সাড়ে ৫শ’ বছর আগের মসজিদ

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মসজিদের শহর হিসেবে ঢাকার সুখ্যাতির বিষয়টি বেশ পুরনো। বৃহৎ এই নগরীতে অসংখ্য মসজিদ রয়েছে। যার বেশির ভাগই ঐতিহাসিক আমলের।

ঐতিহাসিক আমলের ঠিক কতটি মসজিদ রাজধানীতে রয়েছে তার সঠিক সংখ্যা না জানা গেলেও ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ববিদের মতান্তরে এর সংখ্যা অন্তত ২০টি হবে। অবশ্য এগুলোর সবই কম-বেশি সংস্কার করা হয়েছে।

বর্তমানে ঢাকায় খুঁজে পাওয়া সবচেয়ে পুরাতন মসজিদটি সাড়ে ৫শ’ বছর আগে নির্মিত হয়। এছাড়াও মুঘল, নবাবি ও ইংরেজ শাসনামলে নির্মিত অনেক মসজিদ রয়েছে।

প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও ইন্টারনেট থেকে খুঁজে রাজধানীর ঐতিহাসিক মসজিদগুলো সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এছাড়াও ঢাকার ঐতিহাসিক মসজিদ বিষয়ে বিভিন্ন লেখকের বই রয়েছে। ইতিহাসের অনেক বইয়েও বিভিন্ন মসজিদের কথা রয়েছে। সম্প্রতি এ রকম কয়েকটি মসজিদ পরিদর্শন করে বিস্তারিত জানা গেছে।

বিনত বিবির মসজিদ :

এই মসজিদের অবস্থান নারিন্দায়। ঢাকার প্রথম মসজিদ হিসেবেই পরিচিত মসজিদটি। সুলতানি আমলে ১৪৫৭ সালে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। মসজিদের দুটো গম্বুজের মধ্যে একটির গায়ে প্রতিষ্ঠার সাল লেখা রয়েছে। অপর গম্বুজের লেখা অনুযায়ী ১৩৩৭ বঙ্গাব্দে বা ১৯৩০ সালে ভবনটিতে প্রথম সংস্কার করা হয়।

ঐতিহাসিক আহমদ হাসান দানী মসজিদটি সম্পর্কে তার এক বইয়ে লিখেছেন, ‘এটি সুলতানি আমলে নাসির উদ্দিন মাহমুদের রাজত্বকালে (১৪৩৫-১৪৫৯ সাল) নির্মিত হয়। নারিন্দা রোডের এই মসজিদ নির্মাণ করেন মারহামাতের মেয়ে মুসাম্মত বখত বিনত। মূলত তার নামেই মসজিদটির নামকরণ হয়েছে বিনত বিবির মসজিদ।

লালবাগ মসজিদ :

ঢাকার আরেকটি ঐতিহাসিক মসজিদ হলো লালবাগ কেল্লা মসজিদ। শাহজাদা মোহাম্মদ আজম মসজিদটি ১৬৭৯ সালে নির্মাণ করেন। তিন গম্বুজবিশিষ্ট মসজিদের পরিমাপ ৬৫৩২.৫০ বর্গফুট। দুর্গ অভ্যন্তরে মসজিদটির দৈর্ঘ ৬৫ ফুট ও প্রস্থ ৩২.৫ ফুট। মসজিদের চারকোণের চারটি অষ্টাকোণ মিনারের শীর্ষ দেশ ইট-সুড়কিতে তৈরি নিরেট ছোট গম্বুজ দ্বারা সুশোভিত। মসজিদের পূর্ব দিকের তিনটি দরজার মধ্যে মধ্যবর্তী দরজা আয়তনে বড় ও দুই পাশের বাইরের দিকে কিছুটা গাছ এবং মিনার দ্বারা বষ্টিত।

সাত গম্বুজ মসজিদ :

ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত সাত গম্বুজ মসজিদ। মুঘল আমলে নির্মিত মসজিদটিতে চারটি মিনারসহ সাতটি গম্বুজের কারণেই এমন নামকরণ করা হয়েছে। ১৬৮০ সালে মোগল সুবাদার শায়েস্তা খাঁ এর আমলে তার ছেলে উমিদ খাঁ মসজিদটি নির্মাণ করান। ঢাকার মোহাম্মদপুরে কাটাসুর থেকে বাঁশবাড়ী হয়ে শিয়া মসজিদের দিকে যাওয়ার রাস্তাতেই পড়বে মসজিদটি।

মসজিদের ভেতরে ৪টি কাতারে প্রায় ৯০ জন নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের পূর্বপাশে রয়েছে একটি সমাধি। সমাধিটি ‘বিবির মাজার’ বলেই পরিচিত। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর এটি দেখা-শোনার দায়িত্বে আছে।

কুলুটোলা মসজিদ :

১৮১০ সালে মসজিদে মুফতী-এ আযম নামে বর্তমান সূত্রাপূরের কুলুটোলায় নির্মিত হয় এই মসজিদটি। পরে এর নামকরণ করা হয় কুলুটোলা মসজিদ। বাহাদুর আকবরে শাহ সানীর (দ্বিতীয়) যুগে এটি নির্মাণ করা হয়।

চুড়িহাট্টা মসজিদ :

পুরান ঢাকার উমেশ চন্দ্র দত্ত লেন ও হায়দার বকশ লেনে চুড়িহাট্টা মসজিদ অবস্থিত। ঐতিহাসিক তথ্যমতে মসজিদটি ৩৬৭ বছর পুরনো। অবশ্য মসজিদটি সংস্কার করে নবরূপ দেয়া হয়েছে।

ড. দানীর মতে, মসজিদটির পূর্বদিকে ৩টি দরজা ছিল। সামনের দিকটা বিভিন্ন আয়তাকৃতি আর কার্ণিশ দ্বারা অলঙ্কৃত ছিল। সামনের দেয়াল প্যানেল দ্বারা অলঙ্কৃত ছিল।

হাজী শাহাবাজের মাজার ও মসজিদ :

রমনা এলাকায় এই মসজিদের অবস্থান। মোগল শাসনামলে ১৬৭৯ খ্রিস্টাব্দে এটি নির্মিত হয়। মসজিদটি হাইকোর্টের পিছনে এবং তিন নেতার মাজার এর পূর্বপার্শ্বে অবস্থিত। এর চত্বরে হাজী শাহবাজের সমাধি অবস্থিত। দৈর্ঘ্যে মসজিদটি ৬৮ ফুট ও প্রস্থে ২৬ ফুট। এতে তিনটি গম্বুজ রয়েছে।

অধ্যাপক মুনতাসীর মামুনের মতে, হাজী শাহবাজ ছিলেন একজন অভিজাত ধনী ব্যবসায়। ১৬৭৯ সালে তিনি জীবিত থাকাকালেই এই মসজিদ ও নিজের মাজার নির্মাণ করেন। তৎকালে সুবাহদার ছিলেন শাহজাদা মুহম্মদ আজম।

মুসা খা মসজিদ :

ঢাকার কার্জন হলের পাশে তিন গম্বুজ বিশিষ্ট একটি মসজিদ রয়েছে। ২ হাজার বর্গফুট আয়তনের মুসা খা মসজিদটি অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে নির্মান করা হয়।

হাজী খাজা শাহবাজ মসজিদ :

১৬৭৯ সালে নির্মাণ করা হয় হাজী খাজা শাহবাজ মসজিদ। এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অবস্থিত। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত ঢাকা নগরীর মসজিদ নির্দেশিকা হতে জানা যায়, ১৬১২ সালে ঢাকার জিন্দাবাহার কামরাঙ্গা মসজিদ নির্মাণ করা হয়। মসজিদের গম্বুজ কামরাঙ্গাকৃতির বলে এরূপ নাম। এর আয়তন ১৫শ বর্গফুট। আয়তন ৯০০ বর্গফুট।

এছাড়াও ১৫৫৭ সালে নির্মিত একটি মসজিদ রয়েছে ধোলাইখালে। এইচ কে দাস রোডে মসজিদটি নির্মাণ করেন মমতাজ বিবি। মসজিদটি ১২শ বর্গফুট আয়তনের।

ঢাকার তারা মসজিদ, নবাববাড়ী মসজিদ, কারওয়ান বাজার মসজিদ, সাত রওজা মসজিদ ও ধানমন্ডি ঈদগাহ্ জামে মসজিদসহ আরো বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক মসজিদ রয়েছে বলেও জানা গেছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর