ইসলাম দীর্ঘায়ু হলেও তাঁর সাহিত্য জীবন মাত্র ২৩ বছরের । এই স্বল্প সময়েই তিনি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করে গেছেন । তাঁর বহুমুখী প্রতিভায় মুগ্ধ হয়েই আচার্য প্রফুল্য চন্দ্র রায় ও নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু তাঁকে অবিভক্ত বাংলার কবি হিসাবে অভিহিত করেছেন ।
বধির হয়ে যাবার আগে অনেক কষ্ট নিয়ে লিখেছিলেন……
তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু, আর আমি জাগিব না,
কোলাহল করি’ সারা দিনমান কারো ধ্যান ভাঙিব না |
– নিশ্চল নিশ্চুপ আপনার মনে পুড়িব একাকী গন্ধবিধূর ধূপ !- (বাতায়ন-পাশে গুবাক-তরুর সারি)
নজরুল কোন বিশেষ সম্প্রদায়ের কবি নন, তিনি সমগ্র বিশ্বের শোষিত মানুষের পক্ষে সারা জীবন লড়ে গেছেন ।তিনি সমগ্র মানবতার কবি, সাম্যবাদের কবি মানুষের কবি। লেখক : নাজমুন নাহার, কবি ও প্রফেসর