একটি-দুটি নয়, ১৪টি কোপ। এর মধ্যে ১০টি মাথায় ও ঘাড়ে। বাকি ৪টি শরীরের অন্যান্য জায়গায়। গলার বাম পাশে একটি
কোপ ১৫ ইঞ্চি লম্বালম্বিতে গভীরে ঢুকে গেছে। কোপের ধরনগুলো এলোপাতাড়ি। ধরন দেখে বোঝা যায়, একাধিক ব্যক্তি আক্রমণ করেছিল। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। গতকাল ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নীলের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা এসব তথ্য জানান। এদিকে নিলয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুক্রবার রাতেই তার স্ত্রী আশামণি বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় একটি হত্যা ও চুরির মামলা করেছেন। মামলায়, ঘরে ঢুকে চার জন তার স্বামীকে কুপিয়ে হত্যার পর একটি ল্যাপটপ ও মোবাইলও নিয়ে যায় বলে উল্লেখ করা হয়। তবে গতকাল পর্যন্ত নিলয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করা হয়নি। আলোচিত এই ব্লগার হত্যাকাণ্ডে তদন্তে সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকাস্থ মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন- এফবিআই। এর আগে ব্লগার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের তদন্তে এফবিআই সহযোগিতা করলেও তদন্তে দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি নেই এ পর্যন্ত। এদিকে নিলয় হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে গতকাল এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, নিলয় হত্যাকাণ্ডে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। খুনিদের শনাক্ত করে অচিরেই গ্রেপ্তার করা হবে বলেও জানান তিনি।
নিলয়ের শরীরে ১৪ কোপ: গতকাল সকাল ১১টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে ব্লগার নিলয়ের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ময়নাতদন্ত শেষে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. হাবিবুজ্জামান চৌধুরী জানান, নিহত নীলয়ের লাশের ময়নাতদন্তে দেখা গেছে, তার মূল ইনজুরি হচ্ছে গলায়। গলা, শরীর ও হাতসহ প্রায় ১৪টি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন আছে। বড় আঘাত ১০টি এবং ছোট আঘাত ৪টি। তিনি আরও জানান, আঘাতের কারণে গলার বামপাশে লম্বালম্বি ১৫ ইঞ্চি গভীর খাদ হয়ে গিয়েছিল। এতে তার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছিল। ফলে ঘটনাস্থলেই মারা গিয়েছিলেন তিনি। তিনি আরও জানান, এর আগে ব্লগার রাজিব, অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবুর হত্যার ধরন যেমন ছিল তেমন ভাবে নীলয়ের হত্যার ধরন একই মনে হয়েছে। শক্তি দিয়ে কোপানোর ফলে হাড্ডি পযর্ন্ত ধারালো অস্ত্রটি ঢুকে গিয়েছিল।
এদিকে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল নিলয়ের লাশ বুঝে নেন নিলয়ের ভাগ্নে সুরঞ্জন চক্রবর্তী। একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে লাশ নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি পিরোজপুর জেলার ৫ নম্বর টোনা ইউনিয়নের চল্লিশা এলাকায়। সেখানে রাতেই পরিবারের সদস্যরা তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন। পরিবার ও স্থানীয়দের দাবি, খুনের ঘটনাটি পরিকল্পিত। তাকে পরিকল্পনা করে হত্যা করা হয়েছে। নিলয় খুনের ঘটনায় পরিবারের সদস্যরা পুলিশের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যার পর ১৫ই মে শাহবাগে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছিল। এরপর থেকে কয়েকজন যুবক তাকে অনুসরণ করেছিল। বাসা পযর্ন্তও এসেছিল তারা। নিলয় বিষয়টি অনুমান করে খিলগাঁ থানায়ও গিয়েছিলেন নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে একটি জিডি দায়ের করার জন্য। কিন্তু, পুলিশ তার জিডি নেয়াতো দূরের কথা, উল্টো তাকে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেয়। তাদের ভাষ্য, পুলিশ যদি তার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতো অথবা কোন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতো তাহলে নিলয় বেঁচে যেত। তার খুনের বিষয়ে পুলিশের গাফিলতি আছে বলেও অভিযোগ করেন তারা। নিহতের ভাগ্নে সুরঞ্জন চক্রবর্তী জানান, নিলয় তার স্বজন ও বন্ধু বান্ধবদেরও তার নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টি জানিয়েছিলেন। পুলিশ একটি শক্ত উদ্যোগ নিয়ে নিলয়ের জীবন বাঁচিয়ে দিতে পারতো। এটা পুলিশের গাফিলতি ও স্বেচ্ছাচারিতা। নীলয়ের বন্ধু দেবজ্যোতি জানান, এটা সম্পূর্ণ পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এর আগে যত ব্লগার হত্যাকাণ্ড হয়েছিল তা সব প্রকাশ্য দিবালোকে রাস্তায়। কিন্তু, এবার বাসার মধ্যে প্রথম নীলয়কে হত্যা করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, বাড়ির তৃতীয় তলায় ‘টু লেট’ লেখা ছিল। খুনিরা সেটিকে ফলো করেছিল। খুনের সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন যুবক নীলয়ের ফ্ল্যাটে ঢুকেই আশামণিকে জিজ্ঞাসা করেছিল বাড়ি ভাড়া দেয়া হবে কিনা? সঙ্গে সঙ্গে আরও তিন যুবক ফ্ল্যাটের মধ্যে প্রবেশ করে তাকে হত্যা করলো। এটা দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ছাড়া এ খুন করা সম্ভব নয়। খুনিরা তাকে আগে থেকেই অনুসরণ করে ছিল।
থানায় স্ত্রীর মামলা: নিলয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় শুক্রবার রাতেই নিহতের স্ত্রী আশামণি বাদী হয়ে খিলগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। নম্বর-১১। মামলায় অজ্ঞাত ৪ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে আশামণি উল্লেখ করেন, ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ১১টার দিকে নিলয় বাজার করার জন্য বাসা থেকে বেরিয়ে যায়। সোয়া ১২টার দিকে বাজার থেকে বাসায় আসে। বাসায় ঢুকে বাথরুমে ঢুকে গোসল করে। দুপুর ১টার দিকে ল্যাপটপ খুলে বেডরুমে বসে। একটা ১০ মিনিটে অজ্ঞাত এক তরুণ বাসার দরজায় নক করলে তিনি দরজা খুলে দেন। আনুমানিক ২০-২১ বছর বয়সী ও ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি উচ্চতার ওই তরুণের গায়ের রং শ্যামলা ও হালকা পাতলা গড়নের ছিল। সে তাকে বাসা ভাড়ার কথা জিজ্ঞাসাবাদ করে। আশামণি তা নাকচ করলে অজ্ঞাত ওই তরুণ বাড়িওয়ালার সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানান। পরে ওই তরুণ ঘরে হাঁটাচলা করে ও মোবাইল থেকে কাউকে কোন তথ্য সরবরাহ করছিল। ওই তরুণের আচরণ সন্দেহজনক হলে আশামণি নিলয়কে বিষয়টি জানান। নিলয় বেডরুম থেকে বের হয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে অজ্ঞাতনামা আরও তিন যুবক ঘরে প্রবেশ করে নিলয়কে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। এ সময় দুর্বৃত্তরা অস্ত্রের মুখে তাকে ও তার ছোট বোন তন্বীকে বারান্দায় আটকে রাখে। দুর্বৃত্তদের একজনের মুখে দাড়ি ও পরনে শার্ট-প্যান্ট ছিল। ঘটনার সময় তারা দুই বোন চিৎকার করলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে দুপুর ১টা ২০ মিনিটে দুবর্ৃৃত্তরা চলে গেলে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। মামলার অভিযোগে আশামণি বলেন, আমার স্বামীকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। আমার স্বামী নিয়মিত ফেসবুক ও নানা রকম ব্লগে লেখালেখি করতো।
ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মো. মুনতাসিরুল ইসলাম জানান, নিলয় হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি পুলিশ গুরুত্বসহকারে মামলাটি তদন্ত করছে। এ ছাড়াও চাঞ্চল্যকর ওই মামলায় তদন্ত করছে ডিবি পুলিশও। তিনি আরও জানান, একটি রক্তমাখা গেঞ্জিসহ ঘটনাস্থল থেকে বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। এগুলোর ডিএনএ পরীক্ষা করা হবে। এতে খুনিকে চিহ্নিত করার প্রক্রিয়া দ্রুত হবে। মুনতাসিরুল ইসলাম আরও জানান, ঘটনার পর থেকে একটি জঙ্গি সংগঠন এর দায় স্বীকার করে একটি ইমেইলে করেছে। কে বা কারা এবং কোথা থেকে ওই ইমেইল পাঠানো হয়েছে তা তদন্ত করা হচ্ছে।
তদন্তে এফবিআই: এদিকে ব্লগার নিলয় হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে যুক্ত হচ্ছে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই)। গতকাল ঢাকায় অবস্থানকারী এফবিআইয়ের একজন প্রতিনিধি ঢাকা মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিলয় হত্যার তদন্তে সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ডিএমপির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে ইতিবাচক সাড়া দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে আজ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সঙ্গে এফবিআই প্রতিনিধিদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে তদন্তে কোন কোন বিষয়ে এফবিআই সহযোগিতা করতে পারে তা নিয়ে আলোচনা হবে বলে ডিএমপি সূত্র জানিয়েছে। এ বৈঠকের পর এফবিআই সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যেতে পারেন। ডিএমপির ডিসি (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, তদন্তে এফবিআইয়ের সহযোগিতার প্রস্তাবকে তারা স্বাগত জানিয়েছেন। আলোচনা করে এফবিআইয়ের কাছে তদন্তে প্রযুক্তিগত বিভিন্ন বিষয়ের সহযোগিতা নেয়া হবে।
আতঙ্কে এলাকাবাসী: গতকাল সরজমিন পূর্ব গোড়ানের ৮ নম্বর রোডের ১৬৭, নম্বর নিলয়ের ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায়, নিলয়ের বাসার সামনে কৌতূহলী মানুষের ভিড়। নিলয়ের বাসার সামনে দুটি সরু গলি। প্রথমটি সোজা। দ্বিতীয়টি ডানদিক চলে গেছে। প্রায় সময় রাস্তায় ও আশপাশে লোকজনের আনাগোনা। এমন একটি স্থানে দিনদুপুরে পাঁচতলায় একজন হত্যা করে খুনিরা পালিয়ে গেলো বিষয়টা যেন মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসী। যাওয়ার আগে খুনিরা বাসার নিচে থাকা তারা পানির ট্যাপে রক্তমাখা ছুরি ধুয়ে ব্যাগের মধ্যে নিয়ে নির্বিগ্নে এলাকা ছেড়ে চলে গেছে। খুনিদের এমন দুঃসাহিসকতায় অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। আবার এ ঘটনায় আতঙ্কগ্রস্তও হয়ে পড়েছেন কেউ কেউ। গতকাল সকালে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পুরো বাড়িতে সুনসান নীরবতা। স্বামীর শোকে বিহ্বল তার স্ত্রী আশামণি। স্বজনেরা তাকে সান্ত্বনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলেন না। মাঝে মধ্যে তিনি মূর্ছা যাচ্ছিলেন। তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে স্বজনদের জানালে বিষয়টি পুলিশকে অবহিত করা হয়। তিনি বাসা থেকে নামার পর সাংবাদিকেরা তাকে তার বক্তব্য জানার চেষ্টা করলে তিনি কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, ‘আর কথা বলে কি হবে? খুনিদের যেন শাস্তি হয়। আর কি-ই বা চাওয়ার আছে।’ পরে খিলগাঁও থানার এসআই নাজমুল হোসেন তাকে পুলিশের একটি গাড়িতে করে লালবাগ এলাকায় তার এক আত্মীয়র বাড়িতে পৌঁছে দেয়। নিহত নিলয়ের এক প্রতিবেশী সালমা বেগম বলেন, গতকাল থেকে দিনরাত আমাদের চোখে ঘুম নেই। আতঙ্কগ্রস্ত আছি। বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী না থাকায় এমন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে খুনিরা কোন বাধা ছাড়াই এখান থেকে চলে গেছে।
৭ দিনের আলটিমেটাম: নীলয়ের হত্যাকাণ্ডের খুনিদের গ্রেপ্তারে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ সাত দিনের আলটিমেটাম দিয়েছে। গতকাল বিকালে খিলগাঁও থানাধীন তালতলা মার্কেটের সামনে প্রগতিশীল ছাত্রজোটের উদ্যোগে এক সমাবেশের আয়োজন করা হয়। আগামী ৭ দিনের মধ্যে যদি নীলয়ের খুনিদের গ্রেপ্তার না করা হয় তাহলে খিলগাঁও থানার সামনে প্রগতিশীল ছাত্রজোট অবস্থান কর্মসূচি পালন করবে এবং সেখান থেকে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সেক্রেটারি লাকি আক্তার, প্রগতিশীল ছাত্রজোটের নেতা হাবিব ইমন, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়নের ঢাকা মহানগর সেক্রেটারি তরীদীপ সাহা ও বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়নের সেক্রেটারি হাবিব আবুদুল্লাহ। বক্তারা সমাবেশে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, একের পর এক মুক্তমনা ব্লগারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হচ্ছে। কিন্তু, সরকার নির্বিকার। পুলিশ খুনিদের গ্রেপ্তার করতে পারছে না। শুধুই বলছে, তদন্ত করা হচ্ছে। এভাবে চলতে পারে না, চলতে দেয়া যায় না। বক্তারা অভিযোগ করেন, দেশে কোন মুক্ত চিন্তার মানুষ থাকবে কি থাকবে না তা সরকারকে পরিষ্কার করতে হবে। অপরদিকে নিলয়ের খুনিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়ে শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের পক্ষ থেকে সাত দিনের আলটিমেটাম দেয়া হয়।
ব্লগার নীলাদ্রির হত্যার বিচার নিয়ে শঙ্কিত পরিবার
আমাদের পিরোজপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ব্লগার নীলাদ্রির মৃত্যুর খবর জানার পর থেকে তার মা অপর্ণা চ্যাটার্জী হারিয়ে ফেলেছে বাকশক্তি। তিনি শুধু একটি কথাই বলছেন আমি কি নিয়ে বাঁচবো? আমার বাঁচার একমাত্র অবলম্বন ছিল আমার একমাত্র ছেলে নীল। আর পিতা তারাপদ চ্যাটার্জী ছিল আগে থেকেই শারীরিক ভাবে অসুস্থ। কানে কিছুটা কম শোনেন। তাকে জানানো হয়নি ছেলে মৃত্যুর খবর। কিন্তু রাতে জানার পর থেকে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। গতকাল শনিবার দুপুরে নিহত নীলাদ্রির গ্রামের বাড়ি দেখা গেছে সর্বত্র শোকের ছায়া। ভাইয়ের নিহত ঘটনায় বোন জয়শ্রী চ্যাটার্জী বলেন, আমার ভাইয়ের কি অপরাধ ছিল যে তাকে এভাবে মেরে ফেলতে হলো। আমাদের বেঁচে থেকে কি লাভ? আমরা কি পাব আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার ?
তিনি এসময় আরও বলেন, আমার ভাইয়ের আগে চার জন ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের হত্যার কোন বিচার হয়নি। তাই আমি ও আমার পরিবার আমার ভাইয়ের হত্যাকারীদের বিচার নিয়ে শঙ্কিত। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে না। এ ব্যাপারে সরকার আন্তরিক না। জয়শ্রী জানায়, তার ভাই নীলাদ্রি ঈদের পর গত ২৫শে জুলাই বাড়ি থেকে ঢাকা যায়। ১৫ রোজার দিকে সে পিরোজপুরের টোনা ইউনিয়নের গ্রামের বাড়িতে আসে। নিলাদ্রি নিহত হওয়ার আগের দিন সর্বশেষ মায়ের সাথে নীলাদ্রি’র ফোনে কথা হয়েছিল। তারপর আর কোন কথা হয়নি। নিহত ব্লগার নীলাদ্রি ১০ নভেম্বর ১৯৮৯ সালে পিরোজপুর সদর উপজেলার চলিশা গ্রামে জন্মগ্রহণ করে। এর পরে তিনি তার বাড়ির পার্শবর্তী প্রাইমারি স্কুল চলিশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রাইমারি শিক্ষা জীবন শেষ করে তেজদাসকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাস করে পিরোজপুর সরকারি সোহ্রাওয়ার্দী কলেজ থেকে এইচ এসসি পাস করে উচ্চতর শিক্ষার জন্য তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এলাকায় নীলাদ্্ির’র ডাক নাম নান্টু। সবাই তাকে এ নামেই চেনে। তবে এলাকার অনেকেই জানেন না নান্টু ব্লগে লেখেন।
তেজদাসকাঠী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রমথ মণ্ডল জানান, নীল তাদের বিদ্যালয় থেকে ২০০৫ সালে এস এসএসসি পাস করেন। তিনি একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তিনি ক্লাসে প্রথম ছিলেন। নীল হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে সর্বোচ্চ বিচারের দাবি জানান তিনি। টোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সোবহান খান বলেন, নিলয় ভাল ছেলে ছিল। তাকে যারা নির্মমভাবে হত্যা করেছে তাদের ফাঁসি দাবি করেন তিনি।
সংবাদ শিরোনাম
নিলয়ের শরীরে ১৪ কোপ
- Reporter Name
- আপডেট টাইম : ০১:০১:৫৭ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৯ অগাস্ট ২০১৫
- ৩৩১ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ