বিতর্কিত ও সমালোচিত প্রার্থীরাও নির্বাচনী মাঠে

হাওর বার্তা ডেস্কঃ জামালপুর-৫ সংসদীয় আসনটি জেলা সদরের মর্যাদার আসন। সদরের এ আসনটি বরাবরই অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। কারণ এ আসন থেকেই পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় সাত উপজেলার রাজনীতি। তাই এ আসনের ভালো-মন্দ দুটিরই প্রভাব পড়ে জেলার অন্যান্য আসনে। ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুরে ৫টি আসনের ৪টি আওয়ামী লীগের এবং ১টি জাতীয় পার্টির (জাপা) দখলে চলে যায়। জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটি স্বাধীনতার পর এরশাদের সময় জাতীয় পার্টি এবং ১৯৯১ সালে বিএনপি প্রার্থী নির্বাচিত হলেও বাকি সময় ছিল আওয়ামী লীগের দখলে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রহসনের নির্বাচন আখ্যায়িত করে বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও এবার জামালপুর সদর আসনসহ ৫টি আসন উদ্ধারে বিএনপি রাজনৈতিক মাঠে কাজ করে যাচ্ছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামালপুর-৫ আসনে নির্বাচনী তোড়জোড় শুরু হয়েছে। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা স্নায়ু উত্তেজনায় ভুগছেন। মনোনয়ন পাওয়ার আশা-নিরাশার দোলায় দুলছেন প্রত্যেকেই। আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী এলাকায় জনসমর্থন আদায়ে জনসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ও বিএনপির বিতর্কিত ও সমালোচিত প্রার্থীরাও নির্বাচনী মাঠকে বেশ সরগরম করে তুলেছেন।

এবার এ আসনে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১৯ হাজার ৮২৪ এবং নারী ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ৩০ হাজার ২০৬। সব মিলিয়ে জামালপুর-৫ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৫০ হাজার ৩০।

এবারের নির্বাচনের হিসাব নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মাথাব্যথা শুরু হয়ে গেছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের প্রচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে নির্বাচনী এলাকার জনপথ। আওয়ামী লীগ দাবি রাখে আওয়ামী সরকারের আমলে সারাদেশের ন্যায় জামালপুরের সবক’টি নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এ কারণেই জনগণ আওয়ামী লীগকেই আবারো নির্বাচনে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে। এদিকে বিএনপি মনে করে, আগামী নির্বাচনে জেলার সবক’টি আসনই ঘরে তুলে আনবে বিএনপি। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা সাধারণ ভোটারদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।

ঐতিহ্যগতভাবে এ আসন আওয়ামী লীগের আসন। ’৭০ সালের নির্বাচন থেকে ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত কেবল দু’বার বাদে বিপুল ভোটাধিক্যে বিজয়ী হয়েছে আওয়ামী লীগ। প্রার্থিতা ও মনোনয়ন নিয়ে আওয়ামী লীগে তেমন সমস্যা না থাকলেও এবার একাধিক প্রার্থীর নামের তালিকা থাকায় দলে অন্তর্কলহ চলছে।

এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন সাবেক ভূমিমন্ত্রী রেজাউল করিম হীরা এমপি, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ বাকী বিল্লাহ, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট এইচ আর জাহিদ আনোয়ার, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক আহাম্মেদ চৌধুরী, ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা বর্তমানে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য মারুফা আক্তার পপি, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা. আবদুল মান্নান, ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান বিজন কুমার চন্দ।

আওয়ামী লীগ প্রার্থী বর্তমান এমপি রেজাউল করিম হীরা এ আসনে দলের একক প্রার্থীর দাবিদার হলেও দলের একাংশের নেতাকর্মীদের কাছে কোণঠাসা হয়ে আছেন। আওয়ামী লীগ সম্ভাবনাময় নতুন প্রার্থী মনোনয়ন দিয়ে চমক সৃষ্টি করতে পারে। প্রার্থী পরিবর্তনের সম্ভাবনা থাকায় জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য বিশিষ্ট সমাজসেবক শিল্পপতি ইঞ্জিনিয়ার মোজাফফর হোসেন দলের মনোনয়ন চাইবেন। এর আগের দু’বারও তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তাকে নিয়ে মাঠ পর্যায়ে দলের বৃহৎ একটি অংশ ব্যাপক জনবল নিয়ে সভাসমাবেশ করে যাচ্ছে।

এ ছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. সুরুজ্জামান মনোনয়ন চাইবেন বলেও গুঞ্জন রয়েছে।

অপরদিকে জেলা বিএনপির কাণ্ডারি হিসেবে পরিচিত বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক দু’বারের সাবেক সফল পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট শাহ মোহাম্মদ ওয়ারেছ আলী মামুন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নিজ নির্বাচনী এলাকায় গণসংযোগে চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জনগণের সুখ-দুঃখের সাথী হয়ে তাদের সেবা করে ইতিমধ্যে হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে দলের কেন্দ্রীয় নানা কর্মসূচি পালন করাসহ তৃণমূল পর্যায়ে দীর্ঘদিন ধরে গণসংযোগ করে যাচ্ছেন শাহ ওয়ারেছ আলী মামুন। মামুন নির্বাচনী মাঠে এগিয়ে এবং শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছেন।

এ ছাড়া বিএনপির দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় আরো যারা রয়েছেন তাদের মধ্যে সাবেক স্বাস্থ্য উপমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল হক। টানা ৩টি সংসদ নির্বাচনে পরাজিত সিরাজুল হকের অবস্থান তৃণমূল পর্যায়ে একেবারেই নড়বড়ে। কেন্দ্রে বিভিন্ন নেতার সঙ্গে তার সখ্যের কথা শোনা গেলেও মাঠ পর্যায়ে তার অনুসারীর সংখ্যা নেই বললেই চলে। বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন ভোলা মল্লিক বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ আসনে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল দীর্ঘদিনের। একদিকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাবেক পৌর মেয়র শাহ্ মো. ওয়ারেছ আলী মামুনের নেতৃত্বাধীন জেলা বিএনপির মূলধারা অন্যদিকে পদবঞ্চিত জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ভোলা মল্লিক গ্রুপ। তৃণমূল পর্যায়ের বেশিরভাগ নেতাকর্মীই আছেন মামুনের নেতৃত্বাধীন মূল ধারায়। আর এ গ্রুপের একক প্রার্থী মামুন। ভোলা মল্লিকের গ্রুপে কর্মীর চেয়ে নেতার সংখ্যাই বেশি বলে মন্তব্য করেছেন জেলা বিএনপির নেতারা। তাদের গ্রুপে প্রার্থীও ২ জন। মনোনয়নপ্রত্যাশী জামালপুর সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি নিলুফা চৌধুরী মনি। বিভিন্ন টেলিভিশন টক শো ও ঢাকায় বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচিতে মনির অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো হলেও জামালপুরের রাজনীতির মাঠে তাকে খুব একটা দেখা যায় না। যিনিই মনোনয়ন পান না কেন আওয়ামী লীগের শক্ত ঘাঁটি বলে পরিচিত এ আসনে বিএনপি জোর হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করার কৌশল নিয়েই এগোচ্ছে।

এ আসনে জাতীয় পার্টিতে প্রার্থী নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাকির হোসেন খান এখন পর্যন্ত দলের একমাত্র সম্ভাব্য প্রার্থী। প্রার্থিতা নিয়ে বাম দলগুলোর এখন পর্যন্ত কোনো ঘোষণা আসেনি। জামায়াত নেতাদের মধ্যেও কোনো আলোচনা নেই। দলীয় মনোনয়ন না পেলে এ আসনেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অনেকেই আছেন যারা বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেবেন বলেও এ আসনের ভোটারদের মাঝে আলোচনা রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর