প্রেস ক্লাবে দলবাজি আগেও ছিল। এখনও আছে। ভবিষ্যতেও থাকবে। আমি পছন্দ করি আর না করি। তবে এখন যা চলছে, তা এক ধরনের নোংরামি। সহসাই সংঘাত থেকে সংঘর্ষে রূপ নেবে এমনটাই আশঙ্কা করা হচ্ছে। পেশাদার সাংবাদিকদের একটি ক্লাব। কে দায়িত্বে থাকবেন কে থাকবেন না এটা নির্ধারণ করার মালিক সাংবাদিকরা। কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে এখানেও বিএনপি-আওয়ামী লীগ কিংবা জামায়াতের রাজনীতি। সিদ্ধান্ত হয় প্রকাশ্যে, নেপথ্যে। এ যেন চর দখলের লড়াই। এতদিন জোড়াতালি দিয়ে চলছিল। মন্দের ভাল বলা যায়। কিন্তু হঠাৎ করে ছন্দপতন। নির্বাচনের পথ পরিহার করে সোজা দখল। রাখঢাক ছাড়াই এ কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। কেন এই দখল? নানা কথা, নানা হিসাব। বিএনপিপন্থিরা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে নিয়ন্ত্রণ করে আসছিলেন। নিয়মনীতি উপেক্ষিত ছিল। খেয়াল-খুশি মতো সদস্য বাড়িয়েছেন-কমিয়েছেন। আপত্তি করার কেউ ছিল না। এক ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা। পরিণতিতে আপসের পথ বের করেন কতিপয় সিনিয়র সাংবাদিক। যারা আওয়ামী লীগ-বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। বলা যায় এক ধরনের ভাগবাটোয়ারা। গত ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এই তথাকথিত সমঝোতার কারণে নির্বাচন পেছানো হয়। গেল মাসে সমঝোতার একটি নীলনকশাও ফাঁস হয়ে যায়। পরিণতিতে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায় সাংবাদিক মহলে। দুই শিবির থেকেই প্রতিবাদ আসতে থাকে। একপর্যায়ে ভেস্তে যায় সমঝোতা। দখল প্রক্রিয়া তখনই সম্পন্ন হয়। শফিকুর রহমানের নেতৃত্বে একদল সাংবাদিক (দুই শিবিরভুক্ত) নতুন কমিটি ঘোষণা করে দেন। নির্বাচন ছাড়া কিভাবে কমিটি হতে পারে তা ছিল এক বিস্ময়কর ঘটনা। প্রেস ক্লাব তো আলাদা কোন দ্বীপ নয়। দেশ যেভাবে চলছে তার কিছুটা হলেও তো আঁচড় লাগবেই। শফিকুর রহমান প্রবীণ সাংবাদিক। রাজনৈতিক আদর্শের প্রশ্নে তিনি বরাবরই আপসহীন। প্রেস ক্লাবের নেতৃত্বেও ছিলেন বেশ কিছুকাল। মাঝখানে দুবার আওয়ামী লীগের টিকিটে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে সফলকাম হননি। তিনি কেন যে এ পথে এগিয়ে এলেন তা এখনও অস্পষ্ট। ক্লাব দখল করে তিনি কি পেলেন? এতে করে কি তার মর্যাদা বাড়লো! ইকবাল সোবহান চৌধুরীইবা কেন এতে জড়ালেন। তার অবস্থান তো অনেক ওপরে। আপনি পছন্দ করেন আর না করেন। শওকত মাহমুদের ভূমিকাও এখানে রহস্যজনক। সমঝোতার অন্যতম রূপকার হয়েও কেন তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলেন তা নিয়ে বলাবলি আছে সংশ্লিষ্ট মহলে। প্রেস ক্লাবের পুরনো কমিটির কথাইবা কি বলবো? তারা ক্লাবটিকে রাজনৈতিক অফিসে পরিণত করেছিলেন। কোন অডিট ছাড়াই চলছিল সবকিছু। কি যে মধু আছে সেখানে! সদস্যপদ দেয়ার ক্ষেত্রে সব সময় উদ্দেশ্য ছিল কিভাবে নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখা যায়। এর ফলে পেশাদার বহু সাংবাদিক সদস্য হতে পারেননি। সব মেনে নেয়া গেলেও এটা মেনে নেয়া যায় না। কারণ, প্রেস ক্লাব কাউকে লিজ দেয়া হয়নি। যাই হোক, প্রতিদিন যেভাবে পরিস্থিতি ঘোলাটে হচ্ছে তাতে করে সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠবে বলে মনে হচ্ছে। ইতিমধ্যেই কয়েক দফা হাতাহাতি হয়ে গেছে। আমরা সাংবাদিকরা মুখে গণতন্ত্রের কথা বলবো, আর নিজেরা নির্বাচন থেকে দূরে থাকবো- এটা কি করে হয়। ভোটার তালিকা নিয়ে নানা অভিযোগ। এই অভিযোগের ভিত্তি যে নেই তা কিন্তু বলা যাবে না। এর সঠিক তদন্ত হওয়া দরকার। অভিযোগগুলো নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে খোলামেলা আলোচনা হতে পারে। সিনিয়র সাংবাদিকরা এখন ক্লাবমুখী হচ্ছেন না। আগে দিনে তিন থেকে চারশ সাংবাদিক প্রেস ক্লাবে যেতেন। এখন একশতে নেমে এসেছে। সদস্য নন এমনদের আনাগোনা বেশি। আগে ছিল যারা ইউনিয়ন করতেন তারা প্রেস ক্লাব নিয়ে তেমন মাথা ঘামাতেন না। এখন দেখা যাচ্ছে যারা জাতীয় রাজনীতি করেন তারাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। সঙ্কট এখানেই। পেশাদারদের ক্লাব পেশাদারদের হাতেই ছেড়ে দিন। তাহলেই দেখবেন বিভক্তি সত্ত্বেও সঙ্কট কেটে গেছে।
সংবাদ শিরোনাম