পাউবো, পিআইসি ও ঠিকাদারের কারণেই হাওরের ফসল ডুবেছে

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), পিআইসি ও ঠিকাদাররা সঠিক সময়ে ও সঠিকভাবে বাঁধের কাজ না করায় এবং তাদের গাফিলতির কারণেই হাওরের বোরো ফসল পানিতে ডুবেছে।’ হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কার কাজে অনিয়ম-দুর্নীতি ও ধীরগতি এবং ভবিষ্যতে করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এসব অভিযোগ করেছেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রতিনিধিগণ।
এছাড়াও বক্তারা বলেন,‘হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজের অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে জড়িত দুর্নীতিবাজ পাউবো কর্মকর্তা, পিআইসি ও ঠিকাদারদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। তদন্ত সাপেক্ষ দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। হাওরের বোরো ফসল রক্ষায় টেকসই পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। ভরাট হওয়া সকল নদী-খাল-বিল খনন করতে হবে। হাওরের জলাবদ্ধতা নিরসন করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সঠিকভাবে ত্রাণ সহায়তা দিতে হবে। ’
মঙ্গলবার দুপুরে উপজেলা পরিষদের গণমিলনায়তনে বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত দলের সাথে এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানার সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আলী খান , যুগ্ম সচিব খলিলুর রহমান, যুগ্ম প্রধান মন্টু কুমার বিশ্বাস এবং পাউবো’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী কাজী তোফায়েল আহমদ।
মতবিনিময় সভায় হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ নিয়ে বক্তব্য রাখেন বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ, ভাইস চেয়ারম্যান সুলেমান তালুকদার, পলাশ ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল
কাইয়ুম, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আপ্তাব উদ্দিন, প্রেসক্লাব সভাপতি স্বপন কুমার বর্মন, হাওর বাঁচাও কৃষক বাঁচাও এর সভাপতি মুহিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক হাসান বশির, কৃষক নেতা আব্দুল গনি আনছারি, জাপা নেতা যামিনী বিশ্বাস, সামছুল আলম, শফিউল আলম, খাদিজা আক্তার শেলী, হাফেজা খাতুন, শিবানী সাহা, হাফসা বেগম, সেলিম আহমদ প্রমুখ।
সভায় জাপা নেতা যামিনী বিশ্বাস বলেন,‘ আমরা শুনেছি হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণে ফতেপুর ইউপি চেয়ারম্যান স্থানীয় পিআইসি সভাপতির কাছ থেকে প্রকল্পের ১০ ভাগ টাকা আগেই আদায় করে নিয়েছেন।’
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সুলেমান তালুকদার বলেন,‘ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বাঁধ নির্মাণের পূর্বেই পিআইসি সভাপতির কাছ থেকে প্রকেল্পের ১৫ ভাগ টাকা আগেই আদায় করে নেয়। তাহলে বাঁধের কাজ কিভাবে সঠিক সময় ও সঠিকভাবে হবে।’
সভায় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আলী খান বলেন,‘ হাওর রক্ষা বাঁধের নির্মাণ ও সংস্কার কাজে অনিয়ম, দুর্নীতি, ধীরগতির অভিযোগের বিষয়ে আমরা তদন্ত করছি। তিনটি বিষয় আমরা খতিয়ে দেখছি। একটা হলো বাঁধ করতে গিয়ে যে অনিয়ম, দুর্নীতি, গাফিলতি বা ধীরগতি করুক না কেন সবাই আমরা দেখতে চাই প্রকৃতপক্ষে এটা কি পর্যায়ে ছিল। আসলে হয়েছে কি না, হলে কেন হলো, কি হলো এটা সুস্পষ্টভাবে আমরা তুলে ধরতে চাই। একই সাথে কারা এজন্য দায়ী ? যদি তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হয় বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে তাহলে দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা জানতে চাই কি করণীয় হওয়া উচিত ? কি করলে আমরা এ ধরনের দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে পারি। আমরা কৃষকদের সকল বক্তব্য শুনছি ও লিপিবদ্ধ করছি। আগামী বোরো ফসল রক্ষায় কি করণীয় তা খোঁজে বের করতে চেষ্টা করব। ’
উল্লেখ্য, বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তের জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ আলী খানের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত দল রোববার বিকালে সুনামগঞ্জে এসে তদন্ত কাজ শুরু করছেন। রোববার রাতে সুনামগঞ্জ শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাঠাগার মিলনায়তনে শহরের বিশিষ্টজন ও গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। সোমবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মতবিনিময় সভা করেছেন তাঁরা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর