হাওর বার্তা ডেস্কঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সারা দেশের পাশাপাশি চট্টগ্রাম-১ (মিরসরাই) আসনের সর্বত্র শুরু হয়েছে নির্বাচনী উত্তাপ। এলাকার হাটে ঘাটে লক্ষ্য করা যাচ্ছে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী প্রার্থিতার বিষয়ে সরব আলাপ আলোচনা। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নানামুখি সাংগঠনিক তৎপরতা ও সামাজিক তোড়জোড় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। চট্টগ্রামের এই আসনে নৌকা আর ধানের শীষের প্রার্থীদের মধ্যেই এই তোড়জোড় অনেকটা দৃশ্যমান। বিগত সব জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই এখানে এই দুই দলের মধ্যে হারজিতের লড়াই দেখা গেছে। বর্তমানে সর্বশেষ অবস্থায় এ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ৪ জনের নাম ও বিএনপি থেকে ৯ জনের নাম শোনা যাচ্ছে।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ১ লাখ ৫ হাজার ৩৩৯ ভোট পেয়ে এমপি নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী পেয়েছিলেন ৯৪ হাজার ৬৬৫ ভোট। এরপর ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় নির্বাচনে মিরসরাই আসনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় এবং জাতীয় পার্টির কোনো প্রার্থী না থাকায় এই আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন। কিন্তু আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির অংশ গ্রহণের সম্ভাবনায় সব দলের মাঝে তোড়জোড় লক্ষ করা যাচ্ছে। মিরসরাই আসনে নৌকার বৈঠা কার হাতে যাচ্ছে তা নিয়েও আলোচনার অন্ত নেই। এ কারণে অনেকের ধারণা এবার হয়তো গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনের পাশাপাশি তার পুত্র মাহবুবুর রহমান রুহেলের হাতেও নৌকার বৈঠা যেতে পারে।
আওয়ামী লীগ: ইঞ্জিনিয়ার মোমাররফ হোসেন চট্টগ্রামের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ও হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে অপ্রতিদ্বন্দ্বী। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর আস্থাভাজনসহ সব মিলিয়ে নৌকার বৈঠা তার হাতে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। আবার স্থানীয় অনেকেই বলছেন, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন হয়তো চট্টগ্রামের যে আসনে নেতৃত্বের ঘাটতি রয়েছে তেমন কোনো আসন থেকে নির্বাচন করতে পারেন। নির্বাচনে প্রার্থিতার বিষয়ে মন্ত্রী পুত্র মাহবুবুর রহমান রুহেল হাওর বার্তাকে বলেন, বাবা যতদিন সক্ষম আছেন ততদিন আমি এমন কিছুই ভাবছি না। কারণ, তার রাজনৈতিক দর্শন, চেতনা ও অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার এতোটাই সমৃদ্ধ যে, আমি সেখানে শিশুমাত্র। তিনি আরো বলেন, তবে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন, দেশনেত্রীর স্বপ্ন ও পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সবসময় উনার পাশে থেকে সব কাজে উনাকে সহযোগিতা করতে চাই।
এদিকে আওয়ামী লীগের আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিনের কথাও আলোচনা হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। গত ঈদুল ফিতরে তিনি তার বাড়িতে আয়োজিত মেজবানে ঘোষণাও দিয়েছেন এবার তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে মনোনয়নের জোর দাবি জানাবেন। তিনি বলেন, মিরসরাইয়ের প্রতিটি গ্রামের মানুষের সুখ-দুঃখ-দুর্দশার কথা শুনলে তাদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে তাদের ধারে ছুটে চলছি অবিরাম। আমি তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হিসেবে পরিচিত। আমি জনগণের সঙ্গে আছি থাকবো। আমি সব সময় তাদের, জনগণই আমার শক্তি।
এদিকে পূর্বে থেকে নির্বাচন নিয়ে কোনো প্রকার আলোচনায় না থাকলেও সম্প্রতি বড় তাকিয়া গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়াজ মোর্শেদ এলিটও মনোনয়ন চাইবেন তাক হাওর বার্তাকে নিশ্চিত করেছেন। তিনি বর্তমানে সামাজিক বিভিন্ন সংগঠন ও তরুণ সামাজিক নেতৃত্বের সফল সংগঠক চট্টগ্রামস্থ জুনিয়র চেম্বারের সভাপতি ও সারা বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক, সভাপতি মানবাধিকার কমিশন চট্টগ্রাম জেলা শাখা, খুলশি ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। রাজনৈতিকভাবে তিনি চট্টগ্রাম কমার্স কলেজের ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। তিনি একজন সফল ক্রীড়া সংগঠক হিসেবেও কাজ করছেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তিনি যুক্ত রয়েছেন। তার রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে রয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন। প্রার্থিতার বিষয়ে তিনি হাওর বার্তাকে বলেন, সারা দেশে এখন তরুণ প্রজ নেতৃত্ব দিচ্ছে। সে হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে আমি নির্বাচন করব। তিনি আরো বলেন, মিরসরাইয়ের বর্তমান এমপি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন মিরসরাইবাসীর জন্য আশীর্বাদ। আমি সব সময় উনাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করি। তিনি মনোনয়ন পেলে আমি তার একনিষ্ঠ কর্মী হিসবেও কাজ করব।
বিএনপি: মিরসরাই উপজেলা বিএনপির ধানের শীষে এবারের হাওয়া কিছুটা ঘূর্ণিপাক বেষ্টিত। কারণ এখানকার স্থানীয় বিএনপি ইতিমধ্যে বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত। কেন্দ্র ঘোষিত দলের সদস্য সংগ্রহের কর্মকাণ্ডেও এই গ্রুপিং তীব্রতরভাবে এখনো দৃশ্যমান। দলের কেন্দ্রীয় নীতি-নির্ধারণী ফোরামে গত নির্বাচনে মনোনয়ন প্রাপ্ত প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী ফের মনোনয়ন পেতে পারেন বলে জানান অনেক নেতা। এদিকে দলীয় হাইকমান্ড থেকে দলের টিকিট পেতে আরো সাত প্রার্থীকে স্ব স্ব কর্মকাণ্ডে নিজেদের তৎপরতা চালাতে দেখা যাচ্ছে। এরা হলেন উপজেলা বিএনপির বর্তমান আহ্বায়ক নুরুল আমিন, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও জাসাস চট্টগ্রাম উত্তর জেলা সাধারণ সম্পাদক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী, বহিষ্কৃত উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, মুক্তিযোদ্ধা দলের কেন্দ্রীয় নেতা আলহাজ্ব মনিরুল ইসলাম ইউসুফ, সাবেক এমপি এম এ জিন্নাহ, বেগম জিয়ার সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) জেড এ খান এবং যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত বিএনপির যুক্তরাজ্য শাখার সভাপতি পারভেজ সাজ্জাদও প্রার্থী হবেন বলে জানা গেছে।
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক নুরুল আমিন এ বিষয়ে বলেন, দলীয় ফোরামের বাইরে কাউকে মনোনয়ন দিলে তারা নেতাকর্মীদের সুখ-দুঃখে থাকেন না। তাই এলাকার উন্নয়ন ও দলের প্রতি ত্যাগ ও আনুগত্যের নিদর্শন হিসেবে নেতাকর্মীদের অনুরোধে নেত্রীর কাছে আমিও মনোনয়নপ্রার্র্থী। ইতিমধ্যে তিনি দলের তৃণমূল থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রার্থিতার বিষয় নিশ্চিত করেছেন বলে জানান।
আবার দীর্ঘদিন নেতাকর্মীদের সুখ-দুঃখে পাশে থাকা মনোনয়নপ্রার্থী জাসাস উত্তর জেলা সাধারণ সম্পাদক শাহীদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির মামলা হামলা হুলিয়াগ্রস্ত হওয়া সব নেতাকর্মীকে সেবা ও দলের জন্য নিবেদিত হয়ে কাজ করেছি। কৈশোর থেকে শহীদ জিয়ার আদর্শই লালন করি, যারা দলীয় আদর্শ নয় শুধু ক্ষমতার স্বাদ পেতে চায় তাদের বাদ দিয়ে দলের যোগ্য নেতৃত্বকে মনোনয়ন দিলে দলের ভিত্তি সারাদেশেই মজবুত হবে।
জামায়াত, জাপা, বামদল: যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়ার পর থেকে সারাদেশের মতো মিরসরাইতেও জামায়াত ইসলামের কর্মকাণ্ড অনেকটা স্থবির হয়ে আছে। জাতীয় পার্টিও এখানে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু মিলছে না যথাযথ অভিভাবক। বামদল তাদের সব কর্মসূচি আগের চেয়ে বেগবান করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অবিরত। ইতিমধ্যে সাবেক শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া মিরসরাইতে সাম্যবাদী দলের একটি কার্যালয়ও উদ্বোধন করেছেন। কিন্তু সেখানে নেই দলীয় কোনো কর্মকাণ্ড।
সব মিলিয়ে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সামাজিক রাজনৈতিক আড্ডায় উঠে আসছে দুই দলের একাধিক প্রার্থীর নাম। তবে সবাই হিসাব কষছেন প্রার্থীদের অতীতের কর্মকাণ্ড, উন্নয়ন এবং সুখে-দুঃখে পাশে কাদেরকে পেয়েছেন। সব কাটিয়ে স্ব স্ব দলের হাইকমান্ডের দিকে তাকিয়ে আছেন সব প্রার্থী। দেখা যাক দলীয় মনোনয়ন কার ভাগ্যে জোটে।