মডেল ও অভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপী বাংলাদেশের মিডিয়া জগতের এক আলোচিত নাম। ২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের আগে ক্রিকেটার রুবেল হোসেনের সঙ্গে স্ক্যান্ডালে জড়িয়েই মূলত সেই আলোচনা। যা নিয়ে কম জল ঘোলা হয়নি। এমনকি রুবেলকে পেতে আদালতের দারস্থও হয়েছিলেন হ্যাপী। তবে শেষ পর্যন্ত রুবেল-হ্যাপীর সম্পর্ক আর টিকেনি। এরপর রুবেলের বিয়ের খবর জানার পর নিজের ‘লাইফস্ট্যাইল’ই পাল্টে ফেলেন এই অভিনেত্রী।
এক সময় রুপালি পর্দা কাঁপানো হ্যাপীর আগের জীবনের সঙ্গে এখনকার জীবনের কোনো মিল নেই। এক কথায় সম্পূর্ণ বিপরীত। বিয়ে করে ইসলামি বিধান মেনেই এখন পুরোদস্তুর জীবনযাপন করছেন। তার স্বামী আবার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে দাড়িওয়ালা শিক্ষক। ধর্মীয় জ্ঞান লাভের জন্য এখন পড়াশুনা করছেন মাদ্রাসায়ও। মিডিয়ার আলোচিত হ্যাপী এখন ‘আমাতুল্লাহ’ (আল্লাহর বাঁদী) হিসেবে নিজেকে পরিচয় দিতে পছন্দ করেন।
হ্যাপীর সেই বদলে যাওয়া জীবন নিয়ে একটি বই লিখেছেন সাদেকা সুলতানা সাকী নামে এক লেখিকা। বইটিতে হ্যাপীর বদলে যাওয়া জীবনের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। ‘হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ’ নামের বইটি প্রকাশ করেছে ধর্মীয় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মাকতাবাতুল আযহার। বইটি প্রকাশের প্রথম দিনেই এক হাজারের বেশি কপি বিক্রি হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন প্রকাশনীটি।
এখনও আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে কী এমন আছে ‘হ্যাপী থেকে আমাতুল্লাহ’ বইটিতে? এমন প্রশ্নের উত্তর পেতে বইটির ‘সম্পাদকের কথায়’ বলা হয়েছে, ‘নাজনীন আক্তার হ্যাপী। এই তো কিছু দিন আগেও তিনি ছিলেন সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা। অর্থ, গ্ল্যামার, জনপ্রিয়তা, শোবিজ জগতে অবস্থান- সবই ছিলো তাঁর। কিন্তু সে-সব ছেড়ে এখন তিনি আপদমস্তক পর্দাবৃত দ্বীনদার মুসলিম নারী।
সিনেমার কৃত্রিম নিয়ন আলোর জগত ছেড়ে চলে এসেছেন হিদায়াতের আলোকিত ভুবনে। পড়াশোনা করছেন মাদ্রাসায়। যাচ্ছেন দাওয়াত ও তাবলিগের মেহনতে। নিজে যেমন দ্বীনের ওপর উঠে এসেছেন, তেমনই অন্যকেও দ্বীনের পথে ডেকে যাচ্ছেন নিরন্তর। এমনকি এতোদিনের সুপরিচিত নাম ‘হ্যাপী’ ছেড়ে এখন তিনি নিজের পরিচয় দিচ্ছেন ‘আমাতুল্লাহ’। ’
সম্পাদকের কথায় বইটিতে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে। কীভাবে হলো এত বড় পরিবর্তন? তাঁর জীবনে আলোর এমন উদ্ভাসিত ঝলক কোত্থেকে এল? কীভাবে তিনি হ্যাপী থেকে ‘আমাতুল্লাহ’ হলেন? সেলুলয়েডের তীব্র আকর্ষণ উপক্ষো করে কীভাবে তিনি চলে এলেন মাদ্রাসার অন্দরমহলে?
তাঁর হিদায়াতের রাজপথে উঠে আসার সরু পথ কি ফুলের মতো কোমল ছিল? নাকি তাকে মাড়াতে হয়েছে অবর্ণনীয় কষ্ট উপেক্ষা ও নির্যাতনের কণ্টকাকীর্ণ পথ? জীবনের এই আকস্মিক পটপরিবর্তনের ক্ষেত্রে তাকে কি শুধু নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করতে হয়েছে? নাকি লড়তে হয়েছে এত দিনের চেনা মুখ আর সুপরিচিত স্বজনের সঙ্গে?