হাওর বার্তা ডেস্কঃ নুসরাত ইমরোজ তিশা―গানের শিল্পী হিসেবেই নতুনকুঁড়িতে যুক্ত হয়েছিলেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই পরিচয় কেউ হয়তো আর সেভাবে মনে রাখেনি। কারণ সেই সময়ের গানের তিশা হয়ে গেছেন পুরোদস্তুর অভিনয়শিল্পী। টিভি নাটকে কিংবা চলচ্চিত্র, দুই ক্ষেত্রেই তিনি নায়িকা হিসেবে প্রথম সারিতে আছেন। মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ছায়াছবি ‘থার্ড পারসন সিঙ্গুলার নাম্বার’ ও ‘টেলিভিশন’ তিশাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। মুক্তির মিছিলে থাকা একই পরিচালকের ‘ডুব’ ছবিতে তার সহশিল্পী বলিউডের ইরফান খান। নতুন এই চলচ্চিত্র ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে তিশার মুখোমুখি হয় ঢাকাটাইমস। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সৈয়দ ঋয়াদ
‘ডুব’ ছবি তো সেন্সর পেল।
‘ডুব’ সেন্সর পেয়ে গেছে, মুক্তিও পেতে যাচ্ছে। প্রত্যাশা অনেক বেশি। দর্শকরাও এই ছবিটা দেখার জন্য প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে। তাদের সঙ্গে আমিও অপেক্ষায় আছি।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ‘ডুব’ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। একাধিক উৎসবে এই সিনেমা মনোনয়ন পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ‘ডুব’ নিয়ে যে ধরনের সাড়া পড়েছে সেজন্য অবশ্যই আল্লাহর কাছে হাজারো শুকরিয়া। প্রযোজকদের উদ্যোগ, দেশের বাইরেরও অনেকের উদ্যোগ আছেÑ সবার প্রচেষ্টা সার্থক হয়েছে। এই ফিল্ম রিলিজের পর বাইরের দেশের মানুষ আরো বেশি করে আমাদের এখানকার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি সম্পর্কে জানতে পারবে। তারা এখানে সিনেমা করতে আগ্রহী হবে। সবকিছু মিলিয়ে ডেফেনেটলি দেশের জন্য একটা ভালো কাজ ‘ডুব’।
ইরফান খানের সঙ্গে অভিনয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে কী বলবেন?
তিনি একজন অসাধারণ অভিনেতা। তার সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। অনেক বেশি অভিজ্ঞ। তাদের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করলে অনেক কিছু শেখা যায়। আর স্ক্রিপ্টটা তিনি পছন্দ করেছেন। উনি কিন্তু প্রডিউসও করেছেন।
নিয়মিত যারা কাজ করছেন, তাদের মধ্যে একদিকে জাহিদ হাসানণ্ডচঞ্চলণ্ডমোশাররফ। বিপরীত দিকে তিশা। কীভাবে দেখেন?
এভাবেই ভাবি নাই। আমি আসলে এটা ফিক্সড, এটা মানি না বলছি না। তবে এটা বিশ্বাস করি না। আমি কিন্তু আমার কাজটাই করি। আর বিশ্বাস থেকে কেউ আমাকে সরাতে পারেনি, আমি সব সময় চাইছি ভালো কাজ করতে। ভালো স্ক্রিপ্টে কাজ করতে চাইছি। আমি আমার দর্শকদের ঠকাতে চাইনি। আমি সিঙ্গেল সিকুয়েন্সেও নিজের বেস্টটা দিতে চেষ্টা করি। আমার বড় শক্তি আমার দর্শক। তাদের দোয়ায় এবং পরিবারের সাপোর্টে আজকের আমি।
দর্শকের ভালোলাগার দিকটি বিবেচনায় তিশা কী অপ্রতিদ্বন্দ্বী?
আমি তাদের কাছে অনেক বেশি কৃতজ্ঞ। কেউ একজন যখন বলে তোমার কাজটা আমার ভালো লেগেছে, কিংবা মা তোমার অভিনয় আমার ভালো লাগে। এটা আমার জন্য আশীর্বাদ। আমিও তাদের অনেক ভালোবাসি। এত ভালোবাসার মূল্য এক জীবনে সত্যি অনেক আনন্দের। এই ভালোবাসার ঋণ শোধ করতে পারব না। দর্শক পছন্দ করে এটা আল্লাহর মেহেরবানি। মানুষের ভালোবাসা পাওয়া ভাগ্যের ব্যপার। এখানে আমি কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করি না।
হাস্যণ্ডরসাত্মক নাকি সিরিয়াস, কোন ধরনের গল্পে কাজ করতে ভালো লাগে?
আমি আসলে এভাবে কোনো স্পেসিফিক ক্যাটাগরির নাটক করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি বলব না। আমি ভালো স্ক্রিপ্ট হলে সব ধরনের নাটকেই কাজ করতে পছন্দ করি। এটা হতে পারে সিরিয়াস, কমেডিও। যেকোনো ধরনের হতে পারে। তবে আমার পছন্দ হলে এবং কাজটা আমি এনজয় করি সে কাজগুলোই করি।
সবাই যখন ফেসবুকে হাবুডুবু খাচ্ছে তখনো তিশার ফ্যানপেইজ নেই, জনপ্রিয় এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে অনীহা কেন? দেরি করে ফ্যানপেইজ খুলেছেন কেন?
আমি প্রচার প্রমোশন বা খুব বেশি সোশ্যাল না। ফেসবুকে থাকা মানে কে কি করছে, না করছে সব দেখা। নিজে কি করছি সেটা জানান দেওয়া। এটা আমার কাছে বারডেন মনে হয়। কে কি করছে না করছে আই এম নট কনসার্ন অ্যাবাইট দ্যাট, আই এম কনসার্ন অ্যাবাউট, আমি কি করছি। আমি নিজে কি করছি সেটা নিয়ে আমার কনসার্ন। এই জন্যই আমি চাইনি ফেসবুকে আসতে। আর এই সময়ে এসে আমার দর্শকদের চাপে এটা করা হয়েেেছ। তারা আমার কাজ সম্পর্কে জানতে চায়। এজন্যই এটা করা। পপকর্ন, ফারুকী এটা দেখবে আমি সময় পেলে বসব। আমি শুধু প্রশ্নের উত্তরগুলো দেই।
কাজের বাইরে ফারুকী ভাই তো আপনার লাইফ পার্টনার।
আমি খুব ভাগ্যবান তাকে স্বামী হিসেবে পেয়েছি। আমার কাজের পেছনে যে ইন্সপাইরেশন, যে সাহস বা সাপোর্টটা দরকার, একজন স্বামী বা মানুষ হিসেবে সেটা আমাকে সে সব সময় করে। আই এম সো লাকি টু হ্যাভ হিম। শুধু ফারুকী না, তার পুরো পরিবার আমাকে যে সাপোর্টটা করে সেটা আমার জন্য অনেক বড় ব্যাপার। আমি হয়তো কখনো কোনো পুণ্য করেছিলাম বলেই আই গট সাচ এ লাভলি হাজবেন্ড। আমি কোনো স্ক্রিপ্ট পড়ে হয়তো বলেছি আমি এই কাজটা করব না। সে বলে এটা আবার পড়। এই সাপোর্টটা আমি তার কাছে পাই।
নির্মাতা ফারুকীকে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?
ডিরেক্টর হিসেবে ও যেই উদ্যোগগুলো নিচ্ছে, ওগুলো কখনো নিজের জন্য ও নেয় না। দেশের জন্য, দেশের চলচ্চিত্রের জন্য, তরুণ নির্মাতাদের জন্যই নানা রকম উদ্যোগ নিচ্ছে। আমি এটাকে এপিসিয়েট করি। আমি মনেপ্রাণে চাইব ও যেন এভাবেই কাজ করে। এ রকমই থাকে। দেশকে, দেশের তরুণ ফিল্ম মেকারদের যেভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার সেভাবেই কাজ করুক। আমি কাছ থেকেও সেই সাপোর্টটা তাকে করে যাব।
আবার একটি ঈদ গেল। সেই খণ্ড নাটক, ছয়ণ্ডসাত পর্বের বিশেষ ধারাবাহিক। বেশিরভাগ গল্প হাস্যণ্ডরসাত্মক। একঘেয়ে লাগে না?
আমার কাছে মনে হয় সিকুয়ালগুলো ভালো হচ্ছে বলেই দর্শকরা দেখছে। তার জন্য চ্যানেলগুলো এই ধরনের সিকুয়াল করছে। আর এতগুলো চ্যানেলে সবাই যদি নাটকে একটি ম্যাসেজ দিতে চায়, তাহলে মানুষ কয়টা ম্যাসেজ নিবে। মানুষ তো বিরক্ত হয়ে যাবে। আমি যখন গার্মেন্টের একটা মেয়ের ভূমিকায় অভিনয় করি তখন সবাই মনে করবে জীবনটা বুঝি এমনই। আবার একটা রোমান্টিক নাটকে অভিনয় করি তখন তরুণণ্ডতরুণীরা মনে করবে এটাই বুঝি জীবন। বিষয়গুলো আলাদা। আর মানুষ অল্প সময়ের জন্য সিরিয়াস হওয়ার চেয়ে মজা করতেই পছন্দ করে। তবে আমি চাইব ডিরেক্টর হোক আর টিভি মালিক কিংবা এজেন্সি সবাই যেন ভালো কাজগুলোকেই প্রমোট করে। আর একজন অভিনেত্রী হিসেবে আমার ডায়েরিতে সব কাজই কিন্তু থাকবে। ফানি, রোমান্টিক, সিরিয়াসÑ সব ধরনের কাজ।
আজকাল একটা অভিযোগ আসে, কেউ নাকি পাণ্ডুলিপি দেখে না, পড়ে না। আপনার স্টাইল কী?
এটা আসলে ডিপেন্ড করে। আমি যখন নতুন কোনো ডিরেক্টরের কাজ করি, তার স্ক্রিপ্ট দুইণ্ডতিনবার পড়ি। কারণ আমি তাকে চিনি না, তার কাজের ধরনও জানি না। এমন যদি হয় এমন ডিরেক্টর যাদের সঙ্গে আমি বহুদিন ধরে কাজ করছি, তাদের ক্ষেত্রে ভিন্ন। তারা আমাকে গল্পের লাইনআপ, স্ক্রিপ্টের সিনোপসিস, কস্টিউম সম্পর্কে ডিটেইল একটা ধারণা দিয়ে দেয়। আমি সেটে আসলে হয়তো স্ক্রিপ্ট পেলাম। কিন্তু এটা একেবারেই হাতেগোনা তিনণ্ডচারজন ডিরেক্টরের বেলায় এটা হয়। যেহেতু আমি ডিরেক্টরস আর্টিস্ট। স্পটে ডিরেক্টর যেভাবে বলে আমি সেভাবেই করি।
মুক্তি না পেলেও বেশ কয়েকটি ছবির কাজ শেষ করেছেন। নতুন কোনো কাজ হাতে নিয়েছেন?
‘ডুব’ আসছে। সেই সঙ্গে তৌকির আহমেদের ‘হালদা’র কাজও শেষ। ওটাও রিলিজ হবে। চ্যানেল আইয়ের আরও একটা সিনেমা আমি পাওলি আর পরমব্রত করছি। এটা অর্ধেক শেষ। মানে হাফ ডান হয়ে আছে। আরও দুণ্ডতিনটা ফিল্ম নিয়ে কথা চলছে। কয়েকটি ফিল্মের স্ক্রিপ্টও হাতে আছে, সেগুলো পড়ছি। আমি একটু আইলসা তো (হেসে)। হয়তো শিগগিরই নতুন সিনেমার খবর জানাতে পারব কি না জানি না।