ভবিষ্যৎ নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আস্থা নেই বিএনপির

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামী জাতীয় নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, নির্বাচনের দায়িত্বে থাকবে নির্বাচন কমিশন। তারাই সব করবে। যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকা প্রধানমন্ত্রী ভয়েস অব আমেরিকার বাংলা বিভাগকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, আমরা যে কাজ করেছি তাতে জনগণ যদি খুশি হয় ভোট দেবে। না হলে দেবে না। মানুষ পছন্দমতো লোককেই নির্বাচন করবে। প্রধানমন্ত্রীর এ সাক্ষাৎকার প্রচারের পর বিএনপির পক্ষ থেকে প্রতিক্রিয়া এসেছে। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তার দল প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য বিশ্বাস করে না। কারণ অতীতে আওয়ামী লীগ সুষ্ঠু নির্বাচনের উদাহরণ তৈরি করতে পারেনি। তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্য দেশবাসীর সঙ্গে বিশ্ববাসীর কাছেও হাস্যকর। কারণ এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের অধীনে যতো নির্বাচন হয়েছে এর সব ক’টি ছিল ‘নিখুঁত সরকারি সন্ত্রাস’ নির্ভর। তার ভাষায় ‘জোর করে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, জালভোট প্রদানসহ ভোটারদেরকে ভয়ভীতি প্রদর্শণমূলক নির্বাচনে পারদর্শী আওয়ামী লীগ’। মূলত প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাব দিতেই নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন রিজভী। এর আগেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেছেন, আগামী নির্বাচন অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে সংবিধান অনুযায়ী শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন হবে। নির্বাচনকালীন সময়ে নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব পালন করবে। তবে বিএনপির দাবি নির্বাচনকালীন সময়ের জন্য সহায়ক সরকার। সামনে দলটির পক্ষ থেকে সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেয়া হবে বলেও দলটির নেতারা জানিয়েছেন। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যেও এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
ভয়েস অব আমেরিকায় প্রচারিত সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা ইস্যু, আসন্ন নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন। নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জাতির পিতার হত্যার পর নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। যারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছেন, তারাই নির্বাচন প্রক্রিয়াটাকে ধ্বংস করেন। আমরা দিনের পর দিন আন্দোলন-সংগ্রাম করে গণতান্ত্রিক ধারাটা আবার ফিরিয়ে এনেছি। আজ নির্বাচন যত সুষ্ঠু হচ্ছে, মানুষ ভোট দিতে পারছে- এটা আমাদের অবদান। মানুষ তার পছন্দমতো লোককেই নির্বাচন করবে। আমরা সেটাই চাই। নির্বাচন প্রক্রিয়া আমরাই উন্নতি করেছি।
তিনি বলেন, আমাদের সরকারের আমলে যতগুলো নির্বাচন হয়েছে, প্রত্যেকটি অবাধ, নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু হয়েছে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তো বিএনপির প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন যদি আমাদের আমলে না-ই হতো, তাহলে কি বিএনপি জিততে পারত? বিএনপির আমলে কি কেউ জিতেছে?
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য হাস্যকর- বিএনপি: নির্বাচন প্রসঙ্গে দেয়া প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে হাস্যকর ও ধাপ্পাবাজি বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, মানুষের ভোটাধিকার হরণকারী প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তা শুধু নিজ দেশবাসীর কাছেই নয়, বিশ্ববাসীর কাছেও এটি হাস্যকর এবং ধাপ্পাবাজিমূলক বক্তব্য বলে গণ্য হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, তাহলে বাকশাল নামক জিনিসটি কী? রিজভী বলেন, আসলে শেখ হাসিনার সংজ্ঞানুযায়ী গণতন্ত্র বলতে বুঝতে হবে সব দলের কর্মকাণ্ড বন্ধ করে দিয়ে একক কর্তৃত্বে একমাত্র দল দেশ চালাবে। যেখানে ভিন্ন মত থাকবে না, গণমাধ্যম সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে থাকবে, নির্বাচনের অর্থ হবে ভোটকেন্দ্র ভোটারবিহীন শ্মশানভূমি, নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীবিহীন। তিনি বলেন, এই সংজ্ঞার সঙ্গে একমতকারীদেরই প্রকৃতপক্ষে জনগণ বলে প্রধানমন্ত্রী বিশ্বাস করেন। সরকারের বিরুদ্ধে ভিন্নমত পোষণকারীদের তিনি জনগণের অংশ বলে মনে করেন না। রিজভী বলেন, ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত তাদের অধীনে যত নির্বাচন হয়েছে সবই ছিল নিখুঁত সরকারি সন্ত্রাসনির্ভর। বারবার বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে নির্বাচন কমিশনকে করা হয়েছে সরকারের রাবারস্ট্যাম্প। রোববার অনুষ্ঠিত একটি নির্বাচনের উদাহরণ দিয়ে রিজভী বলেন, চট্টগ্রামের নবগঠিত কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার খারেরা ইউনিয়ন এবং রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ও রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনকে ঘিরে সরকারদলীয় সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম্য ও বেপরোয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে নির্বাচনী এলাকাগুলোতে ভোটারদের মধ্যে চরম ভীতির সৃষ্টি করে। সকাল থেকেই তিন জেলার নির্বাচনী এলাকাগুলোর সব ভোটকেন্দ্র সন্ত্রাসীরা পেশীশক্তির জোরে দখলে নিয়ে নেয়। প্রতিপক্ষের এজেন্টদের মারধর করে ভোটকেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়। স্থানীয় নির্বাচন কর্মকর্তা ও প্রশাসনের কাছে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করলেও তারা কোনো ব্যবস্থা নেয়া দূরে থাক, সম্পূর্ণভাবে নীরব ও নির্বিকার থেকেছে।
রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে হবে: ভয়েস অব আমেরিকাকে দেয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা ইস্যুতেও কথা বলেন। তিনি বলেন, আমার কথাটা স্পষ্ট, যারা মিয়ানমার থেকে এসেছে তাদেরকে সসম্মানে ফিরিয়ে নিতে হবে। তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে এবং তারা যেন ভালোভাবে ফিরে যেতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমার সরকারের ওপর যেন সেই চাপটা দেয়া হয়, যেন তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এটাই হচ্ছে মূলত আমার কথা। আর দ্বিতীয়তটা হচ্ছে, যেহেতু সেখানে এমন একটা অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তারপর তারা আশ্রয় চেয়ে আমাদের এখানে চলে এসেছে। মানবিক কারণে আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি। এখানে ছোট ছোট শিশু, মহিলা, বয়োবৃদ্ধ চলে এসেছে। এদের গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। ঘরবাড়ি পোড়ানো হয়েছে, মানুষ হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি ও আমার ছোট বোন রেহানাসহ (শেখ রেহানা) অনেকেই সেখানে গিয়েছি। মা-বাবা-বোনকে মেরে ফেলা হয়েছে, এরকমও আছে। ফলে কেউ হয়তো একেবারেই চলে এসেছে এতিমের মতো। কেউ হয়তো দাদা-দাদির সঙ্গে চলে এসেছে। একেবারেই অমানবিক অবস্থা। এ অবস্থায় আমরা তাদের আশ্রয় দিতে সাধ্যমতো চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু আমি মনে করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর আরো বেশি চাপ দিক, যেন তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়। তাদের পুনর্বাসন করে এবং নিরাপত্তা দেয়।
শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার সরকারকে আমরা সব সময় একটা কথা বলেছি, তাদের দেশে কেউ যদি কখনও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে চায়, বাংলাদেশ কখনও তাদের স্থান দেবে না। এ ক্ষেত্রে দুই দেশের সমঝোতা থাকা এবং আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। আর এ ধরনের কোনো তথ্য থাকলে আমরা একে অপরকে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করব। কিন্তু তাদের নিরীহ নাগরিকদের ওপর অত্যাচার- এটা যেন না হয়। এটা সম্পূর্ণ মানবতাবিরোধী। এটা বন্ধ করতে হবে।
জাতিসংঘে গিয়ে অনেকের সঙ্গে কথা বলেছেন, দেখা হয়েছে- কাদের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বেশি সমর্থন পাচ্ছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি প্রত্যেকের কাছ থেকেই ভালো সমর্থন পেয়েছি। প্রত্যেকেই এ বিষয়টি জানার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন এবং সবাই সহযোগিতা করতে চান। ইতিমধ্যে অনেক দেশ রোহিঙ্গাদের জন্য আমাদের দেশে ত্রাণ পাঠিয়েছে। এ ব্যাপারটিতে প্রত্যেকেই সহানুভূতিশীল।
যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের সমর্থন পাওয়ার বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, তারাও এ ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত। তারাও বলেছে, এ ব্যাপারে সহযোগিতা করবে। ইতিমধ্যে তারা বেশকিছু পদক্ষেপও নিয়েছে। ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় শরণার্থী সমস্যার বিষয়টি উল্লেখ করেন বলেও জানান বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।
আঞ্চলিকভাবে বড় শক্তি ভারত এবং চীন। এ ইস্যুতে তারা কেমন সহযোগিতা করছে। এর উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, ভারত এ ব্যাপারে খুবই সহানুভূতিশীল। তারা সহযোগিতা করছে। চীনের কাছ থেকেও আমরা সে ধরনেরই সাড়া পাচ্ছি। জাতিসংঘ মহাসচিবও বলেছেন, এ ব্যাপারে তাদের যা যা করা প্রয়োজন, তারা তা করবেন।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর