চোখের সামনে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্ন

টানা এক সপ্তাহের বৃষ্টিতে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে চৈত্র মাসে অকাল বন্যায় এশিয়ার বৃহত্তম হাওর হাকালুকিতে তলিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্নের সোনার ধান। ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট এলাকাগুলোর অর্ধেকেরও বেশি ধান তলিয়ে গেছে। শতভাগ ফসল হারানোর শঙ্কায় কৃষকেরা কাঁচা ও আধাপাকা বোরো ধান কাটা শুরু করেছেন।

সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি কার্যালয় ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, হাকালুকি হাওর তীরের জুড়ী উপজেলাতে ৬ হাজার ৪৫০ হেক্টর, কুলাউড়া উপজেলাতে ৭ হাজার ৪৯০ হেক্টর ও বড়লেখা উপজেলাতে ৫ হাজার ২৫০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এছাড়া সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ এই দুই উপজেলায় কমপক্ষে ৯-১০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। গত তিন-চার দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে উজানের পাহাড়ি ঢলে হাকালুকি হাওরের পানি বাড়ছে অতিদ্রুত হারে।

চোখের সামনে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্নসরেজমিনে কুলাউড়া উপজেলার ভুকশিমইল ও জয়চন্ডী ইউনিয়নে এবং জুড়ী উপজেলার জায়ফরনগর ও পশ্চিম জুড়ী ইউনিয়নের কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, হাওরে অর্ধেকেরও বেশি এলাকার বোরো ধান তলিয়ে গেছে। বাকিটাও হারানোর আশঙ্কায় কৃষকেরা অপেক্ষাকৃত উঁচু জমিগুলোর কাঁচা ও আধাপাকা বোরো ধান কেটে ফেলছেন। সেই কাটা ধানগুলো আঁটি বেধে এনে শুকনো স্থানে স্তুপ করে রাখা হচ্ছে।

হাওর তীরের জায়ফরনগর গ্রামের বেলাল মিয়া পূর্বপশ্চিমকে জানান, ‘১০ কিয়ারে (বিঘা) ব্রি-২৮ ও ২৯ জাতের ধানের লাগিয়েছি। খুব ভাল ফসল হইছে। এখনো আধাপাকা রইছে। হাওরে পানি বাড়িয়া ধান তলিয়ে যাচ্ছে। তাই, তলিয়ে যাওয়ার ভয়ে কাটা শুরু করে দিয়েছি। একই গ্রামের খায়রুল ইসলাম হাওরের ২০ বিঘা জমিতে বোরো ধানের চাষ করেছেন। এর মধ্যে ছয় বিঘা তলিয়ে গেছে।

চোখের সামনে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্নখায়রুল বলেন, ‘কষ্টের ফসল তো রক্ষা করতে হবে। নিজেই ধান কাটতে নামছি। চাটেরা গ্রামের আকমল আলী বলেন, আকাশের অবস্থা ভালা না। এখনই ধান কাটা ছাড়া আর উপায় নাই।

স্থানীয়রা জানান, কুলাউড়ার ভূকশিমইল, বরমচাল, ভাটেরা ও জয়চন্ডী ইউনিয়ন এবং বড়লেখার সুজানগর, তালিমপুর, বর্ণি ও দাসেরবাজার ইউনিয়নে হাকালুকি হাওরের বিভিন্ন এলাকায়ও পানিতে তলিয়ে যাওয়া বোরো ধান প্রাণপন চেষ্টা করে কাটার চেষ্টা করছেন কৃষকরা।

চোখের সামনে তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকের স্বপ্নজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ শাহজাহান জানান, থোড় বের হওয়ার আগে ২-৪ দিন পানির নিচে নিমজ্জিত থাকলে ধানের তেমন কোন ক্ষতি হয় না। বৃষ্টি থেমে পানি কমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির খুব একটা আশঙ্কা নেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত বৃষ্টি থামছে না, তাই এবছর বোরো ধান নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর