ঢাকা ০২:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নির্যাতনের কথা গণমাধ্যমকে জানালেন রোহিঙ্গারা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৩:৫০:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০১৭
  • ৩০৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  সেনা অভিযানের নামে রাখাইন প্রদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নির্যাতনের কথা শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছিল মায়ানমার সরকার। কিন্তু এবার গুমর ফাঁস করে দিলেন সেই নির্যাতিতরা।

গণ্যমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের কাছে পেয়ে জানালেন, সেনা অভিযানে নামে তাদের স্বামী, মা ও ছেলেকে গুম করার কথা। শোনালেন, চোখের সামনে স্বজনদের ওপর অকথ্য নির্যাতনের কথা।

গত বছরের অক্টোবর থেকে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রবেশে বাঁধা ছিল। কিন্তু ১৩ জুলাই দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশের মায়ুং না-মা গ্রামে বার্তা সংস্থা রয়টার্স-এর সংবাদকর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়। তারা তুলে আনেন রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের নানা অজানা গল্প।

এসময় ওই গ্রামের সারবিদা নামের এক নারী রয়টার্স-কে জানান, তার ছেলে খামারে কাজ করছিলেন। এমন সময় তাকে অস্ত্রের মুখে ঘিরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। পরে তারা তাকে গাড়ীতে তুলে নিয়ে যান।

একই গ্রামের অন্য নারীরা জানিয়েছেন, তাদের স্বামীরা নির্দোষ থাকার পরও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু তারা আর ফিরে আসেনি।

অন্য গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কিয়ার গং তাং ও কিছু গ্রামে অভিযানের নামে বোমা নিক্ষেপের পর সেই গ্রামগুলো জ্বলে আগুনে পুঁড়ে ছাঁই যায়। তারা ভয়ে বাংলাদেশের সীমান্তে পালিয়ে গিয়েছিলেন।

কেয়ার গং তাং গ্রামের এক স্কুল শিক্ষক নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, তার গ্রাম থেকে ২৩ জনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ১০ জনকে হত্যা করা হয়।

তিনি আরো জানান, অভিযানের সময় ওই গ্রামের প্রায় ৬ হাজার মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে ছিল।

অন্য গ্রামের বাসিন্দা লালমুতি (২৩) তার বাবার কবর দেখিয়ে বলেন, অভিযানের সময় তার বাবাকে ঘরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। পরে তার বাবাকে মেরে ফেলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আগুন নিক্ষেপ করে। এরপর তার মাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তিনি এখনো জেলে আটক আছেন। সেসময় এমন অভিযোগের কথা তাদের কোন গণমাধ্যমকে জানাতে দেয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।

তবে বার্মা বর্ডার গার্ড পুলিশের ব্রি. জে. থুরা সান লিউইন গ্রামবাসীর এমন অভিযোগকে ভুল দাবি করেছেন।

গত মার্চে রয়টার্স একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। প্রতিবেদনে বলেছিল, দেশটিতে অভিযান চলাকালীন সময়ে ১৮ বছরের কম ১৩ জনকে আটক করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে দেশটিতে ৪২৩ জন বিদ্রোহী গোষ্ঠির একটি তালিকাও প্রকাশ করে তারা।

গত বছরের নভেম্বরে মুসলিম রোহিঙ্গা বসবাসরত মংডু গ্রামে অভিযানের নামে সেনাবাহিনী ছড়িয়ে পড়ে। আর এ ঘটনার পর বাংলাদেশ সীমান্তে প্রায় ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছিল বলে জানিয়েছিল জাতিসংঘ।

এরপর ঘটনা তদন্ত করে জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের সদস্যরা জানিয়েছিলেন, সীমান্তে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যদের দ্বারা গণধর্ষণ, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছেন। আর এ ধরনের অপরাধকে তারা মানবতা বিরোধী অপরাধ বলেও জানান।

জাতিসংঘের এমন দাবিকে সেসময় দেশটির সরকার নোবেল বিজয়ী অং সান সুচি অস্বীকার ও মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সুচির এই দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করলেন নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম গ্রামবাসীরা।

সাংবাদিকরা ওইসব গ্রামে প্রবেশ করে গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বললে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর সত্যতা খুঁজে পান।

১৩ জুলাই দেশটির তিনটি গ্রামে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়া হলেও সময় বেঁধে দিয়েছিল অং সান সুচির সরকার।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

নির্যাতনের কথা গণমাধ্যমকে জানালেন রোহিঙ্গারা

আপডেট টাইম : ০৩:৫০:৫১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  সেনা অভিযানের নামে রাখাইন প্রদেশে বসবাসরত রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নির্যাতনের কথা শুরু থেকেই অস্বীকার করে আসছিল মায়ানমার সরকার। কিন্তু এবার গুমর ফাঁস করে দিলেন সেই নির্যাতিতরা।

গণ্যমাধ্যমের সংবাদকর্মীদের কাছে পেয়ে জানালেন, সেনা অভিযানে নামে তাদের স্বামী, মা ও ছেলেকে গুম করার কথা। শোনালেন, চোখের সামনে স্বজনদের ওপর অকথ্য নির্যাতনের কথা।

গত বছরের অক্টোবর থেকে মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর প্রবেশে বাঁধা ছিল। কিন্তু ১৩ জুলাই দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইন প্রদেশের মায়ুং না-মা গ্রামে বার্তা সংস্থা রয়টার্স-এর সংবাদকর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়া হয়। তারা তুলে আনেন রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের নানা অজানা গল্প।

এসময় ওই গ্রামের সারবিদা নামের এক নারী রয়টার্স-কে জানান, তার ছেলে খামারে কাজ করছিলেন। এমন সময় তাকে অস্ত্রের মুখে ঘিরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা। পরে তারা তাকে গাড়ীতে তুলে নিয়ে যান।

একই গ্রামের অন্য নারীরা জানিয়েছেন, তাদের স্বামীরা নির্দোষ থাকার পরও গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। কিন্তু তারা আর ফিরে আসেনি।

অন্য গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কিয়ার গং তাং ও কিছু গ্রামে অভিযানের নামে বোমা নিক্ষেপের পর সেই গ্রামগুলো জ্বলে আগুনে পুঁড়ে ছাঁই যায়। তারা ভয়ে বাংলাদেশের সীমান্তে পালিয়ে গিয়েছিলেন।

কেয়ার গং তাং গ্রামের এক স্কুল শিক্ষক নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, তার গ্রাম থেকে ২৩ জনকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ১০ জনকে হত্যা করা হয়।

তিনি আরো জানান, অভিযানের সময় ওই গ্রামের প্রায় ৬ হাজার মানুষ গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে ছিল।

অন্য গ্রামের বাসিন্দা লালমুতি (২৩) তার বাবার কবর দেখিয়ে বলেন, অভিযানের সময় তার বাবাকে ঘরে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল। পরে তার বাবাকে মেরে ফেলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা আগুন নিক্ষেপ করে। এরপর তার মাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং তিনি এখনো জেলে আটক আছেন। সেসময় এমন অভিযোগের কথা তাদের কোন গণমাধ্যমকে জানাতে দেয়া হয়নি বলেও জানান তিনি।

তবে বার্মা বর্ডার গার্ড পুলিশের ব্রি. জে. থুরা সান লিউইন গ্রামবাসীর এমন অভিযোগকে ভুল দাবি করেছেন।

গত মার্চে রয়টার্স একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল। প্রতিবেদনে বলেছিল, দেশটিতে অভিযান চলাকালীন সময়ে ১৮ বছরের কম ১৩ জনকে আটক করা হয়েছিল। সেই সঙ্গে দেশটিতে ৪২৩ জন বিদ্রোহী গোষ্ঠির একটি তালিকাও প্রকাশ করে তারা।

গত বছরের নভেম্বরে মুসলিম রোহিঙ্গা বসবাসরত মংডু গ্রামে অভিযানের নামে সেনাবাহিনী ছড়িয়ে পড়ে। আর এ ঘটনার পর বাংলাদেশ সীমান্তে প্রায় ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে এসেছিল বলে জানিয়েছিল জাতিসংঘ।

এরপর ঘটনা তদন্ত করে জাতিসংঘের তদন্তকারী দলের সদস্যরা জানিয়েছিলেন, সীমান্তে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যদের দ্বারা গণধর্ষণ, নির্যাতন ও অগ্নিসংযোগের শিকার হয়েছেন। আর এ ধরনের অপরাধকে তারা মানবতা বিরোধী অপরাধ বলেও জানান।

জাতিসংঘের এমন দাবিকে সেসময় দেশটির সরকার নোবেল বিজয়ী অং সান সুচি অস্বীকার ও মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু সুচির এই দাবিকে মিথ্যা প্রমাণ করলেন নির্যাতিত রোহিঙ্গা মুসলিম গ্রামবাসীরা।

সাংবাদিকরা ওইসব গ্রামে প্রবেশ করে গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বললে দেশটির সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর সত্যতা খুঁজে পান।

১৩ জুলাই দেশটির তিনটি গ্রামে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের কর্মীদের প্রবেশ করতে দেয়া হলেও সময় বেঁধে দিয়েছিল অং সান সুচির সরকার।