শ্রীলঙ্কার মেয়ে। রাতে খবর পড়তেন টিভিতে। সেখান থেকে বলিউডের অন্যতম গ্ল্যামারাস হিরোইন। জ্যাকলিন ফার্নান্ডেজ। জুহু বিচ-এর ধারের এক পাঁচতারা হোটেলে তার সঙ্গে আড্ডায় ইন্দ্রনীল রায়
সমানে শ্রীলঙ্কান এয়ারওয়েজের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে চলেছেন। ইন্টারভিউ দিয়েই নাকি উড়ে যেতে হবে কলম্বো। এক হাতে চিরুনি আর অন্য হাতে লাল নেলপলিশ পরতে পরতে শুরু হল আড্ডা…
এত বার ফোন করছেন এয়ারলাইন্সের অফিসে। কোনও এমার্জেন্সি?
আপনার সঙ্গে ইন্টারভিউয়ের আগেই খবর পেলাম এক ক্লোজ আত্মীয় খুব অসুস্থ। ইন্টারভিউ শেষ করেই এয়ারপোর্ট পৌঁছতে হবে। থাকতেই হবে ফ্যামিলির পাশে…
তা হলে ইন্টারভিউটা পরে করি?
না না, তা কেন? শো মাস্ট গো অন। আপনারও তো ডেডলাইন আছে। সেটাও রেসপেক্ট করা উচিত…
সেলেবরা কিন্তু জার্নালিস্টদের কথা এত ভাবে না। এটা কি নিজে সাংবাদিক ছিলেন বলে?
(হাসি) হতে পারে। চার বছর অ্যাক্টিভ জার্নালিজম করেছি। বুঝতে পারি…
ছোটবেলা থেকেই কি সাংবাদিক হতে চেয়েছিলেন?
আসলে আমি শ্রীলঙ্কান হলেও ছোটবেলা কেটেছে বাহরিনে। ওখানে তো সিনেমার কোনও চল নেই। তাই ছোটবেলায় যখনই বলতাম অভিনেত্রী হতে চাই, আমার মিডল ক্লাস শ্রীলঙ্কান ফ্যামিলি বলত আর ইউ ম্যাড? ধীরে ধীরে বুঝলাম এটা হয়তো সত্যি অবান্তর চিন্তা। আমার মা ওখানে একটা খবরের কাগজে অ্যাডভার্টাইজিং ডিপার্টমেন্টে কাজ করত। তাই ছোটবেলা থেকে ডেডলাইনস, বাইলাইনস, রিলিজ অর্ডার এই শব্দগুলো শুনতাম। শুনতে শুনতেই প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম জার্নালিজমের। বাহরিন থেকে সিডনি চলে যাই মিডিয়া স্টাডিজ পড়তে। এখানে আর একজনের কথা বলি। আমার কাকিমা, ফ্রেডরিকা জান্সজ…
যিনি ‘দ্য সানডে লিডার’-এর এডিটর ছিলেন? ডেথ থ্রেটস পেয়েছিলেন? তিনি আপনার কাকিমা?
ইয়েস, শ্রীলঙ্কান জার্নালিস্ট অব দ্য ইয়ার-ও হয়েছিলেন। এলটিটিই, প্রভাকরন, সিভিল ওয়ার সবটা কভার করেছিলেন। এখন আমেরিকায় সেটলড্। শি ওয়াজ আ হিউজ ইনফ্লুয়েন্স অন মি। ওকে দেখেই সিডনি থেকে ফিরে আসি কলম্বো। ওখানে ‘ইয়াং এশিয়ান টেলিভিশন’-এ জয়েন করি। এক সময় রাত এগারোটার বিজনেস খবরটাও পড়তাম। (হাসি)
আপনার মা তো শ্রীলঙ্কান নন?
না, মা মালয়েশিয়ান। বাবা শ্রীলঙ্কান। আমরা চার ভাইবোন। আমি সবচেয়ে ছোট।
বলিউডে কী করে এলেন বলুন তো?
ছোটখাটো মডেলিং করতাম শ্রীলঙ্কায়। একদিন আমার এজেন্সি আমাকে বলল মুম্বই থেকে একজন ডিরেক্টর ফোন করে আমার পোর্টফোলিয়োর কিছু ছবি দেখতে চেয়েছেন…
কে তিনি? সুজয় ঘোষ?
ইয়েস, সুজয় ফোন করেছিল। সেই সময় ও ‘আলাদিন’-এর কাস্টিং করছিল। ওই ফোন কল পেয়েই আমার মুম্বই আসা। তার পর থেকে তো জীবনটাই বদলে গেল। আর একটা ব্যাপার হয়েছিল…
কী?
আমি কিছু দিন জার্নালিজম করেই বুঝে গিয়েছিলাম যাই স্টোরি করি না কেন, ব্যাংক ব্যালান্স আমার কোনও দিন বাড়বে না… (প্রচণ্ড হাসি)
হা হা হা হা
পৃথিবীর সব সাংবাদিক বুঝতে পারবে আমি কী বলছি। তাই অ্যাক্টিং-এ চলে এলাম। প্রচুর ঝামেলা অ্যাক্টিং-এ। কিন্তু পয়সাটা দারুণ। তার পর তো ‘আলাদিন’-এ কাজ করলাম। সুজয়ের সঙ্গে দারুণ বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
‘অহল্যা’ দেখলেন?
হ্যাঁ, আমি বোধহয় সবচেয়ে আগে ট্যুইটও করেছিলাম ‘অহল্যা’ দেখে। সুজয়ের জন্যই আমি বাঙালি কালচারের সঙ্গে পরিচিত। আপনাদের দুর্গাপুজো, আপনাদের খাওয়াদাওয়া…
কোনও দিন সুজয়কে বলেননি কেন আপনাকে ‘কহানি’তে নিলেন না?
কে বলল বলিনি? অনেক বার বলেছি (হাসি)। তবে আমি জানি সুজয়ের সঙ্গে ভবিষ্যতে আমি কাজ করবই। আর আমরা দু’জনে মুম্বইতে থাকলে প্রায়ই বাঙালি খাবার খেতে যাই। মাস্টার্ড দিয়ে আপনাদের যে ফিশের প্রিপারেশন হয়…
সর্ষে ইলিশ?
ইয়েস। সর্ষে ইলিশ। অ্যান্ড স্টিম রাইস।
আপনার কথাবার্তা শুনে মনে হল ইউ আর স্টিল লিভিং আ ড্রিম…
আই অ্যাম। জার্নালিজম, সুজয় ঘোষ। তার পর মার্ডার ২, রেস ২…
সেখান থেকে ‘কিক’-এ সলমন খানের হিরোইন…
ইয়েস। ওটা আমার কেরিয়ারের হাইলাইট। তার পর এখন অক্ষয়কুমার, সিদ্ধার্থ মলহোত্রর সঙ্গে ‘ব্রাদার্স’। সত্যি আমি স্বপ্নের দুনিয়াতেই আছি। খুব লাকি আমি।
একজন ইন্ডিয়ান যখন একজন শ্রীলঙ্কানের সঙ্গে কথা বলে, তখন ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা হবে না এটা সম্ভব নয়…
খুব একটা দেখি না। কিন্তু খবর রাখি। কুমার সঙ্গকারার লাস্ট সিরিজ, কে কত করল তার একটা মোটামুটি আন্দাজ থাকে আমার (হাসি)।
মুম্বইতে ২ এপ্রিল ২০১১-তে ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ছিলেন…
(হাসি) না, ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনাল দেখতে যাইনি। অত প্রেশার… মাই গড।
সঙ্গকারা, জয়বর্ধনে আপনার বন্ধু?
আমি চিনি ওদের। দেখা হলে কথা হয়। সাঙ্গা আর মহেলার সঙ্গে আমার একটা কানেকশন আছে…
কী সেটা?
ওদের দু’জনের কলম্বোতে একটা রেস্টুরেন্ট আছে।
‘মিনিস্ট্রি অব ক্যাব’?
হ্যাঁ। তা ওদের রেস্টুরেন্টের শেফ আর আমার রেস্টুরেন্টের শেফ কমন। সেই থেকেই ওদের সঙ্গে আমার আলাপ।
আপনার রেস্টুরেন্টের নাম কী?
(হাসি) কামসূত্র…
এটা রেস্টুরেন্টের নাম?
হ্যাঁ। আপনারও যা রিঅ্যাকশন হল, আমারও তাই রিঅ্যাকশন ছিল যখন আমাকে পাবলিসিটি টিম প্রথম নামটা বলে। কিন্তু সিংহলিজ-এ কামা মানে ফুড। খাবার। পরে ভাবলাম, ঠিক আছে। ওয়ার্ড-প্লে-টা ওয়ার্কও করে যেতে পারে।
এখানে কেরিয়ার, ওখানে রেস্টুরেন্ট সবটা ম্যানেজ করেন কী করে?
করি। মেয়েরা পারে। বেশির ভাগ সময়ই ফেসটাইমে কথা বলি শেফেদের সঙ্গে।
এই ব্যস্ততার জন্যই কি আপনার নো লাভ লাইফ?
একটা বড় কারণ তো সেটা বটেই। আমি চাই না বাড়ি ফিরলে আমার বয়ফ্রেন্ডের কখনও মনে হোক আমি ওকে ইগনোর করছি। আর একটু সময় যখন দিতে পারব, তখন নিশ্চয়ই আবার সম্পর্ক নিয়ে চিন্তাভাবনা করব।
বাট ইউ হ্যাড আ বয়ফ্রেন্ড?
ইয়েস আই ডিড। কিন্তু সেই সম্পর্কটা বোধহয় ঠিক ব্যালান্স করতে পারিনি।
হিরোইনদের বয়ফ্রেন্ড থাকলে নাকি কাজ পেতে অসুবিধে হয়?
একটুও না। আপনার বর থাকতে পারে, আপনার বয়ফ্রেন্ড থাকতে পারে। সেটা জেনেও যে পরিমাণ প্রস্তাব আসতে থাকে হোয়াটসঅ্যাপে আর ফোনে, সেটা যে কোনও অভিনেত্রীকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন। কোনও কিছুতেই কিছু আটকায় না (প্রচণ্ড হাসি)।
এই অ্যাটেনশন পেয়ে আপনার কেমন লাগে…
আগে ভাবতাম এরা কি সত্যিই এত ডেসপারেট? জানে আমি সম্পর্কে আছি, তা-ও এ রকম মেসেজ করে চলেছে। আজ বুঝতে পারি এটাকে ইগনোর করতে হবে আর বয়ফ্রেন্ডকে পুরোটা জানাতে হবে। না হলে ভুল বোঝাবুঝি হবেই।
থ্যাঙ্ক ইউ জ্যাকলিন। আপনার ফ্লাইটেরও বোধহয় টাইম হয়ে যাচ্ছে…
হ্যাঁ, এবার উঠি। আর নেক্সট টাইম আপনি মুম্বই এলে সুজয়ের সঙ্গে সর্ষে ইলিশটা মাস্ট।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা