ঢাকা ০১:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাঁটুর ব্যথা কমাতে ডাক্তারি পারামর্শ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৪১:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ এপ্রিল ২০১৭
  • ২৮৫ বার

রেহানা বেগম একজন গৃহিণী, বয়স ৫৫ বছর, মোহাম্মদপুরে নিজের বাড়ির ২য় তলায় থাকেন কিন্তু ছয় তলায় ছাদের ওপর অনেক প্রকার গাছ লাগিয়েছেন, প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় নিয়মিত গাছগুলো পরিচর্যা করেন। গত ২ সপ্তাহ ধরে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে ও নামতে অনেক কষ্ট হয় ও হাঁটুতে ব্যথা করে আর সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠতে পারছেন না। কিছুদিন ধরে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেই হাঁটু ব্যথা করে, আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। খানিকক্ষণ বসে থাকলে আবার কিছুক্ষণ দাঁড়াতে পারেন, এমনকি নিচে বসা, নামাজের মতো বসতে কষ্ট হয়।
উনি হাঁটুর ‘অস্টিওআর্থ্রাইটিস’ বা অস্থিসন্ধির ক্ষয়জনিত রোগে ভুগছেন, আসুন তাহলে আমরা জেনে নিই অস্টিওআর্থ্রাইটিস’ কেন হয় এবং এর আধুনিক চিকিৎসা কি।
হাঁটুতে ‘অস্টিওআর্থ্রাইটিস’ বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন- বয়সজনিত অস্থিসন্ধির ক্ষয়, আঘাতজনিত কারণ বা জয়েন্ট ইনজুরি, অবেসিটি বা অধিক ওজন, মাংসপেশির দুর্বলতা, জেনেটিক বা বংশগত, অস্থিসন্ধির অস্বাভাবিকতা বা ম্যালফরমড জয়েন্ট, অস্থিসন্ধির দুই অস্থির মধ্যখানের সাইনভিয়াল ফ্লুইড শুকিয়ে গেলে, পেশাজনিত কারণে- যারা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে কাজ করেন, সিঁড়ি দিয়ে বেশি বেশি ওঠা-নামা করেন বা অমসৃণ জায়গায় হাঁটাচলা করেন তারা সাধারণত বেশি ভুগে থাকেন।
হাঁটুতে ‘অস্টিওআর্থ্রাইটিস’ সাধারণত কাদের বেশি হয়?
এটি সাধারণত ৫০ এর অধিক বয়সের মানুষের বেশি হয়। এটি মহিলা ও পুরুষ উভয়েরই হয় তবে পুরুষের তুলনায় মহিলারা বেশি ভুগে থাকেন।
কিভাবে হাঁটুতে ‘অস্টিওআর্থ্রাইটিস’ রোগটি নির্ণয় করা যায়?
এটি বয়স্ক মানুষের খুবই পরিচিত একটি রোগ। এই রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীর বয়স, রোগের ইতিহাস ও ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশনের মাধ্যমেই অনেকখানি রোগ নির্ণয় করা সম্ভব, তারপরও কিছু পাথলজিক্যাল ও রেডিওলজিক্যাল টেস্ট করার প্রয়োজন হয় ।
হাঁটুতে ‘অস্টিওআর্থ্রাইটিস’ হলে তার চিকিৎসা কি?
এটি যেহেতু অস্থিসন্ধির ক্ষয়জনিত রোগ অতএব হাড়ের ক্ষয় সম্পূর্ণ বন্ধ করা সম্ভব নয় কিন্তু চিকিৎসার মাধ্যমে ব্যথা নিরাময় ও অস্থিসন্ধির মুভমেন্ট স্বাভাবিক রাখা সম্ভব তাতে রোগীর স্বাভাবিক জীবন-যাপনে কোনো কষ্ট থাকে না।
কনজারভেটিভ চিকিৎসা-
মেডিকেশন বা ওষুধ, এন এস আই ডি এস, ডায়েটরি সাপ্লিমেন্ট- যেমন গ্লুকোসামিন হাইড্রোক্লোরাইড, কন্ড্রোটিন সালফেট, ক্যালসিয়াম, হ্যালুরনিক এসিড ইত্যাদি ।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা
এটিই সবচেয়ে আধুনিক ও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াবিহীন চিকিৎসা পদ্ধতি। বয়স্ক লোকদের যেহেতু এই রোগ বেশি হয় সেহেতু ওষুধের ব্যবহার যত কম করা যায় তত ভাল, তবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা কারণ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয় অতএব একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধায়নে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে। অস্ট্রিও-আর্থ্রাইটিস অব নি জয়েন্ট চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসক বিভিন্ন রকম মেথড ব্যবহার করে থাকেন তার মধ্য উল্লেখযোগ্য- ম্যানুপুলেশন থেরাপি, আলট্রা সাউন্ড থেরাপি, শর্ট-ওয়েভ ডায়াথারমি, ইন্টার ফ্যারেনশিয়াল থেরাপি, লেজার থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজস্ট্যাটিক সাইক্লিং ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থেকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করে।
লেখক: বাত, ব্যথা, প্যারালাইসিস ও ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ
চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালটেন্ট,
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমণ্ডি, ঢাকা ।
মোবাইল: ০১৭৮৭-১০৬৭০২

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

হাঁটুর ব্যথা কমাতে ডাক্তারি পারামর্শ

আপডেট টাইম : ০৮:৪১:৩৭ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ এপ্রিল ২০১৭

রেহানা বেগম একজন গৃহিণী, বয়স ৫৫ বছর, মোহাম্মদপুরে নিজের বাড়ির ২য় তলায় থাকেন কিন্তু ছয় তলায় ছাদের ওপর অনেক প্রকার গাছ লাগিয়েছেন, প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় নিয়মিত গাছগুলো পরিচর্যা করেন। গত ২ সপ্তাহ ধরে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে ও নামতে অনেক কষ্ট হয় ও হাঁটুতে ব্যথা করে আর সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠতে পারছেন না। কিছুদিন ধরে খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেই হাঁটু ব্যথা করে, আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারেন না। খানিকক্ষণ বসে থাকলে আবার কিছুক্ষণ দাঁড়াতে পারেন, এমনকি নিচে বসা, নামাজের মতো বসতে কষ্ট হয়।
উনি হাঁটুর ‘অস্টিওআর্থ্রাইটিস’ বা অস্থিসন্ধির ক্ষয়জনিত রোগে ভুগছেন, আসুন তাহলে আমরা জেনে নিই অস্টিওআর্থ্রাইটিস’ কেন হয় এবং এর আধুনিক চিকিৎসা কি।
হাঁটুতে ‘অস্টিওআর্থ্রাইটিস’ বিভিন্ন কারণে হতে পারে। যেমন- বয়সজনিত অস্থিসন্ধির ক্ষয়, আঘাতজনিত কারণ বা জয়েন্ট ইনজুরি, অবেসিটি বা অধিক ওজন, মাংসপেশির দুর্বলতা, জেনেটিক বা বংশগত, অস্থিসন্ধির অস্বাভাবিকতা বা ম্যালফরমড জয়েন্ট, অস্থিসন্ধির দুই অস্থির মধ্যখানের সাইনভিয়াল ফ্লুইড শুকিয়ে গেলে, পেশাজনিত কারণে- যারা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে বা বসে কাজ করেন, সিঁড়ি দিয়ে বেশি বেশি ওঠা-নামা করেন বা অমসৃণ জায়গায় হাঁটাচলা করেন তারা সাধারণত বেশি ভুগে থাকেন।
হাঁটুতে ‘অস্টিওআর্থ্রাইটিস’ সাধারণত কাদের বেশি হয়?
এটি সাধারণত ৫০ এর অধিক বয়সের মানুষের বেশি হয়। এটি মহিলা ও পুরুষ উভয়েরই হয় তবে পুরুষের তুলনায় মহিলারা বেশি ভুগে থাকেন।
কিভাবে হাঁটুতে ‘অস্টিওআর্থ্রাইটিস’ রোগটি নির্ণয় করা যায়?
এটি বয়স্ক মানুষের খুবই পরিচিত একটি রোগ। এই রোগ নির্ণয়ের জন্য রোগীর বয়স, রোগের ইতিহাস ও ক্লিনিক্যাল এক্সামিনেশনের মাধ্যমেই অনেকখানি রোগ নির্ণয় করা সম্ভব, তারপরও কিছু পাথলজিক্যাল ও রেডিওলজিক্যাল টেস্ট করার প্রয়োজন হয় ।
হাঁটুতে ‘অস্টিওআর্থ্রাইটিস’ হলে তার চিকিৎসা কি?
এটি যেহেতু অস্থিসন্ধির ক্ষয়জনিত রোগ অতএব হাড়ের ক্ষয় সম্পূর্ণ বন্ধ করা সম্ভব নয় কিন্তু চিকিৎসার মাধ্যমে ব্যথা নিরাময় ও অস্থিসন্ধির মুভমেন্ট স্বাভাবিক রাখা সম্ভব তাতে রোগীর স্বাভাবিক জীবন-যাপনে কোনো কষ্ট থাকে না।
কনজারভেটিভ চিকিৎসা-
মেডিকেশন বা ওষুধ, এন এস আই ডি এস, ডায়েটরি সাপ্লিমেন্ট- যেমন গ্লুকোসামিন হাইড্রোক্লোরাইড, কন্ড্রোটিন সালফেট, ক্যালসিয়াম, হ্যালুরনিক এসিড ইত্যাদি ।
ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা
এটিই সবচেয়ে আধুনিক ও পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াবিহীন চিকিৎসা পদ্ধতি। বয়স্ক লোকদের যেহেতু এই রোগ বেশি হয় সেহেতু ওষুধের ব্যবহার যত কম করা যায় তত ভাল, তবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা কারণ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয় অতএব একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধায়নে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে। অস্ট্রিও-আর্থ্রাইটিস অব নি জয়েন্ট চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিকিৎসক বিভিন্ন রকম মেথড ব্যবহার করে থাকেন তার মধ্য উল্লেখযোগ্য- ম্যানুপুলেশন থেরাপি, আলট্রা সাউন্ড থেরাপি, শর্ট-ওয়েভ ডায়াথারমি, ইন্টার ফ্যারেনশিয়াল থেরাপি, লেজার থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজস্ট্যাটিক সাইক্লিং ইত্যাদি। এসব ক্ষেত্রে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থেকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিলে দ্রুত আরোগ্য লাভ করে।
লেখক: বাত, ব্যথা, প্যারালাইসিস ও ফিজিওথেরাপি বিশেষজ্ঞ
চেয়ারম্যান ও চিফ কনসালটেন্ট,
ঢাকা সিটি ফিজিওথেরাপি হাসপাতাল, ধানমণ্ডি, ঢাকা ।
মোবাইল: ০১৭৮৭-১০৬৭০২