রাজধানীর রাজপথে এত গর্ত! বৃষ্টি নয়, দায়ী দুর্নীতিই

হাওর বার্তা ডেস্কঃ উন্নয়নের নামে প্রায় সারা বছর ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় চলে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি। বর্ষা এলে যেন কাজের গতি বেড়ে যায় বহু গুণ। ঢিমেতালে থেমে থেমে চলতে থাকে কাজ। রাস্তার এ বিড়ম্বনা বহুদিনের। তবে সম্প্রতি বৃষ্টিতে পিচঢালাই রাজপথ ও অলিগলিতে বড় বড় খানাখন্দ-গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় রাজধানীবাসীর যন্ত্রণা বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। প্রশ্ন উঠেছে, সড়ক নির্মাণের মান নিয়েও। সামান্য বৃষ্টিই প্রমাণ করে দিচ্ছে খোদ রাজধানীতে সড়ক নির্মাণে কতখানি স্বচ্ছতা অবলম্বন করা হয়। কোনো কোনো এলাকায় গাড়ির চাকা বড় গর্তে আটকে পড়ছে। এতে একদিকে মানুষ কষ্ট পাচ্ছে, অন্যদিকে যানবাহন বিকল হওয়ার ফাঁদ তৈরি হয়েছে। যানজটও বাড়ছে। সংশ্লিষ্টরা বলেছে, এর জন্য বৃষ্টি নয়, দুর্নীতিই দায়ী। খোঁড়াখুঁড়ি, কাটাকুটি, নতুন নির্মাণ, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সমন্বয়হীনতা এবং মৌসুমি বৃষ্টিতে অধিকাংশ রাস্তাঘাট চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। কোনো কোনো স্থানে সড়ক জুড়ে ফেলে রাখা হয়েছে নির্মাণ সামগ্রী। এসব রাস্তায় চলতে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা পথেই কাটাতে হচ্ছে নিরুপায় কর্মজীবী মানুষকে। শুধু চলাচলের বিড়ম্বনা নয়, অসতর্ক অবস্থায় খোঁড়াখুঁড়ির কারণে বিভিন্ন এলাকায় টেলিফোন লাইন কাটা পড়ছে। ওয়াসার পানির লাইন ফুটো হয়ে সরবরাহ করা পানিতে ময়লা ঢুকে পড়ছে। দিনের পর দিন এ অবস্থা চলতে থাকলেও এই দুর্ভোগ নিরসনের কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। মেট্রোরেলের নির্মাণ কাজের আগে আগারগাঁওয়ের পরিবার পরিকল্পনা ভবনের সামনের ফটক থেকে শুরু করে রোকেয়া সরণি, তালতলা, কাজীপাড়া এবং মিরপুরের একাধিক এলাকায় খোঁড়াখুঁড়ি গত কয়েক মাস ধরেই চলছে। ধারাবাহিকভাবে ওয়াসা, সিটি করপোরেশন, তিতাস, বিটিসিএল ও অন্যান্য সেবা সংস্থার লাইন সরানোর কাজ করছে। এজন্য প্রধান সড়কের অর্ধেক কেটে ফেলে রাখা হয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। কাজ শেষ হওয়ার নাম নেই। আগে যেখানে আগারগাঁও থেকে মিরপুর-১২ যেতে বিশ মিনিটের সময় লাগত এখন সে জায়গায় কখনও দেড় ঘণ্টা লেগে যায়। কাজীপাড়ার বাসিন্দা অলিক হোসেন বলছিলেন, বাসগুলো যেভাবে হেলেদুলে চলে তাতে মনে হয় এই বুঝি উল্টে গেল। মেট্রোরেলের কাজ শুরুর আগেই যদি এই অবস্থা হয় তাহলে মূল কাজের সময় কতটা দুর্ভোগ হবে সেটা অনুমান করতেও কষ্ট লাগে। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেই দায়ী করলেন তিনি। সরেজমিন দেখা যায়, কাজ শেষ হওয়ার পরও কোনো কোনো স্থানে সড়ক মেরামত করা হচ্ছে না। এতে করে সড়কের বাকি অর্থেক অংশে চাপ বেশি পড়ায় তাও এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ওই সড়কে চলাচলকারী বিহঙ্গ পরিবহনের চালক মাহবুব বলেন, ‘আগে সারাদিনে ৫-৬ ট্রিপ মারা যেত অনায়াসে। আর এখন রাস্তার কারণে ৩-৪ ট্রিপ মারতে গিয়েই কষ্ট হয়ে যায়। এতে আয়-রোজগারও কমে গেছে। তা ছাড়া ভাঙাচোরা রাস্তায় গাড়ি চালানোর ফলে প্রায়ই গাড়ি নষ্ট হচ্ছে। এতে উল্টো খরচ বাড়ছে।’ মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভারের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৩ সালে, তিন বছরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। শর্ত ছিল নির্মাণ কাজ চলার সময় জনগণের ব্যবহারের সড়কটি উপযোগী রাখা হবে। কিন্তু কথা রাখেনি তারা। ফ্লাইওভার নির্মাণ ও বিদ্যুত্ সংস্থার নতুন লাইন নির্মাণ কাজের কারণে মালিবাগ-মৌচাক, রামপুরা-ডিআইটি রোডের অবস্থা বেশ ভয়াবহ। মালিবাগ থেকে রামপুরা রাস্তাজুড়ে অসংখ্যা ঝুঁকিপূর্ণ গর্ত। চৌধুরীপাড়া, খিলগাঁও, শাজাহানপুরের প্রধান সড়কসহ সরু রাস্তার অবস্থা আরও খারাপ। দীর্ঘদিন ধরে জমে আছে স্যুয়ারেজের পানি। যাত্রাবাড়ী এলাকায় কয়েকটি স্থানে রাস্তা খুঁড়ে রাখা হয়েছে। রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় মহাখালী, কাকরাইল, ফকিরাপুল, বনশ্রী, পশ্চিম নাখালপাড়া, তেজকুনিপাড়া, মগবাজার, পুরান ঢাকাসহ আরও কিছু এলাকার বাসিন্দারা চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ধানমণ্ডি এলাকাতেও এবড়োখেবড়ো রাস্তার কারণে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে সেখানকার বাসিন্দারা। মঙ্গলবার সকালে এলিফ্যান্ট রোডের পশ্চিম প্রান্তে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে নিজ উদ্যোগে পিকআপ ভ্যানে ইট নিয়ে রাস্তার গর্ত ভরাট করতে দেখা যায়। নগর পরিকল্পনাবিদ স্থপতি মোবাশ্বের হোসেন মনে করেন, সঠিক পরিকল্পনার অভাব, বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতা, উদাসীনতা আর দায়িত্বহীনতার কারণেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এর পেছনে অনিয়ম দুর্নীতিও দায়ী। গত বছরের ২৭ জুন রাজধানীর সব সেবা সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু তার কোনো বাস্তবায়ন এখনও চোখে পড়ছে না। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র মতে, নানারকম আমলাতান্ত্রিক জটিলতা আর দুর্নীতির কারণে বরাদ্দকৃত অর্থ ছাড় দিতে দেরি করা হয়। বাজেটের আগে দ্রুত সেই টাকা ছাড় দিয়ে তড়িঘড়ি করে শুরু হয় উন্নয়ন কাজ। তা ছাড়া বর্ষার অজুহাতে যেনতেনভাবে কাজ করারও সুযোগ পান ঠিকাদাররা। পরের বছর আবার তা সংস্কারের সুযোগ মেলে। মূলত এসব কারণেই বর্ষা মৌসুমে কাজের ঝোক বেশি থাকে। এতে এক শ্রেণির ঠিকাদার ও দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা লাভবান হলেও দিনের পর দিন চরম দুর্ভোগে পোহায় নগরের বাসিন্দারা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর