ঢাকা ১১:৩০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সিলেট বিভাগে বিএনপির হয়ে লড়বেন যারা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:০১:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ জুন ২০১৭
  • ৩০২ বার

দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা থেকে দূরে থাকা দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে ঘর গোছাচ্ছে। ইতিমধ্যে দলের হাইকমান্ড দেশের সিংহভাগ আসনেই প্রার্থীদের শর্টলিস্ট তৈরি করে ফেলেছে বলে দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছে।

আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সিলেটবাসীর জন্য চমক হিসেবে দেখা যেতে পারে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অথবা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মীনি ডা. জোবাইদা রহমানকে।

সিলেট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বরেণ্য অর্থনীতিবিদ প্রয়াত অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত বিগত সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। এ কারণে আসনটিতে সাইফুরের স্থানে কে আসছেন সেটা নিয়েও রয়ে গেছে ধোঁয়াশা।

এম সাইফুর রহমানের প্রয়াণের পর এ আসন থেকে নির্বাচনের ব্যাপারে প্রস্তুতিতেই ছিলেন সাবেক বিএনপি নেতা শমশের মুবীন চৌধুরী। এছাড়া তিনি ছিলেন সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। কিন্তু আচমকা দলের হাইকমান্ডের সাথে মতপার্থক্য আর স্থানীয় কোন্দলের কারণে হঠাৎ করেই দলটির দায়িত্ব ছেড়ে দেন শমশের মুবীন চৌধুরী।

সিলেট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আব্দুল মালিকের ছেলে এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির এখন এ আসন থেকে নির্বাচনর মাঠে রয়েছেন। বাবা খন্দকার মালিকের জনপ্রিয়তা পুঁজি করে আর নিজের ক্লিন ইমেজের কারণে আব্দুল মুক্তাদিরর ইতোমধ্যে নিজের অবস্থান বেশ শক্তিশালী করে নিয়েছেন। জানা গেছে খালেদা জিয়ার গ্রিন সিগন্যাল নিয়ে তিনি নির্বাচনের ব্যাপারে প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। নিয়মিত চষে বেড়াচ্ছেন সংসদীয় এলাকা।

ইতিমধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমান্ড একটি খসড়া প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করেছে। সেই তালিকাতেও রয়েছে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের নাম। তবে তার নামের আগে দু’টি নাম রয়েছে। এর একটি হচ্ছে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার; অন্যটি পুত্রবধু সিলেটের মেয়ে ডা. জোবাইদা রহমানের।

যদি কোন কারণে এই আসন থেকে খালেদা কিংবা তারেক কেউ নির্বাচন করতে না পারেন তবে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির অনেকটা নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র।

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শ্বশুড়বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সিলামে। এই হিসেবে এই আসন আত্মীয়তার বন্ধনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়ে এগিয়ে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। সেই সুবাদে তিনি সুযোগটা কাজে লাগাতে চাচ্ছেন এমনটিই বলছেন বিশ্লেষকরা।

সিলেট বিভাগে ৪ জেলা। সংসদীয় আসন মোট ১৯টি। আসনগুলো থেকে বিএনপির টিকেট পেতে মাঠে আছেন অর্ধশতেরও বেশি নেতা। এদের প্রায় সবাই দলের ‘গুডবুকেও’ রয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র।

ছবির ক্যাপশন উপরে বাম দিক থেকে ডা. জোবাইদা, তাহসিনা রুশদীর লুনা, শফি আহমদ চৌধুরী, দিলদার হোসেন সেলিম, এম এ হক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান, ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম, এম এ কাইয়ূম, আবুল কাহের শামীম.
সিলেট-২ (বিশ্বনাথ):

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদির লুনা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমএ হক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের নাম রয়েছে আলোচনায়। এরমধ্যে তাহসিনা রুশদির লুনার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এম এ হক (মো. আব্দুল হক) এর আগে দ্বিতীয় সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে হেরেছিলেন।

সিলেট-৩ (সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ):

সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি মালেক খান ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার সালাম এই ৫ জনের নাম আছে আলোচনায়। এদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কারা দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন সেটি পুরোপুরি নিশ্চয়তা দেয়া যাচ্ছে না।

সিলেট-৪ (কোম্পানীগঞ্জ-গোয়াইনঘাট-জৈন্তাপুর):

সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিম ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান আছেন আলোচনায়। তাদের অনুসারী নেতাকর্মীরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ):

খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর ভাই, জেলা বিএনপির নেতা ও কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ও কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন চান দলের টিকেট। দু’জনেই কেন্দ্রের ‘গুডলিস্টে’ আছেন।

সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ)

জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান আহমেদ চৌধুরী, জাসাস’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অভিনেতা হেলাল খান, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, সাবেক ছাত্রনেতা ফয়সাল আহমেদ চৌধুরী, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মাওলানা রশিদ আহমদ, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি সায়েস্তা খান কুদ্দুস ও যুক্তরাজ্য জাসাসের সভাপতি আবদুস সালামের নাম রয়েছে আলোচনায়।

সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ-তাহিরপুর) :

সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেন, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. রফিক চৌধুরী, ধর্মপাশা উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালিব খাঁন, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আনিসুল হক ও তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল আছেন আলোচনাতে। তারা প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন। তবে সম্প্রতি দীর্ঘদিন পর আলোচনায় আসা নজির হোসেনের কপালে দলের টিকেট জুটবে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা)

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেলকে মনোনয়ন দিতে প্রচার-প্রচারণা চলছে। দু’জনেই দলের গুডলিস্টে আছেন বলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলেছেন।

সুনামগঞ্জ-৩ (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর)

সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শাহিনুর পাশা চৌধুরী, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ ও কর্ণেল (অব.) আলী আহমদের নাম রয়েছে আলোচনায়।

সুনামগঞ্জ-৪ (সুনামগঞ্জ সদর-বিশম্ভরপুর)

চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ফজলুল হক আছপিয়া, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান জয়নুল জাকেরিন, সাবেক সভাপতি ও সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রদল আবুল মনসুর মোহাম্মদ শওকত এই তিনজন থেকে যেকোন একজনকে মনোনয়ন দিতে পারে কেন্দ্রীয় বিএনপি।

সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার)

বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, ছাতক উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী ও ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মুনসিফ আলী এই তিনজনের নাম শোনা যাচ্ছে জোরেশোরে।

হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল)

সাবেক এমপি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শেখ সুজাত মিয়ার নাম এখানে রয়েছে আলোচনায়।

হবিগঞ্জ-২ (আজমিরীগঞ্জ-বানিয়াচং)

কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সৌদি বিএনপির সভাপতি ও নির্বাহী সদস্য আহমেদ মুকিব আবদুল্লাহ’র নাম আলোচনায় আছে। তবে শেষমেশ ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবনই পেতে পারেন দলের টিকেট।

হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই)

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিকে গৌছ, ড্যাব নেতা, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ডা. আহমদুর রহমান আবদালের নাম আছে কেন্দ্রের গুডলিস্টে। এর মধ্যে জিকে গৌছ বর্তমানে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন।

হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর)

জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মোহম্মদ ফয়সল, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি শামিম আক্তার শিফা দলের মনোনয়ন চাইবেন। তাদের অনুসারীরা চালাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা।

মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী)

কেন্দ্রীয় নেতা এবাদুর রহমান চৌধুরী, শিল্পপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও জাসাস নেতা দারাদ আহমেদের নাম রয়েছে আলোচনায়।

মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া-কমলগঞ্জ)

কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা ও সাবেক এমপি এমএম শাহিন এ দু’জন চূড়ান্ত আলোচনায় আছেন।

মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর)

সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের পুত্র ও জেলা বিএনপির সভাপতি নাসের রহমান ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী খালেদা রাব্বানির নাম চূড়ান্ত আলোচনাতে আছে। তাদের অনুসারীরা পৃথকপৃথকভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা।

মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল)

নির্বাহী কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরীর নাম রয়েছে আলোচনায়। এছাড়া এই আসনে মোহাসিন আলী মধুর নামও রয়েছে আলোচনায়।

এ ব্যাপারে দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম বলেন- ‘আমাদের দল আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ বিরাজ করলে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নির্দেশনামতো বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিবে।’

সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আহাদ খান জামাল বলেন- নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হলে বিএনপি অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নিবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সিলেট বিভাগে বিএনপির হয়ে লড়বেন যারা

আপডেট টাইম : ০৯:০১:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ৭ জুন ২০১৭

দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতা থেকে দূরে থাকা দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার লক্ষ্যে ঘর গোছাচ্ছে। ইতিমধ্যে দলের হাইকমান্ড দেশের সিংহভাগ আসনেই প্রার্থীদের শর্টলিস্ট তৈরি করে ফেলেছে বলে দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছে।

আসন্ন সংসদ নির্বাচনে সিলেটবাসীর জন্য চমক হিসেবে দেখা যেতে পারে বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অথবা বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সহধর্মীনি ডা. জোবাইদা রহমানকে।

সিলেট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বরেণ্য অর্থনীতিবিদ প্রয়াত অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত বিগত সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। এ কারণে আসনটিতে সাইফুরের স্থানে কে আসছেন সেটা নিয়েও রয়ে গেছে ধোঁয়াশা।

এম সাইফুর রহমানের প্রয়াণের পর এ আসন থেকে নির্বাচনের ব্যাপারে প্রস্তুতিতেই ছিলেন সাবেক বিএনপি নেতা শমশের মুবীন চৌধুরী। এছাড়া তিনি ছিলেন সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা। কিন্তু আচমকা দলের হাইকমান্ডের সাথে মতপার্থক্য আর স্থানীয় কোন্দলের কারণে হঠাৎ করেই দলটির দায়িত্ব ছেড়ে দেন শমশের মুবীন চৌধুরী।

সিলেট-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খন্দকার আব্দুল মালিকের ছেলে এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির এখন এ আসন থেকে নির্বাচনর মাঠে রয়েছেন। বাবা খন্দকার মালিকের জনপ্রিয়তা পুঁজি করে আর নিজের ক্লিন ইমেজের কারণে আব্দুল মুক্তাদিরর ইতোমধ্যে নিজের অবস্থান বেশ শক্তিশালী করে নিয়েছেন। জানা গেছে খালেদা জিয়ার গ্রিন সিগন্যাল নিয়ে তিনি নির্বাচনের ব্যাপারে প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। নিয়মিত চষে বেড়াচ্ছেন সংসদীয় এলাকা।

ইতিমধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমান্ড একটি খসড়া প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত করেছে। সেই তালিকাতেও রয়েছে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদিরের নাম। তবে তার নামের আগে দু’টি নাম রয়েছে। এর একটি হচ্ছে দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার; অন্যটি পুত্রবধু সিলেটের মেয়ে ডা. জোবাইদা রহমানের।

যদি কোন কারণে এই আসন থেকে খালেদা কিংবা তারেক কেউ নির্বাচন করতে না পারেন তবে খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির অনেকটা নিশ্চিত বলে জানিয়েছেন দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র।

বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শ্বশুড়বাড়ি সিলেটের দক্ষিণ সুরমার সিলামে। এই হিসেবে এই আসন আত্মীয়তার বন্ধনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চেয়ে এগিয়ে আছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। সেই সুবাদে তিনি সুযোগটা কাজে লাগাতে চাচ্ছেন এমনটিই বলছেন বিশ্লেষকরা।

সিলেট বিভাগে ৪ জেলা। সংসদীয় আসন মোট ১৯টি। আসনগুলো থেকে বিএনপির টিকেট পেতে মাঠে আছেন অর্ধশতেরও বেশি নেতা। এদের প্রায় সবাই দলের ‘গুডবুকেও’ রয়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দলের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র।

ছবির ক্যাপশন উপরে বাম দিক থেকে ডা. জোবাইদা, তাহসিনা রুশদীর লুনা, শফি আহমদ চৌধুরী, দিলদার হোসেন সেলিম, এম এ হক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান, ব্যারিস্টার আব্দুস সালাম, এম এ কাইয়ূম, আবুল কাহের শামীম.
সিলেট-২ (বিশ্বনাথ):

খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও নিখোঁজ বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলীর স্ত্রী তাহসিনা রুশদির লুনা, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এমএ হক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক হুমায়ুন কবিরের নাম রয়েছে আলোচনায়। এরমধ্যে তাহসিনা রুশদির লুনার মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এম এ হক (মো. আব্দুল হক) এর আগে দ্বিতীয় সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিশাল ব্যবধানে হেরেছিলেন।

সিলেট-৩ (সুরমা-ফেঞ্চুগঞ্জ):

সাবেক সংসদ সদস্য শফি আহমদ চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি মালেক খান ও যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার সালাম এই ৫ জনের নাম আছে আলোচনায়। এদের মধ্যে শেষ পর্যন্ত কারা দলের মনোনয়ন পাচ্ছেন সেটি পুরোপুরি নিশ্চয়তা দেয়া যাচ্ছে না।

সিলেট-৪ (কোম্পানীগঞ্জ-গোয়াইনঘাট-জৈন্তাপুর):

সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিম ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ-স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সামসুজ্জামান জামান আছেন আলোচনায়। তাদের অনুসারী নেতাকর্মীরা প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।

সিলেট-৫ (কানাইঘাট-জকিগঞ্জ):

খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীর ভাই, জেলা বিএনপির নেতা ও কানাইঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী ও কানাইঘাট উপজেলা বিএনপির সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন চান দলের টিকেট। দু’জনেই কেন্দ্রের ‘গুডলিস্টে’ আছেন।

সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ)

জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান আহমেদ চৌধুরী, জাসাস’র কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অভিনেতা হেলাল খান, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, সাবেক ছাত্রনেতা ফয়সাল আহমেদ চৌধুরী, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা মাওলানা রশিদ আহমদ, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক সভাপতি সায়েস্তা খান কুদ্দুস ও যুক্তরাজ্য জাসাসের সভাপতি আবদুস সালামের নাম রয়েছে আলোচনায়।

সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা-জামালগঞ্জ-তাহিরপুর) :

সাবেক সংসদ সদস্য নজির হোসেন, জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. রফিক চৌধুরী, ধর্মপাশা উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল মোতালিব খাঁন, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি আনিসুল হক ও তাহিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল আছেন আলোচনাতে। তারা প্রচার-প্রচারণাও চালাচ্ছেন। তবে সম্প্রতি দীর্ঘদিন পর আলোচনায় আসা নজির হোসেনের কপালে দলের টিকেট জুটবে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে।

সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা)

জেলা বিএনপির আহ্বায়ক নাছির উদ্দিন চৌধুরী ও যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেলকে মনোনয়ন দিতে প্রচার-প্রচারণা চলছে। দু’জনেই দলের গুডলিস্টে আছেন বলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা বলেছেন।

সুনামগঞ্জ-৩ (দক্ষিণ সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর)

সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট শাহিনুর পাশা চৌধুরী, দক্ষিণ সুনামগঞ্জের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক আহমদ ও কর্ণেল (অব.) আলী আহমদের নাম রয়েছে আলোচনায়।

সুনামগঞ্জ-৪ (সুনামগঞ্জ সদর-বিশম্ভরপুর)

চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ফজলুল হক আছপিয়া, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান জয়নুল জাকেরিন, সাবেক সভাপতি ও সুনামগঞ্জ জেলা ছাত্রদল আবুল মনসুর মোহাম্মদ শওকত এই তিনজন থেকে যেকোন একজনকে মনোনয়ন দিতে পারে কেন্দ্রীয় বিএনপি।

সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক-দোয়ারাবাজার)

বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন, ছাতক উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান চৌধুরী ও ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মুনসিফ আলী এই তিনজনের নাম শোনা যাচ্ছে জোরেশোরে।

হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল)

সাবেক এমপি জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শেখ সুজাত মিয়ার নাম এখানে রয়েছে আলোচনায়।

হবিগঞ্জ-২ (আজমিরীগঞ্জ-বানিয়াচং)

কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সৌদি বিএনপির সভাপতি ও নির্বাহী সদস্য আহমেদ মুকিব আবদুল্লাহ’র নাম আলোচনায় আছে। তবে শেষমেশ ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবনই পেতে পারেন দলের টিকেট।

হবিগঞ্জ-৩ (সদর-লাখাই)

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিকে গৌছ, ড্যাব নেতা, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ডা. আহমদুর রহমান আবদালের নাম আছে কেন্দ্রের গুডলিস্টে। এর মধ্যে জিকে গৌছ বর্তমানে হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়রের দায়িত্ব পালন করছেন।

হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর)

জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মোহম্মদ ফয়সল, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি শামিম আক্তার শিফা দলের মনোনয়ন চাইবেন। তাদের অনুসারীরা চালাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা।

মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা-জুড়ী)

কেন্দ্রীয় নেতা এবাদুর রহমান চৌধুরী, শিল্পপতি নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু ও জাসাস নেতা দারাদ আহমেদের নাম রয়েছে আলোচনায়।

মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া-কমলগঞ্জ)

কেন্দ্রীয় নেতা অ্যাডভোকেট আবেদ রাজা ও সাবেক এমপি এমএম শাহিন এ দু’জন চূড়ান্ত আলোচনায় আছেন।

মৌলভীবাজার-৩ (সদর-রাজনগর)

সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের পুত্র ও জেলা বিএনপির সভাপতি নাসের রহমান ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেত্রী খালেদা রাব্বানির নাম চূড়ান্ত আলোচনাতে আছে। তাদের অনুসারীরা পৃথকপৃথকভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা।

মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল)

নির্বাহী কমিটির সদস্য মুজিবুর রহমান চৌধুরীর নাম রয়েছে আলোচনায়। এছাড়া এই আসনে মোহাসিন আলী মধুর নামও রয়েছে আলোচনায়।

এ ব্যাপারে দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক দিলদার হোসেন সেলিম বলেন- ‘আমাদের দল আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ বিরাজ করলে চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নির্দেশনামতো বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিবে।’

সিলেট জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আহাদ খান জামাল বলেন- নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হলে বিএনপি অবশ্যই নির্বাচনে অংশ নিবে।